এক মুঠো আকাশ - পর্ব ১
এক মুঠো আকাশ - পর্ব ১
দেবরাজ আজ খুব ক্লান্ত । অফিসের অনেক বেশি কাজ করে রাখতে হোলো, আসলে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে ঋষিখোলায় ঘুরতে যাচ্ছে । অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে স্নান সেরে চটপট খাওয়া শেষ করে নিলো । মাকে বললো, " মা তোমার গোছগাছ শেষ ? তাহলে আমার গুলো গুছিয়ে ফেলি? " এই বলে নিজের ব্যাগটা গোছাতে লাগলো । সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার -এর পাশাপাশি দেব টুকটাক কবিতাও লেখে, তাই ডায়েরিটার কথা মা মনে করিয়ে দিলো । দেব মাকে বললো, " Thank you maa, আমি ভুলেই গেছিলাম ডায়েরির কথা । শোনো মা, আমরা এবার কোথাও ঘুরবো না । নদীর ধারে বসে তুমি রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবে আর আমি তোমার গান শুনবো আর কবিতা লিখবো । " পরের দিন সন্ধ্যায় দেব মাকে নিয়ে রওনা দিল । দেবের বাবা আর মায়ের বহু বছর আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে , তখন দেবের মাত্র নয় বছর বয়স । দেবের মা অনেক কষ্ট করে দেবকে বড়ো করেছেন ।
তাই দেব ও মা ছাড়া কিছু বোঝেনা । পরের দিন সকালে নিউ জলপাইগুড়ি নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছায় ঋষিখোলায় । দুজনেই খুব ক্লান্ত, জলখাবার সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে চলে যায় নদীর তীরে । হোটেলটাও ছিল নদীর ধারেই । নদীর তীরে বসে থাকতে থাকতে দেবের মা আস্তে আস্তে গান গাইতে শুরু করে, " আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে " । দেব তখন কলম নিয়ে বসে কবিতা লেখার চেষ্টা করছে ।
দেব যখন যা লেখে তা মাকে শোনায় ।
" শহর থেকে অনেক দূরে
পাহাড়িয়া নদীর শীতল স্রোতে,
ভাসিয়ে দিতে সকল ক্লান্তি
এলাম মোরা বহু দূর হতে ,
চাই না বহুতল অট্টালিকা
চাই না টাকার পাহাড়
চাই শুধু একমুঠো মুক্ত আকাশ ,
আর বুক ভরা স্বস্তির নিঃশ্বাস । "
মা বললো, " ছোট্টর মধ্যে খুব ভালো
হয়েছে । চল্ এবার লাঞ্চ করে একটু বিশ্রাম করি তারপর বিকালে আবার এসে বসবো । দেব মাকে নিয়ে হোটেলে ফিরে এলো।
পরের দিন সকালে দেব নদীর ধারে একা বসে গান শুনছিল হঠাৎ চোখ পড়লো নদীতে একটি মেয়ে স্নান করছে, একপিঠ কালো চুলে ঢাকা । মেয়েটি স্নান করতে করতে সামনের দিকে ঘুরতেই দেবের মাথা ঘুরে গেলো মেয়েটির রূপের ছটায় । দেব মনে মনে ভাবতে লাগলো, কে এই মেয়েটা ? এতো অপরূপ সুন্দর দেখে চোখ ফেরাতে পারছি না । " ভাবতে ভাবতে হুশ ফিরতে মেয়েটিকে আর দেখতে পেলো না । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল দেবের । মাকে অবশ্য কিছু জানালো না । পরের দিন সকালে আবার মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে দেব ডাকতে লাগল, " এই যে শুনছেন, এই যে শুনতে পাচ্ছেন " কোনো উওর না পেয়ে দেব ভাবলো হয়তো মেয়েটি বাংলা বোঝে না হিন্দিতে বলে দেখি । " শুনিয়ে , ম্যায় আপকো বুলা রাহা হু । শুনিয়ে, শুনিয়ে ....... " ডাকতে ডাকতে মেয়েটি স্নান করে উঠে চলে গেল । দেব বললো, " নাঃ, আমাকে জানতেই হবে কে এই অপরূপা । " হোটেলে গিয়ে একটা স্থানীয় ছেলেকে জিগ্যেস করলো, " ও ভাই, একটু আগে নদীতে একটি খুব সুন্দরী মেয়ে স্নান করছিল । তুমি কি চেনো তাকে ?" ছেলেটি বললো, " হুম্ জানি বটে সাব্ জী ওহ্ হামাদের গাঁয়ের বিটি শামলী আছে । হামাদের গাঁয়ের ঠিকাদার উহাকে শহর থেইক্যা এহানে আনছেন । হামি শুনেছি বটে উহাকে ঠিকাদার তুলে এনেছেন । " এসব শুনে আকাশ থেকে পড়লো দেব , মনে মনে ভাবলো " এখনো এইসব ঘটে এই আধুনিক যুগে । যে ভাবেই হোক মেয়েটির সাথে কথা বলতেই হবে । " পরদিন সকালে মেয়েটির স্নান করতে এলে দেব মেয়েটির পথরোধ করে দাঁড়িয়ে বলে তোমার সাথে সাথে কিছু কথা আছে । শামলী কথা না শুনে চলে যাচ্ছিল সে সময় হাত টেনে ধরে দেব । শামলী লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে থাকে।