arijit bhattacharya

Romance

3  

arijit bhattacharya

Romance

সেদিন দেখা হয়েছিল

সেদিন দেখা হয়েছিল

8 mins
1.4K


শিয়ালদহগামী হাবড়া লোকালে হলুদ রঙের সালোয়ার কামিজ পরা মেয়েটা এক ঝলকেই নজর কেড়েছিল অনির্বাণের। অনির্বাণ যাচ্ছিল কোলকাতায় সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষার ভয় আর টেনশন মনের মধ্যে তো বিদ্যমান ছিলই,কিন্তু মেয়েটাকে এক ঝলক দেখেই একরাশ ভালোলাগা তৈরি হয়ে গেছিল অনির্বাণের মনে। মেয়েটির টানা টানা চোখের গভীরতা এমন ছিল যে,তাতে যেন এই পৃথিবীর সমস্ত মুগ্ধতা আর প্রশান্তি প্রতিফলিত। মোহমুগ্ধ হয়ে নিষ্পলকে চেয়েই ছিল অনির্বাণ মেয়েটার দিকে। মেয়েটা হয়তো খুব পরিশ্রান্ত ছিল, ভিড় ট্রেনের কামরার একপাশে দাঁড়িয়ে ঘামছিল। আর তার কপালে সেই ঘামের বিন্দু সকালের রোদে মুক্তের মতো ঝলসে তাকে আরোও অপরূপা করে তুলেছিল।মেয়েটির চোখে চোখ রেখে যখন তাকিয়েছিল অনির্বাণ, তখন তার বুকের মধ্যে বেজে উঠেছিল জলতরঙ্গ।বেজে উঠেছিল স্বর্গীয় সঙ্গীতের হাজার রাগরাগিণী! একেই কি বলে পূর্বরাগ!একে নিয়েই তো লেখকরা রচনা করেছেন কতো কাহিনী, কবিরা লিখেছেন কতো হৃদয়কে মুগ্ধ করা কবিতা। অনেক ইচ্ছা হল মেয়েটার সাথে কথা বলার,অন্তত নামটা কি-সেটা জানার। কিন্তু, ভাগ্যলক্ষ্মী হয়তো প্রসন্ন ছিলেন না তার ওপর। কিছুটা লজ্জা, কিছুটা ভয় আর কিছুটা দোনামনার কারণে মেয়েটা যখন তার দিকে চাইল, তখন চোখ সরিয়ে নিল সে। সাহস হল না মেয়েটার কাছে যাওয়ার।মেয়েটার দিকে চাওয়ার। এরপর বিরাটি আসতেই ট্রেন থেকে নেমে গেল তার হৃদয়হারিণী। এক দীর্ঘশ্বাস বের করল সে।


কিন্তু বিধাতার প্ল্যান হয়তো একটু অন্যরকম ছিল। এক মাস পরের কথা। যাদবপুরে মাসির বাড়িতে যাচ্ছিল অনির্বাণ। মিষ্টি রোদের এক সোনালী সকাল। সেদিন ট্রেনে সবেমাত্র উঠে বসেছে। মাসির সাথে কথা বলছে ফোনে। হঠাৎই নজর গেল কামরার অপর দিকে। আর যখন তাকাল সে তখন দুলে উঠল তার বুকটা। আজকেও ট্রেনে উঠেছে তার সেই অচেনা হৃদয়হারিণী। কিন্তু আজকে সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে। ওয়েস্টার্ন ড্রেস আর চোখে ঘনকৃষ্ণ কাজলে সেই সুন্দরীকে কোনো মায়াবিনী বলে মনে হচ্ছে। অনির্বাণের বুকে বেজে উঠল স্বর্গীয় সংগীত, হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে উঠল।কিন্তু আজকেও সেই মুখচোরা ভাবের জন্য কথা বলা হল না সেই সুন্দরীর সাথে। তার সমস্ত আশাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে বিধাননগরে নেমে গেল সেই সুন্দরী। অনির্বাণের মনে হল,নাম জানা নাই বা হোক, ঐ সুন্দরীর বাড়ি কোথায় তাও সে জানে না, কিন্তু কিছুক্ষণের জন্যও এই সামান্য শ্যামবর্ণা ব্যক্তিত্বসম্পন্না সম্পূর্ণযৌবনা ওকে একরাশ ভালোলাগা তো দিয়ে যায়।ক্ষণিকের অতিথি হলেও তাকে যেন বড়ো আপনজন বলেই মনে হয়।


এইরকম বেশ অনেকবার চলতে লাগল। অনির্বাণ সত্যিই প্রেমে পড়েছে, একতরফা প্রেম হলেও প্রেম তো। প্রেম চিরকালই মধুর। তাই তো প্রেমকে অমৃতের সাথে তুলনা করা হয়। হয়তো কথা বলা হয় না, কিন্তু অনির্বাণ সবসময় প্রার্থনা করে সে যেন মেয়েটার একঝলক দেখা পায়। এই একঝলক দেখা বা সেই রহস্যময়ীর গভীর রহস্যে ভরা চোখে চোখ রেখে তাকানো তাকে যে কতটা ভালোলাগা দিয়ে যায়, একমাত্র সেই জানে। অনির্বাণই জানে সেই অনুভূতি কতো মধুর! মেয়েটাকে একঝলক দেখলে তার বুকে বেজে ওঠে হাজারটা রাগ রাগিণী, শরীরে জেগে ওঠে শিহরণ। প্রতিবারই যখন ট্রেন থেকে নেমে যায় মেয়েটা, তখন অনির্বাণ গাঙ্গুলি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যে এই মেয়ের নাম আর ঠিকানা জেনে সে ছাড়বে। ভালোবাসা নাই বা পাক, মিষ্টি মধুর এক বন্ধুত্ব তো তৈরি হতে পারে দুজনের মধ্যে। অথচ কোনোবারই মনের অভিলাষা পূর্ণ হয় না তার, কথা বলার সুযোগই হয় না মেয়েটির সঙ্গে।


অনির্বাণ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে, মেয়েটার ওপর সে ক্রাশ খেয়েছে। কিন্তু,এদিকে কি করবে বুঝতে পারছে না। চারমাস হয়ে গেল মেয়েটার সাথে কোনো দেখা নেই। মেয়েটাকে যেহেতু সে মুখোমুখি দেখেছে নাম জানলে নাহলে ফেসবুকে সার্চ মারা যেত। তার উপায়ও তো নেই। হয়তো মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে, সে এখন অন্য কারোর স্ত্রী,হয়তো মেয়েটা চাকরি পেয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে। হয়তো মেয়েটা এখন আর ট্রেনে খুব একটা ওঠে না। এইসব চিন্তা যতোই উদয় হয় অনির্বাণের মনে, ততোই হতাশা আর অবসাদ গ্রাস করে তাকে। কাটতে থাকে একের পর এক মন খারাপের রাত। সেই মন খারাপের রাতের সাক্ষী সে ও তার নীরব অশ্রু।আর কি দেখা হবে না স্বপ্নসুন্দরীর সাথে!অথচ একসময় অনির্বাণের মনে হয়েছিল স্বপ্নসঙ্গিনীকে সে আপন করেই ছাড়বে।


এরপরে কেটে গেছে পাঁচটা বছর। সেই নব্যযুবক অনির্বাণ গাঙ্গুলি এখন সম্প্রতি চালসার জঙ্গলের ফরেস্ট রেঞ্জার হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে। রাতের কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরার জন্য শিয়ালদহের 9B প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছে অনির্বাণ। গন্তব্য নিউ ম্যাল জংশন। নিউ ম্যাল থেকে চালসার জঙ্গল মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। বন কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নিউ ম্যালেই গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সকালে এই ট্রেন পৌঁছাবে নিউ ম্যাল এ।

অনির্বাণ এসি টু টায়ারের যাত্রী। অনেকদিন পরে চলেছে উত্তরবঙ্গ।আগে গিয়েছিল কিশোর বয়সে,মাধ্যমিকের পর।সেই ষোলো বছরের কিশোর অনির্বাণকে মুগ্ধ করেছিল ডুয়ার্সের অনুপম সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্যের ছোঁয়া এখনো লেগে আছে অনির্বাণের চোখে।তাই যখন শুনেছিল চালসায় পোস্টিং পড়েছে,তখনই শাল, সেগুনের গভীর অরণ্য, পাহাড়ের কোলে ছবির মতো চা বাগান ঘেরা ডুয়ার্সে যাবার কথা শুনেই নেচে উঠেছিল অনির্বাণের মন। ডুয়ার্স মানেই জলদাপাড়ার একশৃঙ্গ গণ্ডার, ডুয়ার্স মানেই বক্সা জয়ন্তিয়া পাহাড়, ডুয়ার্স মানেই মূর্তি নদীর বুকে সূর্যাস্তের রক্তিমা। সেই অপরূপা সুন্দরী ডুয়ার্স আবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে অনির্বাণকে! এছাড়াও বহুদিনের ইচ্ছা রয়েছে অনির্বাণের ছবির মতো চিলাপাতার জঙ্গল দেখার। ট্রেন আসতে এখনো মিনিট কুড়ি বাকি। আর তখনই সামনে কিছু দূরে তাকাতেই হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে গেল অনির্বাণের।


অনির্বাণের মনে হল যেন সময় থেমে গিয়েছে! নিষ্পলকে সামনে তাকিয়ে থাকল সে। তার থেকে জাস্ট কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার জীবনের সেই ক্ষণিকের অতিথি-তার হৃদয়হারিণী। আজকে একদমই অন্য লুকস। সাদা টপ আর তার সাথে মানানসই কালো জিন্স। সম্প্রতি হেয়ার কালারিং করিয়েছে হয়তো,খোলা লাল চুল কাঁধ ছুঁয়েছে। ঘনকৃষ্ণ আঁখি আইশ্যাডোর জন্য আরোও মদির লাগছে। পিঠে ব্যাগ আর রুকস্যাক। নিশ্চয়ই কোনো লং জার্নিতে চলেছে।


মেয়েটার দিকে নির্নিমেষ চক্ষে তাকিয়ে থাকল অনির্বাণ।মেয়েটাও তাকাল। এরপর হেসে এগিয়ে এল অনির্বাণের দিকে। এক লহমায় হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে উঠল অনির্বাণ গাঙ্গুলির। আজ স্টেশনের এই জমজমাট পরিবেশে এই অপরূপ পোষাকে মেয়েটাকে আর এই পৃথিবীর সাধারণ কোনো মেয়ে বলে মনে হচ্ছে না, যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা উর্বশী, অলকাকাননের কোনো সুন্দরী অপ্সরা।


মেয়েটা অনির্বাণের দিকে এগিয়ে এসে বলল,"এক্সকিউজ মি,কাঞ্চনকন্যা কি এই প্ল্যাটফর্মেই আসছে তো?"

কোকিলকন্ঠী কন্ঠস্বর। কতোদিন থেকে অনির্বাণ অপেক্ষা করছে মেয়েটির সাথে কথা বলার এই মুহূর্তটির জন্য, আর আজকে অবশেষে ভাগ্যলক্ষ্মী সদয় হয়েছে তার ওপর। এসেছে তার প্রেমের সাথে কথা বলার মুহূর্ত।

আমতা আমতা করে অনির্বাণ জবাব দিল,"হ্যাঁ ,তাই তো জানি।"

তরুণী বলে উঠল-"তাই তো জানি মানে।আপনি শিওর তো! দেখুন আমি অনেক ব্যস্ত। হ্যামিলটনগঞ্জ যাচ্ছি।" অনির্বাণ এবার আড়ষ্টতা কাটিয়ে কোনোরকমে বলে উঠল,"একদম শিওর। আপনি চিন্তা করবেন না। এই প্ল্যাটফর্মে আর দশ মিনিটের মধ্যে কাঞ্চনকন্যা এসে ঢুকবে।আমি বোর্ড দেখে এসেছি।" তরুণী অনেকটা স্বস্তিবোধ করল। "জানেন আমি কতোটা টেনশনে ছিলাম।একে অফিস থেকে বেরোতেই লেট হয়ে গেল আর তার ওপর আবার রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। কোনোরকমে ছুটতে ছুটতে এলাম। ইলেকট্রনিক বোর্ডটাও ঠিকঠাক খেয়াল করি নি। সে যাই হোক, আপনাকে মনে হয় আগে কোথাও দেখেছি!"


অনির্বাণ হেসে বলল,"তা তো দেখেছিনই তো। আমিও আপনাকে দেখেছি। লোকাল ট্রেনে। কিন্তু বেশ কয়েক মাস আগের ঘটনা। আলাপ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ভাগ্যদেবী প্রসন্ন ছিলেন না,কি আর করা যাবে!"এই কথা শুনে মেয়েটার মুখমণ্ডলে খেলে গেল স্বতঃস্ফূর্ত হাসি। "ও তাই বুঝি,তো এখানে তো ভাগ্যদেবী প্রসন্ন হয়েছেন বলতে গেলে।" এই হাসিতে তাকে আরোও সুন্দর দেখাচ্ছে। "আমার নাম নবরূপা ব্যানার্জী, বিরাটিতে থাকি, হ্যামিলটনগঞ্জ চলেছি মাসির বাড়িতে।"


যথা সময়ে ছাড়ল ট্রেন। এসি টু টায়ারে মুখোমুখি সিট পড়েছে অনির্বাণ আর নবরূপার। তীব্র গতিতে ছুটতে শুরু করেছে ট্রেন। রাত এগারোটা বাজে। ট্রেন ঢুকছে বোলপুর শান্তিনিকেতনে।নবরূপা ব্যাগ থেকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'দূরবীন' বইটা বার করে পড়তে শুরু করেছে। অনির্বাণ বলল,"শীর্ষেন্দুবাবুর লেখা পড়তে ভালো লাগে বুঝি?"

হেসে ফেলল নবরূপা,"সে আর বলতে। উনি আমার প্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম।বলতে গেলে, ওনার 'চক্র','তিথি','যাও পাখি' সব বই ই পড়া। এই বইটাও আজ রাতের মধ্যেই পড়ে ফেলব। ওনার লেখা তো আমি গোগ্রাসে গিলি। আর ছোটদের হাস্যরসেও উনি অনন্য।"

এ কি অদ্ভুত সমাপতন! শীর্ষেন্দুবাবু যে অনির্বাণেরও প্রিয় সাহিত্যিক।থাকতে না পেরে অনির্বাণ বলে উঠল,"সে কি,শীর্ষেন্দুবাবু আমারও খুব প্রিয় সাহিত্যিক। হয়তো আমার বয়স হয়েছে, কিন্তু ওনার লেখা ছোটদের গল্পগুলি এখনো আমার অনবদ্য লাগে। হাস্যরসে উনি অনন্য।" অনির্বাণের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে একঝলক মন কেড়ে নেওয়া হাসি হেসে নবরূপা বলল,"তাহলে দেখলেন তো যা বলেছিলাম। আপনার সাথে কথা বলতে বলতে সারারাত কেটে যাবে।অথচ আপনার কোনো ইন্টারেস্টই নেই। আরে বাবা, এখন যদি আপনি ডুয়ার্সের গল্প শুরু করেন, তাহলে আমি ড্যাম শিওর রাতে আমার ঘুম আসবে না।"


অনির্বাণের মনে বাজতে শুরু করল বীণা। অনির্বাণ বলে উঠল,"সে কি রাতে ঘুমোবেন না!" নবরূপা বলল,"জানেন তো,জীবনে এই প্রথমবারের জন্য হ্যামিলটনগঞ্জ চলেছি। পাহাড়ের কোলে মূর্তি নদীর ধারে সুন্দর ছবির মতো জায়গা। আর এই শরতের সময় সেই জায়গা আরোও অপরূপ হয়ে ওঠে।এই এক্সাইটমেন্টেই ঘুম আসবে না।" খানিকক্ষণ চুপ করে হেসে বলল,"আর এই সুযোগে আপনার সাথে আলাপটাও সেরে নেওয়া যাবে। আপনারই মনে হয় লাভ হল। যেমন ভাবে ট্রেনে আমার দিকে খালি উদাস চোখে চেয়েই থাকতেন।আমি ভাবতাম আপনি বুঝি আমার প্রেমে পড়ে গেছেন।"

অনির্বাণ কোনোরকমে বলল,"না মানে।মানে.........ইয়ে কি বলুন তো।"

নবরূপা হেসে উঠল,"ঘাবড়াবেন না। জাস্ট জোকিং।"

ট্রেন রামপুরহাট পার করে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের দিকে ছুটছে।

অনির্বাণ বলে উঠল,"আপনি এর আগে ডুয়ার্স গেছেন কখনো?" "কখনো মানে,অনেকবার। আর ডুয়ার্সে গেছে কিন্তু ডুয়ার্সের প্রেমে পড়ে নি এরকম লোক খুব কমই আছে। বাট,আমার হ্যামিলটনগঞ্জ যাওয়া এবারই ফার্স্ট টাইম।"

রাতে অনেক কথা হল অনির্বাণ আর নবরূপার। পরিবার থেকে শুরু করে কেরিয়ার,স্বপ্ন কোনোকিছুই বাদ থাকল না। 7টা 40 বাজে। ট্রেন নিউ জলপাইগুড়িতে থেমেছে। ভিড় আশ্চর্যজনকভাবে কমে গেছে। এখান থেকে ট্রেন ধরবে আলিপুরদুয়ার যাবার লাইন। সুন্দর এক সোনালী সকাল। আকাশ বাতাসে ভাসছে আগমনীর সুর। পুজোর গন্ধ এসেছে!

শিলিগুড়ি পার হবার সাথে সাথেই প্রকৃতি ধীরে ধীরে মোহময়ী থেকে আরোও মোহময়ী হতে শুরু করল। এদিকে অনির্বাণ আর নবরূপার দূরত্ব 'আপনি' থেকে কমে 'তুমি'তে এসেছে।কিন্তু এখনোও মনের কথা বলা হল না অনির্বাণের। প্রেমিকদের হাল এরকমই হয় বুঝি!


সেবক ব্রিজ পেরিয়ে চারিপাশের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর বুকে যেন একচিলতে স্বর্গ নেমে এসেছে। দুপাশে সবুজ শালবন বা কখনো ছবির মতো চা বাগান। দিগন্তে সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। কোথাও টানেল। কোথাও বা রেলপথে অসাধারণ ব্যাঙ্কিং। ছোট্ট সুন্দর সব স্টেশন। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেখানে অফুরন্ত থাকে সেখানে মানুষের মনের আবেগগুলিও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। অনির্বাণের ইচ্ছা হল ভীষণভাবে নবরূপাকে ভালোবাসতে, আপন করে নিতে। এদিকে হঠাৎই অনির্বাণের হাত ধরল নবরূপা। সেই নরম স্পর্শে সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল অনির্বাণের। "দেখ দেখ এই জায়গাটা কতো সুন্দর। যেন জঙ্গল সাফারি তাই না!" প্রকৃতির সৌন্দর্য সত্যিই অনুপম। এতক্ষণে ট্রেন মহানন্দা ব্রিজ পার করে দামদিম স্টেশনে ঢুকছে। এখান থেকে নিউ ম্যাল বেশি দূরে নয়।চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ।প্রকৃতিরাণী যখন অপরূপ সাজে সেজে ওঠে তখন মানুষের মনের অনুভূতিগুলিও তীব্রতর হয়ে ওঠে।


না,আর থাকতে পারল না অনির্বাণ। আজ বলতেই হবে নিজের ভালোবাসার কথা। কিন্তু কিভাবে!নবরূপাকে অপূর্ব লাগছিল। নবরূপাকে অবাক করে কপালে পড়া চুলের গোছা হালকা স্পর্শে সরিয়ে সেই ঘামের বিন্দুতে ভেজা কপাল আলতো করে চুম্বন করল অনির্বাণ,তারপর মৃদুস্বরে বলল,"তোমাকে বহুদিন ধরেই একটা কথা বলার ছিল।জানি না তুমি 'লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট' এ বিশ্বাস করো কিনা ,কিন্তু বিশ্বাস করো যেদিন তোমায় প্রথম দেখি,সেদিনই তোমার প্রেমে পড়ি। আই লাভ ইউ।আমি তোমায় ভালোবাসি।"


আর তারপর! কে বলে লাভ অ্যাট দ্য ফার্স্ট সাইট দীর্ঘস্থায়ী হয় না! কে বলে জীবনে হঠাৎ আগত ক্ষণিকের অতিথি জীবনসঙ্গিনী হতে পারে না! এক বছর কেটে গেছে। আজও মূর্তি নদীর ধারে মন মাতাল করা হাওয়ায় সূর্যাস্তের 

মায়াবী রক্তিমায় অনি আর রূপার ঘনিষ্ঠ চুম্বনের দৃশ্যপট অন্য কথাই বলে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance