এক মুঠো আকাশ- অন্তিম পর্ব
এক মুঠো আকাশ- অন্তিম পর্ব
মাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকিতেও কোনো লাভ হোলো না দেবের উপর । শামলীর প্রতি টান যেন আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল । দেবের মা ও হোটেলের সবাই এমনকি ডাক্তার ও অনেক করে বোঝাতে থাকে । একটু সুস্থ হতেই আবার শামলীর সাথে দেখা করার জন্য দেব মরিয়া হয়ে উঠলো । দেবের মা বাধা দিলে সে বললো, " মা শামলী আমার স্ত্রী , আমি ওকে বিয়ে করেছি । কি করে ওকে ওই নরপিশাচগলোর হাতে ছেড়ে দিই । " ডাক্তার বললো, " তুমি ভুল করছো, তুমি জানো না ওরা কিরকম খারাপ মানুষ , নাঃ মানুষ বললেও ভুল হবে । যেমন ঠিকাদার তেমন তার ছেলে । রক্তই খারাপ ওদের , বাবা খারাপ হলে তার সন্তানতো খারাপই হবে । " কিন্তু এসব কোনো কথায় দেব পিছপা হোলো না, বরং শামলীকে পাওয়ার জেদ আরও বেড়ে গেল । দেব একদিন কাউকে কিছু না বলে সোজা গিয়ে উপস্থিত হয় ঠিকাদারের বাড়িতে । ব্যস্ ওমনি লেঠেলরা আবার দেবকে মারতে শুরু করে দিলো । বেধড়ক মার খেতে খেতে দেব " শামলী, শামলী " করে চীৎকার করতে থাকে । কিন্তু শামলী একটা ঘরে বন্দী তাই দেবের কাছে ছুটে আসার কোনো উপায় ছিল না । ওদিকে ঠিকাদারের লোক গিয়ে দেবের মাকে তুলে আনে ঠিকাদারের কাছে । ঠিকাদারকে দেখেই দেবের মায়ের জ্ঞান হারাবার উপক্রম । এই ঠিকাদারই যে দেবের বাবা । ঠিকাদার নিজেও অবাক হয়ে গেল । ঠিকাদার বললো, " জুঁই, তুমি? তুমিই ওর মা ? মানে ও আমার সন্তান । " দেবের মা চুপ থাকতে না পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়লো । ততক্ষণে প্রচন্ড মার খেয়ে দেব মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । ঠিকাদার যতোই খারাপ হোক কিন্তু দেব তার নিজের সন্তান জেনে নিজেই ডাক্তার ডেকে দেবের চিকিৎসা করান । শামলীকে মুক্তি দিয়ে বলেন, " আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও । দেব আমার সন্তান আর আজ থেকে তুমি আমার পুত্রবধূ । "এই বলে নিজের ড্রাইভারকে ডেকে দেব, শামলী ও দেবের মায়ের ফেরার ব্যবস্থা করে দিলো । কিন্তু ঠিকাদারের ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের ছেলে কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারল না ।গাড়িতে করে হোটেলে ফেরার পথে ব্রেক ফেল করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পাহাড় থেকে খাদে পড়ে যায়।স্হানীয় লোকেরা মিলে যখন ওদের উদ্ধার করে তখন ওরা তিনজনেই মৃত। ঠিকাদারের ছেলে গাড়ির ব্রেকের তার কেটে রেখেছিল তা কেউ এমনকি ঠিকাদার নিজেও জানতো না । পুলিশ এসে তদন্ত করে জানায় গাড়িটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে । তিন জনেই মৃত শুনে ঠিকাদার অসুস্থ হয়ে পড়ে । প্রচন্ড শোকে হার্ট অ্যাটাক করে তিনি মারা যান ।
কি অদ্ভুত না! শামলী এক মুঠো মুক্তির আকাশ চেয়েছিল, প্রাণ ভরে দেবের সাথে বাঁচতে চেয়েছিল । কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, জীবন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে দেব, শামলী ও দেবের মা কয়েক মুঠো ছাই হয়ে আকাশে মিলিয়ে গেলো । এক মুঠো মুক্তির আকাশ শুধুই কয়েক মুঠো ধূসর ছাইয়ে ঢাকা পড়ে গেল ।
এক মুঠো মুক্তির আকাশ
ধূসর ছাইয়ে ঢাকা ,
মরণের পারে মুক্তির পথ
বিস্তৃত নীলের মাঝে রাখা ।