Jayita Banerjee

Tragedy Action Inspirational

4.4  

Jayita Banerjee

Tragedy Action Inspirational

গুড টাচ ব্যাড টাচ কলমে জয়িতা

গুড টাচ ব্যাড টাচ কলমে জয়িতা

4 mins
391



বাচ্চা মেয়েটি তখন ক্লাস ফোর এ পড়ে।সবে সবে একটু একটু করে বড় হতে শুরু করেছে।কিছুই জানেনা।কিছুই মানেনা।শুধু বদমাইসিতে একদম ফার্স্ট।

"কিরে পড়াশোনা টা কর?এইভাবে যে কি হবে মেয়েটার কি জানি" বলে ভাবতে বসত রুমির বাবা মা।

"জানো আমার মেয়ে কিচ্ছুটি পড়েনা।ধুর ধুর ভাবছি এবার স্কুল থেকে ছাড়িয়ে ই দেব।"

বারবার লোকজনের কাছে এইসব বলা বাবা মা নিতান্তই মেয়েকে নিয়ে একদম ই টেনশন এ ছিলেন না।বরং অহং বোধ করতেন।ভাবতেন তাদের একরত্তি মেয়েটি কিভাবে আস্তে আস্তে সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে বড় হচ্ছে।কিভাবে নিজের পড়া টুকু নিয়ে সন্ধ্যাবেলা ঠিক বসে যায়।নিজের টা এইটুকু থেকে ধীরে ধীরে বুঝতে শিখেছে।

মা বাপির কাছে সে অনেকটা আদরে মানুষ ।বাবা তো মেয়েকে দিয়ে দিয়ে এমন অভ্যাস করেছে যে কিছু না দিলেই সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদে আর কাঁদে

কিছুতেই তাকে থামানো যায়না।

"প্রচুর আস্কারা দিচ্ছ কিন্তু মেয়েকে।এই তোমার জন্য মাথায় উঠে নাচছে।"

একবার রুমির বাবা বলতো মা কে আর মা বলতো বাবা কে।কিন্তু এত সব কিছুর মাঝেও রুমি নিজেরটা নিজে ঠিক আদায় করে নিতো।কারণ

একরত্তি মেয়ে চোখের মণি যে।

"মা তোমার এত ভুঁড়ি হয়েছে কেন,দিনদিন তোমার ভুঁড়িটা বেড়েই চলেছে।"

হঠাৎ একদিন প্রশ্ন করে রুমি তার মাকে।

শিশুদের মন বড়ই নিষ্পাপ।সে যদি সব বুঝতো তাহলে তো হয়েই যেত।

প্রতিদিন সকালে যে চারটি রসগোল্লা সে একা একাই উদরসাৎ করতো এবার তার ভাগ নেয়ার জন্য কেউ আসছে।প্রথম প্রথম এই রসগোল্লার ভাগ দিতে হবে ভেবেই তার দুঃখ হতো।কিন্তু পরে ভাবলো আহা ওর থেকেও কেড়ে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

এসে তো গেছে।এমন নরম তুলতুলে রসগোল্লার মত।মা এর ভীষণ আনন্দ।

সাথে রুমি ও ধিনধিন করে নাচছে।

তার ভাই হয়েছে।

"আমার মুনটি পুঁটি চুটি কুটি" সে ভাইকে তো আর কাছ থেকে আদর করতে পারছেনা।পুরো গলু দেখতে।

কিন্তু আছে মামার বাড়ি।এখন তো রুমির মায়ের রেস্ট নেয়ার সময়।তাই রুমির মা এখন প্রায় তিন মাস ও বাড়িতেই থাকবে।

এদিকে রুমির মায়ের থেকে দূরে থেকে রুমিরও ভীষণ মন খারাপ।

অগত্যা বাবা কে বলে "ও বাবা আমায় মামার বাড়ি নিয়ে যাবে গো,অনেকদিন মা কে গলু কে দেখিনি"।

এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন যাচ্ছে।এখন আবার যাবে।কি আনন্দ।

কিন্তু এই যাওয়ার সময় হলো একটি ছোট্ট ব্যাপার যেটা রুমির মনে চিরকাল দাগ কেটে গেল।

মামার বাড়ি যেতে তো বাস চাপতে হয়।তাই বাপির সাথে রুমি চেপে বসলো বাস এ।বেশ জানালার ধারের সিট টা পেয়েছিল।কিন্তু জানালার এদিকে একজন কাকু মতন লোক বসে,রুমির তাকে একটুও পছন্দ হয়নি।কি জানে কি কারণ।বাস এ ওঠার পর থেকেই কিরকম যেন বাজে ভাবে রুমিকে দেখছিল।আর রুমি তো তারপর বাসের ধারের জানালায় উদাস হয়ে তাকিয়ে।

মন টা সকাল থেকেই বেশ ফুরফুরে।ওর গলু মলু ভাইটাকে দেখতে যাবো বলে কথা।

বেশ জানালা দিয়ে বাইরের একে একে পেরিয়ে যাওয়া মাঠ ঘাট পথ গাছ সব দেখছিল।যেন মনের সবটা দিয়ে উপভোগ করছিল প্রকৃতির অপার বিস্ময়।

হঠাৎ যেন তার মনে হলো তার পায়ে যেন কি একটা সুড়সুড়ি মতো লাগছে।রুমি তো অত পাত্তা দেয়নি।কি আবার হবে।হয়তো জামাটা উড়ছে।

আবার বেশ কিছুক্ষণ পর তার পায়ে সে একটা হালকা হাতের স্পর্শ পেলো।

এতক্ষণ সে সত্যি কিছু বোঝেনি।শুধু এটা বুঝেছে যে স্কুলে যে গুড টাচ ব্যাড টাচ শিখিয়েছে সেটা বোধহয় এবার সে বুঝছে তার সাথে কি হচ্ছে।

খুব খুব অস্বস্তিতে পড়লো রুমি।না পারছে বাবাকে ডাকতে না পারছে কিছু করতে।কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ সহ্য করা যায়।হঠাৎ তার মনে হলো বাবাকে বলা দরকার।অনেক্ষণ পর বাবাকে দেখতে পেয়ে রুমি ডাকলো।কিন্তু লোকটি এতই অসভ্য যে সে কাউকে তোয়াক্কাই করছে না।এবার রুমির মনে হলো ,"না এবার আমার কিছু করা উচিত"।

অনেকক্ষণ ধরে থাকতে না পেরে এবার পাশের পিছনের সিটে বসা এক কাকুকে বললো ,"কাকু কাকু দেখুন না এই কাকুটা আমার সাথে কিরকম করছে?"

বাপি ছিল অনেক দূরে ,বাসের একদম সামনের সিটে।আর এত ভিড়ে ডাকলেও শুনতে পাবেনা।তাই সে পিছনের সিটে বসা লোকটিকে ডাকলো।

পিছনের সিট থেকে লোকটি চেঁচিয়ে বললো,

"দাদা একটু সাবধান।বুঝলেন তো।এমন খাবেন না জন্মেও ভুলবেন না"।

রুমির পাশে বসা লোকটির তো কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই।সে তার অসভ্যতামি করতে ব্যস্ত।

রুমি এবার দেখলো বাবাকে না দেখলে হবে না।সে আর থাকতে না পেরে চিৎকার করে বললো

,"ও বাবা দেখনা লোকটা কিরকম করছে,খালি গায়ের মধ্যে ঘেঁষে আসছে"।

ওর বাবা সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পেয়েই চলে এলো ওর কাছে।কিন্তু বাসে প্রচুর ভিড়।দাঁড়ানোর জায়গাই নেই।কিন্তু তাও রুমির কাছে এসে পৌছালো।বললো,

"হারে মা কি হয়েছে।তোকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছি কিরকম একটা উশখুশ করছিস।শরীর ঠিক আছে তো?"রুমি আর কিছু না বলে পাশের কাকুটার দিকে তাকালো।

বাবা কিছু আন্দাজ করলো।তারপর

লোকটিকে বেশ তিরিক্ষের স্বরে বললো,"কি ব্যাপার বলুনতো, আমি অনেকক্ষন ধরে লক্ষ্য করছি আপনি আমার মেয়েটাকে হাঁ করে কেমন ভাবে দেখে যাচ্ছেন। কি ব্যাপার মশাই?এত বুড়ো হয়ে মরতে চললেন আর একটু জ্ঞান হলোনা এখনো।পাবলিক এর পেটানি খেয়েছেন?"

লোকটি অমনি উল্টে রুমির বাবাকে বললো,"ও বাবা,আমি কি করলাম,আজকাল কারোর যান না ,এত যদি বাস পছন্দ না হয় তবে যান ট্যাক্সি করে"।এই সব এদিক ওদিক কথা হতে হতে মাঝখান থেকে রুমি দিলো কেঁদে।কারণ রুমির খুব অসহায় লাগছিলো নিজেকে।

পরের স্টপেজে বাবা রুমিকে নিয়ে যখন নামবে নামবে করছে,হঠাৎ করে সেই অসভ্য লোকটি এসে রুমির বাবার কলার টি ধরলো।"এই যে উল্টোপাল্টা বলে চলে যাবেন,ভেবেছেন ছেড়ে দেব",প্রায় ধস্তাধস্তি কান্ড।স্টপেজ আসতেই সে নেমে দিলো বেদম ছুট।বেশ কিছুক্ষণ পর রুমির বাবা খেয়াল করলো তার মানিব্যাগ টি হাওয়া।রুমির বাবার খুব মন খারাপ হলো।তবু সেই নিয়েই চললো তার মামার বাড়ি।

রুমি গিয়ে তার গলুমলু ভাই কে দেখে তো খুব আনন্দ।কিন্তু বাস এর কোনোকথা সে কাউকে বললো না ।ভাবলো শুধু শুধু চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই।

সে মনে মনে এটা ভেবেই নিলো যে তাকে সেল্ফ ডিফেন্স শিখতেই হবে যে।আর সে মেয়ে,তাই তাকে নিজেকে বাঁচাতে আরো আগে শিখতে হবে।কারণ নিজেকে না রক্ষা করলে সে অপরকে কি করে রক্ষা করবে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy