Debdutta Banerjee

Drama

2.5  

Debdutta Banerjee

Drama

হঠাৎ দেখা

হঠাৎ দেখা

8 mins
16.9K


শিয়ালদা ষ্টেশনের 9A প্লাটফর্মে দার্জিলিং-মেল ছাড়তে মাত্র দশ মিনিট বাকি। প্রায় দৌড়ে গিয়ে এসি ফার্স্টক্লাসে উঠল অনিক।যা জ্যামে ফেঁসেছিল আজ ট্রেনে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল। 

চারজনের কুপে বাকিরা আগেই উঠে বসে রয়েছে। ছোট ব্যাগটা সিটের নিচে রেখে বসতেই উল্টোদিকের ভদ্রলোক বললেন "নমস্কার, আমি দিগন্ত চৌধুরী, আর আমার ছেলে মেয়ে তুনীর আর তিতির।" অনিক একটু হেসে নিজের পরিচয় দিল। 

"আপনি কি শিলিগুড়ি.......? " বললেন দিগন্ত বাবু।

"না। দার্জিলিং। আপনারা?"অনিক প্রশ্ন করে।

" আমি নয়। ওরা ওদের মামনির সাথে দার্জিলিং যাচ্ছে। আমি তুলতে এসেছি। আচ্ছা এখন এই দার্জিলিং সেফ তো?" 

" হ্যাঁ, প্রচুর লোক তো যাচ্ছে। আমি তো ওখানকারই বাসিন্দা। কোনও প্রবলেম নেই এখন।" অনিক অভয় দেয়।

"না, মানে আমি যাচ্ছি না তো........." 

দিগন্ত বাবুর কথা শেষ হবার আগেই ওনার মেয়ে বলে, "তুমি কবেই বা যাও আমাদের নিয়ে!!কেন চিন্তা করছ? মামনি আছে তো।" 

"এবার ট্রেন ছাড়বে। তুমি নেমে যাও পাপা।" ওনার ছেলে বলে ওঠে। 

"কিন্তু তোদের মামনি গেল কোথায়? " বলে উঠে দাঁড়ালেন দিগন্ত-বাবু।

অনিকের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন,"একটু দেখবেন ওদের। আমি চললাম" 

উনি নেমে যেতেই ট্রেন ছাড়ল, আর হুড়মুড় করে এসে ঢুকল এক মহিলা।"উফ, এই ম্যাগাজিনটা কিনতেই দেরি হয়ে গেল। " 

গলার আওয়াজে চমকে তাকাল অনিক। মহিলা তার দিকে পিছন ঘুরে থাকলেও দিয়াকে চিনতে কোন ভুল হল না অনিকের। দীর্ঘ চোদ্দ বছর পর এভাবে দেখা হবে কোনদিন ভাবেনি অনিক। অতর্কিতে অস্ফুটে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে "দিয়া !!! " হাল্কা হলুদ কুর্তি পরিহিতা ঘুরে তাকায় .........। দুজনেই নির্বাক।

কতক্ষণ এভাবে ছিল ওরা নিজেরাই জানে না। মেয়েটি আপার বার্থ থেকে বলে উঠল " তোমরা দুজন যে পূর্বপরিচিত বুঝলাম। তাই বলে এভাবে দুজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুজনকে দেখবে!! আমরা যে আছি ভুলেই গেলে নাকি?"

লাল হয়ে ওঠে দিয়ার ফর্সা গাল। অপ্রস্তুত হয় অনিক।দিয়াই বলে" কেমন আছিস? কতদিন পর দেখা হল।"

"আছি ভাল।" কথা খুঁজে পায় না অনিক। সে দেখছিল এই চোদ্দ বছরে একটুও বদলায়নি দিয়া। সময় যেন থমকে গেছে। বয়স ও ছাপ ফেলতে পারেনি। 

অন্য দিকে দিয়া দেখছিল অনিক বয়স আন্দাজে বুড়িয়ে গেছে। সুন্দর কোঁকড়া চুলগুলো পাতলা হয়ে গেছে। সেই সুন্দর পেটানো শরীর আর নেই।

ছেলে মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে দিয়া "উনি আমার ছোটবেলার স্কুলের বন্ধু।" আর অনিককে বলে "এরা আমার ......" 

" জানি,ছেলে মেয়ে , তুনীর , তিতির, পরিচয় হয়েছে।" দিয়াকে শেষ করতে না দিয়েই অনিক বলে ওঠে।

কোনও দিন দেখা হলে দিয়াকে কত প্রশ্ন করবে ভেবেছিল অনিক। কিন্তু আজ ওর এই সুখী পরিবার দেখে কোন প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে না। অনিক মেলাতে পারে না নিজের চেনা অষ্টাদশী কিশোরীটির সাথে এই দিয়াকে। যেই দিয়ার অন্তর্ধানে রাতের পর রাত ঘুমায়নি সে, কতো খুঁজেছে, চিন্তায় পাগল হতে বসেছিল, সেই মেয়ে একটা নিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে এভাবে ! ওর ছেলে মেয়েকে দেখলেই বোঝা যায় সুখী পরিবার। কুপের ভেতরটা দম বন্ধ লাগে অনিকের। উঠে বাইরে চলে যায়।

রাতের অন্ধকার চিরে সরীসৃপের মত ট্রেনটা চলছে উত্তর পানে। অনিক উত্তর খোঁজে তার প্রশ্নমালার। 

যে দিয়াকে সে চিনত ছোটবেলা থেকে সে ছিল সহজ সরল, সাদা সিধা। কার্শিয়াংয়ের কাছে এক কনভেন্টে এক সাথে ছোটবেলায় পড়েছে দুজন। দিয়ার বাবা-মা ছিল না। এক কাকুর কাছে মানুষ। কাকিমা ভালবাসত না বলে কাকু ওকে হোস্টেলে রেখেছিল। ছুটিতেও বাড়ি যেতোনা। ওর কাকুর সাথে ঘুরতে যেতো কোথাও নয়তো কোনও বন্ধুর বাড়ি চলে যেতো। অনিকের মামাতো বোন উৎসা ছিল ওর বান্ধবী। বহু ছুটি ওরা একসাথে কাটিয়েছে। অনিকের বাবা মা ও খুব ভালবাসত ওদের। ওরা যে পরস্পরকে পছন্দ করে সবাই জানতো।

কলেজের প্রথম বছরের পরীক্ষার পর দিয়া ওর কাকাতো দিদির বিয়ে উপলক্ষে কলকাতা গেছিল। কাকিমা গত হয়েছিল আগের বছর। বহু বছর পর ও বাড়ি যাচ্ছিল। অনিককে কথা দিয়েছিল যে কাকুকে ওদের কথা জানিয়ে আসবে এবার। অনিক নিজে ওকে বাগডোগরা ছাড়তে এসেছিল। কলকাতা পৌঁছে ফোন করেছিল একবার দিয়া।সেই ২০০২ সালে মুঠোফোন সহজলভ্য ছিলনা। ল্যান্ডফোন আর STD বুথ ই ছিল শেষ ভরসা। সেই শেষ দেখা। 

তবে দিয়াকে খুঁজতে কলেজ থেকে ঠিকানা ফোন নং নিয়ে কলকাতা ও গেছিল অনিক। কিন্তু ঐ বাড়ি ওর কাকু আগেই বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে গেছিল। কোন খোঁজ পায় নি কেউ।

কতক্ষণ এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল অনিকের খেয়াল নেই। হঠাৎ দিয়া এসে প্রশ্ন করে "এভাবেই কি পুরো পথটা যাবি? কতো রাত হল !! এবার শুয়ে পড়।"

অনিক ঘুরে তাকায় "কোথায় হারিয়ে গেছিলি তুই? বিয়ে করলি জানালি না! কেন এমন বদলে গেলি?" 

দিয়া হাসে, বলে "আমরা যা ভাবি তা তো হয় না, যা হয় আমাদের হাতে থাকে না।এতো বছর পর আর কি শুনবি? শুয়ে পড়।"

"না। তোকে পাগলের মতো খুঁজেছি দিয়া। কতো রাত ঘুমাইনি । তোর চিন্তায় বাবা, মা, বন্ধুরা সবাই পাগল হয়ে গেছিল। আর তুই এমন সুখী নিরাপদ জীবন কাটাচ্ছিস কি করে? তোর একবার ও মনে হয়নি ......."

শেষ করতে দেয় না দিয়া, বলে "সময়,সময় মানুষকে বদলে দেয়। আমিও বদলেছি।এবার ঘুমোতে যা।" বলে দিয়া চলে যায় কুপে।

বাকি রাত ভাল করে ঘুমাতে পারলো না অনিক। এতদিন মনের মধ্যে একটা আশা ছিল দিয়া ফিরে আসবে একদিন, সেই আশাতেই নিজের কলেজেই চাকরিতে ঢুকেছিল সে। দিয়াকে এভাবে দেখবে কল্পনাও করেনি কখনো। ট্রেন এনজেপিতে ঢুকছে দেখে নিচে নেমে এলো। 

"গুড মর্নিং, আপনাকে কি কাকু বলে ডাকতে পারি?" তিতির প্রশ্ন করে। একটু হেসে মাথা নাড়ে অনিক। 

"আপনি যখন দার্জিলিঙেই আছেন দেখা তো হবেই।" তুনীর বলে ওঠে। দিয়া অবাক হয়ে তাকায়। বলে,"তুই ও দার্জিলিং যাচ্ছিস!!!"

"আমি ওখানেই কলেজে পড়াই এখন" অনিক বলে।

"মামনি, কাকু তো আমাদের সাথেই এক গাড়ীতেই যেতে পারে" তুনীর বলে দিয়াকে। 

"না, আমার গাড়ী আসবে। শিলিগুড়িতে কিছু কাজ ও আছে আমার" অনিক উত্তর দেয়। আর ব্যাগটা নিয়ে নেমে পড়ে। ওর এভাবে চলে যাওয়ায় সবাই একটু অপ্রস্তুত হয়।

গাড়ীটা পাকদণ্ডি পথে পাহাড়ে উঠছে। সামনেই কার্শিয়াং, দিয়া নিজের ছেলেবেলায় ফিরে যায়। এই পাহাড়ে এই চা বাগানে অনিকের হাত ধরে কত ঘুরেছে।

অনাথ মেয়েটা ছিল একটু স্নেহ ভালবাসার কাঙ্গাল। অনিক ছিল ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, ছোটবেলার সাথী। অনিককে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারতোনা সেদিন। আর একই পথে দুজনেই চলেছে অথচ দূরত্ব প্রচুর। এই জায়গায় ঘুরতে আসার পেছনে দিয়া কি সত্যিই একবার নিজের শিকড়ের কাছে ফিরতে চেয়েছিল? অবচেতন মনে কি অনিকের দেখা পাওয়ার একটা আশা কাজ করছিল? নিজেকেই প্রশ্ন করে সে। পরম নিশ্চয়তার সাথে একদিন অনিকের হাত ধরেছিল , এই পাহাড় ছিল সাক্ষী। কিন্তু সেই কথা রাখতে পারেনি সে। আজকের এই পরিণতির জন্য কাকে দায়ী করবে সে?

কাকাতো দিদির বিয়েতে গেছিল মনে একরাশ আনন্দ নিয়ে, বিয়ে মিটলেই কাকুকে অনিকের কথা বলবে ভেবেই রেখেছিল। বর আসার পরই ঘটল অঘটনটা। সবাই বর দেখতে চলে এসেছিল বাইরে। দিদি সেই ফাঁকে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছিল। ছেলেটা ছিল খ্রিষ্টান, কাকু তাই রাজি ছিলনা। দিদি কাকুর পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছিল, কাকু বোঝেইনি মেয়ে এভাবে তাকে বিপদে ফেলবে। কাকু জানতে পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ।

এদিকে পাত্রর বাবা জানতে পেরে কাকুকে বলছিল "আমাকে আপনি এ কি বিপদে ফেললেন! এখন বৌ না নিয়ে আমি বাড়ী ফিরি কি ভাবে?" 

কাকু দিয়ার হাত দুটো ধরে বলেছিল, "মামনি, তুই একমাত্র আমাদের বাঁচাতে পারিস। আজ আমার মানসম্মান সব তোর হাতে।"

দিয়ার দু চোখে অন্ধকার, কাকু ওর ভগবান। জীবনে আপন বলতে ওনাকেই জানে। সেই ছোটবেলা থেকে কাকিমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাকু ওকে মানুষ করেছে। পাত্রর দাদা বলেছিল "আপনার মেয়ে যেটা করল তারপর কি করে আপনার উপর ভরসা করি।" 

কাকু বলেছিল, "ও আমার মেয়ের চেয়ে অনেক বেশী, আর ওর জীবনে কেউ থাকলে আমি জানতাম সবার আগে। আমি ছাড়া ওর কেউ নেই।" 

দিয়া ছিল নির্বাক শ্রোতা। ওর ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছিল ওর চোখের সামনে, অথচ ও কিছুই বলতে পারছিল না। ওর এই চুপ করে থাকাকেই ওর সম্মতি ভেবে নিয়েছিল সবাই। 

পাত্র শুধু একবার ওকে বলেছিল, "আপনি জোর করে রাজি হচ্ছেন না তো" 

দিয়ার চোখে শুধু দু ফোঁঁটা জল ঝরে পড়েছিল। কাকুর জন্য ও নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত, কিন্তু সেই মুহূর্তে ওর কিছুই করার ছিল না।

"মামনি , তোমার চোখে জল। " তুনীরের কথায় বাস্তবে ফেরে সে। 

"ঠাণ্ডা লেগেছে রে," মুখে বললেও দিয়া জানে ছেলেমেয়ে খুব বুদ্ধিমান। ঘুম ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে গাড়ী। দিয়া তখনও জানে না বিধাতা তাকে কোথায় নিয়ে চলেছে।

কলেজে নিজের ক্লাস শেষ করে নিজের ঘরে ফিরছিল অনিক। আজ দুদিন কলকাতা থেকে ফিরে মন ভাল নেই। প্রিন্সিপাল ডেকে পাঠিয়েছে বলে বাধ্য হল যেতে। ডঃ বিশ্বাস এর এই শেষ মাস এই কলেজে। উনি অনিকদের ও প্রিন্সিপাল ছিলেন, খুব ভাল বাসতেন দিয়া ও অনিককে। ওনার সাহায্যেই দিয়াকে একসময় খুঁজেছে অনিক।

দরজা ঠেলে ঢুকতেই বৃদ্ধ বললেন, "এস, তোমার সাথে কথা আছে।" 

দিয়া কাল বিকেলে ওনার বাড়ি এসেছিল। দিয়ার না বলা কথাগুলো সব শুনল৷ অনিককে বুঝিয়ে বললেন উনি। 

অনিক চুপ করে সব শুনছিল। উনি থামতেই বলল, "আমার সাথে ওর বরের আলাপ হয়েছে সেদিন ট্রেনে। ওর ছেলে মেয়ে দুটো ভারি মিষ্টি।" দীর্ঘশ্বাস অনিকের গলায় ফুটে ওঠে। 

"ওয়েট, ওয়েট ডিয়ার, কি বলছ তুমি? কাকে দেখেছো?"ডঃ-বিশ্বাসের প্রশ্নে অবাক হয় অনিক। 

ওকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলতে থাকেন উনি -"আমার কথা শেষ হয়নি মাই ডিয়ার। তুমি কি দিয়াকে দেখে কিছুই বোঝনি? " 

এরপর উনি যা বললেন তার জন্য অনিক প্রস্তুত ছিল না। সেইদিন রাতে কাকু কন্যাদান করেছিল দিল্লির বিখ্যাত ব‍্যবসায়ী দীপক চৌধুরীর ছোট ছেলের হাতে। ওদের শ্বশুর বাড়ির নিয়ম মেনে শ্বশুর বাড়ী গিয়ে হবে সিঁদুর-দান, ও বিয়ের বাকি অনুষ্ঠান। কাকু সহ সবাই প্লেনে দিল্লি এসেছিল।কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ীর পথে ওদের গাড়ীটা এক্সিডেন্ট করে। দিয়া আর ওর বরের সাথে ছিল ওর বড়জা। আর সামনে ওর কাকু।একমাত্র দিয়া বেঁচে গিয়ে নিজের দুর্ভাগ্যের প্রমাণ আবার দিয়েছিল। পনেরো দিন হাসপাতালে লড়াই করে ও যখন ফিরল চৌধুরী ভবনে , ওর সিঁথি যে রাঙ্গিয়ে ওকে ঘরে তুলবে সেই নেই। 

এই ধাক্কা সামলাতে পারেননি ওর শ্বশুর মশাই, খবর শুনেই হার্টফেল করে বিদায় নিয়েছিলেন। বাড়িতে ওর ভাসুর দিগন্ত চৌধুরী আর তার তিন মাসের দুই মাতৃহারা যমজ সন্তান। এই বাচ্চা দুটির জন্যই দিয়া আবার বেঁচে উঠেছিল। সে জানতো না যে সে বিধবা না অবিবাহিতা, ওই বাড়িতে থাকার অধিকার আছে কিনা। বাচ্চা-দুটো যে মা কে হারিয়েছে আর মা হারানোর দুঃখ যে কি তা সে জানত। তাই ওদের মামনি হয়েই এই চোদ্দ বছর অজ্ঞাতবাস কাটিয়েছে। দিগন্ত চৌধুরী ওকে ছোট বোনের মতো রেখেছেন। এতো গুলো মৃত্যুর পর ওনার ও নিজের বলতে কেউ ছিলনা আর।উনিও নিজের স্ত্রী কে ভীষণ ভালবাসতেন তাই সেই স্মৃতি ভুলতে নিজেকে ব‍্যবসায় ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। ছেলে মেয়ে দুটোর ভার নিয়ে দিয়া অজান্তেই ওনার উপকার করেছিল, বাচ্চারা একটু বড় হয়ে সব জেনেছিল,কিন্তু ওরাও দিয়া অন্ত প্রাণ, মায়ের মতোই আঁকড়ে ধরেছিল ওকে। ওদের ছেড়ে দিয়া আর ফিরতে পারেনি।"

অনিকের মনে হল ও কোন গল্প শুনছে, এতো ঘটনাবহুল জীবনকাহিনী....... 

আবার ডঃ বিশ্বাস বললেন, "কি বুঝলে অনিক? এবার কি হবে?"

কি বলবে ভেবে পায় না অনিক। তখনও বুঝে উঠতে পারেনি সবটা।

"আমি কাল রাতে দিগন্ত চৌধুরী কে সব জানিয়েছি ফোনে। উনি আজ সকালের ফ্লাইটে এসেছেন ,আমার সাথে দেখাও করেছেন। আজ সন্ধ্যায় উনি তোমাদের চার হাত এক করে দিতে প্রস্তুত।" বললেন ডঃ বিশ্বাস।ওনার মুখে মিটিমিটি হাসি........

-''কিন্তু....." অনিক এতটাই চমকে উঠেছিল কথা খুঁজে পায় না। 

-"আর কোনো কিন্তু নেই। সব ব‍্যবস্থা হয়ে গেছে এতক্ষণে। " ডঃ বিশ্বাস বলেন।

আজ দিয়ার চোখে শুধুই জল। ওর মনে হচ্ছে এটা একটা মিষ্টি স্বপ্ন।অনিকের হাত ধরে দিগন্ত বাবু বললেন, "আজ আবার আমার ভাই কে ফিরে পেলাম।"

দিয়া বলে, -"কিন্তু আমার ছেলে মেয়ে......"

ওর কথা শেষ করার আগেই তুনীর আর তিতির বলে ওঠে "আমরা কিন্তু এখানেই মামনির স্কুলে বাকি পড়াশোনা করবো। পাপা মাঝে মাঝে আসবে। ছুটিতে মামনির সাথে আমরা যাব।কি গো কাকু ? তুমি রাজি তো ? " সবাই হেসে উঠল বাচ্চাদের এই সহজ সমাধানে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama