Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Classics

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Classics

গান্ধারী

গান্ধারী

13 mins
891


মহাভারতের এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছেন হস্তিনাপুরের মহারানী গান্ধার কন্যা গান্ধারী, শত কৌরব পুত্রের জননী এই গান্ধারী।

★ধর্মের জয় হোক★

এই ছিল তার আশীর্বাদের মূল মন্ত্র। 


কি বলবেন গান্ধারীকে...

এক হতভাগ্য মাতা নাকি এক হতভাগ্য কন্যা?

যিনি সব জেনে সব বুঝেও পিতার মুক্তির জন্য শত পুত্রের বর চাইলেন। 

আবার পিতার ইচ্ছা পূরণ করতে নিজের জন্য শত পুত্রদের যুপকাষ্ঠে বলি হতে দেখলেন।

হস্তিনাপুরের বংশ তো আসলে তারই বংশ। 

শুধু তাই নয় রাজা সুবলের বংশও তো... 

রাজা সুবলের এই অভিশাপ কার জন্য ক্ষতির কারণ হল? ভীষ্মর? নাকি তার নিজের?

এই দ্বন্দ্বর মাঝে পিষ্ট হয়ে গেলেন গান্ধারী,

ভাগ্যের দোষ? নাকি ভবিতব্যর? 

পাঠক কুল আপনারাই করুন বিচার...


গান্ধার কন্যা গান্ধারী:

◆●■◆●■◆●■◆●■◆●■●◆■

গান্ধার প্রদেশ - বর্তমানে আফগানিস্তান। 

পাহাড়ে ঘেরা খুব সুন্দর এক জায়গা। অল্প রুক্ষ শুস্ক ভূমি। জলের অভাব রয়েছে। 

খুব স্বচ্ছল প্রদেশ না হলেও বেশ হাসিখুশি জীবন কাটে এই প্রদেশের প্রজাদের। ঘোড়া ভেড়া পশম আর বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যে ভরপুর এক সমৃদ্ধ রাজ্য। 

চাষবাসও হয় তবে মাদক দ্রব্যের, যদিও সেই মাদকের বেশিরভাগটাই চিকিৎসার কাজে লাগে।

রাজা সুবল খুবই প্রজা বৎসল। রাজ্যের সবার ভালো মন্দ দেখে চলেন...। এই গান্ধার রাজ্যের রাজকুমারী গান্ধারী - পিতা মহারাজ সুবল ও মাতা রাজরানী সুধর্মা। তখন গান্ধারী ছোট্ট। 

রাজ জ্যোতিষী তার কুষ্ঠী দেখে বলেন রয়েছে বৈধব্য যোগ। খন্ডন করা দরকার। 

নিদান অনুযায়ী তার বিবাহ দেওয়া হল এক বৃক্ষের সাথে, মতান্তরে এক ছাগলের সাথে, মতান্তরে এক কুকুরের সাথে। 


রাজকুমারীর এমন অদ্ভুত বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ল দেশে বিদেশে। খবর যেতে সময় লাগল না হস্তিনাপুরে। 

ভীষ্ম তখন মূল দায়িত্বে । সাথে রয়েছেন কৃপাচার্য্য দ্রোনাচার্য্যর মত বীরেরা। বিভিন্ন জায়গা জয় করে চলছে হস্তিনাপুর রাজ্য সীমার প্রসার। 

'গান্ধার প্রদেশে রাজকুমারীর এরকম বিবাহ দিয়ে 

আসলে নারীদের সম্মানহানি করা হয়েছে'- 

এই ধুয়ো তুলে গান্ধার আক্রমন কবলেন ভীষ্ম। 


হস্তিনাপুরের সামনে কোনভাবেই দাঁড়াতে পারল না গান্ধার প্রদেশ। আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল। 

রাজা সুবল সমেত গান্ধারীর একশত ভাইদের বেশিরভাগকেই বন্দী করা হল কারাগারে।

তবে কয়েকজন ভাই পালিয়ে যেতে সমর্থ হলেন... 


রাজা সুবলের ইচ্ছা:

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆●

বন্দী গান্ধারদের জন্য প্রতিদিন দেওয়া হত মাথাপিছু একটি করে দানা। 

উদ্দেশ্য তাদের অনাহারে মেরে ফেলা। 

এই যৎসামান্য খাবারে সবার পেট কি করে ভরবে... হস্তিনাপুরের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে সময় লাগে না রাজা সুবলের। সবার সাথে আলোচনায় বসেন তিনি।

শেষে ঠিক হয় সবার খাবার একত্রিত করে একজনকে খাওয়ানো হবে আর বেঁচে থাকা সেই মানুষটির পরবর্তী জীবনের লক্ষ্য হবে একটাই- হস্তিনাপুরের ধ্বংস। 

শতভাইদের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন শকুনি 

আর ছিলেন চালাকও সবার চেয়ে। 

তাকেই এই কাজের জন্য নির্বাচন করা হয়। 

বাঁচিয়ে রাখা হয় তাকেই। 

শতভাইরা সবাই একে একে মারা যায় আর তাদের দেহের মাংস খেয়ে বাকিরা জীবন নির্বাহ করতে থাকে। ভাইদের মৃতদেহ ভক্ষনের সাথে সাথে ভাইদের ইচ্ছে অনুযায়ী তাদের গুণাবলী প্রবেশ করতে থাকে শকুনির মধ্যে... 

এইভাবে সমস্ত ভাই মারা গেলেও তখনও বেঁচে পিতা সুবল। পিতা সুবল মৃত্যুর আগে শকুনিকে আশীর্বাদ দিয়ে যান তাকে কূটনীতিক চালে কেউ হারাতে পারবে না। সাথে নির্দেশ দিয়ে যান তার নিজের শরীরের হাড় দিয়ে বানানো হয় যেন পাশা খেলার ঘুঁটি। 

শেষদিনে রাজা সুবল একটি ছুরি দিয়ে আঘাত করেন শকুনির গোড়ালিতে। প্রচন্ড যন্ত্রনায় শকুনি কুঁকড়ে যান, রাজা সুবল বলেন এরপর থেকে তুমি খুঁড়িয়ে হাঁটবে সাথে এই যন্ত্রনা তোমায় মনে করাতে থাকবে বারবার তোমার কি কর্তব্য... 


এরপরে 

রাজা সুবল মারা গেলে তার জঙ্ঘার মতান্তরে গোড়ালির হাড় দিয়ে শকুনি বানান একটি পাশা।

সেই পাশার ঘুঁটির ভিতরে ঢোকান থাকত একটি টিকটিকি। সেই টিকটিকি ছিল শকুনির পোষ্য, চলত সে তারই কথায়। 

সেই পাশার দানের সাথে পাশাও চলত শকুনির ইচ্ছে অনুযায়ী, মোটকথা সেই পাশা খেলায় শকুনিকে কেউ পারত না হারাতে। 


গান্ধারীর বরপ্রাপ্তি:

●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●

পিতা আর ভাইদের এই অবস্থা দেখে গান্ধারী শুরু করলেন কঠোর শিব সাধনা। 

সন্তুষ্ট হয়ে দেখা দিলেন শিব।

গান্ধারী চেয়ে নিলেন শত পুত্রের বর দান।

ইচ্ছে তার শত পুত্র এমন শক্তিশালী হোক যাতে এরপরে গান্ধার প্রদেশের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে না পারে। তারা যেন হস্তিনাপুরকে পরাজিত করতে পারে।

বর দিয়ে অন্তর্হিত হলেন শিব। 


এদিকে হস্তিনাপুরে রাজকুমার ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহের জন্য দরকার সুযোগ্য পাত্রী। গান্ধারীর শতপুত্রের জননী হবার বরপ্রাপ্তির খবর পেয়ে গিয়েছেন রাজমাতা সত্যবতী। 

অসাধারণ সুন্দরী গান্ধারী। সাথে আবার স্বয়ম শিবের আশীর্বাদ ধন্যা। অতএব এই কন্যা অমাঙ্গলিক নয়। 

এরকম কন্যা হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না।

গান্ধার প্রদেশ আপাতত হস্তিনাপুরের অধীনে... 


রাজমাতা সত্যবতী নির্দেশ দিলেন ভীষ্মকে। 

গান্ধারীকে করতে হবে ধৃতরাষ্ট্র জায়া।

আজ্ঞা পালন করলেন ভীষ্ম। খুলে দিলেন কারাগার।  

কারাগারের দরজা খুললে দেখা যায় শুধু শকুনি বেরিয়ে আসছেন। কারন ততদিনে বাকী সবাই হয়েছেন মৃত।

শকুনি বেরিয়ে এসে একমুখ হাসি নিয়ে ভীষ্ম'র পাশের রথে উঠে যান। 

না কোন প্রতিহিংসা বা রাগ দুঃখের কথা তার মুখ থেকে বেরোল না।

সেই থেকে একরকম 'মুখে হাসি মনে প্রতিশোধ' স্পৃহা নিয়ে তিনি চলে আসেন হস্তিনাপুরে গান্ধারী আর ভীষ্মর সাথে। 


এজন্যই বরাবরের মতো ছেড়ে আসেন গান্ধার। 


বিবাহ হয় বোনের এক অন্ধ রাজার সাথে, 

এটাও মেনে নিতে পারেন না শকুনি। 

কিন্তু তিনি সমস্ত অন্যায় অবিচার সহ্য করে চুপচাপ ভাবতে থাকেন কি করে নেওয়া যায় বদলা, পরিকল্পনা করে যেতে থাকেন মনে মনে কিভাবে ধ্বংস করা যায় হস্তিনাপুরকে সমূলে। 


গান্ধারীর স্বেচ্ছা অন্ধত্ব:

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

কোনভাবেই মেনে নিতে পারলেন না গান্ধারী নিজেও এই অন্যায়। তার আগের বিয়ে যখন তিনি মেনে নিয়েছেন তখন বাকীদের কিসের এত গাত্রদাহ...

এখন কেনই বা তাকে হস্তিনাপুরের কুলবধূ হতে হবে কেন?কেন হতে হবে একজন অন্ধের পত্নী? 


সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল ভীষ্মর উপরে।

তিনি মনে মনে এতটাই ঘৃণা করতে শুরু করলেন 

মুখ দর্শন করতে চাইলেন না ভীষ্ম'র। এরপরে 

যখন অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রের সাথে হল বিবাহ তখন তিনি নিজেকেও অন্ধ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। 

অন্ধ স্বামীর হবে অন্ধ পত্নী।

এমনিতেই তার এই পাপে ভরা পৃথিবীর থেকে মন উঠে গিয়েছিল। এছাড়া ভীষ্মর সামনাসামনি হতে তিনি চান না।

তাই এইসবের একত্রিত সমাধান হিসেবে গান্ধারী নিজের চোখে কাপড় বেঁধে নিয়েছিলেন। 


সন্তান প্রাপ্তি:

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

গান্ধারীর প্রথমদিকে হয়নি সন্তান। 

শিব আশীর্বাদ থাকা স্বত্ত্বেও তিনি মা হচ্ছেন না...

সেসময় বেদব্যাস আসেন ওনাদের প্রাসাদে। 

গান্ধারীর অক্লান্ত সেবায় তুষ্ট হন বেদব্যাস। 

বিদায়কালে গান্ধারী প্রণাম করলে উনি বলেন - আয়ুষ্মতী ভবঃ শত পুত্রবতী ভবঃ। 

তখন গান্ধারী তার পায়ে পড়ে যান। বলেন- তবে তাই হোক। আমি জানি আপনি শিব অংশে জন্ম নিয়েছেন।আপনিই সাক্ষাৎ শিব। আপনার কথা তারই কথা।আপনার কথা ফলে যাক, আমি শত পুত্রের জননী হতে চাই। 

বেদব্যাস তখন বলেন একশত দেবতার নাম নিতে 

যার তেজে গান্ধারী পাবেন একশত সন্তান। 

পতিব্রতা গান্ধারী সেই বর অস্বীকার করে বলেন-

পতি ধৃতরাষ্ট্রের ঔরসে যেন তার সন্তান হয়। 

আশীর্বাদ দিয়ে বিদায় নেন বেদব্যাস।


এরপরে গান্ধারী হয়ে যান সন্তানসম্ভবা। 

দিন দিন গান্ধারীর গর্ভ বড় হতে থাকে। 

ওনার চলাফেরা একরকমের বন্ধ হয়ে যায়। 

দুঃসহ ব্যথা সহ্য করে নিয়েও উনি সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন।

এইভাবে পার হয়ে যায় দুটি বছর 


এদিকে কুন্তীদেবী প্রথম সন্তান যুধিষ্ঠিরের জন্ম দিলে খুব হতাশ হন গান্ধারী। 

গান্ধারী চেয়েছিলেন তার সন্তান হোক সর্ব জ্যেষ্ঠ। 

তাই এই খবর শুনে উৎকন্ঠায় তার গর্ভনাশ হয়। 

জন্ম দেন এক বিশাল মাংসপিণ্ডের। 


বেদব্যাসকে খবর পাঠানো হলে তিনি আসেন। 

তিনি এসে বিশেষ রকমের কুম্ভ অর্থাৎ হাঁড়ি তৈরি করতে বলেন কিছু ঔষধ সহকারে। বিভিন্ন জরিবুটি আর ঘি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এক একটি কুম্ভ। 

এরপর মাংসপিন্ডটিকে একশত টুকরো করার জন্য বলেন। কিন্তু ভুল বশত সেটি একশত এক টুকরো কাটা হয়। তখন তড়িঘড়ি আরেকটি হাঁড়ি তৈরি করে একশত এক মাংস টুকরো সেই হাঁড়িগুলিতে রেখে দেওয়া হয়। 

এরপরে আরো নয়মাস পরে সেগুলো থেকে একে একে সন্তানের জন্ম হয়। 


অভিশপ্ত সন্তান:

********************************************

প্রথম সন্তান ছিলেন দুর্যোধন। 

কিন্তু দুর্যোধনের জন্মের সাথে সাথে শুরু হয় বিভিন্ন অমঙ্গলের সূচনা। শিয়াল, গাধা, কাক, শকুনের ডাকাডাকি শুরু হয় চরম মাত্রায়। 

দিনের বেলা অন্ধকার নেমে আসে। 

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বজ্রপাতে মৃত্যু, আগুন লাগা, ফসল নষ্ট ইত্যাদি খবর আসতে শুরু করে। 

তখন রাজমাতা সত্যবতী সমেত বিদুর রাজ্যের মঙ্গলের জন্য শিশু দুর্যোধনকে গঙ্গায় নিক্ষেপের নির্ণয় নেন - কিন্তু রাজি হন না ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী।


এরপরে একে একে সেই সমস্ত কুম্ভ থেকে জন্ম নেন একশত পুত্র আর একটি কন্যা সন্তান নাম দুঃশলা। 

এদিকে দুর্যোধনের জন্মের কিছুক্ষন মধ্যেই জন্ম নেন কুন্তীর আরেক সন্তান ভীম আর দাসী সুগ্ধার সন্তান যুযুৎসু। 


সেই হিসেবে দুর্যোধন ভীম যুযুৎসু এরা মোটামুটি একই বয়সী। 


উল্লেখ্য গান্ধারী যখন প্রায় দুই বছর সন্তান ধারণে ব্যস্ত ছিলেন সেই সময়ে দাসী সুগ্ধা ছিলেন ধৃতরাষ্ট্রের সেবায় নিযুক্ত। ধৃতরাষ্ট্র ঔরসে তখন সন্তান সম্ভবা হন সুগ্ধা। 


শিব আশীর্বাদ:

********************************************

হস্তিনাপুরকে পছন্দ না করলেও, ভীষ্মর প্রতি অসম্ভব ঘৃণা থাকলেও তিনি সারাজীবন মন দিয়ে করে গিয়েছেন সংসার। করে গিয়েছেন একনিষ্ঠ চিত্তে পতিসেবা। 

এমনকি তিনি তার সন্তানদের মুখ পর্যন্ত দর্শন করেন নি। বহু ইচ্ছে হয়েছিল পুত্র মুখ দর্শন করবেন কিন্তু করেন নি। যেহেতু তার স্বামী দর্শন করতে পারবেন না পুত্রদের, তিনি স্ত্রী হয়ে কি করে করেন...

পতিসেবার এমন উদাহরণ দেখে স্বয়ম মহাদেব পুনরায় আশীর্বাদ দিয়েছিলেন- গান্ধারী যার দিকে তার করুণা দৃষ্টি দেবেন তার শরীর বজ্রর মত কঠিন হয়ে যাবে। 


গদাযুদ্ধের আগেরদিনে:

********************************************

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের 18 দিন পার হয়েছে। গত হয়েছেন ভাই শকুনি। মোটামুটি যুদ্ধ শেষেরদিকে। 


স্থির হয়েছে এরপরে যুদ্ধ হবে ভীম দুর্যোধনের। 

সম্মুখ সমরে গদাযুদ্ধ। বিচারক থাকবেন বলদেব। 

ভীম দুর্যোধন দুজনেরই শিক্ষক। গদাযুদ্ধ তিনিই শিখিয়েছেন। তার সামনে কোন অন্যায় হবেনা।


আর দেরি নয়। আজই করতে হবে যা করার।

গান্ধারী ডেকে পাঠান দুর্যোধনকে। 

নিজের প্রাসাদের এক নিভৃত কক্ষে তিনি রয়েছেন পুত্রের প্রতীক্ষায়... 


আজ প্রথমবারের মত চোখের পট্টি খুলবে। 

প্রথমবারের মত দেখবেন তার সন্তানকে। জ্যেষ্ঠ সন্তান। শুনেছেন তার পুত্রেরা সবাই সুপুরুষ। কোনদিন প্রত্যক্ষ করেন নি। এই যুদ্ধে সবাই তো চলে গিয়েছে পরপারে। রয়ে গিয়েছে এক সন্তান

একে বাঁচাতেই হবে। 


দুর্যোধনকে আশীর্বাদ:

********************************************

সেই আশীর্বাদ আজ কাজে লাগানোর সময় এসেছে। পুত্রের শরীর হয়ে যাবে বজ্র কঠিন। ফলাফলে এই যুদ্ধ তো তার পুত্র জিতবেই। এরপরেও কোন শক্তি তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। এলেন পুত্র দুর্যোধন তার সামনে। 

কিছু কথোপকথন হল তাদের মধ্যে। 

বরাবরের মত তিনি পুত্রের মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। স্নেহ চুম্বন দিলেন কপালে। 


আলাপচারিতা শেষে পুত্র দুর্যোধনকে বললেন- 

গঙ্গা স্নান করে শেষরাত্রে যেন আসেন দুর্যোধন বিবস্ত্র হয়ে তার সামনে। 


মাতৃ আদেশ অনুযায়ী -

পরেরদিন ভোরে দুর্যোধন স্নান করতে যান গঙ্গায়। 

এদিকে ধৃতরাষ্ট্র এটুকু ধারণা করেছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণ কিছু একটা গন্ডগোল পাকাতে পারেন। সেই অনুযায়ী সেই রাতে শ্রীকৃষ্ণ'কে তিনি পাশা খেলায় সঙ্গ দেবার জন্য অনুরোধ করেন। 

সারারাত ধরে পাশা খেলছেন শ্রীকৃষ্ণ আর ধৃতরাষ্ট্র। এদিকে শেষ রাতে দুর্যোধন বিবস্ত্র হয়ে গঙ্গায় স্নান সেরে ফিরছেন প্রাসাদে, গন্তব্য মাতা গান্ধারীর কক্ষ।

শ্রীকৃষ্ণ তো শ্রীকৃষ্ণ। 

তাকে কবে আর কে আটকাতে পেরেছে...

তিনি নিজেকে দুই সত্তায় ভাগ করে এক সত্তায় খেলছেন পাশা ধৃতরাষ্ট্রের সাথে, আরেক সত্তায় নজর রাখছেন দুর্যোধনের দিকে।

স্নান সেরে ফেরার সময় তিনি সামনে আসেন দুর্যোধনের। বলেন- কি ব্যাপার তুমি বিবস্ত্র হয়ে কোথায় চললে...

বিবস্ত্র দুর্যোধন লজ্জিত হয়ে সব বলেন শ্রীকৃষ্ণকে। শ্রীকৃষ্ণ বলেন- 

মানুষ শুধু তার পিতামাতার সামনে উলঙ্গ হয় শৈশবে। অন্যথায় যৌবনে মারা গেলে চিতায় হয় উলঙ্গ। 

তুমি এর মধ্যে কোন পরিস্থিতিতে রয়েছ যে উলঙ্গ হয়ে মাতার সামনে উপস্থিত হচ্ছ...

শুনে দুর্যোধন বিচলিত হন। এদিকে শেষ রাত্রি আসন্ন। ভোরের আলো ফুটতে চলল।

আর দেরি না করে কলাপাতা নিয়ে নিজের কোমরে বেঁধে উপস্থিত হন মাতা গান্ধারীর সামনে। 


মাতা গান্ধারী একদম সামনে এসে দাঁড়াতে বলেন দুর্যোধনকে। সেই অনুযায়ী দুর্যোধন সামনে এসে দাঁড়ালে চোখের কাপড়ের পট্টি খোলেন গান্ধারী। 

সেই প্রথম তার 101 সন্তানের মধ্যে এক সন্তানকে দেখলেন গান্ধারী। তার মায়াভরা করুনার দৃষ্টি পড়ে দুর্যোধনের সারা শরীরে, শুধু কলাপাতার জন্য বাদ থেকে যায় কোমরটুকু। 

ফলাফলে দুর্যোধনের সারা শরীর হয়ে যায় বজ্র কঠিন শুধু দুর্বল রয়ে যায় কোমরের অংশটুকু। 


এইজন্য খুব ভৎসনা করেন গান্ধারী তার সন্তান দুর্যোধনকে। দুর্যোধন যখন শ্রীকৃষ্ণ'র কথা বলেন তখন তিনি দুর্যোধনকে আরো ভৎসনা করেন, বলেন- 

মায়ের সামনে সন্তান থাকে চিরকালই শিশু। 

তোমায় আমি যখন বলেছি আমার কথাটাই শেষ কথা হিসেবে তোমার শোনা ছিল উচিত...

এরপরে যখন আশীর্বাদ চাইলেন দুর্যোধন। 

বললেন গান্ধারী:

।।।"ধর্মের জয় হোক"।। 


কুরুক্ষেত্র:

■◆●■◆●■◆●■◆●■◆●■◆●■

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরিসমাপ্তি হয়েছে। 

খবর এসেছে দুর্যোধন হয়েছে পরাজিত। 

এলেন মাতা গান্ধারী দুর্যোধনকে দেখতে।


তখন পুত্রের মৃতদেহের পাশে উপস্থিত যুধিষ্ঠির। 

গান্ধারী যেই খুললেন চোখের পট্টি, হতাশ ক্রুদ্ধ দুঃখের দৃষ্টি গিয়ে পড়ল যুধিষ্ঠিরের পায়ে। সাথে সাথে কালো বর্ন ধারণ করল সেই পা। 

বিশেষ ক্ষতি হবার আগেই শ্রীকৃষ্ণ সরিয়ে নিয়ে গেলেন যুধিষ্ঠিরকে মাতার দৃষ্টি থেকে। 

এরপরে মাতার দৃষ্টি ঘুরল তার সন্তানের দিকে

কয়েক ঝলক মাতা দেখলেন তার মৃত সন্তানকে। 

এত সুন্দর তার সন্তান। যেন সাক্ষাৎ দেবতা। 

পরনে রণসজ্জা। হাতে তখনও ধরা রয়েছে তার গদা। 

তবে কোমরের নীচ থেকে দুই পা দুই দিকে সরে গিয়েছে। রক্তে তার বস্ত্র সমেত মাটি হয়ে পড়েছে লাল লাল।  

পুত্রের রক্তে ভিজে গেছে কুরুক্ষেত্রের মাটি।

গতকালও দেখেছেন তার পুত্রকে। 

জীবিত প্রাণোচ্ছল উৎসাহী এক পুরুষ। 

যখন শুনেছিল এই পুত্র তার মাতার আশীর্বাদের কথা, কি খুশী হয়েছিল সে...

মনে পড়ে গেল সব

অন্তর ভেঙে চুরচুর হয়ে গেল

কেঁদে উঠলেন তিনি

সেই পুত্রের আজ এই অবস্থা দেখে কষ্টে তার মন উদ্বেল হয়ে পড়ল।  

চোখের কোণ জলে ভিজে গেল। 

কিন্তু রাজমাতা তিনি। নিজেকে সামলে নিলেন... 


তারপর ধীরে ধীরে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন 

সবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা...

আশ্বস্ত হয়ে কাপড় আবার বেঁধে ফেললেন চোখে। 

বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন তিনি। 

কি ভাবছেন তিনি, হয়ত জানেন স্বয়ং ভগবান।

ফিরে গেলেন তিনি প্রাসাদে। 


মন তার ভার। কোন পুত্র নেই বেঁচে। এক কন্যা সেও বিধবা। পুত্র সম জামাতা সেও মৃত। 

অবশ্য হবে নাই বা কেন

ভ্রাতা শকুনির অন্যায় পাশাখেলা যে শত্রুতার সূচনা করেছিল সে তো এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিণতি পাবে 

সেদিনই বুঝে গিয়েছিলেন গান্ধারী। 

অবশ্য পিতৃ ইচ্ছে পূরণে তার ভাই শকুনি দায়বদ্ধ। 

জানেন তিনিও,তাই তিনি পিতৃ ইচ্ছে পূরণ করতে নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে একরকম বিসর্জন দিয়েছেন। 


মামা হয়ে শকুনির ভাগ্নেদের বিপথে পরিচালিত করার জন্য দ্রৌপদী একবার খুব বিরক্ত হয়ে শকুনিকে বকাঝকা করেছিলেন। 

এও শোনা যায় 

তিনি অভিশাপ দিয়েছেন নিজের ভাই শকুনিকে 

'গান্ধার নরেশ, যেভাবে তুমি কৌরব-পান্ডব ভাইদের মধ্যে অশান্তি তৈরি করে রাখছ, যেভাবে তুমি হস্তিনাপুরে হিংসা জারি করে রাখছ। ঠিক সেভাবেই তোমার প্রদেশ থাকবে অশান্তির মধ্যে'। 


রাজমাতা গান্ধারী:

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি। 

প্রথম পাশাখেলায় সর্বস্ব হারিয়ে দাসে পরিনত হওয়া পঞ্চপান্ডবদের মুক্ত করে দিয়েছেন। 

মুক্ত করে দিয়েছেন কুলবধূ দ্রৌপদীকে।

কিন্তু ভরা রাজসভায় যে অপমান হয়েছে কুলবধুর 

তার সমাপ্তি হবে কুলনাশে। যে কুল তার বধূর সম্মান রাখতে পারেনা। তার বিনাশ আসন্ন। সময়ের অপেক্ষা। 

জানতেন তিনি...

তবুও চেষ্টা করেছিলেন যাতে এই ধ্বংস আটকানো যায়। 

পিতা সুবলের ইচ্ছে যে তার নিজের কন্যার বংশ নাশ করবে এটা বোধয় ভাবেননি হতভাগ্য পিতা রাজা সুবল নিজেও... 


********************************************

হস্তিনাপুরের পরবর্তী রাজা হলেন যুধিষ্ঠির। 

সেখানেও তার স্বামী হত্যা করতে চাইলেন ভীমকে। 

কিন্তু শ্রীকৃষ্ণর চতুরতায় ভীম প্রাণে বেঁচে গেলেন। 


এরপরে শ্রীকৃষ্ণ ফিরবেন দ্বারকা। 

সবার সাথে দেখা করে গেলেন মাতা গান্ধারীর কাছে। 

মাতা গান্ধারী চুপচাপ বসে রয়েছেন। 

মন তার তোলপাড় হয়ে চলেছে। ভেবেই চলেছেন...

এগিয়ে এলেন শ্রীকৃষ্ণ। 

মাতা গান্ধারীর যেন সম্বিৎ ফিরল। 


গান্ধারী-কৃষ্ণ:

◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

কে এসেছেন বুঝলেন তিনি তারপর বললেন অস্ফুটে-

বাসুদেব আপনি তো ভগবান। আপনি চাইলে এই যুদ্ধ আটকাতে পারতেন। 

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- 

দীর্ঘ ছয় মাস ধরে চেষ্টা করেছি শেষে ছয় খানি গ্রামের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম দুর্যোধনের কাছে... 

কিন্তু দুর্যোধন তো দূত অর্থাৎ আমাকেই বন্দি করার চেষ্টা করে বসলেন। 

গান্ধারী তখন স্মিত হেসে বললেন- 

আপনি ভগবান বাসুদেব, আপনাকে বন্দি করতে চাওয়া দুর্যোধনের একটা শিশুসুলভ কাজ। 

সে তো আপনিও ভালো জানেন। 

তাও আপনি তো তাকে এই অপরাধেই আক্রমন করে বন্দি করে ফেলতে পারতেন। যদি সে বন্দি হত আপনার হাতে তারপর তো আপনি এই রাজ্য পাণ্ডবদের দিয়েই দিতে পারতেন। 

সবচেয়ে বড় কথা যুদ্ধের দরকার পড়ত না। 

আমার ছেলেগুলো আজ বেঁচে থাকতো। 


শ্রীকৃষ্ণ চুপ। 


তখন গান্ধারী বললেন- বাসুদেব আপনি এই যুদ্ধ চাইলেন তাই হল এই যুদ্ধ, আপনি চাইলেন তাই এত রক্ত ঝরল। 

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হল, 

আপনি চাইলেন বলেই হল...

এত এত রাজা মারা গেলেন, অভিভাবকহীন হল এত এত রাজ্য।

এত এত সৈন্য মারা গেল, অভিভাবকহীন হল তাদের পরিবার। 

এত মহিলা বিধবা হলেন, এত বাচ্ছা হল পিতৃহারা। 

এসব আপনি চাইলেন তাই হল...

আপনি চাইলেন তাই আমার সন্তানদের মরতে হল। 

আপনিই দায়ী।

আর কেউ নয়। 


গান্ধারী অভিশাপ:

********************************************

শ্রীকৃষ্ণ এগিয়ে গেলেন মাতা গান্ধারীর দিকে। 

সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। কিন্তু গান্ধারী শান্ত হতেই পারলেন না। দর্শন করেছেন পুত্রের মুখ, প্রথমবার দিনের আলোয়... 

মৃত সেই সন্তান তখন। তার সন্তান এত সুকুমার এত সুন্দর এত সবল এত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। 

পড়ে রয়েছে অসহায়ের মত দুই জঙ্ঘা ভেঙে নিয়ে। ভাঙা জঙ্ঘা থেকে পড়েছে রক্ত সারারাত ধরে, 

সেই রক্তক্ষরণে মারা গেছে সে, কত কষ্ট পেয়ে। 

ভেবেই কেঁপে উঠল তিনি। আর সামলাতে পারলেন না নিজেকে। 

যে কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছিলেন না এতক্ষন ধরে। 

এবারে 

সেই কথাগুলো তার মুখ থেকে বেরিয়েই গেল-

শুনুন বাসুদেব, যেভাবে আমার সন্তানের মৃত্যু দেখলাম দু চোখে, যে রক্তক্ষরণ আমি দেখলাম আমার দু-চোখে, যেভাবে ভাই ভাই লড়াই করল নিজেদের মধ্যে, 

আমি কিচ্ছু করতে না পেরে দাঁড়িয়ে দেখে গেলাম। 

ঠিক এভাবেই আপনিও দেখবেন আপনার বংশের ধ্বংস। এইরকম অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে দেখবেন আপনার পুত্র আপনার ভাই আপনার বন্ধু আপনার আত্মীয় সবাই লড়াই করবে। 

প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী হবে তাদের যুদ্ধ। 

আর হ্যাঁ 

আপনি সেখানে উপস্থিত থাকবেন। 

আপনি দাঁড়িয়ে দেখবেন একের পর এক মৃত্যু। কিচ্ছু করতে পারবেন না। ঠিক আমার মতই দাঁড়িয়ে দেখবেন। 


বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন গান্ধারী। 

শ্রীকৃষ্ণ সমেত পঞ্চপাণ্ডব তাকে সামলানোর চেষ্টা করলেন। 


শ্রীকৃষ্ণর অভিশাপ গ্রহন:

********************************************

শ্রীকৃষ্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। বলে চললেন-

মাতা আপনার কথাই ফলবে। আমার বংশ ধ্বংস হবে আমার সামনেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। আমি দাঁড়িয়ে দেখব। 

হে মাতা আপনার মতোই আমিও থাকব সেদিন অসহায়। 

আপনার এতদিনের আশীর্বাদ আমি নিয়েছি আজ নিলাম এই অভিশাপ। মাথা পেতে নিলাম। 

তবে কি জানেন মাতা... 


আমিই দুর্যোধন আমিই ভীম

আমিই কর্ণ তো আমিই অর্জুন

আমিই শকুনি তো আমিই দ্রোনাচার্য্য

আমিই শিখন্ডী তো আমিই ভীষ্ম

আমিই বার্বারিক তো আমিই ইরাবন 


দুর্যোধনের জঙ্ঘা ভেঙেছে ব্যাথায় সে চিৎকার করে উঠেছে আমিও অনুভব করেছি সেই ব্যথা।

কর্ণের যাবতীয় ব্যথা ভোগ করেছি আমি, 

শেষের সেদিনের তার রথের চাকা বসে যাবার অসহায়তা, সেও আমারই ভোগ হয়েছে।

বার্বারিক ইরাবন শকুনির দ্রোনাচার্য্যর মাথা কাটার যন্ত্রনার অনুভব করেছি আমি।

শিখন্ডীর প্রতিশোধ স্পৃহায় জ্বলেছি আমিই, 

আমিই প্রশমিত হয়েছি ভীষ্ম বধ করে। 

আবার ভীষ্ম পিতামহের শরশয্যা ভোগও করেছি আমি। 


কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মৃত সবার যন্ত্রনা ভোগ করেছি আমি। জয়ী পক্ষের আনন্দ যেমন উপভোগ করেছি তেমনি ভোগ করেছি পরাজিতের হারের যন্ত্রনা। 

হ্যাঁ সবার সাথে সবার সব যন্ত্রনা ভোগ করেছি আমি। 


আমিই উত্তরার গর্ভ বাঁচিয়েছি আমিই অভিশাপ দিয়েছি অশ্বত্থামাকে। 

উত্তরা'র গর্ভ নাশের যন্ত্রনাও ভোগ করেছি আমি আবার অশ্বত্থামার মনি হরনের যন্ত্রনাও ভোগ করেছি আমি। অশ্বত্থামা'র আগামী কয়েক হাজার বছরের অভিশপ্ত জীবনের যন্ত্রনা ভোগের ব্যথাও ভোগ করব আমি। 


তাই আমার বংশের ধ্বংসও দেখব আমি। সহ্য করব। সেই কষ্ট ভোগও করব আমি। 

মাতা গান্ধারী আপনার এই অভিশাপ আমি মাথা পেতে নিলাম... 


শুনে মাতা গান্ধারীর সব দুঃখ সব কষ্ট লাঘব হল। এরপরে তিনি অনুভব করতে শুরু করলেন ভগবানের কষ্ট। মা তিনি। ব্যথা তিনি নিজেও পেলেন। 

নিজের উচ্চারিত বাক্যের জন্য হলেন খুব অনুতপ্ত। 

তিনি ক্ষমা চাইলেন শ্রীকৃষ্ণের কাছে। 

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- 

মাতা সবই ভবিতব্য। এতে আপনার কষ্টের কিছু নেই। হবে তো এটাই, শুধু আপনার মুখ দিয়ে মহাকাল উচ্চারণ করিয়ে দিলেন। এতে দোষণীয় কিছু নেই। মহাকালেরও ইচ্ছে এটাই... 


এরপরে 

শ্রীকৃষ্ণ প্রণাম করতে যাচ্ছিলেন মাতা গান্ধারীকে। 

কিন্তু পাছে মাতা তার অভিশাপ ফিরিয়ে নেন তাই তিনি প্রণাম না করে মাতার দুহাত জড়িয়ে ধরলেন। 

মাতা দুহাতে জড়িয়ে ধরলেন শ্রীকৃষ্ণের মুখ। 

কপালে চুমু খেলেন। বললেন-

যেদিন প্রথম আপনার মুখমন্ডল স্পর্শ করেছিলাম সেদিনই বুঝেছিলাম আপনি কে...

আপনিই ভগবান। ধর্ম আপনিই। 

আপনি যেখানে ধর্ম সেখানে। 

ধর্মের জয় তো অবশ্যম্ভাবী। 

আমি জানি আমার পুত্রেরা অধার্মিক। 

কিন্তু তা হলেও একজন পুত্র তো বেঁচে থাকতে পারতো। 

আপনি চাইলেই পারতো। 

হয়ত কোন কারন রয়েছে তাই চান নি

আমরা আপনার সন্তান। ক্ষমা করে দেবেন ভগবান। 


শ্রীকৃষ্ণ কিছু বললেন না। 

বিদায় নিয়ে ফিরলেন দ্বারকার দিকে... 


পরবর্তী জীবন:

◆◆◆◆◆◆◆●◆◆◆◆◆◆◆◆◆

বিদুর কুন্তী গান্ধারী ধৃতরাষ্ট্র।

থাকতে শুরু করলেন হস্তিনাপুরে। 

যদিও সমস্ত পাণ্ডব ভাইরা সসম্মানে কথা বলত 

কিন্তু ভীম কিছুতেই সহ্য করতে পারতেন না ধৃতরাষ্ট্রকে। 

বিশেষ করে যুধিষ্ঠিরের অভিষেকের দিনে যে ঘটনা ঘটল এরপরে একরকম বিমুখ হয়ে গেলেন ভীম। 

একটু আড়াল হলেই নানারকম কথা শোনান তাদের।

যদিও ভীমের আক্রমনের মূল লক্ষ্য ধৃতরাষ্ট্র তবুও পতি অন্তপ্রাণ গান্ধারী কিছুতেই মানতে পারেন না। 


অবশেষে আরো পনের বছর অতিক্রান্ত হলে 

সিদ্ধান্ত নেন তারা যাবেন বানপ্রস্থে। 

সেই অনুযায়ী চারজনই চলে যান জঙ্গলে। 

সেখানে জপতপের মধ্যে দিয়ে আশ্রমিক জীবন কাটাতে থাকেন। 

এই সময়ে জঙ্গলে একদিন লাগে দাবানল। 

সেই আগুনে নিজেদের সমর্পণ করেন তারা। 

মৃত্যু হয় সবার।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy