দশভূজা
দশভূজা
প্রতিটা সময় নিজের সংসারে যখন অতিরিক্ত কাজের চাপ হলে অনামিকার বড্ড মায়ের ঘেমে একাকার মুখটা ভেসে ওঠে। পড়াশোনার পাশাপাশি সবরকম কাজ টুকটাক শিখলেও সেইরকম ভাবে মাকে সাহায্য করে উঠতে পারেনি। বিয়ে অবধি সুযোগ দিলো কোথায় তার আগেই তো মা ওকে ছেড়ে চলে গেল। কাজের ফাঁকে বারবার বলতো অনামিকা মা কে নিজের খেয়াল রাখতে বলতো, মা একটু নিজেকে দেখো তোমার শরীরের চেকাপ করিয়ে তো আনতে পারো? এইবার কিন্তু আমি গেলে বাহানা শুনবো না তোমার। ফোনে মা ওকে বলতো, আচ্ছা ঠিক আছে তুই আসবি এসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবি খুশি তো! তবুও তুমি নিজে থেকে যাবে না বলো? অনামিকার কথায় মা শুধু হাসতো। অনামিকারা যৌথ পরিবারে মানুষ, ও খুব ছোট থাকতে দেখেছিল বাবার কম উপার্জন এর জন্য মাকে সবকিছু করতে হতো, দিনশেষে মানুষটা ক্লান্ত হয়ে পড়তো আবার সবার আগে উঠতে হতো, টুকটাক সেলাই ও করতো ওঁত পরিশ্রম করে উঠে। অনামিকা বরাবরই মায়ের সাথে খেতে বসতো, মায়ের গালে ছোট ছোট হাতে খাবার তুলে দিতো, বাবাকে খুব একটা কাছে পেতো না। অতিরিক্ত খরচ সামলাতে বেশি করে কাজ করতো বাবা, মা ও সমানতালে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। অনামিকার এখনো মনে আছে উৎসবের দিনগুলোতে বাবাকে কাজে যেতে দেখে, কান্না করতে দেখলে বাবা বলতো,
আমি কাজ করলে তবে তো তোমার কালার পেন্সিল বক্স, জামাকাপড় আসবে মানু। আমি যাই! মা আছে মায়ের সাথে বেরিয়ে আসবে । তারপর তো মানুষটাও চলে গেল, মায়ের ও শশুর বাড়ী তে আর জায়গা হলো না। বাবা থাকায় ওই না থাকার মতোই তারপর বাবা চলে যাওয়ার পরে ...
অনামিকা ও পরিশ্রম করেছে কিন্তু মা বেশি,সেই পরিশ্রমের ফসল ওর চাকরি পাওয়া ,যাদের অবদানে সেটা প্রাপ্ত হলো তাঁরাই নেই। যদিও মনের মতো জীবনসঙ্গীর খোঁজ পেয়েছিল কিন্তু সেই মানুষটা জন্ম থেকেই অনাথ। নিজের বাবার সাথে ভারী মিল পায় তার সাথে,দুটো মানুষ যে এতো ভালো। তখন মায়ের বলা একটা কথা ভারী মনে ভেসে আসে,
দশভূজা ছেলে মেয়ে উভয়েই হতে পারে রে অনু, এতে কোনদিন ভাগ হয়না রে। আমি যদি দশভূজা হতে পারি তোর বাবাও তাই রে। আমি অসুস্থ থাকলে ওই মানুষ টাকে ঘর বাইরে সামলে নেয় জানিস!
সত্যি তো একমাস যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তখন তমাল ওর বর একাহাতে সংসার বাইরের কাজ সবটা তো দেখেছে এমনকি মেয়ের ও যত্ন সাথে সেবা করেছে অনামিকার। তাই নিজের মেয়েকে শেখায় অনামিকা,
দশভূজা মানে যে মানুষ এক হাতে সবকিছু সামলে বিপদের সময় শক্ত হাতে হাল ধরে সেই দশভূজা।
