অপেক্ষা
অপেক্ষা
জানো সুব্রত, আজও আমি এসেছিলাম আমাদের দুজনের প্রিয় সেই বকুল গাছ তলায়- কিছুক্ষণ বসলাম বকুলের ছায়ায়-বকুল গাছের বেদিতে।রোজ-ই আসি, রোজ আসব সুব্রত- যতদিন আমি বাঁচব। কত দিন-কত গল্প করেছি এখানে বসে, কত সুন্দর সময় কাটিয়েছি আমরা এখানে -কত স্বপ্নের জাল বুনেছি এখানে বসে- বুঝতে পারিনি-ভাবতেও পারিনি-আমাদের স্বপ্ন পূরণের আগেই তুমি স্বপ্নের জাল কেটে চলে যাবে অসীমে!
কেন যে এমন হলো, এখনো তার উত্তর খুঁজে পাইনি। জানি তুমি আর কখনো আসবে না ফিরে। কিন্তু এখানে এলে অনুভব করি তোমায়। তোমার গায়ের সুবাস যেন সুবাসিত করে তোলে পুরো বকুলতলা। নিজেকে সামলাবার শক্তি খুঁজে পাই। একা অনেক পথ যে যেতে হবে আমায়! নতুন করে নিজেকে গড়ে তোলার সাহস পাই এখানে এলে।
এই তো তুমি চেয়েছিলে! আমি তোমার দেখানো পথে যাব এগিয়ে- তোমার স্মৃতি কে সাথে নিয়ে।
তোমার শেষ দিনেও এখানে এসেছিলাম আমি।জানিনা তুমি অনুভব করছিলে কিনা। তুমি কথা দিয়েছিলে সেদিন আসবে - কথা রেখেছিল ।তুমি এসেছিলে- কিন্তু কফিন বন্দি হয়ে।তাজ হোটেল জঙ্গি হানায় সাহসের সাথে তাদের মোকাবিলা করেছ। বী
রত্বের সাথে কয়েকজন জঙ্গি কে তুমি করেছিলে ধরাশায়ী।কিন্তু অনেক মায়ের সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে তুমি বীর গতি প্রাপ্ত হলে।
কথা রাখতে আমিও এসেছিলাম সেদিন। ওরা যখন কফিন বন্দি তোমায় বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল , আমি ওদের বলেছিলাম- তোমার প্রিয় জায়গায় তোমায় পাঁচ মিনিট শান্তিতে থাকতে দিতে। ওরা শুনেছিল আমার কথা। সেই শেষ বারের মতো আমরা দুজন এক হয়েছিলাম- জানিনা তুমি অনুভব করেছিলে কিনা- আমার সাথে আরও একজন ছিল সুব্রত- তুমি কি চিনেছিলে তাকে!!-আমার গর্ভে আমাদের সন্তান। সে তার বাবাকে অন্তিম বিদায় দিতে এসেছিলো।সে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে আমার গর্ভে-আমাদের ভালোবাসার নিদর্শন।সমাজের চোখ রাঙানিকে ভয় পাইনা আমি। অবিবাহিতা মায়ের সন্তান হলেও- সে তোমার পিতৃ পরিচয়েই বাঁচবে। কোন আঁচ তার জীবনে আসতে দেবো না। তোমার বীরত্বের কথা শোনাব তাকে। তোমার আদর্শে, তোমার দেখানো পথেই তাকে বড় করবো।
তোমায় সবসময় অনুভব করি সুব্রত। তাই আকাশের তারা দের মাঝে তোমায় খুঁজিনা আমি।তুমি রোজ আমার স্মৃতিতে ফিরে এসো সুব্রত। তোমার প্রিয় বকুলতলায় রোজ এসো তুমি।আমি অপেক্ষা করব।