Joy Mondal

Romance Classics Inspirational

3  

Joy Mondal

Romance Classics Inspirational

" শারদীয়ার শুভেচ্ছা " - শারদ সংখ্যা

" শারদীয়ার শুভেচ্ছা " - শারদ সংখ্যা

4 mins
1.1K


আবার ও মা আসছে। মায়ের আগমনের তাগিতে প্যান্ডেল গুলো সেজে উঠছে নানান আলোর রোশনাই। পূজো আসলেই শুধু তোমার কথা মনে পড়ে! সেই ষষ্ঠী থেকে শুরু হওয়া এক ভালোবাসার গল্প। 

আজ দেখতে দেখতে দু বছর হয়ে গেল। অনেক কষ্ট হয় তবুও নিজেকে ব্যস্ত সমাজে মানিয়ে নিতে শিখেছি, মানে শিখতে হয়েছে। আজ যখন পার্কস্ট্রিট থেকে হেঁটে যাই তখন শুধু তোমার কথা মনে আসে। সেই লাইব্রেরিটার দিকে তাকাই, আমাদের সেই মৃত সময় গুলো যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। বিকেলবেলা সেই একটু নিজেদের সময়, আর্সালান না অমনিয়া নিয়ে ঝগড়া। মনে পড়ে কি!! হ্যাঁ জানি এগুলো তোমার কাছে অতীত কিন্তু আমি এই অতীতকে আগলেই বেঁচে আছি।

এই শরতের আকাশে আবারও বিরহের মেঘ। আবারও ঝরাবে বৃষ্টি, আবারও ভেজাবে আমায়। শুধু পার্থক্য এখন এটাই যে, তুমি নেই। এখনও তোমাকে রাস্তাঘাটে দেখতে পাই , আমাকেও দেখো হয়তো। তখন দেখি হাত ধরে আছো অন্যকারোর। তবে আমাকে দেখলেও হয়তো চিনতে পারবে না!! সেই ঝাপোসা আমিটাকেও বদলে নিয়েছি বেশ।

আবারও প্রত্যেক বছরের মতো আসবে ষষ্ঠীর সন্ধ্যা, মায়ের আশির্বাদ নিয়ে হয়তো শুরু হবে আরও ভালোবাসার গল্প। আশা করছি যে সেই ভালোবাসার গল্প গুলো যেন এই গল্পের মতো না হয়!

একবার তোমাকে দেখেছিলাম জেব্রা ক্রসিং এ রাস্তা পারাপারের সময়, তুমিও ছিলে তোমার ব্যস্ততাই আর আমিও। কাঁচের মোটা ফ্রেমের চশমার ওপার থেকে হয়তো চিনতেই পারোনি হয়তো বা পেরেছো! তখন একটা পুরানো কথা মনে পড়ে গেল। তোমার সঙ্গে একবার বেড়িয়েছিলাম, সিগন্যাল পেরোতে গিয়ে আরও শক্ত ধরলাম তোমার হাতটা। কিচ্ছু হবে না! বলে আশ্বাস দিলেও তোমাকে হারানোর ভয়টা যে, আমার বরাবরই ছিল। তুমি আমাকে তখনও চিনতে পারনি। হয়তো আমি একটু বোকা, অনেকটাই সরল। জটিলতা বুঝতে আমার একটু দেরিই হয় বটে , তাই চেষ্টা করেও তোমার প্রিয়টা হয়ে উঠতে পারিনি। আমি ছিলাম ঝাপোসা মেয়ে, আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি যার অঙ্গে কিন্তু তুমি বলেছিলে, তুমি নাকি এই শ্রীতমাকেই ভালোবাসো। আর বলেছিলে, পূজামণ্ডপে ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দেখা সাবেকিআনায় রঙে মোরা শ্রীতমাই তোমার মন কেড়েছে।

তোমাকে নিয়ে ভাবনা এখন আমার বরাবরের রুটিন হয়ে গেছে। তুমি আমাকে ছেড়ে দিয়েছো বলে আমিও কি তোমাকে ছেড়ে দেবো!! এখনও আমার দেওয়ালের ফটোফ্রেমে তোমার আমার সেই ছবিটা আছে, আমাদের বিয়ের পর প্রথম গিয়ে তোলা। তাহলে, আমরা কি মন থেকে আলাদা হতে পেরেছি! যদি সেটা হতো তাহলে তোমার কথা আমার আর মনেই পড়তো না। আর আমার কথা তোমার মনে পড়ে কি, সেটা আমি জানি না। শুধু এটা জানতাম তুমি শূন্য আমার এই পৃথিবীতে বড়ো একা হয়ে পড়েছিলাম।

আগে ভাবতাম, তোমাকে ছাড়া আমার জীবন হয়তো অচল হয়ে যাবে। হয়তো বা সেখানেই থমকে যাবে আমার জীবন কিন্তু না আমার জীবন অনেক বদলে গেছে।

নিজের মানুষটা যখন দূরে চলে যায় তখন গোটা পৃথিবী একমুঠো ছাই হয়ে যায় তখন ভাবি সব শেষ কিন্তু না সেই একমুঠো ছাই থেকে একটা সবুজ পাতা গজায়, জীবন আবার নতুন করে শুরু হয়। তুমি ছেড়ে যাওয়ার পর আমি তা বুঝেছি, জীবনটাকে নতুনভাবে বাঁচতে শিখেছি। আবিষ্কার করেছি নিজেকে, নিজের পছন্দটাকে। আমি এখন একটা প্রকাশনীতে এডিটিং এর চাকরী করি। তারসাথে আমি যে আগে লেখালেখি করতাম, সেটা আবার শুরু করেছি। কিছু কিছু কবিতা লিখেছি, কিছু নিজের কথা আর কিছু তোমাকে নিয়ে। এই পূজোতে আমার একটা লেখা বেরোবে  ' শারদীয়ার শুভেচ্ছা ' , যদি সময় পাও একবার পড়ে দেখো। এতেও তুমি আছো। তোমার সেই চেনা শ্রীতমা অনেক বদলে গেছে। তোমার সেই শ্রী আর আগের শ্রী নেই, তুমি যাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। তোমার ভাবনায় আজও আবার চোখটা মুছতে হলো। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চেষ্টা করেছিলাম সব কিছু ভুলে যাওয়ার কিন্তু ভুলে যাওয়া কি এতোই সহজ!! তাই পারিনি।

হটাৎ একবার দেখা হয়েছিল বাসস্টপে। সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টিতে অফিসে যাওয়া প্রায় মুশকিল হয়ে পড়েছিল। দাঁড়িয়েই ছিলাম; হটাৎই একটা পুরানো , কিছুটা আপন একটা চেনা গন্ধ, একটা অনুভূতি এলো। বুঝতে পারলাম আমার পাশে ছাতা ধরা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সেই মানুষটা তুমি। একটা চেনা পরিচিত গন্ধ, ও তুমি বুঝবেনা। মনে আছে , তুমি যখন অফিস থেকে আসতে। তোমার খুলে রাখা জামার মধ্যে একটা গন্ধ থাকতো, একটা তুমি তুমি গন্ধ!! তুমি তখন আমাকে পাগলই বলতে । হ্যাঁ , আমি পাগলই বটে। সে যাই হোক, তুমি পাশে আসতেই বুঝতে পেরেছিলাম কারণ তুমি আর সেই অনুভূতি কোনোটাই অচেনা ছিল না। বৃষ্টির ঝাপটা আসার ভান করে তোমার দিকে ছাতাটা আড়াল করে রেখেছিলাম। আমি জানি তুমি বুঝতে পারোনি। তারপর তোমার বাস এসে গেল, আর তুমি আবার সেই ব্যস্ত শহরের মানুষ। তুমি একবার ও লক্ষ্য করলে না বৃষ্টির ঝাপটা ভেজা , ছাতা আড়াল করা সেই আমিটাকে। সেইদিন অফিসে সারাক্ষণ তোমার কথা মনে পড়ছিল। তুমি আমাকে অনেকবার বলেছিলে যেন নিজের পছন্দের মানুষটাকে খুঁজে নিয় কিন্তু নিজের মানুষটাকে পাওয়া কি এতোই সহজ! আসলে কি বলোতো? জীবনের পছন্দটা বরাবরই তুমিই ছিলে। তাই তোমার জায়গায় অন্য কাউকে ,পারবো না গো!! তোমার পছন্দের হতে গিয়ে আমি নিজেকে পাল্টেছি। তুমি হয়তো দেখলে আজ অবাক হবে। তোমার শ্রী এখন আধুনিকতার মরকে বদলে নিয়েছে, যেটা তুমি চেয়েছিলে।

এক এক সময় মনেহয়, হটাৎ করে দেখা হলে চোখাচোখি হলে কিছু কি বলবে? নাকি আমি বলবো? কেমন আছো?ভালো আছো কিনা? নাকি তোমার দিকে চেয়ে চুপ করে থাকবো। তুমি হয়তো বলবে, তুমি ভালো আছো। আর আমি, সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যেটা বলার চেষ্টা করবো; আমিও ভালোই আছি। আসলে ভালোথাকা কাকে বলে সেটাও বুঝে উঠতে পারিনি! হয়তো ভালোথাকার গল্পগুলো এমনই হয়।

একটা কথা বলি, এ পূজোতে দেখা হলেও ক্ষতি নেই। আমি ভালোথাকতে শিখে গেছি। সিগন্যাল পেরোতে আর পা থমকে যায় না। আমি সাহসী হতে শিখেছি। এই একলা জীবনে ভালো থাকার খোরাক আমি খুঁজে পেয়েছি ;তোমার সাথে কাটানো সময়গুলো ,আমার কাছে খুব মূল্যবান। তাই একটা লেখনী তোমার খাতিরে। এবারে পূজোরসংখ্যার জন্য প্রকাশনী থেকে লিখতে বলা হয়েছিল, এমনিতেই তো তোমার সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই তাই ভাবলাম এভাবেই যদি হয়। ভালো থেকো অনির্বাণ । পূজো আসছে সাথে নিয়ে অনেক স্মৃতি। তাই আমার তরফ থেকে রইলো শুভেচ্ছা। রইলো " শারদীয়ার শুভেচ্ছা "

          


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance