Hasnur Khatun(রুbi🦋)

Abstract Inspirational Others

4.3  

Hasnur Khatun(রুbi🦋)

Abstract Inspirational Others

ইচ্ছাশক্তি

ইচ্ছাশক্তি

2 mins
447


ইচ্ছাশক্তি


নাডু ও উমির একসাথেই বড়ো হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি তাদের। নাডু ছিল সাঁওতাল পরিবার থেকে।তাঁর বাবা দিন মজুরি কাজ করে বেড়ায়।তাঁর মা লোকের জমিতে কাজ করে।সংসার চলে অভাবে।দিনে যে টুকু রোজগার হয় দিন আনে দিন খায়, কালকেরটা কাল দেখা যাবে।তবে তাঁর মা গুনে গুনে কিছু বাঁচিয়ে রাখে ।


আর উমির মৌল্লা সাহেবের ছেলে। নাডু সারাদিন উমিরের বাড়িতেই পরে থাকতো। উমির যখন পড়তে বসতো নাডু দূরে বসে শুনতো,শুনে শুনেই সে সব মুখস্থ করে ফেলে। মৌল্লা সাহেব যখন জানতে পারেন তখন নাডুর বাবার সাথে আলোচনা করেন "ব্যাটা তোর বহুত চালাক,বুদ্ধি আছে ভালো। প্রায়মারি স্কুলে ভর্তি করে দে,ভালো পড়বে- খাবে,জামা জুতা সবই পাবে।"


নাডুর বাবা," হুম পাঠাতে হবে,মাঁইটা একটু বড়ো হোক,মাঁইটাকে রেখে এখন কি করে যাবে। ওর মা মঙ্গলদার বাড়িতে কাজ করছে,কাজের খুব ভিড় আজ এর বাড়ি কাল ওর বেটির বাড়ি..."


মৌল্লা সাহেব," আচ্ছা বিকেলে তাহলে আমাদের মাদ্রাসাতে পাঠিয়ে দিস উমিরকে যখন পড়াই নাডুকেও বাংলা,ইংরেজি আর অংকটা পড়িয়ে দেবো।"


নাডুর বাবা," মাদ্রাসায়!না না থাক..."


মৌল্লা সাহেব আর কিছু না শুনেই সোজা বাড়ির দিকে চললেন।গিয়ে দেখেন উমির আর নাডু মাস্টার মাস্টার খেলছে,কে মাস্টার আর কে ছাত্র তা ঠিক বোঝা গেল না,নাডুর পায়ের কাছে তার বোন ধুলো-বালি নিয়ে খেলছে।



উমির কলেজে পড়ে ,নাডু কোনোরকমে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে।কারণ নাডু ঠিকমতো স্কুলে যেতো না,কখনো কখনো পরীক্ষাও দিতে যেতে পারেনি,কারণ বাড়ির কাজ করতে হতো তাকেই,কখনো বোনকে স্কুলে দিতে যেত আবার নিয়ে আসতো ‌।কখনো বাবার সাথে কাজে যেতে হতো।এই জন্য সে এতোটা পিছিয়ে।


কিন্তু সে ছিল মেধাবী ছাত্র।যতটুকু পড়তো মনে রাখতো ভালো। মৌল্লা সাহেব আগের বছর উমির আর নাডুর পুলিশের জন্য ফর্ম ভরে দেয়।উমির পারলো না পরীক্ষা দিতে কারণ কলেজে ফোর্থ সেমিস্টার চলছে তখন। যেমনটা মৌল্লা সাহেব আশা করেছিলেন ঠিক তেমনটাই নাডু পরীক্ষায় পাশ করেছে।কিন্ত যেদিন মাঠ দিতে যাবে তার দু' দিন আগে তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়।ডাক্তার জবাব দিয়ে দেয়,এ রোগীকে বাঁচানো যাবেনা।অনেক বকাও দেয় "এতোদিনে কি করছিলেন,ক্যান্সার...লাস্ট ষ্টেজ"। আসলে তার মা কাউকে বুঝতে দেয়নি,একাই সহ্য করেছে ।পাড়ার হাতুরি ডাক্তার বলতেন শহরে নিয়ে যেতে ভালো চিকিৎসা করাতে,কিন্তু কেউই গুরুত্ব দেয়নি। নাডুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। যে ঘরে মা নেই সেই ঘর যেন ঘর নয় শ্মশান। 




 সেদিন মৌল্লা সাহেব আর তার বাবার অনেক বোঝানোর পর সে রাজি হয় যাওয়ার জন্য। তার অসুস্থ মাকে রেখে যেতে তার মন চায়না।আর কয়দিন আছে কে জানে‍! যে কয়দিন আছে সে তার মায়ের সাথে থাকতে চায়। নিজেই নিজেকে শান্তনা দিতে থাকে।যেদিন তার মাঠ ছিল সেদিন সোমবার । সে অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনি,চোখের জল লুকোতে ব্যর্থ।তবে সময় মতো ঠিক দৌড়েছে।রাতেই বাড়ি ফিরে আসে ,বাড়ি ফিরে দেখে তার মা আরো বেশি অসুস্থ। সকাল হতে না হতেই তার মায়ের চোখদুটো বন্ধ হয়ে যায়।আর নাডুর জগৎ হয়ে যায় অন্ধকার।





নাডুর মা মারা যাওয়ার আজ তিনবছর। আমরা সবাই চেয়েছিলাম নাডুকে পুলিশের পোশাকে দেখতে।তাই নাডু আজ পুলিশ অফিসার।পাশাপাশি সে পড়াশোনা করছে উচু পদের জন্য।আমাদের বিশ্বাস একদিন সে সফলতাকে ছুঁয়ে যাবে। 


         __________________


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract