STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy

5  

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy

একটি সাধারণ মেয়ে

একটি সাধারণ মেয়ে

3 mins
517

গল্পটা একটা অত্যন্ত সাধারণ মেয়ের। মেয়েটা এখনকার দিনের মত মোবাইল ফোন ঘাটতো না বা সেলফি তুলতে জানত না। মেয়েটা জানত না মা বাবা কে মিথ্যা বলা কি? মেয়েটার জগৎ জুড়ে রবি ঠাকুরের বাস ছিল। মেয়েটির ঘুম ভাঙ্গতো পাখির ডাকে‌।মেয়েটির গানের গলাও ছিল চমৎকার। একদম সাধারণ ছিল সে। মেয়েটি পার্লারের চুলের রকমারি ফ্যাশন জানত না, যদিও মেয়েটির মাথায় রাশি রাশি ঘন কালো মেঘের মতো চুল ছিল।

মেয়েটির আর একটি জগৎ ছিল নিজের জগৎ।সে জগৎ টা সে সবার আড়ালে রেখেছিল, এমনকি আমার থেকেও।

এই সাধারণ মেয়েটা সহজ সরল ছিল সহজেই বিশ্বাস করতো সবাইকে। তেমনি বিশ্বাস করেছিল, হঠাৎ করে চলে আসা এক আগন্তুককে। আগন্তুককে মেয়েটি তার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবেসেছিল। যে আগন্তুককে মেয়েটি রাজপুত্র ভাবত সে ছিল রাজপুত্রের ছদ্মবেশে এক নরপিশাচ। বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।ততদিনে মেয়েটির সর্বনাশ যা হ‌ওয়ার হয়ে গিয়েছে। লোকমুখে ছি ছি, হরকরকমের মুখরোচক গল্প,বদনামের ভিড়ে মেয়েটির আর্তনাদ, কষ্ট, বুক ফাটা কান্না শুধুই চারদেয়ালের মাঝে আবদ্ধ ছিল। না কেউ, দেখেনি। কেউ দেখেনি মেয়েটা বার বার ছাদে লাফ দিতে গিয়েও ফিরে এসেছে, কেউ দেখেনি কতটা যন্ত্রনায় মেয়েটি ভগবানের কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করত। মেয়েটির মা বাবা ও তাকে তড়িঘড়ি করে বিবাহ প্রথার মাধ্যমে যন্ত্র থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইল। আশ্বাস দেওয়া হলো, এবার সে সুখী হবেই।

অনেক বছরের চেনা পুরোনো জীবনকে পেছনে ফেলে, অজানা অচেনা এক জীবনের পথে পা বাড়ায় মেয়েটির।হয়তো এখানেই মিলবে সুখ এই আশায়।

বিধিবাম এখানে তো সেই গল্প, যেটা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। ঘরের গৃহলক্ষ্মীর বেদনার কাহিনী। নিজের মন ভেঙ্গে, সবার মন জয় করার গল্প,নিজের স্বপ্ন ভুলে, সবার স্বপ্ন পূরণ করার গল্প।

কিন্তু কেউ দেখেনি গভীর রাতে তার হাহাকার, কেউ শোনেনি ,হয়তো চেষ্টাই করেনি কখনো শুনতে মেয়েটির মুখে হাত চাপা দিয়ে প্রবল কান্নার শব্দ। আমি দেখতাম, প্রাণের মত, চেয়ে চেয়ে দেখতাম আর ভাবতাম এতো কষ্ট ও বিধাতা দেন কাওকে?

এরমধ্যেই গল্পে নতুন মোড় আসে। বধূ থেকে মাতাতে রুপান্তরিত হ‌ওয়ার গল্প।

এরপর গল্পটা শুধুই মাতৃত্বের হতে পারত। কিন্তু সাধারণ মেয়েটির জীবনের আর কিছু ই সাধারণ থাকেনা।

সন্তান বড় হয়, খুব বেশিই তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়। মেয়েটির স্বামীও দেহত্যাগ করে। ঘরে নতুন ঘরণী আসে।ঘরণী সাথে সাথে নতুন অশান্তি ও এসে ঢোকে ঘরে। ঘরণীর কোল জুড়ে আসে নতুন অতিথি। তার জন্য চাই নতুন ঘর। পুরোনো ওল্ডফ্যাশনে বড্ড অ্যালার্জি ঘরণীর।তাই সব কিছুর বদল চাই। সব বদলে ফেল,পুরোনো সবকিছু ছুড়ে ফেল। ঘরণীর আদেশ‌ই আজ সন্তানের কাছে বেদবাক্য। খুব বেশী দেরী হয় না, পুরোনো সবকিছু কে ঘরের বাইরে ফেলে দিতে। পুরোনো সমস্ত কিছুর জায়গা হয় ডাস্টবিনে, পুরোনো জিনিসের সাথে সাথে পুরোনো মানুষটাকে ছুড়ে ফেলা হয়। না, না মানবতা বলে একটা ব্যাপার আছে না? মানুষকে কি ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া যায়? বৃদ্ধাশ্রম‌ই উপযুক্ত জায়গা।

দিন যেতে থাকে, শরীর খারাপ হতে থাকে মেয়েটির।


মনে হয় প্রাণের সময় চলে এসেছে।

একদিন সত্যিই মেয়েটি সবাইকে চিরবিদায় জানিয়ে, অনন্ত পরকালের পথে পা বাড়ায়।

এইতো এটাই ছিল সাধারণ মেয়ের সাধারণ গল্প। মেয়েটি কখনো তার গল্পগুলো কাউকে বলতোনা। লিখত‌ইনা ডায়েরীর পাতায়‌।পাছে কেউ পরে ফেলে! না লিখলেও ডায়রীর সাদা পাতা গুলো সাধারণ মেয়েটির অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে আছে। সাদা পাতাগুলো রং আজো অমলিন হয়ে আছে‌।সাদাপাতায় অনেককিছু না লিখেও আবার অনেক কিছুই লেখা হয়ে গেছে চোখের জলে, তার অব্যক্ত যন্ত্রণা, রোজ আঘাতে আহত হ‌ওয়ার গল্প গুলো, রোজ বেদনায় রক্তাক্ত হ‌ওয়ার গল্প গুলো। এগুলো সবার চোখের আড়ালে রয়েছে।

ডায়রীর সাদা পাতা অপেক্ষায় রয়েছে, অপেক্ষায় রয়েছে সাধারণ মেয়েটির পুর্নজন্মের। অপেক্ষায় রয়েছে তার নব ধর্মের গল্পগুলোর শোনার। সাদাপাতা আজো অপেক্ষা করে চলেছে, একটি কথাই বলতে

সারা পৃথিবীতে তোমার একজন বন্ধু এখনো তোমার প্রতীক্ষায় আছে, তোমার সব কষ্ট ভাগ করে নেবে বলে! কারণ সাদাপাতা তো নব্যমানবতাবাদী নয়। সাধারণ মেয়েটিকে সে ভালবাসত। শুধু বলতে পারতনা,সৃষ্টিকর্তা তাকে সেই সুযোগ দেন নি। নির্বাক বিমূঢ় হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা।

অপেক্ষায় থাকুক সাদাপাতারা।

নবজন্ম হোক সাদাপাতাদের, নবজন্মহোক সাধারণ মেয়েদের, অন্তত একটি বার। সে জন্মে যেন তাদের ভালবাসা পূর্নতা পায়। তারা সুখী হোক, তারা ভালো থাকুক। আর একটিবার তাদের সুযোগ দেওয়া হোক।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy