Joy Mondal

Classics Inspirational Others

4.3  

Joy Mondal

Classics Inspirational Others

দত্তক

দত্তক

5 mins
407


আজ অফিসে এসে মুখভার করে নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো তনয়, ক্যাফে থেকে সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার নিতে এলে ফিরিয়ে দেয় তনয়। অফিসের CEO বলে কথা। অফিসে ওর মুখভার দেখে ওর PA কাম বন্ধু সৌগত গেল জানতে। কিন্তু আমাদের তনয় খুব চাপা স্বভাবের কিনা তাই নিজে মুখে কিছুই বললো না। সেই দিনটা খুব একটা মন দিয়ে অফিসের কাজ করতে পারলো না তনয়। অফিস থেকে বিসন্ন মুখে বাড়ি এলো। দরজা খুলে, মুখ দেখে মা বললো, কি হলো আজ ?মুখভার ,আবার কি দেখলি?

কিছুক্ষণ অস্বাভাবিক চুপ করেই থাকলো সে। মা নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বললো , আচ্ছা যা হোক ভিতরে আই মুখ হাত ধুয়ে নেয় খাবার গরম করছি।

মায়ের প্রশ্নটা ভীষণ সহজ হলেও বোঝা গেল এমন কিছু তনয় প্রায় প্রতিনিয়তই দেখে থাকে , যা তাকে ভাবায় , যা ওর সারাদিনের কাজকর্মের মনোযোগ প্রায় অনেকটাই নিয়ে নেয়। আমার চিন্তা হচ্ছে যে, ও সমাজের আসল কোনো রূপ দেখে নেইনি তো! তারপর ডাইনিং টেবিলে মা বসে আছে ওর জন্য ওদিকে তার স্ত্রী গীতা ও এখনও খায়নি। গীতা মা কে জিজ্ঞাসা করলো আবার কি হলো আজ আপনার ছেলের, বেশ মুখ করে আছে দেখছি। মা বললো, বৌমা এই নিয়ে ওকে কিছু আর জিজ্ঞাস করো না। মা আপনার ছেলে কিন্তু ভীষণই emotional একটুতেই গলে যায়। এই দেখুন না সেবারে মলে আমার এক বান্ধবীর সাথে দেখা। ও ছিল সাথে, আলাপ করালাম। কথায় কথায় ও বললো ওর হাসব্যান্ড এর চাকরিটা চলে গেছে তারপর চলে আসতে যাবো , তখনই আপনার ছেলে আমাকে ভিজিটিং কার্ড টা দিয়ে বললো, যাও গিয়ে ওনার হাসব্যান্ড কে আমার অফিসে আসতে বলো। গীতার কথা থামিয়ে মা বললো আমি জানি বৌমা, আমার তনু একদম মাটির মানুষ।কথা শেষে তনয় গেল টেবিলে, মুখ চোখ ছল ছল করছে ওর। কোনো কথা না বলে চুপচাপ ডিনার সেরে উঠে পড়লো। দিনের শেষে তিনজন একসাথে হয় ডিনার টেবলেই , আর সেখানে অফিসের নানান সতেরো গল্প, বাড়িতে কী হলো, গীতার টিউশন ব্যাচে কী হলো সবকিছুরই কথা ওঠে কিন্তু আজ কেন চুপচাপ সেটা সবাই জানে বোধহয়। আজ মা আর গীতা গিয়েছিল রিপোর্ট আনতে কিন্তু রিপোর্টে গত দু বারের মতোই নেগেটিভ। অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিল গীতা ,কারণ ওরা গত এক বছর ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু আশানুরূপ ফল পায়নি। এবারে তো গীতা নামও ঠিক করে ফেলেছিল কিন্তু…

মা আশ্বাস দিয়ে বলে গীতা মা হওয়া টা সহজ নয়, অনেক পুন্যির করলেই তবে নাকি মা হওয়া যায়! গীতা কেঁদে উঠে বলে আপনিই বলুন না আমি কি দোষ করেছি তাই এত বড় শাস্তি পেতে হচ্ছে, ‘বৌমা ওমন ভাবে কাঁদে না ‘ বলে চোখ মুছিয়ে দেয় মা।

মা বললো, তনু কে বলেছ? না .. মা কোন মুখে বলব। ভেবেছিলাম আর দুদিন পরে আমাদের বিবাহবার্ষিকী,সেদিনই সুখবরটা দেবো ভেবেছিলাম কিন্তু তা আর হলো কই!!

মা বললো, বাড়ি আসলে না হয় ওকে বলো। জানেন মা, আমি বাড়িতে ফোন করে বললাম , তারপর খুব একটা ভালো করে কথা বলেনি মা আমার সাথে ;গীতা এই কথা বলাতে মা বললো , বৌমা এতে তোমার দোষ কোথায়? দেখো তনু ও কিছু বলবেনা।

গীতা বললো, জানি মা ও কিছুই বলবেনা ; জানেন মা, আমি ভাগ্য করে একটা স্বামী আর আপনার মতো শ্বাশুড়ি পেয়েছি। বৌমা যাও, হাত মুখ ধুয়ে নাও আর চিন্তা করেনা। সকালে রিপোর্ট নিয়ে আসার পর থেকেই গীতা মনমরা হয়ে আছে। মা ও তেমন কিছু ওকে বললো না। অফিস থেকে তনয় বাড়ি এলো, গীতার মুখে কথাটা শুনলো। তনয় কোনো অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া না করে বরং গীতাকে আশ্বাস দিল। গীতা জানতো তনয়ের ও আশা ছিল এবারে, তা নাহলে বলে আমার একটা তোমার মতো ফুটফুটে মেয়ে চাই। খুব কষ্ট পেয়েছে হয়তো। কত কষ্টয় না চেপে গীতাকে শান্ত হতে বলছে সে কি মা বোঝেনি! ঠিক বুঝেছে। তারপর কোনোমতে ডিনার করে ঘরে গেল তনয়, গীতা কিছুই খেলো না সেদিন। বিছানায় শুধু শুয়ে থাকা ঘুম এলো না। শেষে তনয় হলঘরে গিয়ে সোফাতে বসে সেদিনের কথা ভাবছে।

প্রচণ্ড বৃষ্টি, খিদেতে প্রায় শরীর অবসন্ন হয়ে আসছে। বৃষ্টিতে ভিজে ফুলগুলো মূর্ছা গেছে। তবুও সেটাকেই অবলম্বন করে, ট্রাফিকের রেড সিগন্যাল দেখে বেড়িয়ে পরলো। হটাৎ মাথায় হাত দিয়ে মা বললো, ঘুম আসেনি বুঝি। না.. মা। কি ভাবছিস? সেদিনের কথা। আর দুদিন পরে তনয় আর গীতার বিবাহবার্ষিকী তবে গীতার তেমন কোনো উৎসাহ নেই। সেদিন অফিস থেকে তনয় একটু তাড়াতাড়িই বেড়িয়ে পরলো। এখন সময় ন টার কাছাকাছি। এদিকে গীতা ফোনে তনয় কে পাচ্ছে না। বাইরে মাঝে মাঝে বাজ পড়ছে সঙ্গে প্রচন্ড বৃষ্টি। মা ও ভীষণ রকম চিন্তা করছে, যেটা স্বাভাবিক বইকি। তারপর রাত দশটা নাগাদ ফোন এলো তনয়ের। গীতা ফোন রেখে মা কে জানালো, ‘আপনার ছেলে হসপিটালে কোনো এক রাস্তার একটা বাচ্চা মেয়ের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। তাই আপনার ছেলে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। বলেছিলাম না আপনাকে আপনার ছেলে একটুতেই গলে যায়’। না বৌমা তুমি তনুকে পুরোটা বুঝে উঠতে পারনি। আমার তনু এমনই। তাহলে তোমাকে একটা কথা বলি, আমাদের বিয়ের প্রায় চার বছর হয়েছিলো কোনো সন্তানের মুখ দেখিনি। অনেক ডক্টর দেখিয়েছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শেষে জানলাম আমি কোনোদিন মা হতে পারবো না। গীতা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অবিশ্বাসের দোলাচলে প্রশ্ন করে তাহলে তনয়? হ্যাঁ তনয় আমাদের নিজের ছেলে নয়। সেদিন তোমার শশুরমশাই অফিস যাওয়ার সময় গাড়ীটা সিগন্যাল ছেড়ে যাওয়ার সময়, বৃষ্টিতে ভেজা ঝাপসা কাঁচ, তারই সঙ্গে একটা ঝাঁকুনি আর কাঁচা গলার চিৎকার। হাতের মুঠোয় থাকা মূর্ছা যাওয়া ফুলগুলো ছড়িয়ে আছে রাস্তায়। তখন তনুর বয়স কত আর হবে ওই পাঁচ ছয়। উনি সঙ্গে সঙ্গে হসপিটালে অ্যাডমিট করে, আমাকে ফোন করে। আমি গিয়ে তনুকে প্রথম দেখলাম, ফুটফুটে চেহারা, ছিপছিপে গড়ন, টিকলো নাক।

তখনই ওনাকে আমার আবদার বললাম। আমাদের অবস্থা ও আমরা জানি যে, আমাদের কোনোদিন সন্তান…। গীতা কেঁদে উঠে বললো সত্যিই মা হওয়াটা সহজ নয়। কথায় কথায় একটু দেরিই হয়ে গেল। গীতা আর মা বেড়িয়ে পরলো। হসপিটালে বিধ্বস্ত মুখ নিয়ে ইমারজেন্সি করিডোরে বসে রয়েছে তনয়। গীতা আর মা কে দেখে একটু বল পেলো তনয়। পুলিশের রিপোর্টে জানা গেল, মেয়েটার বয়স ছয়। রাস্তায়, সিগন্যালে ফুল বিক্রি করে। মেয়েটা অনাথ তাই কোনো প্রতিবাদ করেনি কেউ।

তনয় সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিল। ওই ভারী বৃষ্টিতে কোনো গাড়িই থামছিল না, শেষে তনয় নিজের গাড়িতে করে হসপিটালে নিয়ে আসে। এমনিতেই তনয় এর ব্যাপার টা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছে, আবার তার উপর মা না হওয়ার…। মেয়েটাকে দেখে কেঁদে উঠলো গীতা। মাথাই স্টিচ করা হয়তো জ্ঞান ফেরেনি এখনো। গীতা তনয় কে বললো ওর নাম কি? আমি জানি না গো। আজ থেকে ওর নাম রুমি। আমরা ভালোবেসে রুম বলে ডাকবো কেমন!

তনয় ছলছল চোখে গীতার দিকে তাকালো। এবারের বিবাহবার্ষিকীটা গীতার কাছে খুব স্পেশাল। গীতা পেল রুম কে আর এক নতুন তনয়কে, যে তনয়কে এতদিন ও চিনতে পারেনি। গল্পের শেষে এক সুখী পরিবার গীতা, তনয় , মা আর এখন সবার নয়নের মণি রুমি না ভুল বললাম রুম..।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics