হ্যাপি মাদার্স ডে
হ্যাপি মাদার্স ডে
ছোট বাচ্চাটা ক্রমশ কেঁদেই চলেছে। থামার নামগন্ধ নেই। কিন্তু তাকে দেখার জন্য কাউকে দেখা যাচ্ছে না সে পাশে। প্রচুর পুরুষ এবং মহিলারা কাজ করছে। তারা যে যার কাজে ব্যস্ত। বড় বিল্ডিং এর কাজ চলছে। এরা এই কাজের শ্রমিক। ঢালাই মেশিন ঘড়ঘড় শব্দ করে ঘুরে চলেছে। সেই শব্দে তার কান্নার শব্দ হয়তো কেউ শুনতে পাচ্ছে না। আর শুনলেও কারো সময় নেই সে দিকে তাকানোর।
মেশিনের মধ্যে থেকে মাখানো সিমেন্ট বালির মিশানো মসলা কড়াইয়ে করে সবাই মাথায় করে নিয়ে চলেছে। পুরুষ-মহিলা সকলেই একইভাবে শ্রম দিচ্ছে। ঘামে ভিজে যাচ্ছে তাদের শরীর। এদিকে বাচ্চাটা কেঁদেই যাচ্ছে। তাকে দেখার মত কেউ নেই।
যারা কাজ এসেছে তাদের মধ্যে কেউ হয়তো বাচ্চাটাকে নিয়ে এসেছে সঙ্গে। এখন কাজের চাপ আছে তার দিকে খেয়াল দিতে পারছে না। হয়তো বাচ্চাটার কান্নার শব্দ তার কানে পৌঁছাচ্ছে না।
অনেক সময় পরে মেশিনটার ঘড়ঘড় বন্ধ হল। কিন্তু বাচ্চাটার কান্না বন্ধ হলো না। একটানা এত সময় কান্না করেও তার ক্লান্তি বোধ হচ্ছে না মনে হয়। মাটিতে একটা বস্তার উপর সে বসে আছে। কোন জায়গায় নড়াচড়া করছেনা। হয়তো হাঁটা শেখেনি এখনও।
যাদের বাচ্চা আছে তাদের বাড়িতে রেখে আসা সম্ভব নয়। কারণ কোন কোন বাড়িতে স্বামী স্ত্রী দুজনেই বাড়ির বাইরে কাজ করে। অনেকের বাড়িতে দেখার মত কেউ নেই। তাই তাদের বাচ্চাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হয় কাজে। এখানেও কোন মহিলা বোধ হয় তার দুধের শিশুকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে কাজে। এখানে বসিয়ে রেখে কাজ করছে।
শ্রমিকদের মধ্যে থেকে এক মহিলা ছুটে আসছে বাচ্চাটার দিকে। এই মহিলাই হয়তো শিশুটির মা। এতক্ষণে বাচ্চাটার কান্না তার কানে পৌঁছেছে। তাই দৌড়ে আসছে বাচ্চাটার দিকে। কড়াইটা পাশে রেখে দিয়ে হাত দুটো তার কাপড়ে মুছে নিল ভালো করে। তারপর নিচু হয়ে বসে দুহাত বাড়িয়ে দিল বাচ্চাটার দিকে।
বাচ্চাটা এবার তীব্রস্বরে কান্নার পরিবর্তে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো। মাকে দেখে হয়তো কান্না একটু কমেছে। কিন্তু পুরোপুরি এখনো থামাতে পারেনি। মা এবার চেষ্টা করতে লাগলো তার বাচ্চাটাকে আদর করে কান্না থামাতে। কোলে করে নিয়ে নাচাতে নাচাতে একটু হাঁটতে লাগল এদিকে দিক। তারপর দুহাতে উঁচু করে আকাশের দিকে তুলে ধরল। বাচ্চাটার মুখে কান্না ভুলে হাসি ফুটে উঠল।
মায়ের ভালোবাসার পরিবর্তে বাচ্চাটা যেন তাকে বলতে চাইছে 'হ্যাপি মাদার্স ডে'।