হানিমুন ফেজ (ধারাবাহিক) ২
হানিমুন ফেজ (ধারাবাহিক) ২


হানিমুন ফেজ (ধারাবাহিক)
২
অঘ্রাণের গোড়ায় মিছরি কণিষ্কর বিয়ে হয়েছে। হালকা শীত ছিলো। তারপর পৌষে এবার খুব জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। উত্তর ভারত শীতে বরফে বৃষ্টিতে কাঁপছে। পৌষের শীতে আর ওদের হানিমুনে যাওয়া হয়ে ওঠে নি। তার ওপর কণিষ্কর কলেজের পরীক্ষার খাতা দেখার বিরাট চাপে, নৈশপ্রেমে পর্যন্ত বিষম ব্যাঘাত ঘটেছে। মিছরিরও ক্লাস নাইন আর ইলেভেনের টার্মিনাল, টেন টুয়েলভের টেস্টের গাদাগুচ্ছের খাতা নিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা ছিলো। তার মধ্যেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে বাড়ীতে জোড়ে নেমন্তন্ন খেতে যাওয়ার ধূম। অবশেষে মাঘের গোড়ায় কাজের চাপ খানিকটা কমলে পরে, ঐ কলকাতাতেই ছুটির দিনে অথবা বিকেলে বা সন্ধ্যেবেলায় নাটক, সারাদিন ধরে এক্সিবিশন, নিক্কোপার্ক ইত্যাদি করে, কণিষ্ক ক'দিন মাস দুয়েকের পুরনো বৌকে নিয়ে ঘুরে টুরে একটু প্রেম-ট্রেম করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সেখানেও বিরাট ব্যাগড়া। সর্বত্রই কণিষ্কর ছাত্রছাত্রীর ছড়াছড়ি একেবারে। একবার একটু মিছরির হাতটা ধরে সবে ভিক্টোরিয়ার নুড়ি বিছানো পথে পা রেখেছে কি রাখে নি, অমনি পেছনের নুড়িপাথরে কড়মড় কড়মড় আওয়াজটা যেন হঠাৎই বেড়ে গেলো। তারপর যথারীতি আশঙ্কা সত্যি করে, এবারে একেবারে সামনে এসে উদয় হলো একজন বা দু'জন নয়, একদম দু'জোড়া ছাত্রছাত্রী। কণিষ্ক মিছরির প্রেম মাঠে মারা। প্রেম কলকাতা ছেড়ে বৃন্দাবনে পালাবার পথ পায় না। শেষমেশ সেই জোড়া ছাত্রছাত্রী যুগলের খপ্পর থেকে মুক্তি মিললো কফি সহযোগে স্ন্যাকস খেয়েদেয়ে। মিছরি বেচারি সাহিত্যের ছাত্রী। আর কণিষ্কর ছাত্রছাত্রীরা সেদিনই কফি খেতে খেতেই কেমিস্ট্রির সব জটিল তত্ত্ব তালাশ বুঝে নেবে পণ করেছিলো যেন। বিরস বদনে মিছরি নিজের নেলপালিশ পর্যবেক্ষণ করে কফিতে টুকটুক করে চুমুক দিতে থাকলো। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি গোছের মুখভঙ্গি করে কণিষ্ক চারজন পথচলতি ছাত্রছাত্রীকে বুঝিয়ে অর্গানিক কেমিস্ট্রির কিছু জট ছাড়াতে লাগলো। এবং অবশেষে ঘড়িতে চোখ রেখে কণিষ্ক টকাস করে বলে বসলো, "আমাদের জন্য একজন আর্ট গ্যালারিতে ওয়েট করছে। চলো তোমরাও, ঘুরে দেখে আসা যাক।"
ছাত্রছাত্রীদের সবারই মোটামুটি কাজ পড়ে গেলো। সবাই স্যারকে আর ম্যাডামকে নমস্কার জানিয়ে বিদায় নিলো। এবং মিছরিকে নিয়ে কণিষ্ক চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে এসে আর্ট গ্যালারিতে ঢুকলো। চেনা কেউ সামনে পড়লেই আবার চিত্তির চৌষট্টি কলা পূর্ণ একেবারে। আর্ট গ্যালারিতে ঢোকার মুখে দু'জনেই চোখে চোখে হেসে নিলো। তখনই ঠিক করে নিয়েছে কণিষ্ক, "নাহ্, এই কলকাতা শহরটায় প্রেম করবার একটু নির্ঝঞ্ঝাট জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর। চলো এবার ক'দিনেের জন্য ঘুরেই আসি বাইরে কোথাও থেকে।"
সুতরাং প্ল্যান মাফিক কণিষ্ক কলকাতায় বসেই অনলাইনে ফ্লাইট, ট্রেন, হোটেল, গাড়ি সর্বস্ব বুকিং সেরে ফেললো। দিল্লী ছুঁয়ে সিমলা, কুলু, মানালি, রোটাংপাস... ঐ দিন দশেকের মধ্যে যতটুকু হয় আর কি! ডিউ হানিমুন! মাঘের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ২৩শে জানুয়ারি ২৬ জানুয়ারির সাথে একটু অ্যাডজাস্ট করে দু'জনেই ছুটিছাটা নিয়ে ফ্লাইটে চেপে বসলো।