একান্ত রাত
একান্ত রাত
সত্যিই রাত্রি বেলায় ছাদ থেকে বেশ অদ্ভুত লাগে শহরটাকে ! সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ছাদ এ দাঁড়িয়ে আকাশছোঁয়া বাড়িগুলোকে দেখছে অমলেশ, তাদের মাথার লালবাতিগুলো যেন জীবনের সব না-সফল হওয়া স্বপ্ন গুলোর কথাই মনে করাচ্ছে তাকে ...কিসব বোকা বোকা স্বপ্ন দেখতো সে!! ..কিছু স্বপ্নের বাস্তব ভিত্তি অবশ্য ছিল তবে বেশিরভাগেরই ছিল না ..তবে অবাস্তব স্বপ্নগুলো অনেক বেশি রঙিন ছিল ..তার ঔজ্জ্বলই হয়তো ধূসর বাস্তব স্বপ্নগুলোকে সাকার করতে দেয়নি..তবে এর জন্য কিছু কবি, সাহিত্যিক এর ওপর বেশ রাগ হয় তার ..ওসব পড়া আর রবি ঠাকুর এর গান শোনাই হয়তো কাল হলো তার ..এসব না করলে হয়তো একটু ঠিক করে সমঝদার এর মতো ভাবতে পারতো সে !! যাই হোক কোনোরকম-এ ব্যাঙ্ক এ একটা চাকরি জুটিয়েছিলো সে.. বৌ বাপের বাড়ি যাওয়াতে অনেকদিন পর একটু নিজের মতো সময় কাটাবার বা ভাবার অবকাশ পেয়ে খারাপ লাগছে না তার ..সত্যিই যখন একা ছিল তখন ভাবতো কবে যে জীবনের শূন্যতা পূরণ হবে .. "নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস .....". অমলেশ এর ছেলে এখন সিক্স এ পড়ে ..কতরকম প্রশ্ন করে তাকে ..এটা কেন হয় , ওটা কেন হয় ? খুব কৌতহল আছে ছেলের .. অমলেশ এর ও হয়তো অনেক প্রশ্ন আছে এরকম কিন্তু জিজ্ঞেস করার সত্যিই কেউ নেই ..সেগুলোর উত্তর হয়তো জানার দরকারও নেই আর ..যেমন সুবর্ণা কি সত্যিই তাকে ভালোবেসেছিলো ..তাহলে চলে গেলো কেন ? অমলেশ এর মনে পড়ে যায় সেই ১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে তার সাথে
দেখা করতে যাওয়ার কথা ..সবথেকে অদ্ভুত লাগে আর কোনোদিনই হয়তো রোদ-এ লাল হয়ে যাওয়া আদুরে মুখখানা দেখতে পাবে না সে .শেষবার যখন দেখা হয়েছিল অমলেশ বুঝতেই পারেনি যে সেটা শেষ দেখা তবে সুবর্ণা সেটা জানতো বলেই অমলেশ এর বিশ্বাস. একবার আকাশের দিকে তাকালো অমলেশ চেষ্টা করলো ধ্রুবতারা টা কে খুঁজে বার করার ..কিন্তু প্রযুক্তি তার দৃষ্টিশক্তি আর ঘাড়ের নমনীয়তা দুটোর ওপরই প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে ..একটা সিগেরেটে ধারালো অমলেশ ..সেই ধোয়ার ভেতর দিয়ে একের পর এক না পাওয়া মুখ গুলো কে দেখতে পেলো সে ..না রঙিন নয় ধূসর ..মিলিয়ে যাচ্ছে ..এর কত মুখকে যে মনে মনে কতবার নিজের রান্না ঘরে কফি বানাতে দেখছে সে ..কতজনকে তার শোবার ঘরের আয়নায় চুল বাঁধতে দেখছে .. একেই হয়তো বলে আকাশ কুসুম স্বপ্ন ..তবে সব স্বপ্ন তো আর পূরণ হয়না .. তবে এটা ভেবে তার খারাপ লাগে যে এইসব আকাশকুসুম স্বপ্নগুলোর রঙ আর তীব্রতাই হয়তো বাস্তব স্বপ্নগুলোকে মলিন করে দিয়েছে ..যেমন তার ইকোনমিক্স নিয়ে দেশের বাইরে থেকে মাস্টার্স করার স্বপ্ন , কলেজ এর প্রফেসর হওয়ার স্বপ্ন ....রবি ঠাকুরের একটা গানের লাইন তো আছে স্বান্তনার জন্য .."না হয় তোমার যা হয়েছে তাই হলো..আরো কিছু নাই হলো .." ফোন টা বেজে উঠলো ওপাশ থেকে শর্মিলার গলা .."শোনো না বাবুর আবার জ্বর এসেছে ..কিচ্ছু খাচ্ছে না ..তুমি কাল পারলে চলে এস না .." সম্বিত ফিরে পেলো অমলেশ ..এটার নামই হয়তো জীবন ..বাকিটুকু কল্পনা ..