STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Classics Fantasy Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Classics Fantasy Others

গঙ্গাদেবী

গঙ্গাদেবী

5 mins
445


️ইক্ষাকু বংশে মহাভিষ নামে এক রাজা ছিলেন । তিনি অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ এবং পরাক্ৰমশালী ছিলেন । তিনি অনেক অশ্বমেধ রাজসূয় যজ্ঞ করে স্বৰ্গপ্রাপ্ত হয়েছিলেন । একদিন বহু দেবতা এবং মহাভিষসহ সকল রাজৰ্ষি ব্ৰহ্মার চরণে উপস্থিত হলেন । সেইসময় গঙ্গাদেবীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন । 

বায়ু তার হাওয়ার দাপটে গঙ্গাদেবীর শ্বেতবস্ত্ৰ শরীরের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন । উপস্থিত সকলেই লজ্জা পেয়ে চক্ষু নত করেছিলেন , কিন্তু মহাভিষ দেবীর দেহসৌষ্ঠব দেখতে লাগলেন । 

ব্ৰহ্মা তা লক্ষ্য করে বললেন, 'মহাভিষ আমি তোমাকে শাপ দিচ্ছি! তুমি অধঃপতিত ! তাই এবার পৃথিবীতে যাও । যে কামুক দৃষ্টিতে গঙ্গার দিকে তুমি তাকিয়ে আছ সেই তোমার অপ্রিয় কাজ করবে । তুমি তার ওপর যখন ক্ৰোধান্বিত হবে তখন তুমি এই শাপ থেকে মুক্তিলাভ করবে । ” 

মহাভিষ ব্ৰহ্মার নিৰ্দেশ শিরোধাৰ্য করে ঠিক করলেন যে , তিনি পুরুবংশের রাজা প্রতীপের পুত্ৰরুপে জন্মাবেন । 


গঙ্গাদেবী সেখান থেকে ফিরে আসার সময় পথে অষ্টবসুদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় । তারা বশিষ্ঠের শাপে শ্ৰীহীন অবস্থায় ছিলেন । বশিষ্ঠ তাদের নন্দিনী সূরভি গাভী আত্মসাৎ এর জন্য অভিশাপ দিয়েছিলেন যে , তারা মনুষ্য হয়ে জন্মাবেন । গঙ্গাদেবী বসুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ঠিক করলেন যে , তিনি বসুদের গৰ্ভে ধারণ করবেন এবং জন্ম নেবার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুক্ত করে দেবেন । সেই আট বসুগণও নিজেদের অষ্টমাংশ থেকে এক পুত্ৰকে মর্ত্যলোকে থাকতে দেবার অঙ্গীকার করলেন এবং জানিয়ে দিলেন যে তিনি অপুত্ৰক থাকবেন । 


এই পৃথিবীতে পুরুবংশের রাজা প্ৰতীপ তার পত্নীর সঙ্গে গঙ্গাতীরে তপস্যা করছিলেন । ভগবতী গঙ্গা একদিন সুন্দরী মূৰ্তি ধারণ করে তাদের কাছে এলেন । কুশল বিনিময়ের পর নানা আলোচনার মধ্যে প্ৰতীপ ইচ্ছা প্ৰকাশ করলেন যে গঙ্গাদেবী যেন তার ভাবী পুত্রের স্ত্রী হন । গঙ্গাদেবী প্ৰতাপের কথা মেনে নিলেন এবং রাজা প্ৰতীপ পুত্ৰলাভের উদ্দেশ্যে নিজ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর তপস্যা করলেন । বৃদ্ধাবস্থায় মহাভিষ তার পুত্ৰরুপে জন্মগ্রহণ করলেন । সেই সময় রাজা প্ৰতীপ প্ৰয়াণরত অথবা তার বংশও লুপ্তপ্ৰায় , সেই অবস্থায় পুত্ৰ জন্মানোতে তার নাম হল শান্তনু। 


শান্তনু যৌবন প্ৰাপ্ত হলে শান্তনুকে রাজসিংহাসনে বসিয়ে বানপ্ৰহে গমন করলেন । রাজৰ্ষি শান্তনু একবার শিকার করতে করতে গঙ্গাতীরে এসে উপস্থিত হলেন । সেখানে তিনি এক পরমা সুন্দরী নারীকে দেখতে পেলেন । তাকে দেখে স্বর্গের লক্ষ্মীদেবী মনে হছিল । তার রুপ দেখে শান্তনু বিস্মিত হয়ে গেলেন । তার সমস্ত শরীরে রোমাঞ্চ হল , তিনি তাকে অপলক নেত্ৰে দেখতে লাগলেন । 

সেই দিব্য নারীর মনেও শান্তনুর জন্য প্ৰেম উদয় হল । শান্তনু তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করে বললেন — “ তুমি আমাকে পতিরুপে স্বীকার করো । ” 

সেই দিব্য নারী বললেন — “ রাজর্ষি ! আমি আপনার রানী হতে রাজি আছি , কিন্তু আমার একটি শর্ত আছে । তা হল এই যে , আমি ভালো - মন্দ যে কাজই করি , আপনি আমাকে বাধা দেবেন না , কিছু বলবেন না । যতদিন আপনি এটি মনে চলবেন , ততদিন আমি আপনার কাছে থাকব । যে দিন আপনি বাধা দেবেন বা কটুকথা বলবেন , সেই দিন আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাব । ” 

রাজা শান্তনু তার কথা মেনে নিলেন । গঙ্গাদেবী অত্যন্ত প্ৰসন্ন হলেন । রাজাও তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না । রাজৰ্ষি শান্তনু গঙ্গাদেবীর শীল , সদাচার , রুপ , সৌন্দৰ্য , উদারতা ইত্যাদি সদগুণ এবং সেবা দ্বারা অত্যন্ত প্ৰসন্ন ও আনন্দিত হলেন । তিনি গঙ্গাদেবীর প্রেমে এমনই মগ্র ছিলেন যে , বহু বৰ্ষ কেটে গেলেও তিনি তা অনুভব একে শান্তনুর করতে পারলেন না । গঙ্গাদেবীর গৰ্ভে একে সাত পুত্ৰ জন্মাল । কিন্তু পুত্ৰ জন্মগ্রহণ করলেই গঙ্গাদেবী “ আমি তোমার প্রসন্নতার কাজ করছি ’ বলে তার পুত্রকে গঙ্গাজলে বিসৰ্জন দিতেন । রাজা শান্তনুর এই কাজ পছন্দ ছিল না কিন্তু পাছে গঙ্গাদেবী তাকে পরিত্যাগ করে চলে যান , সেইজন্য তিনি কোনোপ্রকার বাধা দিতেন না । সাত পুত্ৰকে এইভাবে বিসৰ্জন দেওয়া হলে , গঙ্গাদেবীর অষ্টম পুত্ৰ জন্মাল । এবার রাজা শান্তনু দুঃখিত হলেন এই পুত্রের পরিণামের কথা ভেবে । তার মনে ইচ্ছা হল যে ‘ এই পুত্রটি আমার কাছে থাক । ” 


তিনি গঙ্গাদেবীকে বললেন — “ তুমি কে ? কার কন্যা ? কেন এই শিশুদের হত্যা করছ ? আরে , পুত্ৰান্ধি ! এ তো মহাপাপ । ” 

গঙ্গাদেবী বললেন — “ ওহে পুত্ৰাভিলাষী ! ঠিক আছে , তোমার এই প্রিয় পুত্ৰকে হত্যা করব না । শর্ত অনুযায়ী আমি আর এখানে থাকতে পারি না । আমি জম্বুকন্যা জাহ্নবী । বড় বড় মহৰ্ষিরা আমার সেবা করেন । দেবতাদের কার্যসিদ্ধির জন্যই আমি এতদিন তোমার কাছে ছিলাম । আমার এই আট পুত্ৰ হল অষ্টবসু । বশিষ্ঠের শাপেই তাদের মানুষ হয়ে জন্মাতে হয়েছিল । এই পৃথিবীতে এদের তোমার মতো পিতা এবং আমার মতো মাতা পাওয়া সম্ভব ছিল না । বসুদের পিতা হওয়ায় তুমি অক্ষয় ধাম লাভ করবে। এই কথা বলে গঙ্গাদেবী অষ্ট বসুর শেষ বসু প্রভাসকে নিয়ে আবার উর্ধ্বলোকে ফিরে গেল। 


আর এই পুত্রটি মহাভারতের দেবব্রত বা ভীস্মদেব নামে পরিচিতি লাভ করেন ।। 


গঙ্গাদেবী অন্তর্ধানের পর রাজা শান্তনু ছত্ৰিশ বছর পূৰ্ণ ব্ৰহ্মচৰ্য পালন করে বনবাসীর মতো জীবন নিৰ্বাহ করেছিলেন । একদিন রাজা শান্তনু গঙ্গাতীরে বিচরণ করছিলেন । তিনি লক্ষ্য করলেন গঙ্গানদীতে সেদিন খুব কম জল বয়ে যাচ্ছে । তিনি অত্যন্ত বিস্মিত এবং চিন্তিত হলেন যে ‘ আজ দেবনদী গঙ্গা কেন এত ক্ষীণ ! ” 

অগ্রসর হয়ে রাজা অনুসন্ধান করতে গেলেন , সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পলেন এক সুন্দর বিশালকায় যুবক তার দিব্য অস্ত্ৰের অভ্যাস করছেন ; তিনি তার বাণ দিয়ে গঙ্গার ধারা রুদ্ধ করেছেন । এই অলৌকিক কৰ্ম দেখে রাজা অত্যন্ত বিস্মিত হলেন । 


রাজা শান্তনু তার পুত্ৰকে শুধু জন্মের সময়ই দেখেছিলেন তাই চিনতে পারলেন না । সেই কুমার রাজাকে তার মায়ায় মুগ্ধ করে অন্তর্হিত হলেন । রাজর্ষি শান্তনু গঙ্গাদেবীকে বললেন — “ কুমারকে আবার দেখাও । ” গঙ্গাদেবী রুপ ধারণ করে নিজ পুত্রের দক্ষিণ হস্ত ধরে রাজার সামনে এলেন । কুমারের অনুপম সৌন্দৰ্য , দিব্য বসন - ভূষণ দেখে রাজা তাকে চিনতে পারলেন না । 

গঙ্গাদেবী তখন রাজা শান্তনুকে বললেন — “ মহারাজ ! এ আপনার অষ্টম পুত্ৰ , যে আমার গৰ্ভে জন্মগ্রহণ করেছে । আপনি একে গ্রহণ করুন এবং আপনার রাজধানীতে নিয়ে যান । এই পুত্ৰ বশিষ্ঠ ঋষির কাছে সমস্ত বেদ অধ্যয়ন করেছে এবং অস্ত্ৰশিক্ষাও সম্পূৰ্ণ করেছে । এই শ্রেষ্ঠ ধনুৰ্ধর যুদ্ধে দেবরাজ ইন্দ্রের সমকক্ষ । দেবতা এবং অসুর সকলেই একে সন্মান করে । দৈত্যগুরু শুক্ৰাচাৰ্য এবং দেবগুরু বৃহস্পতি যা কিছু জানেন , এই পুত্রের সে সবই প্ৰাপ্ত হয়েছে । 

স্বয়ং ভগবান পরশুরামের যে শ্রাস্ত্র জ্ঞান আছে এ তার সমকক্ষ । আপনি এই ধৰ্মনিপুণ ধনুধর বীরকে নিজের রাজধানীতে নিয়ে যান । আমি একে আপনার হাতে সমৰ্পণ করলাম । ” 


রাজৰ্ষি শান্তনু পুত্ৰকে রাজধানীতে নিয়ে এসে অত্যন্ত সুখী হলেন এবং সত্বর তাকে যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করলেন । গঙ্গাপুত্র দেবব্ৰত তার শীল এবং সদাচার দ্বারা দেশের সমস্ত প্ৰজাকে সুখী করলেন । এইভাবে আনন্দের সঙ্গে চার বছর কেটে গেল..



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics