এমনও হয়
এমনও হয়
আকাশটা আজ আরো কালো হয়ে এসেছে, চৈত্রের বিকেল গুলো হঠাৎ যে কখন কালবৈশাখী ডেকে আনে তা বোঝা দায়। অথচ এই মন খারাপ করা বিকেল গুলো কত শত পুরোন স্মৃতি কে মনে করিয়ে দেয় সে সব কিছু জানে শুধু সময় আর আমি। নাহ! আজকাল আমাদের দুজনের সঙ্গী হয়েছে এই ছোট্ট এক চিলতে ঘরের ছোট্ট জানালাটা।
দীর্ঘ বারো বছর তারপর আরো পাঁচ বছরের বৈবাহিক জীবন ... মোট সতের বছরের সম্পর্কের পর প্রথম সন্তানের মা-বাবা হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বাপ্পা যখন আমাকে আর মেহুলকে ছেড়ে সব পাওয়ার দেশে চলে গেলো একটা অ্যাক্সিডেন্টে, তখন ডিসচার্জ না পাওয়া আমি পাথরের মতো জড়িয়ে বসেছিলাম মেহুলকে ধরে। এক এক সময় মনে হতো ওর গলা টিপে মেরে ফেলি! কী রাক্ষস ছেলেটা! জন্মের সাথে সাথে, বাবাটাকে খেলো! মেহুল আমার আর বাপ্পার ছেলে।
পুরনো কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বৈশাখী এসে জানিয়ে গেল কাল আমার ছুটি। ছুটি কথাটা শোনার পর থেকেই তোমার আর মেহুলের কথা মনে পড়ছে আমার। এখন আর তোমার কোন চিন্তা নেই নিশ্চয়ই... মেহুলকে তোমার বুকের ওম দিয়ে জড়িয়ে থেকো, আমাকে নিয়ে আর তোমার কোন চিন্তা নেই... আমি আর ক'দিন ই বা বাঁচবো!
রাতে জেলখানার জানালার কাছে দাঁড়ালে যেটুকু চাঁদ-আকাশ দেখা যায় তাতে মনে মনে বলি ক্ষমা করো প্রভু, জীবনে হয়তো ঐ একটাই ভালো কাজ করেছিলাম ... কিন্তু তা না করলেই হয়তো ভালো হতো, সন্তানের মুখ মৃত্যুর সময় দেখতে পেতাম! কী হতভাগ্য আমি। বাপ্পার মৃত্যুর পর, মেহুলকে আঁকড়ে জীবন কাটছিল আমার, সেদিনগুলো কত যে ভয়ঙ্কর ছিল তা মনে করলে কাঁটা দেয় আজও.. শেয়াল কুকুরের অত্যাচার, হায়নার অট্টহাসি সবই তখন কাছ থেকে দেখেছি আর লক্ষ্য করেছি মেহুলের মধ্যে তোমার প্রতিচ্ছবি... খাওয়া দাওয়া, হাসি ঠাট্টা, গান বাজনা,এমন কি অন্য ছেলেদের সাথে কথা বললে তোমার ঈর্ষান্বিত চোখ, সন্দেহজনক বিকৃত ব্যবহার সব সওব ওর মধ্যে একে একে প্রকাশ পাচ্ছে... এ যেন তুমি! তোমারই পুনর্জন্ম হয়েছে আমাকে লক্ষ্য রাখার জন্য।
সবই মেনে নিয়েছিলাম ,কিন্তু যেদিন অল্প বয়সে তোমার মতো মাতাল হয়ে আমাকে মারতে এসেছিল মিথ্যা সন্দেহ করে, সেদিন... সে দিন আর অপেক্ষা করিনি আমি... মা হয়ে অকাল কুষ্মাণ্ড ছেলের মাথায় ভারী ফুলদানীটা ভেঙেছিলাম... সেদিন আমি মেহুলের শরীরে তোমাকেই দেখেছিলাম বাপ্পা! আমি মেহুলকে মারতে চাইনি, আমি তোমাকে ভয় পেয়েছিলাম.. তোমার অতৃপ্ত আত্মাকেই মারতে চেয়েছিলাম, আমাকে ক্ষমা করো বাপ্পা, ক্ষমা করতে পারবে তো!
(সমাপ্ত)