STORYMIRROR

আবেগ ও বাস্তবতা

Inspirational

3.0  

আবেগ ও বাস্তবতা

Inspirational

করোনা মানেই ধ্বংস নয়

করোনা মানেই ধ্বংস নয়

4 mins
206


সময়টা এখন ভীষণই টালমাটাল। সমাজের যত্রেতত্রে মহামারীর ছোঁবল। এবারের মহামারীর নাম করোনা অর্থাৎ COVID-19 বিভিন্ন দেশে তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের কপালে ফেলেছে ভাঁজ, এই মহামারী। যেখানে আমাদের চোখে শুধু করোনার ধংসলীলার ফলাফল চোখে পড়ছে সেইখানেই ডঃ অনির্বাণ বসু বলছেন অন্যকথা,দেখছেন নাকি সুফল! সেই নিয়েই বিতর্কে জড়ালেন ডঃ অনির্বাণ বসু। তিনি সংবাদপত্রে লেখালেখি করেন। আদতে তিনি একজন Naturalist. প্রকৃতি নিয়েই চর্চা। ইতিমধ্যে ড:বসু এক আর্টিকেল ও লিখেছেন। লিখেছেন যে,


আমরা মানুষ। আমরা নিজেদেরকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব বলে দাবী করি। তাই,অনায়াসেই আমরা আমাদের চাহিদা যেকোনো ভাবেই পূরণ করি বা করার সামর্থ রাখি। যতোই হোক সেটা কঠোর কিছুর বিনিময়ে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,আমরা নিজেদেরকে সুগন্ধিত রাখার জন্য দামী দামী সেন্ট ব্যবহার করে থাকি তা তৈরি হয় CFC জাতীয় যৌগ সমন্বয়ে যা ক্ষতি করে চলেছে 'পৃথিবীর চাদর' অর্থাৎ ওজোন স্তরকে। যা সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি থেকে আমাকে আপনাকে তথা সমগ্র জীবজাতিকে রক্ষা করে চলেছে কিন্তু আমরা মানুষেরা, তথাকথিত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব ধংস করে চলেছি সেই পৃথিবীরই আচ্ছাদনকে। বায়ুদূষণ অর্থাৎ বায়ুতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক যৌগ যা জ্ঞানে -অজ্ঞানে আমরাই সৃষ্টি করি তা মিশে বায়ুকে আরও বিষাক্ত করে তোলে। কিন্তু এখন এক সার্ভে অনুযায়ী জানা গিয়েছে, দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা কমেছে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ। এই সার্ভে আরও কিছু তথ্য দিয়েছে যে বায়ুদূষণের অংশীদার NO2,SO2,CO এবং ওজোন,অতিবেগুনী জৈব যৌগ সাথে বেঞ্জিন,টলুইন,এস্কাইলিন এবং NH3 এর পরিমাণ কমেছে প্রায় পঞ্চাশ ভাগ। এখন এই সময়ে যান চলাচল প্রায় বন্ধ তাই বায়ুতে মিশছে না কোনো পেট্রল,ডিজেলের কালো ধোঁয়া।তার ফলেই বায়ুতে আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস। যেখানে প্রায় এক লক্ষ শিশু মাত্র পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই মারা যায় শুধুমাত্র বিষাক্ত বায়ুর প্রকোপে সেই তুলনায় করোনায় মৃত মানুষের সংখ্যা অতীব নগন্য। State of India's Environment (SOE) এর পেশ করা ২০১৯ সালের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়,ভারতে দশ হাজার জনের মধ্যে ৮.৫ ভাগ শিশু পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই মারা যায় শুধুমাত্র দূষিত বায়ুর নিঃশ্বাসে। টিভির পর্দায় ভেসে উঠছে করোনায় আক্রান্ত,মৃতের সংখ্যা কিন্তু ভেসে ওঠেনি সেই সংখ্যা,যারা অচিরেই প্রাণ হারিয়েছে।


আরও অনেককিছুই লিখেছেন উনি কিন্তু ওইপর্যন্ত পড়ে আমার মনে কৌতূহল জাগল, ইচ্ছা জাগল জানার ওই মানুষটার চোখে আর কিইবা ভালোদিক ধরা পড়েছে? যদি এ প্রশ্ন আমায় করে,আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিনিধি। লিখতে ভালোবাসি তাই লিখি, এটাকে কোনোদিন পেশা বানাবো ভাবিনি তবুও আমার লেখা পছন্দ করলে ছাপানো হলে প্রকাশনী থেকেই টাকা পাই। এবারে প্রকাশনী থেকে লিখতে বলা হয়েছে করোনার ইতিবাচক দিক।বিষয়টি শুনেই মনে হয়েছিল ,যেখানে সারা বিশ্ব COVID-19 মহামারীত

ে শোকাহত সেখানে কিভাবে আমি এই মহামারীর ইতিবাচক দিক নিয়ে লিখব? ঠিক তারপরেই সংবাদপত্রে ডঃ বসুর আর্টিকেলটা পড়তে শুরু করেছিলাম।আমি শুনছিলাম,এই মহামারীতে নাকি রেশনের দোকানে দিচ্ছে রেশন কিন্তু বিনিময়ে নিচ্ছে না টাকা! কোনো কোনো সংস্থা থেকে বাড়ি বয়ে দিয়ে যাচ্ছে চাল,ডাল,আলু ও নানান দ্রব্যাদি আর বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসা করছে আমরা কেমন আছি!যে মানুষগুলো চাকরীর সুবাদে থাকে দেশের বাইরে,নিজেদের পরিবারের থেকে অনেক দূর।হয়তো অনেক দিপাবলী,দুর্গা পূজো একাই কেটেছে; সে মানুষগুলো আজ বাড়ীতে, নিজেদের পরিজনদের সাথে।যে সম্পর্ক গুলোতে সময় দেওয়া হয়না বলেই দূরত্ব বেড়েছিল এই সুযোগে সেই সম্পর্কগুলোও সময় পেয়েছে। এগুলোও তো এক ইতিবাচক দিক তাই নয় কী? তারপর সংবাদপত্রে আর্টিকেলটা আবার পড়তে শুরু করলাম। উনি লিখেছেন যে,


যে নদীকে মা ডাকার স্বত্ত্বেও দূষিত করি তাঁর প্রতিটি জলবিন্দুকে,আজ সে সুস্থ হতে শুরু করেছে। আজ তাঁর বুকে দেখা দিচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় শুশুক নামক জলজ প্রাণীদের। হরিদ্বারে নদীর জল প্রায় স্নানের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল সেই সমস্যা আজ মিটে যাচ্ছে। এই মহামারীর ফলস্বরূপই লকডাউন আর এই লকডাউনের ফলস্বরূপ সমস্ত কলকারখানা বন্ধ। নদী তীরবর্তী কারখানাগুলোতেও ঝুলছে তালা। বন্ধ হয়েছে কলকারখানাগুলোর বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গমন,বন্ধ হয়েছে নদীর বুকে দূষিত তরল নিষ্কাশন। চলছে না কোনো জাহাজ চলছে না মাস্তুল,হচ্ছে না কোনো রপ্তানি কোনো আমদানী। ধরা হচ্ছে না ট্রলার ভরতি অসংখ্য নিরীহ প্রাণ। তাই হাজারো এমন প্রাণ এখনও সাঁতার কেটে বেরোচ্ছে নদীর জলে,সমুদ্রের ঢেউয়ের আড়ালে। এগুলো কী ইতিবাচক দিক নয়! নদী,সমুদ্রে পড়ছে না কোনো তেলের স্তর ফলে প্রাণ হারাচ্ছে না কোনো জলজ প্রাণ। সেই সঙ্গে NASA (National Aeronautics and Space Administration) থেকে জানানো হয়েছে সমুদ্রে হিমশৈলের আধিক্য বেড়েছে সাথেই কমেছে এর গলন ফলে সমুদ্রতলে জলের উচ্চতা স্বাভাবিক হচ্ছে। তাই বলা যায়,আগামীদিনে যে স্থানগুলিকে জলের গভীরে নিঃশ্চিন্হ হয়ে যাবে বলে চিন্হিত করা হয়েছিল। সেই আশঙ্কা একটু হলেও কমেছে। এই লকডাউনে অর্থ সম্পদে টান পড়লেও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্য কিন্তু বৃদ্ধি পেয়েছে আর বৃদ্ধি পেয়েছে পৃথিবীর আয়ুকাল।


ওনার লেখাটা পড়ে সংবাদপত্রটা হাতে নিয়ে এক মুহূর্তের জন্য ভাবলাম,ডঃ অনির্বাণ বসু যা লিখেছেন তা একটুও বাড়িয়ে লেখেননি। উনি শুধু দেখিয়েছেন কিছু অকপট সত্যকে। সত্যিই তো, এই করোনা অর্থাৎ COVID -19 এর ইতিবাচক দিকও থাকতে পারে, তা সাধারন মানুষ আমি আপনি কেন দেখতে পাইনি?শুধুমাত্র ডঃ বসু একজন প্রকৃতিবিদ বলে নাকি আমরা দেখতে চেষ্টা করিনি বলে! এ প্রশ্নটা আমি সবার কাছেই রাখলাম।


বিঃ দ্রঃ- গল্পে উল্লেখিত ডঃ অনির্বাণ বসু চরিত্রটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক, বাস্তবে ওনার সহিত কোনো চরিত্রের মিল পাওয়া যায় না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational