Sayantani Palmal

Romance

5.0  

Sayantani Palmal

Romance

গোধূলির আলো

গোধূলির আলো

15 mins
796



গাড়ীর দরজা খুলে বাইরে পা রাখলাম। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর আবার সোনা পুরের মাটি ছুঁলাম। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আমার ঠোঁটে-গালে আলতো করে চুমু দিয়ে যাচ্ছে ঠিক তার মতো। এমনই এক মেঘলা দিনে আমার বনলতা সেন আমায় বলেছিল, “ অর্ক আমি তোমাকে এক আকাশ ভালোবাসি।” তখন ভাবতাম আকাশটা অন্তহীন কিন্তু পরে সে বুঝিয়ে দিয়েছিলো তার আকাশের সীমা ওই জানালার ফাঁক দিয়ে যেটুকু আকাশ উঁকি দেয় তারচেয়ে বেশি না। সাঁঝবাতি এমনই মন মাতাল করা কথা বলত। খুব ভালো আবৃত্তি করত, খুব ভালো গান গাইতো ও। গাইতো কেন বলছি হয়ত এখনও গায়।ওর সুরের মূর্ছনায় ভরিয়ে দেয় ওর একান্ত প্রিয় জনকে। ওর নাম সাঁঝবাতি হলেও আমি আদর করে বনলতা বলতাম। আমি ভাবতাম আমার প্রেম সাগরের মতো গভীর কিন্তু সে সাগরে আজ এক আঁচলা জলও নেই।


  বৃষ্টিটা ক্রমশ বাড়ছে। আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। একবার ফ্রেন্ডস ক্যাফেতে যাবো। কত স্মৃতি ছড়িয়ে আছে ওখানে। অবশ্য এখনও তার অস্তিত্ব আছে কিনা জানি না। কুড়ি বছর আগের সেই গরমকালের ধুলো ওড়া, বর্ষাকালের শ্যাওলা মাখা, শীতের কম্বল মুড়ি দেওয়া শান্তশিষ্ট কিশোরের মতো মফস্বল সোনাপুর এখন তার নাবালকত্বের চৌকাঠ পেরিয়ে সাবালক হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। বড় বড় ফ্ল্যাট বাড়ি, শপিং মলের ফাঁকে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশটা হারিয়ে গিয়ে এক চিলতে নীল উঁকি দিচ্ছে। নাহ কালের স্রোতে আমার প্রিয় ফ্রেন্ডস ক্যাফে ভেসে যায়নি বরং আরও ঝকঝকে চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল হারুদার সেই চেনা হাঁকডাক স্তব্ধ হয়ে গেছে। হারুদার অস্তিত্ব এখন দেওয়ালের ছবি হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই একজন ছুটে এলো। মুখের আদলে হারুদার ছাপ স্পষ্ট। সম্ভবত হারুদার ছেলে। আমার মতো ইম্পোর্টেড জামা -কাপড় পরা গ্রাহকের জন্য কর্মচারীদের ওপর ভরসা করতে পারেনি বোধহয়। খিদে পেয়ে গিয়েছিল খাবার অর্ডার দিয়ে কোনার দিকে একটা টেবিলে বসলাম। দীপের কথা খুব মনে পড়ছে। দুজনে কত সময় কাটিয়েছি এখানে। আজ ও এলে ভালো হতো, বলেছিলাম আসতে কিন্তু পাগলটা আসলো না। কেউ সাথে থাকলে নাকি আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম শহরের আনাচে কানাচে এলোমেলো চক্কর কেটে স্মৃতির পথ ধরে ঘোরার উদ্দেশ্যে। এ শহর আমার শৈশবের দস্যিপনার, কৈশোরের কৌতূহলের, প্রথম যৌবনের শিহরণের সাক্ষী। আমার জীবনের প্রথম প্রেমের কলি এ শহরের বুকেই ফুটেছিল আবার আজ থেকে কুড়ি বছর আগে এ শহরেই ঝরে গেছে। বুকে একরাশ যন্ত্রণা আর অভিমান নিয়ে সোনাপুর ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম আমি। আজ নিজের কৈশোরের গন্ধ মাখা স্কুল, যৌবনের উষ্ণতা ঘেরা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করে মনে হচ্ছে কেন আমি এত বছর ব্রাত্য করে রেখেছিলাম আমার এই শহরটাকে! শুধু এ শহরের একটা মানুষ আমার হৃদয় নিয়ে ছেলেখেলা করেছে বলে! দীপ ঠিকই বলেছিল আজ আমার আত্ম বিশ্লেষণের সময়।


  নদীর ধারে এসে বসলাম। আমার আর সাঁঝবাতির বহু আবেগঘন মিষ্টি বিকেলের সাক্ষী সেই বট গাছটা আজও মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নদীর ধারে এখন পার্ক তৈরী হয়েছে। গাছটা পার্কের মধ্যে পড়েছে। সুন্দর করে মার্বেল দিয়ে বাঁধানো গাছের গোড়ায় বসলাম। তন্ময় হয়ে নদীর ঢেউ গুনতে গুনতে হারিয়ে গেলাম আমার অতীতে। চার বছর বয়সে আমি এ শহরে এসেছিলাম। আমার বাবা সোনাপুর হসপিটালের ফার্মাসিস্ট ছিলেন। আমার ভাই পিকুর জন্ম এখানেই। বাবার এক দুবার ট্রান্সফার হলেও আশেপাশের হসপিটালেই হয়েছে ফলে আমরা সোনাপুরেই স্থায়ী ভাবে থেকে গিয়েছিলাম।এখানেই স্কুলের পাট চুকিয়ে কলেজে ভর্তি হই। বরাবরই আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। অংক নিয়ে পড়তাম। ইচ্ছে ছিলো গ্রাজুয়েশন শেষ করে ভালো কোনো ইনস্টিটিউট থেকে এম.এস.সি করবো। তারপর নেট দেব। রিসার্চ করবো। তখন আমার লক্ষ্য ছিল কলেজ বা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হওয়া। আসলে তখন তো জানতাম না এ শহরের এক সাঁঝবাতি আমার সমস্ত স্বপ্ন, আমার জীবন এমনকি আমার আমিটাকেও বদলে দেবে। দীপ ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।সেই প্রাইমারী স্কুল থেকে আমাদের বন্ধুত্ব। দীপের সাথেই একদিন গিয়েছিলাম শ্রীরাধা টকিজে সিনেমা দেখতে। তৎকালীন সোনাপুরের একমাত্র সিনেমা হল। পাঁচটায় শো শুরু কিন্তু আমরা সাড়ে চারটার আগেই পোঁছে গিয়েছিলাম। দীপ চিরকাল সিনেমা পাগল। সিনেমার নামে ওর তর সয় না। টিকিট কেটে বাইরে দুজনে ফুচকা খাচ্ছি এমন সময় হইহই করতে করতে একদল মেয়ে সেখানে এল। তাদের মধ্যে থেকে একটি মেয়ে বলল, “ আরে দীপ তুই!” দীপের চট জলদি উত্তর, “ হুম সিনেমা কি তুই একলাই দেখবি নাকি?”

এরপর আড্ডা জমে উঠলো। দীপের পরিচিতা মেয়েটির নাম রূপা। ওরা সবাই গার্লস কলেজের ছাত্রী। দীপ বরাবরই খুব স্মার্ট, চনমনে ছেলে। 

----আলাপ করিয়ে দিই। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অর্কপ্রভ। আমার কলেজেই ও ম্যাথসে পড়ে। সেকেন্ড ইয়ার। খুব ব্রাইট স্টুডেন্ট। দারুণ গিটার বজায়। খুব ভালো ছেলে।

----এক মিনিট, অর্ক তুমিই তোমাদের ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট তাই না?

কি আর বলবো নিজের কথা একটু হেসেছিলাম শুধু।সিনেমা দেখে ফেরার পথে দীপকে বলেছিলাম, “ তুই আমার এত প্রশংসা করছিলি কেন রে?” মুচকি হেসে দীপ বলেছিল, “ যার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলি তাকে ইমপ্রেস করার জন্যে।” আমি না বোঝার ভান করে বলেছিলাম, “ মানে?”

---দ্যাখ অর্ক আমি তোর জাঙ্গিয়া পরা বয়স থেকে বন্ধু। আমার কাছে তুই মনের কথা লুকিয়ে রাখবি! তুই সাঁঝবাতির দিকে আড়চোখে তাকাসনি?”

হেসে ফেলেছিলাম ওর বলার ভঙ্গিমা দেখে। হ্যাঁ সত্যিই সাঁঝবাতির দিকে বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল। অনেকের মধ্যেও যেন আলাদা। শান্ত নদীর মত মনে হয়েছিল ওকে। দীপ যখন আমার প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিচ্ছিল তখন বাকিদের মতো অকারণ উচ্ছ্বাস দেখিনি ওর মধ্যে কিন্তু দেখেছিলাম মাপা সম্ভ্রম। এরপর আবার সাঁঝবাতির সঙ্গে দেখা হয়েছিল একটা অনুষ্ঠানে। ওর গান আর আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হয়ে ওকে বলেছিলাম, “ অসাধারণ গলা আপনার।” আমাকে ওর আলো ছড়ানো হাসি উপহার দিয়ে বলেছিল “আমি অসাধারণ কিনা জানি না কিন্তু অঙ্কের মতো কঠিন সাবজেক্ট আর গিটারের সুর যে সমান তালে সামলায় সে যে অসাধারণ তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।” এরপর কারণে অকারণে আমাদের দেখা হতে লাগলো। স্বাভাবিক প্রকৃতির নিয়মেই দুটি তরুণ হৃদয় কাছাকাছি এলো। গভীর ভাবে আমরা ভালোবেসেছিলাম পরস্পরকে। অবশ্য আজ আর আমরা কথাটা ব্যবহার করা উচিত নয়। রঙিন স্বপ্নের ভেলায় ভেসে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। তখন তো মোবাইল ছিল না তাই চিঠিই ছিল আমাদের না বলা কথাগুলো প্রকাশের মাধ্যম। পত্র বাহকের কাজটা দীপ সানন্দে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। এই নদীর ধারে বসে দুজনে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতাম। সাঁঝবাতি বলতো তার চাকরি বাকরি পোষাবে না সে গানের স্কুল খুলবে। নিজের মালিক নিজে হবে আর আমার পথ চেয়ে থাকবে কখন আমি দিনের শেষে বাড়ি ফিরবো। আমার সমস্ত দিনের ক্লান্তি সে তার আদর যত্নে ধুইয়ে দেবে। আরও কত স্বপ্ন যে আমায় দেখিয়েছিল তার হিসেব নেই। আমিও ওকে আমার প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদটাও বেড়ে গিয়েছিল। ভীষণ মন দিয়ে পড়াশোনা করতাম। কলেজের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা খুব ভালো দিলাম। কিন্তু তারপরই প্রথম ধাক্কাটা খেলাম। দীপের আদিবাড়ি বাঁকুড়া শহরে। দীপের ঠাকুমা-দাদু দুজনের একসাথে ক্যান্সার ধরা পড়লো। ওর জেঠু-জেঠিমার পক্ষে দুজন ক্যান্সার রুগীর দেখভাল সম্ভব নয় তাই দীপের বাবা ওপরওয়ালাকে বলে বাঁকুড়াতে ট্রান্সফার নিয়ে নিয়েছেন। আমার এত দিনের সঙ্গী দীপ আমাকে ছেড়ে চলে গেল। দুজনে খুব কেঁদেছিলাম। তখন তো মোবাইল ছিল না তাই চিঠি আর ল্যান্ডফোনই ছিল ভরসা। দীপ চলে যাওয়ার পরের দিন মন খারাপ করে নদীর ধারে বসেছিলাম। সাঁঝবাতির সাথেও কদিন কথা হয়নি। দীপের সাথে একবার ও দেখা করবে ভেবেছিলাম কারণ আমাদের প্রেমের পথ সুগম করতে দীপের ভূমিকা অনস্বীকার্য কিন্তু না দীপের সাথে দেখা করেছে না আমার সাথে। ও কেমন যেন আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। দীপের চলে যাওয়া নিয়ে ভাবিত ছিলাম বলে সেটা ঠিক বুঝতে পারিনি । সেদিন একলা বসে ওর কথাই ভাবছিলাম। এমন সময় সাঁঝবাতির ডাকে পেছন ফিরে দেখি ও একলা নয় ওর সাথে আমাদের চেয়ে খানিক বড় এক সুদর্শন যুবকও আছে। কোনো ভূমিকা না করেই সাঁঝবাতি বলতে আরম্ভ করলো, “ অর্ক এ হলো দীনেশ। আমার হবু স্বামী।বিদেশে থাকে। আমি অনেক ভেবে দেখলাম আমার মত একটা মেয়ে যে বলতে গেলে সোনার চামচ মুখে জন্মেছে তার পক্ষে সারাজীবন তোমার মত একজন মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলের সাথে কাটানো সম্ভব নয়। তোমার স্বপ্নও তো ওই কলেজের মাস্টারিতে সীমাবদ্ধ। প্লিজ আমায় ভুল বুঝো না। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী প্রতাপ মল্লিকের মেয়ে আমি। তোমার ফ্যামিলির সাথে তো এডজাস্টই করতে পারবো না। কম বয়সের ইমমাচুরিটি থেকে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম কিন্তু আর নয় আমি এই সম্পর্কটা শেষ করছি। আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না। দীনেশকে সাথে নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি মানে বুঝতেই পারছো আমার আর ওর রিলেশনটা এখন কোন জায়গায়। তাই বলছি সব ভুলে যেও।” আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দীনেশের হাত ধরে দামি গাড়ি চড়ে সাঁঝবাতি চলে গিয়েছিল আমার সামনে দিয়ে। একবার ফিরে তাকানোর প্রয়োজনটাও অনুভব করলো না। আমার প্রতিক্রিয়ার কোনও মূল্যই আর ছিল না ওর কাছে। পাগলের মতো অবস্থা তখন আমার ।কিছু বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী দীপও নেই কাছে। ল্যান্ডফোন নিয়ে কথা বলতে গেলে বাড়িতে সবাই শুনতে পাবে। শেষে আর থাকতে না পেরে এক রবিবার সাঁঝবাতির গানের স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। ও বেরিয়ে আসতে কাছে গিয়ে একটা কথাই বলেছিলাম, “ কেন খেললে আমাকে নিয়ে?” একপলক চেয়ে ঝাঁঝিয়ে উত্তর দিয়েছিল, “ সেদিন আমি সব বলে দিয়েছি। পথ ছাড়।” মরিয়া হয়ে ওর হাত চেপে ধরে বলেছিলাম, “ বলো সব মিথ্যে। প্লিজ বলো।” প্রত্যুত্তরে আমার হাত ছাড়িয়ে আমার গালে আমার ধৃষ্টতার পুরস্কার দিয়ে যায় সে। সেদিন সন্ধ্যেবেলা ধনীর দুলালী সাঁঝবাতি মল্লিক আমার বাবাকে ফোন করে জানায় আমি তার সাথে ভরা রাস্তায় অসভ্যতা করেছি। বাবা যদি তাঁর অবাধ্য সন্তানকে সামলাতে না পারেন তাহলে পুলিশ সামলাবে। বাবা কোনোদিন আমাদের গায়ে হাত তোলেন নি।আমার একুশ বছর বয়সে প্রথম বাবার হাতটা আমার গালে আছড়ে পড়েছিল। শরীরের জ্বালার চেয়েও আমার মনের জ্বালাটা আরও বেশি হয়েছিল। আমার কোনো কথা বাবা বিশ্বাস করে নি। বাবার ধারণা ছিল একটা মেয়ে এরকম বিষয়ে কক্ষনো মিথ্যে কথা বলতে পারে না। আমার শাস্তি হলো নির্বাসন। আমাকে কাকুর কাছে খড়্গপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। আমার প্রতিটি গতিবিধির ওপর কড়া নজর রাখার নির্দেশ জারি হলো। স্থবিরের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। দীপ কে খুব মিস করছিলাম কিন্তু তাও ওকে চিঠি লিখিনি কিংবা ফোন করিনি। মনে হচ্ছিল সবাই প্রতারক। সবাই মুখোশ পরে আছে। ইতিমধ্যে রেজাল্ট বেরোল। যথারীতি আমার ফল খুব ভালো হলো কিন্তু তাও বাবা আমাকে ক্ষমা করলেন না। একদিন দুপুর বেলা কাকুর কোয়ার্টারের বাগানে চুপচাপ বসেছিলাম। খুড়তুতো বোন রিনি এসে ফিসফিস করে বলেছিল, “ দাদাভাই তোকে একটা কথা বলবো?” “বল” সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েছিলাম।

----তুই অনেকদূরে কোথাও পড়তে চলে যা। সবার থেকে দূরে নাহলে প্রতি মুহূর্তে তুই কষ্ট পাবি। সাঁঝবাতির প্রতারণা, জেঠুর ভুল বোঝা এসব পেছনে ফেলে তুই নিজের কেরিয়ারটা এগিয়ে নিয়ে যা।” 

রিনির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার যন্ত্রণা ময় দিনগুলোতে নিজের মতো করে আমার পাশে থাকার চেষ্টা করেছে আমার এই বোনটা আর সেদিন ওই আমাকে সঠিক দিশা দেখিয়েছিল। ইতিমধ্যে বাবা ট্রান্সফারের চেষ্টা করে হাওড়ার এক হাসপাতালে চলে এসেছেন। বাবার ধারণা উনি এত বছরে সোনাপুরের মানুষের মধ্যে নিজের জন্য যে সম্মানজনক জায়গাটা তৈরী করেছিলেন আমি তা ধূলিসাৎ করে দিয়েছি। আমি অনেকগুলো ইনস্টিটিউটে এম.এস.সি র সুযোগ পেলাম কিন্তু আমার মাথায় রিনির কথাটা ঘুরছিল তাই সবচেয়ে দূরে দিল্লী আই. আই. টি কেই বেছে নিলাম। এম.এস.সি শেষ করলাম কৃতিত্বের সাথে। দুবছরে একবারও বাড়ি আসিনি। মা অনেক কান্নাকাটি করেছে তাও আসিনি। এরপর সবাই ভাবছিলো আমি পি.এইচডি করবো। বাবাও অনেক নরম হয়ে এসেছিলেন কিন্তু ততদিনে আমার বুকের মধ্যে জ্বলতে থাকা অগ্নিস্ফুলিঙ্গটা দাবানলের আকার ধারণ করে আমার আমিটাকে পুড়িয়ে একটা রোবটের জন্ম দিয়েছে যার জীবনের একটাই লক্ষ্য অর্থ উপার্জন। অনেক অনেক অর্থ উপার্জন যা দিয়ে হাজারটা প্রতাপ মল্লিক, লক্ষটা দীনেশকে কেনা যায়। আমি একটা স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ড চলে গেলাম বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়তে। এরপর রকেটের গতিতে আমি এগিয়ে গিয়েছি জীবনে। প্রেমের দেবতা আমার ওপর সদয় না হলেও গণপতি আমাকে উজাড় হস্তে দিয়েছেন। পাশ করার পর বছর সাতেক নিউইয়র্কে চাকরি করেছিলাম তারপর আস্তে আস্তে নিজের ব্যবসার দিকে ঝুঁকি। আর আজ আমি বিজনেস টাইকুনএ.বি । নিজের পিতৃদত্ত নাম অর্ক বলে কেউ আর ডাকে না আমায়। অর্কপ্রভ বিশ্বাস আজ এ.বি নামে সবার কাছে পরিচিত। আমার উপার্জন এখন কোটি কোটি ডলারে। ম্যানহাটনে আমার প্রাসাদপম অট্টালিকায় আমি একলা বাস করি। যন্ত্রের মতো জীবন আমার। মা বহু কান্নাকাটি করেছে কিন্তু নাহ আমার জীবনে আর প্রেম-ভালোবাসা শব্দটার স্থান হয়নি। শুধু তাই নয় বাবা,মা,ভাই ওদের থেকেও মানসিক ভাবে অনেক দূরে সরে এসেছি। ভাই এখন কলকাতার একটা কলেজে পড়ায়। বিলাসবহুল একটা ফ্ল্যাট,গাড়ি সব কিনে দিয়েছি। বাবা-মাকে নিয়ে ভাই আর ওর স্ত্রী পর্ণা ওখানেই থাকে। পর্ণা আর রিনি মিলে অনেক চেষ্টা করেছিলো আমাকে সংসারি করার কিন্তু এই রোবটটার সিস্টেমে শুধু একটা ছবিই আছে যেটা ডিলিট করা সম্ভব নয়। আমার মধ্যেকার সমস্ত আবেগ,অনুভূতি মরে গেছে। বাবা যেদিন আমার কাছে ক্ষমা চাইলো সেদিনও আমার চোখে একফোঁটা জল আসেনি। মা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল আমি নাকি পাথর হয়ে গিয়েছি। আমার ঝড়ের মত ব্যস্ত জীবনে দেশে আসার সময়ই হয় না শুধু একটা ছোট্ট মানুষের আব্দার মাঝে মাঝে ফেলতে পারি না, আমার ভাইঝি তুতুল। এত দূরে থাকি তাও জ্ঞান হওয়া ইস্তক মেয়েটা আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। ওর কাছে এলেই অনুভব করি এই পাথরের নীচে এখনো বোধহয় ,স্নেহ,ভালোবাসার একটা ক্ষীণ স্রোত বয়ে চলেছে। 


  তুতুলের ডাকেই এবারও দেশে আসা। এয়ার পোর্ট থেকে বেরোনোর মুখেই আমার ফেলে আসা অতীত জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা মানুষের দেখা পেলাম। বয়স চল্লিশ পার হলেও দীপকে চিনতে আমার কয়েক সেকেন্ড লাগলো।

-----চিনতে পারছিস না আমি অর্ক?

-----না পারছি না। চোখের আড়াল হলেই যারা মানুষকে ভুলে যায়, চিঠির উত্তরও দেবার প্রয়োজন মনে করে না তাদের চেনার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।  

কেটে কেটে কথাগুলো বলল দীপ। আজকের এ.বির হয়ত এরপর মুখ ঘুরিয়ে চলে আসা উচিত ছিল কিন্তু হঠাৎ করেই সেই পুরোনো অর্ক সামনে চলে এলো। সে দীপের অভিমান ভোলাতে চায়।

----প্লিজ আমার কথাটা একবার শোন।

----নাহ। তোর কোনও কথা শোনার দরকার নেই আমার।

-----দরকার আছে। তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হঠাৎ করে কেন তোমাকে ভুলে গেল সেটা জানার কৌতূহল তোমার না থাক আমার আছে।

দীপের বউ টিয়া আমাকে জোর করে ওদের ফ্ল্যাটে ধরে নিয়ে গেলো। টিয়াও একদম দীপের মতো। সব শোনার পর দীপ প্রথমে খুব বকাবকি করলো, রাগ দেখালো ওকে সব জানাই নি বলে। বহু বছর পর আমার আবার নিজেকে যন্ত্র নয় রক্ত মাংসের মানুষ বলে মনে হচ্ছিল। আমি তো নিজেকে হারিয়েই ফেলেছিলাম কারুর দুঃখ-যন্ত্রণা কিছুই আমাকে স্পর্শ করত না কিন্তু আজ যখন দীপ আমার জন্য কতটা কষ্ট পেয়েছে জানলাম তখন আমার মনের বন্ধ দরজাগুলোর পাল্লা একটু করে যেন ফাঁক হতে শুরু করল। দীপের ফ্ল্যাটেই সারাদিন ছিলাম। সন্ধ্যেবেলা দীপ হঠাৎ আমাকে বললো, “ অর্ক তুই একবার সোনাপুরে যা।” আমার বিস্মিত জিজ্ঞাসু চোখে চোখ রেখে দীপ বলল, “ তোকে এভাবে তিলে তিলে শেষ হতে দেখতে পারবো না আমি। তুই নিজেই স্বীকার করেছিস যে টাকা উপার্জন ছাড়া তোর জীবনের আর কোনও উদ্দেশ্য নেই কিন্তু এটা একটা মানুষের জীবন হতে পারে না। আমি তোকে বলব না তুই বিয়ে করে সংসারী হ কারণ আমি জানি তোর মনের ক্যানভাস থেকে সাঁঝবাতির ছবি সরানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো মেয়ের নেই। সাঁঝবাতি না বুঝলেও আমি জানি তুই ওকে কতটা ভালবেসেছিলি। আমি শুধু চাইছি তুই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আয়। সাঁঝবাতির ওপর অভিমানে তুই বাকি মানুষগুলো যারা তোকে ভালোবাসে তাদের থেকেও দূরে সরে গিয়েছিস। সাঁঝবাতির কাজের শাস্তি তুই আমাদের সবাইকে দিয়েছিস। নিজেও এতগুলো বছর কষ্টে আছিস কিন্তু আর না।” এরপর দীপ একটু হেসে বলেছিল,” তুই তো জানিস সেই ছোট্ট বেলা থেকেই তোর সব সমস্যার সমাধান থাকে আমার কাছে। তাই বলছি সোনাপুরে যা পাগলের মতো সোনাপুরের রাস্তায় ঘোর। শেষের কটা দিন স্মৃতি থেকে ডিলিট করে দিয়ে তার আগের ভালো ভালো স্মৃতিগুলোকে হাতড়ে বেড়া সোনাপুরের আকাশে বাতাসে। তারপর আমায় এসে বলবি কেমন লাগছে।”


  ----কাকু ও কাকু।

একটা কচি গলার ডাকে আমি বর্তমানে ফিরলাম। আমার সামনে একটা বারো তেরো বছরের ছেলে হাতে একগোছা গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

----বলছি তুমি তো বেশ বড়লোক গোলাপ গুলো সব নিয়ে নাও না।

বাচ্চাটার কথা শুনে হাসি পেয়ে গেল। হাসি চেপে বললাম,” আমি বড়লোক কে বলল তোকে? আর তুই এখানে ফুল নিয়ে কি করছিস?”

চোখ পাকিয়ে ছেলেটা বলল,” বা রে তুমি কতো ভালো জামা পরে আছো আর পার্কের বাইরে যে মস্ত গাড়িটা আছে ওটা নিশ্চয় তোমার। অমন গাড়ি আমি টিভিতে দেখেছি। আমি হলাম টুকলু। শর্মা মার্কেটে আমার বাবার ফুলের দোকান। আজ আমার তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে বলে বাবা এই ফুলগুলো দিয়ে এখানে বিক্রি করতে পাঠালো। এখানে অনেক দাদা দিদি আসে। দাদাগুলো ফুল কিনে দিদিগুলোকে দেয়। আজ দেখছি কেউ আসেনি এখনও। তাই বলছি তুমি যদি কাকিমার জন্য সব গুলো কিনে নাও তাহলে আমি বাড়ি ফিরে কার্টুন দেখতে পাই।” নিষ্পাপ ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে ফুলগুলো কিনে নিলাম। ওকে আর বললাম না এই কাকুটা বড্ড একা। কাকিমার কোনও অস্তিত্বই নেই। ফুলগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হঠাৎ মনে পড়লো আজ বারোই জুলাই। অদ্ভুত সমাপাতন আজকের দিনেই সাঁঝবাতির সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল শ্রীরাধা টকিজে। সাঁঝবাতি আমাকে বলত সিনেমা হলে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল তাই প্রতি বছর এই দিনে আমরা শ্রীরাধা টকিজে সিনেমা দেখবো। যে কটাদিন একসাথে ছিলাম এই প্রতিশ্রুতি রেখেছিলাম আমরা। উঠে পড়লাম আমি। 


  শ্রীরাধা টকিজের সামনে এসে চমকে উঠলাম। আমার জীবনের বসন্ত এসেছিল যে জায়গায় তার দশা আমার প্রেমের মতোই। দেখলেই বোঝা যায় বহুকাল বন্ধ হয়ে গেছে। বিল্ডিংটার ভগ্নপ্রায় দশা। ইতিউতি গাছ গজিয়ে উঠেছে। তাও পায়ে পায়ে ভেতরে ঢুকে টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে একটু দাঁড়ালাম। ছেঁড়া ছেঁড়া হাজার স্মৃতি মনের দরজায় টোকা দিচ্ছে। হাতের গোলাপগুচ্ছটা কি মনে হতে ওখানেই রেখে ফেরার জন্য পা বাড়ালাম কিন্তু আমার পা দুটো ওখানেই আটকে গেলো আমার কাছ থেকে একটু দূরে একজন ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি এখানে আমাকে দেখে অবাক হয়েছেন। ওনার পরনে হলুদ জমিতে সবুজের কাজ করা তাঁত শাড়ি। ভদ্রমহিলার মুখটা পোড়া। হাতের কিছু অংশেও পোড়া দাগ। এসময় এখানে কি জন্য এসেছেন কে জানে! আমি ফিরতি পথে পা বাড়ালাম। উনিও এগিয়ে এলেন। স্বাভাবিক ভাবেই মুখোমুখি হলাম আমরা। চমকে উঠলাম আমি। কে দাঁড়িয়ে আমার সামনে! এ চোখদুটো তো আমার ভীষণ চেনা। এই চোখেই তো আমি আমার সমস্ত কিছু হারিয়ে ফেলেছি একদিন। অস্ফুটে আমার ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো,” সাঁঝবাতি।” ধরা গলায় সে বললো,” অর্ক তুমি এখানে!” সাঁঝবাতির চোখদুটো যেন নিজের সাথে যুদ্ধ করছে। প্রানপনে অশ্রুসংবরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

----একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি। তোমার তো এখন বিদেশে থাকার কথা।

----পিসিমনি তো প্রতিবছর আজকের তারিখে এখানে আসে।

সাঁঝবাতির একটু পেছনে একটি একুশ-বাইশ বছরের মেয়ে। মেয়েটি আবার মুখ খুলল,” বাইরে গাড়িটা দেখে আমি প্রমোটার ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি তো অর্ক আঙ্কেল তাই না?”

----তুমি আমাকে চিনলে কি করে?

-----পিসিমনির কাছে আপনার ছবি দেখেছি। যদিও অনেক পুরোনো কিন্তু আপনার মুখটাও বিশেষ বদলায়নি।

----রিম চুপ করবি তুই। ধমক লাগায় সাঁঝবাতি।

আমার মনে এখন বৈশাখী ঝড়। আমি অভিমান ভরা গলায় বলি,” না ও চুপ করবে না। যার মিস্টার দীনেশের ঘরণী হয়ে বিদেশে থাকার কথা সে এই সোনাপুরে বসে অর্ক বিশ্বাসের ছবি নিয়ে কি করছে জানতে চাই আমি? তোমার এই অবস্থাই বা হলো কি করে?

----রিম ফিরে চল।

চিৎকার করে উঠি আমি,” না, আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তুমি কোথাও যাবে না।”

----অর্ক তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি তুমি জীবনে অনেক এগিয়ে গেছ। আর পিছু ফিরে তাকিয়ে কি লাভ। আমাকে আমার হালে ছেড়ে দাও।

সাঁঝবাতি ফেরার উদ্যোগ করতেই মরিয়া হয়ে ওর হাতটা চেপে ধরি আমি। সাঁঝবাতি কেঁপে ওঠে আমার স্পর্শে।“ আমি সব বলছি। পিসিমনির সব কথা আমি জানি” রিম বলে।

----দোহাই রিম ফিরে চল। তুই বুঝতে পারছিস না।

আমি গাঢ় স্বরে বলি,” রিম তুমি বল।”

রিম বলতে শুরু করে,” পিসিমনি যা করেছিল শুধু আপনাকে বাঁচানোর জন্য করেছিল নাহলে আমার দাদু,বাবা আর কাকুরা মিলে আপনাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছিল। ওই দীনেশের সাথে সম্বন্ধ দেখতেই পিসিমনি দীনেশকে সব বলেছিল কিন্তু শয়তানটা পিসিমনিকে পাওয়ার লোভে দাদুকে সব জানিয়ে দেয়। তারপর পিসিমনিকে যা সহ্য করতে হয়েছে আপনি ভাবতেও পারবেন না শেষ পর্যন্ত পিসিমনি দাদুকে বলে যে নিজেই আপনাকে অনেক দূরে সরিয়ে দেবে। ওরা যেন আপনার ক্ষতি না করে। তারপর তো আপনি জানেন।”

----সাঁঝবাতির এই অবস্থা হল কি করে?

----দীনেশের সাথে বিয়ের আগের দিন পিসিমনি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ঠাম্মি সময়ে পৌঁছে যায় ফলে পিসিমনি প্রাণে বেঁচে যায়। বুঝতেই পারছেন দীনেশের মতো লোক এরপর আর এ মুখো হয়নি। পিসিমনি এখন নিজের গানের স্কুল নিয়ে নিজের মতো থাকে। আমি পিসিমনির ন্যাওটা বলে সবার খুব চিন্তা পিসিমনির মত কাউকে ভালোবেসে না ফেলি। আপনারা কথা বলুন আমি বাইরের দিকে যাচ্ছি।

আমি অপলক দৃষ্টিতে সাঁঝবাতির দিকে তাকিয়ে থাকি আজও ও আমার কাছে সেই কুড়ি বছর আগের মতোই সুন্দর। ওর দুচোখে শ্রাবনের ধারা নামছে। আমি দুহাতে ওর মুখটা তুলে ধরে বলি,”একদিন বলেছিলে আমার জন্য সারাদুনিয়া ছাড়তে পারো। আজ জিগ্যেস করছি পারবে নিজের পরিবার,পরিজনদের ছেড়ে আমার সাথে পালিয়ে যেতে অনেক দূরে।” তারপর একটু হেসে বলি,” আজ কিন্তু আমি অনেক বড়লোক। পৃথিবীর সব দেশ ঘোরাতে পারব তোমাকে।” আমার রসিকতায় সাঁঝবাতির কোনও প্রতিক্রিয়া হলো না। কান্না ভেজা কণ্ঠে বলল,”কিন্তু তোমার ফ্যামিলি? তোমার স্ত্রী…...।” আমি সেই তরুণ বয়সের মতো দুস্টু হেসে বললাম,” আমার হৃদয়টা তো নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলে বউকে রাখবো কোথায় যে বিয়ে করবো?” ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল সাঁঝবাতি। আমার বুকে মাথা রেখে বলল,”এত ভালোবাসো আমায়! আমার ওই ব্যবহারের পরেও তুমি…….।”একটু থেমে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,”কিন্তু আমার এই কদাকার চেহারা…..।” ঠোঁট দুটো চেপে ধরলাম ওর।আরও কাছে টেনে নিয়ে বললাম,”আমি তোমায় ভালোবেসেছি তোমার চেহারাটাকে নয়। তোমার ভালো-মন্দ, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ সব নিয়ে ভালোবেসেছি। পাগলী এতদিন শুধু তোমার স্মৃতিটুকু সম্বল করে বেঁচে থেকেছি, অনেক কষ্ট পেয়েছি আর না। তুমি যেতে না চাইলে এবার তুলে নিয়ে চলে যাবো। এখন আমার কিন্তু অনেক ক্ষমতা।” এতক্ষণ পরে সাঁঝবাতি হাসলো। আমার আঁধার জীবনে আবার ভোরের আলো ফুটছে। সাঁঝবাতির হাত ধরে আমি গাড়ীর দিকে এগিয়ে গেলাম। সারা আকাশ গোধূলির রঙে রাঙা। বিকেলের কনে দেখা আলোয় সাঁঝবাতিকে দু চোখ ভরে দেখব।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance