Mausumi Pramanik

Romance

2.9  

Mausumi Pramanik

Romance

হানিমুন

হানিমুন

8 mins
21.2K


অষ্টমঙ্গলা সেরে পরের দিনই সুগত অতসীকে নিয়ে দুন এক্সপ্রেসে চড়ে বসল। মুসৌরিতে এক সপ্তাহের জন্যে থাকবে তারা। হানিমুন ডেস্টিনেশান বিয়ের আগেই স্থির করা ছিল। বিয়ের দুদিন আগে আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বোনেরা সব এসে পড়েছিল। আইবুড়ো ভাতের দিন তো হাসি, আড্ডা, গানে জমে উঠেছিল আসর। সুগতও খুব খুশী ছিল। বিয়ে নিয়ে প্রথমদিকে যথেষ্ট খুঁতখুতানি ছিল তার, তবে বাবা ও কাকা’রা তার জন্যে উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধান করে এনেছিলেন।

অতসীদেরও মধ্যবিত্ত পরিবার; আত্মীয়স্বজন, হৈ-হুল্লোড় এ সবের মধ্যেই বড় হয়েছে সে। পল সায়েন্সে এম. এ করে বি.এড করছিল। সুগতর কোন আপত্তি নেই যদি তার বউ স্কুলে চাকরী করে। সেও নিজে একটি কলেজে ফুলটাইম আর অন্য দুটি কলেজে পার্ট-টাইম লেকচারার। তাছাড়া বাড়ির একতলায় তার কোচিং সেন্টারে ভীড় লেগেই আছে; সায়েন্সের টীচার সুগতদা বা সুগতস্যারকে ঐ এলাকায় কে না চেনে!

বিয়ে উপলক্ষে খুশির হাওয়া বইছিল বাড়িতে; কিন্তু ফুলশয্যার পরের দিনই হঠাৎ করে কেন যে সুগত এত গম্ভীর হয়ে গেল! অতসীর মুখে হাসি তো সেই বিয়ের দিন থেকেই ছিল না। সুগতর মা মনোরমা ভেবেছিলেন যে মা-বাপের একমাত্র মেয়ে, তাই হয়তো মনঃকষ্টে ভুগছে। কিন্তু এখন কেমন যেন অন্যরকম ঠেকছে। ফুলশয্যার পরের দিন সকাল সকাল চায়ের কাপ হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সুগত; ব্যাকব্রাশ করা চুলের ভেতর হাত চালাচ্ছিল অন্যমনস্ক ভাবে। মনোরমা ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,

“হ্যাঁ রে তুই কি এ বিয়েতে সুখী হসনি?”

“কি যা-তা বলছো মা? এখনি এসব কথা না বললেই নয়?” বিরক্ত সুগত নিজের ঘরে ঢুকে সশব্দে দরজা বন্ধ করে দেয়। মা ভাবেন, তার শান্ত, সুশীল স্বভাবের ছেলেটার দুদিনেই কি হাল হয়েছে? আর দেরী না করে স্বামীকে বলেই ফেললেন তিনি, “পই পই করে বললুম, ছেলের পছন্দ-অপছন্দ না জেনে বিয়ে দিও না,ছেলে আমার বিয়ে করতে চাইছে না,তাতে কি? অনেকেই তো আজকাল দেরী করে বিয়ে করে,এখন হল তো?কি যে সর্বনাশ হল তা কে জানে৷”

“কি হয়েছেটা কি বলবে? সকাল সকাল এত ভূমিকা করচো কেন? খুলে বলো দিকি?”

“ছেলে আমার সুখী হয় নি। অতসীকে ওর পছন্দ হয়নি...”

“ও কি এসব কথা বলেছে নাকি?”

“ওকি মুখ ফুটে বলার ছেলে!অন্য ধারার মানুষ আমার সুগত। বুক ফাটবে তবু মুখ ফুটবে না। আমি দেখে বুঝেছি। ওরা কাল রাতে আলাদা শুয়েছিল...”

“ও এই ব্যাপার। হো হো করে হেসে ওঠেন শুভেন্দু। “ আরে হানিমুন থেকে ফিরে এলে দেখবে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে...”

“হলেই ভাল,আমার বাপু অত জ্বালা আর সয় না৷”

মুসৌরিতে পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হল। টাউনের অনেক আগেই গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য হল তারা। প্রচুর স্নো'ফল হয়েছে। অন্ততঃপক্ষে পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে উঠলে তবেই তাদের হোটেলে পৌঁছানো সম্ভব। অতসী হিলতোলা জুতো পরেছিল; বরফের মধ্যে বারবার তার পা গেঁথে যাচ্ছিল; তার ওপর দু পায়ের মোজা ভিজে সপসপে হয়ে গেল। আর হাঁটতে পারছিল না সে। সুগত তাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে গেল খানিকটা পথ। কিন্তু এবার অতসী হার মানল, “আর পারছি না আমি,পারছি না;আমার পায়ে কোন সাড় নেই। যন্ত্রনা হচ্ছে৷”

সুগত ভয় পেয়ে গেল, ‘এইরে! ফ্রস্ট বাইট হল নাকি?’ কোনমতে একটা ঘোড়া-ওয়ালাকে ধরে এনে অতসীকে ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে দিয়ে বলল, “স্টা্র্লিং রিসর্ট...”। খাদের ধার দিয়ে ঘোড়াটা যেভাবে যাচ্ছিল অতসীর বুক ঢিপঢিপ করতে থাকে। কোনমতে পিছনে ফিরে দেখার চেষ্টা করে সুগতকে; তাকেও দেখতে পায় না। কিছুক্ষন আগে তো ভারী জুতোর সঙ্গে বরফের চাঁইয়ের সংঘর্ষের শব্দ কানে আসছিল, কিন্তু এখন তো শুধুমাত্র ঘোড়ার খুরের শব্দ আর হিমেল ঠাণ্ডা বাতাসের সনসন শব্দ! তার ওপর হাতগুলোও কেমন যেন অসাড় হয়ে আসছে। অতসীর চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। ঘোড়া-ওয়ালা কোলে করে তাকে হোটেলের লবিতে শুইয়ে দেয়। রিসেপসানে অতসী কোনভাবে তার স্বামীর নাম বলতে পেরেছিল। কোনরকমে তারাই তাকে রুমে পৌঁছে বিছানায় শুইয়ে দিল। তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল; প্রায় ফ্রোজেন হয়ে শুয়ে থাকল সে।

দুদিন পরে জ্ঞান ফিরল তার। এই দু'দিন দু'রাত সৌগত ক্রমশঃ তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করে গিয়েছে। হাতে পায়ে গরম তেল মালিশ করেছে, চামচে করে গরম দুধ, ব্র্যান্ডি, ভদকা ইত্যাদি খাওয়াবার চেষ্টা করেছে। যখন কোন কিছুই কাজে দিল না; তখন নিতান্ত কোন উপায় না দেখে, শুধু নিজের স্ত্রীকে বাঁচানোর তাগিদে তার শরীরের উত্তাপ দিতে বাধ্য হল। যদিও ঘুম ভাঙতেই অতসী বুঝতে পারল সব; তবুও সে সুগতর ওপর রাগ করল না। ‘আফটার অল আমি ওনার বিবাহিতা স্ত্রী...তাছাড়া উনি যা করেছেন আমাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্যেই করেছেন...” বরঞ্চ খুব মায়া হতে থাকল মানুষটির ওপর। তবুও কি কারণে কে জানে, সে ছেলেমানুষের মতন ডুকরে কেঁদে ওঠে।

“আই অ্যাম সরি অতসী,কোন উপায় ছিল না আর ভুলে যেও।ভেবে নিও যেন কিছুই হয়নি,আর কাউকে কিছু জানানোর দরকার নেই৷”

“স্নান করব...” চোখের জল মুছে শান্ত গলায় বলে অতসী।

“ হ্যাঁ, যাও,গীজার অন করেই রেখেছি আমি..”

বাথটবে নিজেকে অর্ধেকটা ডুবিয়ে দিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকে অতসী। এ বিয়ে সে করতে চায় নি। সে তো পলাশকে ভালবাসে। কিন্তু পলাশ টালির বাড়িতে থাকে। প্রাইভেট জব করে, তাও সেলসম্যানের। শুনেই বাবা-মা নিমরাজী হলেন। শুধু মা কিংবা বাবা নয়, জেঠু, মামনি, কাকীমা, মাসী, পিসী প্রত্যেকেই ওকে বোঝানোর খুব চেষ্টা করলেন,“তুই পলাশের সঙ্গে বিয়ে করে সুখী হবি না অতসী, বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ..ওদের স্টেটাস আর আমাদের স্টেটাস এক নয়৷”

“ভালবাসা কি স্টেটাস, জাতি, কমিউনিটি ওসব মানে পিসীমা? আমি যে ওকে খুব ভালবেসেছি!”

“ভালবাসা এক আর বিয়ে করে সংসার করা আর এক জিনিষ? তুই টালির বাড়িতে বা কলোনিতে থাকতে পারবি?” মা বললেন।

“ অতসী, তুমি যদি ডিসাইড করে থাকো যে পলাশকেই বিয়ে করবে, করতে পারো৷তবে কোন অনুষ্ঠান, জাঁকজমক ছাড়াই তোমাকে বিয়ে করতে হবে কারণ আমি লোক হাসাতে পারবোনা। তাছাড়া তুমি তো আমাদের আশা, স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে চাইছো; যেহেতু তুমি অ্যাডাল্ট, তোমায় তো আর জোর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে পারবো না...!”

অতসী বাবা-মাকেও কষ্ট দিতে চাইছিল না। আবার পলাশকে ভুলে যাওয়াও অসম্ভব। বিয়ের আগে বার চারেক ডেটিং এ গিয়েছে সুগতর সঙ্গে। সারপ্রাইজিংলি সুগত তাকে প্রেমিকা রূপে এতখানি রেসপেক্ট দিয়েছে;কখনো ক্যান্ডেল-নাইট ডিনার, কখনো সিঙ্গারকে রোমান্টিক গানের অনুরোধ করা, কখনো শ্যাম্পেনের সঙ্গে সেলিব্রেশান, কখনও হিরের আংটি, এতকিছুর মধ্যে সে পলাশের বিষয়ে বলে উঠতে পারলো না। সে যে কি করবে বুঝে উঠতে না উঠতেই বিয়ের ডেট এসে গেল।

তবে ফুলশয্যার দিন যখন সুগত তাকে আদর করতে চাইছিল, তখন সে এক ঝটকায় নিজেকে সরিয়ে নেয়। “না,আপনি আমায় ছুঁতে পারেন না৷আমার শরীর, মন অন্য কারোর জন্যে নিবেদিত৷”

অতি সংকোচ বোধ করে অতসী, নিজেকে দোষী মনে হতে থাকে তার। সে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সেদিন। সুগতর কাছেও বিষয়টা এতটাই আকস্মিক ছিল যে সেও বুঝতে পারছিল না যে কি করবে? আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, এমনকি ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তার প্রেস্টিজের দফা-রফা হয়ে যাবে যে! অত্যন্ত রূঢ় স্বরে বলেছিল,

“আগে বললে তো আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট হত না৷”

শুনে অতসী মরমে মরে যেতে থাকল। আজও তার বাথটবের জলেই ডুবে মরতে ইচ্ছে করছিল। ‘ফ্রস্টবাইট হয়ে মরে গেলাম না কেন? হায় ঈশ্বর! এর চাইতে তো খাদে পড়ে মরে গেলেও ভালো ছিল! সুগতর মত এমন একজন ভাল মানুষকে আমি কিভাবে ঠকালাম? পলাশের প্রেমিকা জানা স্বত্ত্বেও মানুষটা আমার কতখানি খেয়াল রাখছে, আমাকে কিভাবে যত্ন করছে। পলাশের সঙ্গে দেখা করে দেরাদুনের টিকিটও হাতে তুলে দিয়ে এসেছে!’ সুগত কেন এত কিছু করছে তার জন্যে? এও কি ভালবাসা? নাকি মহানুভবতা? মনে নানারকম দ্বিধা, দ্বন্দ নিয়ে সে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।

“এসো,গরম কফি খাও;বেটার ফিল করবে। তারপর আমরা সাইট সিনে যাব। আজ ওয়েদার বেশ ভাল। আমি গাড়ি বলে দিয়েছি...”

“আমি কোথাও যাব না...” কফিতে চুমুক দিয়ে বলল অতসী।

“সরি। আমার মনে ছিল না যে আমার সে অধিকারটুকুও নেই৷ও'কে, আমি না হয় একাই ঘুরে আসব৷” বিষাদ মাখানো স্বরে বলল সুগত।

“না তা নয়। আমার শরীর ও মন কোনটাই ভাল নেই...”

“সেকি! আর তিনদিন পরেই তো পলাশ আসছে,তোমার তো আর মন খারাপ হবার কথা নয়। ছুটি পেল না, তা নাহলে আরো আগেই আসত। আমি কথা দিয়েছিলাম যে তোমাদের মিলিয়ে দেব;কথা রেখেছি৷”

অতসী চুপ করে থাকে। সেদিন সারাটা দিন সে ভাবনার অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়। পরেরদিন সে খানিকটা স্বাভাবিক হল। সুগতর সঙ্গে বন্ধুর মত মিশতে থাকলো। বেড়াতে গেল। কেনাকাটাও করলো।

“তুমি আমার বাড়ির লোকের জন্যে এতকিছু কেন কিনছো অতসী? ফিরে গিয়ে আমি কি জবাব দেব বলোতো?”

“বলবেন অতসী খাদে পড়ে মরে গেছে,মরেই তো যাচ্ছিলাম...”

“কি যা তা বলছো? অতসী বেঁচে থাকবে;হয়তো সারাজীবন...আমার মনে...”

সুগতর চোখের গভীরতায় অতসীর কাজল-কালো দৃষ্টি ডুবে যেতে থাকল। ছলছলিয়ে উঠল পটলচেরা চোখ দুটো।

হর্ষ-বিষাদে আরো তিনটে দিন পার হয়ে গেল। “পলাশ ট্রেনে উঠে মেসেজ করেছিল...” সুগত জানায়। শুনে আতসী রিঅ্যাক্ট করে না। কাল পলাশ আসবে অথচ সে খুশি হতে পারছে না কেন? আগে তো তার আসার খবর পেলেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যেত। আজ কেন কোনরকম অনুভূতি হচ্ছে না? ‘তবে কি আমার অনুভূতি গুলো মরে গিয়েছে?’ অতসী ভাবে। আর সুগত দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ‘কাল পলাশের সঙ্গে অতসীর মিলন হবে। কাল অতসীকে পলাশের হাতে তুলে দিয়ে আমার ছুটি...’ দরজা খুলে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় অতসী। দূরে পাহাড়ের গায়ে আলোকসজ্জার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে নিজের মনকে প্রশ্ন করে, ‘কি চাও তুমি, মন? তুমি সুগতর সঙ্গে পলাশকে কমপেয়ার করছো কেন?’ মন উত্তর দেয়, ‘সুগত কত ম্যাচিওরড্, শান্ত, সুপুরুষ আর পলাশ বদরাগী, ছেলেমানুষ, ছ্যাবলামো ছাড়া তো আর কিছুই জানে না। ড্রিংক করার পরও সুগত কত শান্ত, পয়েসড্ আর ও তো মাতাল হয়ে যায়। তোমার সারা শরীরটা ছিঁড়ে, খুবলে খেতে চায়...’

সেইরাতে চোখে ঘুম নেই কারোর। না অতসীর না সুগতর। অতসীর মন ব্রেনের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। আর কি একটা শূন্যতা সুগতকে গিলে খেতে আসছে। ‘এর মধ্যেই কিভাবে আমি অতসীকে এতটা ভালবেসে ফেললাম, যে তাকে ছেড়ে থাকতে হবে বলে এতটা কষ্ট হচ্ছে?’ সুগতও তার মনকে মানাতে পারছে না।

পরেরদিন সকাল দশটায় পলাশ এল। অতসী রিসেপসানে নিজের লাগেজ নিয়ে ওয়েট করছিল। একটু দূরত্ব রেখেই দাঁড়িয়েছিল সুগত। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। পলাশ এসেই অতসীকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে লাগল। “লাভ ইয়ু সোনা;লাভ ইয়ু...লাভ ইয়ু...” আশেপাশের লোকেরা হাঁ করে দেখতে থাকে। অতসী অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। “আ! ছাড়ো পলাশ! আমার এখনো ডিভোর্স হয়নি; তাছাড়া এরা সকলেই জানে যে আমি সুগতর স্ত্রী।”

“সো হোয়াট?”

কে বোঝাবে পলাশকে? সে সুগতর দিকে এগিয়ে যায়। হ্যান্ডশেক করে বলে, “এই যে মশাই, আমার জিনিষকে টাচ ফাচ করেন নি তো...ইনট্যাক্ট আছে তো...?”

সুগত উত্তর না দিয়ে রুম কী ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। “ও ধন্যবাদ...” পলাশ অতসীর হাত ধরে টানতে টানতে রুমের দিকে নিয়ে যায়। যাবার সময় বারবার অতসী সুগতর দিকে তাকাতে থাকে। সুগত বাইরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিল। তবুও তার চোখের কোনে যে জল চিকচিক করছিল তা অতসীর চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না।

পলাশ যখন অতসীকে বিছানায় ফেলে আদর করতে ব্যস্ত, সেইসময়ে সুগত ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে, হুইস্কির গ্লাস হাতে, উদাস বাউলের মত। কতক্ষন এইভাবে কেটে গেল কে জানে। পশ্চিম আকাশে সূর্য যখন ঢলঢল, তখন ডোরবেলটা বেজে ওঠে। চমকে ওঠে সুগত। দরজা খুলতেই অতসী লাগেজ নিয়ে ঢুকে এল।

“কি হল? কিছু নিতে ভুলে গেছো নাকি?

“না। নিজের ভুলটা শুধরে নিতে এলাম।”

“মানে?”

“আমি কি আমার বর্তমান স্বামীর কাছে, তার স্ত্রী রূপেই থেকে যেতে পারি?” কান্নাভেজা স্বরে বলে অতসী।

“আর পলাশ?”

“ওকে চলে যেতে বলেছি। ওর সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েই এসেছি আমি...”

“কেন? কি এমন হল যে...”

অতসী এগিয়ে এসে সুগতর মুখ নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে।

“ও আমার অতীত আর তুমিই আমার বর্তমান...”

“কিন্তু ও তোমার প্রেম...”

“ আর আমি যে তোমার প্রেম...গ্রহণ করো আমায়...”

অতসী সুগতর বুকে মাথা রাখে। সুগত দু বাহু দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। সুগত যে অসম্ভব ব্রডমাইন্ডেড আগেই তার প্রমাণ দিয়েছিল, তাই অতসীকে গ্রহণ করতে ওর কোন দ্বিধা থাকার কথাই নয়।

পসিটিভ ইণ্ডিয়া

 

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance