Sulata Das

Abstract Horror

3  

Sulata Das

Abstract Horror

হ্যালোইন

হ্যালোইন

3 mins
218


আজ হ্যালোইন ডে। তিন্নি সকাল থেকেই খুউব উত্তেজিত। কি সাজবে, কিভাবে সাজবে তাই নিয়ে মাতামাতি চলছে। সন্ধ্যেবেলা স্যোসাইটি তে একটা প্রোগরাম আছে। তিন্নি পার্টিসিপেট করবে। তিন্নি কে সাজালাম। অডিটোরিয়ম একদম থিম অনুযায়ী সাজানো হয়েছে । পুরো অন্ধকার হল। ব্যাকগ্রাউন্ডে থিম মিউজিক বাজছে। পুরো থমথমে পরিবেশ।মাঝে মাঝে লাগানো লাল ঢিমে আলো গুলো হলের পরিবেশ কে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। বাচ্চারা কখনো একা কখনো দল বেঁধে এসে তাদের ভূত- প্রেত- ড্রাকুলার অভিনয় করে চলেছে। দারুণ অভিনয় করছে সবাই । গা ছমছম করছে। পাশের লোককেও ঠি ক মতো দেখা যাচ্ছে না। 

হঠাৎ ঘাড়ের কাছে কারো নিশ্বাসের উষ্ণ হাওয়া লাগলো। ভালো করে কিছু ভাবার আগেই কেউ কানের কাছে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো ‘কেমন আছো মৌ? ভালো আছো তো’!!ভয়ে চমকে উঠলাম। আমার এ নাম কেউ জানলো কি করে!! এ নামে তো একজন নিভৃতে ডাকতো আমায়। এ নাম তো কারো জানার নয়। তাঁর সাথে সাথে আমার এ নামও হারিয়ে গেছে। আমি নিজেই ভুলে গিয়েছিলাম। আজ ডাক শুনে এক লহমায় সব মনে পড়ে গেল। 

সমীরণ- আমার সাথেই সায়েন্স নিয়ে পড়তো। সুঠাম চেহারা- মাজা রং- বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা- অসাধারণ ব্যক্তিত্ব - প্রথম দেখাতেই দুজনেই দুজনের প্রেমে পড়েছিলাম ।

ভালোই কাটছিলো দিনগুলি। কত রঙিন স্বপ্ন বুনে যেতাম দুজনে মিলে!

হাসি, গল্প, ঘোরাফেরা, মজা ,ক্যান্টিন- সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো।

      জয়েন্টে দুজনেই খুব ভালো রেজাল্ট করলাম - হঠাৎ কি হলো-সমীরণ আর্মি জয়েন করলো।প্রথমে মন একটু উদাস হলেও - ওর ইচ্ছে কে সন্মান করলাম। ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ - ছুটিতে দুজনেই বাড়ি ফিরে চুটিয়ে প্রেম-বেশ আনন্দের সাথেই কাটছিলো। 

      দেখতে দেখতে আমার কলেজ শেষ হয়ে এলো- ক্যাম্পাসে ভালো চাকরিও পেয়ে গেলাম। সমীরণও তার চাকরির দায়িত্বপূর্ণ পদ খুব সাফল্যের সাথে পালন করছে। ওর সাহসিকতার খবর মাঝে মাঝে খবরের কাগজে বের হতো- মনে মনে খুব গর্ব হতো। 

        দু-বাড়ির সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ের বন্দোবস্তও হয়ে গেল। আগে থাকতেই দু-বাড়িতে দুজনের কথা জানতো-কখনোই কোন আপত্তি হয়নি।খুশির জোয়ারে ভাসছিলাম আমরা-একটা ফোন-

📞কাশ্মীরে উগ্রপন্থী হামলায় সাফল্যের সাথে লড়াইয়ে বোম ব্লাস্ট এ শহীদ হয়েছে সমীরণ! মাথা ঘুরে গেলো।পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। মাথায় বাজ পড়লো। একদম ভেঙে পরলাম আমি।বাবা-মা’র মুখের দিকে তাকিয়ে -তাঁদের সহায়তায় নিজেকে একটু একটু করে সামলালাম।এক বছর পর বাবা-মা’র কান্নাকাটি-অনুরোধে-ইচ্ছে না থাকলেও বিয়ে করতে রাজি হলাম। পাত্র পক্ষকে আমার সম্পর্কে সব জানিয়েই বিয়ে ঠি ক হয়েছিলো। 

       প্রথম দিকে খুব মনখারাপ- কান্নাকাটি করলেও সপ্তকের (আমার বর্তমান স্বামীর) ভালোবাসায়-সহানুভূতিতে নিজেকে সামলে সপ্তকের সাথে সুখের সংসার শুরু করলাম। সপ্তক বড় ভালো ছেলে। তাই হয়তো ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়েছিলো। সমীরণকে না ভুলতে পারলেও আমার সংসার জীবনে তার প্রভাব পড়তে দেইনি। আমাদের একমাত্র মেয়ে তিন্নিকে নিয়ে বেশ কাটছিলো জীবনটা।

        হঠাৎ সমীরণ কোথা থেকে আসলো আমার জীবনে!! উগ্রপন্থী হানায় বোম-ব্লাস্ট এ সমীরণের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলো শুনেছিলাম-তাই শেষ দেখাও দেখতে পাইনি। আজ এখানে ওর কন্ঠস্বর শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। কেঁপে উঠলাম অশনির সংকেতে। সপ্তক পাশেই বসে আছে- শুনলে কি ভাববে!! হাত-পা কাঁপছে আমার।সাজানো সুখের সংসারটা চোখের সামনে হঠাৎ দুলে উঠলো।

       সমীরণ আবার ফিসফিস করে বললো -“বেশ জমিয়ে সংসার করছো দেখছি! তোমার সোমু কে ভুলে গেলে মৌ !! তোমায় সুখী দেখে আমি খুব খুশী হলাম।ভালো থেকো মৌ’। এবার কাঁধে একটা হাতের ছোঁয়া- এ হাত আমার অতি পরিচিত- কিন্তু আজ তা একদম ঠান্ডা বরফ।আঁতকে উঠলাম- 😱😱😱গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল।ভয়ে চিৎকার করলাম- কোনো আওয়াজ বের হলো না- শুধু এক গোঙানির আওয়াজ বের হলো- সপ্তক পাশে বসে চমকে উঠলো। আমায় ধরে ঝাঁকুনি দিলো- সম্বিত ফিরে পেলাম-কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম ভূউউউত!!! সপ্তক স্নেহের হাসি হেসে বললো -“এমন পরিবেশে যে কোন লোকেরই ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। ভয় পেয়ো না , আমি তোমায় ধরে আছি। “


আমি কিন্তু অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখলাম সমীরণ হেঁটে চলে যাচ্ছে। একবার মুখ ফিরিয়ে তাকালো আমার দিকে- মুখ পুরো আগুনে ঝলসানো, চোখ দুটো জ্বলছে - ঠোঁটে সেই পুরোনো হাসি লেগে রয়েছে।গভীর ভালোবাসা মাখানো এক ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো আমায়।

আমি.............



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract