Jayita Banerjee

Comedy Horror Romance

2.0  

Jayita Banerjee

Comedy Horror Romance

বালুডাঙ্গাতে কলমে জয়িতা ব্যানার্জী

বালুডাঙ্গাতে কলমে জয়িতা ব্যানার্জী

6 mins
326



আগে থেকে ঠিক করলে কোনো কিছুই হয় ওঠেনা।সেরকম আমাদের বেড়াতে যাওয়া ও এরকম ই হয়।তার কোনো কিছু ঠিক ঠিকানা থাকেনা।

যখন মনে হয় তখনই বেরিয়ে পরই লোটা কম্বল নিয়ে আমরা দুটি কিম্ভুতকিমাকার প্রাণী।

যখন যেখানে ইচ্ছে টুক করে বেরিয়ে তারপর ভাবি

"এই রে যা,,,এটা নিই নি তো ওটা নিই নি তো"

হা আমরা এরকম ই।

তো এরকমই একদিন হঠাৎ আমায় অন্যরকম ভাবে অবাক করে দিয়ে আমার সামনে হাজির করলো একজোড়া টিকিট।

এমনিতেই বেড়াতে যাওয়া নিয়ে আমার সাথে আমার বরের প্রায় ই ঝগড়া।তাতে আবার নিজে টিকিট কেটে আমায় অবাক করে দেবে এটা তো ভাবাই যায়না।

আমি তো মুখ হাঁড়ি করে বসে আছি।ভাবছি ন্যাকামো করে যাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ সাধাসাধির পর সে চলে গেল ।

আমি একটু টেরিয়ে বেঁকিয়ে আড় চোখে তাকে চলে যেতে দেখে একপলক এ দেখলাম ,দেখলাম না বলে বলা ভালো ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওগুলোর ওপর।

"ওমা, এ যে পুরীর টিকিট গো,"

আমি আর উত্তেজনা চেপে রাখতে পারলামনা।

সঙ্গে সঙ্গে প্রায় চেনাপরিচিত কিছুজনকে ফোন করে বলে দিলাম।

ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার বাপের বাড়ির সৌভাগ্যেই হয়েছিল।আর আমার জোরে আমার বরের।

কিন্তু এই যে আমায় অবাক করে দিয়ে রীতিমতো সারপ্রাইজ দিয়ে কোথাও নিয়ে যাওয়া এটা বরের থেকে অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত ছিল।তা সে যখন এটা ঘটিয়ে ফেলেছে তাই এখন আমার আনন্দের আর সীমা নেই।


রীতিমতো বুকে পাথর চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে অনেক কষ্ট করে বরের ওপর প্রভূত অত্যাচার করে আমি তিনটি মাস কাটালাম।

চোখে ঘুরছে প্রচন্ড প্রবল সমুদ্রের হাতছানি।আর বুকে সময়ের ঢিপঢিপ।

অবশেষে সেই দিন।সেই যাওয়ার দিন।

রাতের ট্রেন ছিল আমাদের।কদিন আগে থেকেই বরবাবাজি নিজে নিজেই সব গুছিয়ে গাছিয়ে রেডি করে রেখেছিল।

তাই আর বেশি পরিশ্রম আমার লাগলনা।

সন্ধ্যে সন্ধ্যে করে বেরিয়ে স্টেশন এ পৌঁছালাম।

ট্রেন যথারীতি ঠিক সময়ে এলো।আর আমরা মনে একরাশ ধুকপুকানি নিয়ে উঠলাম।

পরদিন সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম পুরী স্টেশন।

আহা অপ্রত্যাশিত সেই পুরী যেটা ভাবতেও পারিনি বরের কাছ থেকে পেয়ে যাবো।

যখন স্টেশন এ নামলাম তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।আকাশ একেবারে অঝোরে কেঁদে চলেছে।কান্না আর থামেই না।

সেই বৃষ্টির মধ্যে ভোরের আলোর কোনো চিহ্ন ই নেই।চারিদিকে ঘনঘটা করে মেঘ।

মনে হলো বেশ তোড়জোড় করে আমায় জ্বালাতে এলো।

মনটা খুব খারাপ লাগছিল আর রাগ হচ্ছিল।

"কি বৃষ্টি রে বাবা,একেবারে সব ভিজিয়ে তবে ছাড়বে"।

এই সব কথা বলতে বলতে স্টেশন থেকে একটা অটো ধরলাম।

বেশ কুড়ি মিনিট পরে সেই স্থান চোখে পড়লো যার জন্য এত তোড়জোড় সেই তিনমাস থেকে।


"নীলাম্বরাশির অতন্দ্র তরঙ্গে কলমন্দ্রমুখরা পৃথিবী"

কবিঠাকুর তুমি সত্যি মিলিয়ে দিলে বটে,

জলরাশির সেই টলটলে শব্দে চারিদিকে মুখরিত।সব ভুলে গেছি।বৃষ্টির ফোঁটার ধারালো ছুরি যেন আমার মন কে আর আঘাত করতে পারলো না।আমি তাকিয়ে রইলাম।কিন্তু মন তো ভরলো না।কারণ এটা তো সবে শুরু হলো।


তো যে হোটেলের গেস্ট রুম আমাদের জন্য বুকড ছিল তাতে গিয়ে আমরা উঠলাম তখন বাজে ভোর 5টা 15 বা 20 নাগাদ।

বেশ আলোআঁধারী ব্যাপার চারিদিকে।হোটেলের একটা ছেলে বেশ বিরক্তিকর চোখে ঘুম থেকে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।তারপর বেশ চোখটাকে কচলে কচলে লাল করে আমাদের কাছে এসে বললো

"কিছু বলবেন ??সব রুম কিন্তু ভর্তি"

আমরা বললাম

"আমাদের তো আগে থেকে বুক করা আছে একটু দেখুন না"

ছেলেটা আরো বিরক্তিকর ভাবে দেখে বললো

"যত্ত সব,এই ভোরবেলা প্রতিদিন ঠিক আমার ঘুম ভাঙানো,ধুর..."

বলে বিরক্তি সহকারে আমাদের সব কাগজপত্র দেখে একটা রুম এ নিয়ে গেল।

রুমে ঢুকতেই একটা বোঁটকা গন্ধ পেলাম।একটা ছোট্ট রুম তারওপর বিছানার চাদর ভীষণ নোংরা।একটা ঘেন্না ঘেন্না ভাব হয়ে আমার বমি আসতে আরম্ভ করলো।

আর বাথরুম তো ভীষণ বদ্ধ আর নোংরা।আমরা মিনিট পাঁচেকের বেশি থাকতে না পেরে দুজনেই রুমে চাবি দিয়ে বেরিয়ে এলাম।

বাইরে বেরিয়ে একটু যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।ততক্ষণে আকাশ তার একঘেঁয়ে ঘ্যানঘ্যানপনা থামিয়েছে।আর সূর্য্যিমামা একটুকরো আলো দিয়ে একটু একটু করে সাজাতে আরম্ভ করেছে।

সমুদ্রের প্রবল জলরাশি দেখে আমি তখন বিস্মিত।

এদিকে আমার বরের মনে তো এতটুকু শান্তি নেই।

হোটেলের যা ঘরের ছিরি তাতে কার ই বা ওখানে থাকতে ইচ্ছা করবে চারদিন ওখানে।

অগত্যা বাবাজীবন আমায় সমুদ্রের পারে বসিয়ে রেখে অন্য হোটেল খোঁজা শুরু করলো।

মন দিয়ে খুঁজলে সব ই পাওয়া যায়।তাই আমাদের কপালেও জুটে গেল বেশ ভালো একটা হোটেল।একদম সমুদ্রের একদম বিপরীতে চৈতন্যমূর্তির সামনে।

বেশ ভালো খানিকটা টাকা দিয়ে আমরা একটা রুম নিলাম।কিন্তু ওই যে আগের হোটেল টাতে এত টাকা আগে থেকে দেওয়া আছে ,সেটা আদৌ ফিরত পাবো কি সেটা যখনই আমাদের মনে আসতে লাগলো তখনই মনটা একটু খারাপ হতে লাগলো।

বাকি সব ঠিক ই ছিল।

আমরা ওই হোটেলের তিন তলায় একদম কোনের দিকের একটা ঘর পেয়েছিলাম।

বেশ লাগছিলো।

রুমের বারান্দা থেকে সমুদ্র দেখতে দেখতে আমি সব ভুলতে বসি।

তারপর চেঞ্জ করে আমরা ঢেউ খেতে বেরিয়ে পড়ি।

অনেক অনেক পরে এসে রেডি হয়ে খাবার খেতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।অগত্যা বিকালে না বেরিয়ে সন্ধ্যায় বেরোতে হয়।

হঠাৎ বলতে শুরু করলাম

"চলো শ্মশান টা দেখে আসি"

চললাম স্বর্গদ্বারের কাছে।

একটার পর একটা লাশের লাইন ।

আর লাশপোড়া গন্ধে চারিদিক ভরা।

ওখান থেকে এলাম

সমুদ্রের তীরের বসানো বিভিন্ন দোকান,ওখানকার চেয়ারে বসে সেই জলের প্রবল জলস্রোত অনুভব করা এই সব করতে করতে কখন যে রাতের খাবার সময় হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি।

হোটেলের নীচে আমরা ডিনার শেষ করে রুমে ফিরে এলাম।

আর তাকিয়ে থাকতে পারছিলাম না।শুধু চোখের পাতা বুজে আসছিল।

কখন যে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেছি তার পাত্তাই নেই।হঠাৎ মাঝরাতে আমি আমার কাঁধের কাছে একটা হালকা নিঃশ্বাস অনুভব করি।

নিঃশ্বাস এর শব্দ ক্রমেই গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে থাকে।

আমি ভাবলাম বরবাবাজি হয়তো একটু কাছাকাছি চলে এসেছে।ঘুমের ঘোরে শুধু একবার চোখটা হালকা তাকিয়ে দেখলাম সে তো খাটের ওই প্রান্তে আর আমি এই প্রান্তে।তাহলে তার নিঃশ্বাস এর আওয়াজ আমার ঘাড়ে কেন পড়বে?

বেশ কিছুক্ষণ আবার ঘুমিয়েছি।হঠাৎ আমার কানের কাছে আবার হালকা ভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ।

আমি দরদর করে ঘামতে থাকলাম। জিভ পুরো শুকিয়ে কাঠ।তবে এই ভাবে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি কি জানি।

আর আমার সকাল বেলা ওইসব কথা বলতে মনেই থাকতো না।

দীর্ঘ দুই দিন এই ঘটনা এক ভাবে ঘটে যাওয়ার পর শেষ দিন রাতে আমরা দুজনেই ঘুমোতে যাচ্ছি।

হঠাৎ করে শুনি বাথরুমের কল খোলার আওয়াজ ।আমি আমার বর কে জোরে এক ধমক দিয়ে বললাম

"বাড়িতেও কল খুলে আসো, আর এখানেও??যাও গিয়ে বন্ধ করে এস"

সে আমার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো

"না আমি তো বন্ধ করে এলাম"

আমি রেগে গিয়ে বললাম "দ্যাখো বেকার মিথ্যা বলে লাভ নেই,যাও গিয়ে বন্ধ করে এস তো"

আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে গেল বন্ধ করতে।

এবার হয়তো মিনিট পাঁচেক ও হবেনা ,কল আবার খুলে জল পড়তে আরম্ভ করলো।

এরপর দুজনে দুজনের মুখ চাওয়াচায়ি করতে লাগলাম।

কপালের কোনে বিন্দুমাত্র ঘাম সবে জমতে শুরু করেছে এসির ঠান্ডা হাওয়া সত্ত্বেও।

কিন্তু দুজন দুজনকে আর এরপর থেকে কোনো কথা বলিনি।

শুধু একেওপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছি আর ঢোঁক গিলছি।

তিনি উঠে আবার কলটি বন্ধ করলাম।

কিন্তু মুখে স্পিকটি নট হয়ে থাকলাম।

আসলে হয়তো আমরা দুজনেই জানতাম আমাদের আশেপাশে শুধু এই হোটেলের এই রুমটির মধ্যে যা ঘটনা ঘটে চলেছে তা যদি একে অপরকে শোনাই তাহলে হয়তো নিজেরাই প্রচন্ড ভীত হয়ে পড়ব।

আর অদ্ভুত ভাবে আমাদের দুজনেরই মনে থাকতো না আগের দিন রাতে কি ঘটেছে।সে কি করেই বা থাকবে।এত ঝগড়া হতো ।

তো যাই হোক এরপর আর একদিন থাকার পালা।তারপর দিন ই ট্রেন ।

সেদিন রাতে সবে সমুদ্রের পাড় থেকে হাওয়া খেয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে রুমে এসেছি।

মনে মনে বলছি

"অদ্য রজনী কি হবে তা ভগবান ই জানেন"।

তিনি গেছেন বাথরুম এ ফ্রেশ হতে আর আমি ঘরটাকে একটু আলোআঁধারী করে হঠাৎ ছবি তুলতে মন গেল।

ছবি তুলতে তুলতে কি মনে হলো যেন কেউ খুব কাছে আমার দাঁড়িয়ে আছে।

না তাকে ছোঁয়া যাবেনা সেটা বুঝে গেছি,কোনো বাস্তবের সঙ্গে তার মিল নেই তাও বুঝে গেছি।এক অদ্ভুত রহস্যময়তা আমায় গ্রাস করেছিল।

কিন্তু আমি,যে এত ভীতু,বাড়িতে বাথরুম যেতে যার বেশ ভয় লাগে,সামান্য সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে হাজারবার রামনাম জপ করা যার অভ্যাস সে কি না খুঁজে চলেছে "রহস্যময়তা"।

এখন ভাবলে বেশ কিরকম একটা গা ছমছম ব্যাপার বলে মনে হয়।

রাতে শোওয়ার কিছুক্ষন বাদে বাদেই আমার বর নাকি কার একটা কান্নার আওয়াজ পেয়েছিল।

সে তো রীতিমতো উঠে নাকি দেখেওছে যে আমি কাঁদছি কিনা।

তারপর কাউকে না দেখতে পেয়ে তিনি কম্বল মুড়ি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে কাতরে কাতরে কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়েছেন।

আর এইসব কথা তো আমি জানিনা ।

আমি তো আমার অনুভূতির কথাও ওকে বলিনি।

তারপরদিন বাড়ি ফিরে রাতে ঘুমাতে বেশ রাত হয়ে গেল।

আমার বর ঠিক শুতে যাওয়ার আগে বলছে দেখি"আচ্ছা তুমি ঘরে কিছু বুঝতে পেরেছ?"

আমি হঠাৎ বললাম"তুমিও বুঝেছিলে তাহলে"

আসতে আসতে একের পর এক ব্যাপার আমরা একেওপরের সাথে খোলসা করে বলি।

আর দুজনেই ঠিক করি

পরবর্তী কালে জীবনে কোনোদিন যদি পুরী বেড়াতে যাই তাহলে ঐ হোটেলে তো

নৈব নৈব চ।

মা গো মা।।

তবে এখন ভাবি

হয়তো কোন আত্মা আমাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে কিছু হয়তো বলতে চাইছিল।

আচ্ছা,সত্যিই কি "সে"কিছু বলতে চেয়েছিল ওপার থেকে?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy