Sharmistha Mukherjee

Romance Action

3  

Sharmistha Mukherjee

Romance Action

এক মুঠো আকাশ - পর্ব ২

এক মুঠো আকাশ - পর্ব ২

3 mins
231



শামলী লজ্জা পেয়ে দুপা পিছিয়ে যায়, হয়তো খানিকটা ভয় ও পাচ্ছে । দেব বললো, " তোমার নাম তো শামলী ? তা তোমার বাড়ি কোথায় ?" শামলী বলে , " আজ্ঞে ঐ যে দূরে সবুজ বাড়িটা, আমি ওখানে থাকি । " দেব বললো, " না না তোমার আসল বাড়ি কোথায় কিছু মনে আছে ? এখানে কি করে এলে ? কি হয়েছিল কিছু মনে আছে ? " শামলী মাথা নীচু করে বললো, " সে অনেক কথা, আপনি জেনে কি করবেন । তার থেকে বরং আপনি চলে যান, কেউ দেখে নিলে বিপদে পড়বেন । " এই বলে শামলী এক ছুটে পালিয়ে গেল । সেদিন বিকালে দেব মাকে সব জানালো । দেবের কথা শুনে মায়ের বুঝতে অসুবিধা হোলো না ছেলে মেয়েটির প্রেমে পড়েছে কিন্তু এরা পাহাড়ি লোক, তার ওপর জাদরেল ঠিকাদার । যদি ঘুণাক্ষরেও টের পায় তাহলে ছেলের প্রাণ সংশয় হবে । দেবের মা দেবকে বোঝালো , " তুই এসবের মধ্যে ঢুকতে যাস না , তার থেকে ভালো চল্ কালকেই আমরা কোলকাতা ফিরে যাই । " দেব একেবারে নাছোড়বান্দা, ফিরলে সে শামলীকে নিয়ে তবেই ফিরবে । মায়ের কোনো কথাই যেন তার কানে ঢুকছে না । মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরছে, কি করে শামলীকে উদ্ধার করা যায় । 


আবার পরের দিন সকালে আবার শামলীর পথ আটকে সব কথা জানতে চাইলে শামলী বলে, " বাবু, আমি রোজ বিকালে ঐ পাহাড়ের পিছনে শিব মন্দিরে যাই । ওখানে পূজো দিয়ে নিজের মনকে স্বান্তনা দেই। ওখানে বিকালে এসো, সব বলবো " বলে শামলী চলে গেল । ওদিকে বিকেল হতে না হতেই দেব শিব মন্দিরে হাজির , দেখলো দূর থেকে শামলী আসছে । শামলীর পিছনে দুটো লোক লাঠি হাতে । শামলী ইশারা করে দেবকে মন্দিরের ভিতরে ডেকে নেয়, কারণ সে জানে লেঠেল দুটো মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করবে না । সেখানে বসে কথা বলা যাবে । পূজার থালা পুরোহিতের হাতে দিয়ে শামলী বলতে শুরু করে নিজের সব কাহিনী। 


শামলী বলে," আমি পুরুলিয়ার একটি ছোটো গ্রামে থাকতাম । বাড়িতে ছিল বাবা - মা আর ছোটো তিন ভাই- বোন । বাবা দিনরাত মদ খেয়ে পড়ে থাকে । একদিন এই ঠিকাদার অনেক টাকার বিনিময়ে আমাকে বিয়ে করে এখানে নিয়ে আসে । এখানে আসার পর প্রথম রাতে ঠিকাদার, তার ভাই, ঠিকাদারের ছেলে আর ঠিকাদারের ভাইয়ের ছেলে একে একে আমার শরীরটাকে নিংড়ে- মুচড়ে ভোগ করে । তারপর থেকে আজ এই তিন বছর ধরে প্রত্যেক রাতেই একই ঘটনা । তাই রোজ বিকালে মন্দিরে আসি একটাই প্রার্থনা নিয়ে যে কবে এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবো । আচ্ছা বলুন তো এক মুঠো মুক্তির আকাশ চাওয়া কি আমার অন্যায় ? আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো বাঁচতে চাওয়া কি অন্যায়? তিন বছর ধরে ভগবানকে একই প্রশ্ন করতে করতে আজ আমি ক্লান্ত কিন্তু কোনো উওর আজও পেলাম না । " হঠাৎ করে দেব শামলীর হাত ধরে বলে , " তোমাকে আমি নিয়ে যাবো এখান থেকে, তুমি যাবে আমার সাথে ? তোমাকে দেখার পর থেকে আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না । আমি তোমাকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে নিজের করে নিতে চাই । " শামলী অবাক হয়ে কথাগুলো শুনে বলে, " বাবু এটা কোনো দিন সম্ভব না, ঠিকাদার ও তার লোকজনের চোখ এড়িয়ে আমি আপনার সাথে যেতে পারবো না । ঠিকাদার জানতে পারলে দুজনকেই মেরে ফেলবে । " এই বলে শামলী মন্দির থেকে বেরিয়ে গেলো। তারপর দিন ওরা আবার মন্দিরে দেখা করলো, অনেক কথা বললো দুজনে । দেবের মা ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে অনেক করে বোঝাতে লাগলেন, কিন্তু কথায় আছে না " ব্রাহ্মণে মন্ত্র পড়ে পাঠায় কানে শোনে না " । দেবের খাওয়া- ঘুম সব কমে গেছে চিন্তায় । একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেব মাকে বললো, " মা আমি শামলীকে আনতে যাচ্ছি, আজই ওকে বিয়ে করে তোমার কাছে নিয়ে আসবো " বলেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো । দেবের মা পিছু পিছু " শোন খোকন, শোন খোকন, একবার শোন, যাস না সর্বনাশ হয়ে যাবে " বলতে বলতে ছুটতে লাগলো । দেব একবারও থামলো না । নদীর ধার থেকে স্নানরতা শামলীর হাত ধরে টেনে নিয়ে ছুটতে শুরু করলো । 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance