দেওয়ালি/দীপাবলি
দেওয়ালি/দীপাবলি
দীপাবলি উৎসব বাঙ্গালীদের একরকম আর অ- বাঙ্গালীদের আরেকরকম হয়। দীপাবলি উৎসব তিনদিন ধরে পালিত হয় ধনতেরাস থেকে শুরু হয় অর্থাৎ ত্রয়ীদর্শী এই দিনে যমরাজকে দীপ দেখানো হয়। এই ধন তেরাস নিয়ে খুব সুন্দর গল্প আছে। এখন বাঙালিরা এই তিন দিন দীপাবলি পালন করে থাকে। এই তিন দিন বাড়ি চারিদিকে আলো দিয়ে থাকে, পুরো বাড়িটা মোমবাতির আলো য় ঝলমল করতে থাকে, আবার অনেকে লাইট দিয়ে সারা বাড়ি স্বর্ণমন্দির করে সাজিয়ে তোলে । অ- বাঙালিদের কালীপুজোর রাতে লক্ষ্মী গণেশ পূজো হয়ে থাকে।
রাজরাজেশ্বরী থাকে কলকাতায় সঙ্গে বান্ধবী শুভ্রা একসাথে পড়াশোনা করে। কুনাল আসছে বিদেশ থেকে তার পরিবার নিয়ে ধনতেরাসের দিনে রাজের বাবা সেদিন একটা ছোট্ট পার্টি অরগানাইজ করেছে। ২ পরিবার একসাথে মিলনমেলা হবে।
রাজরাজেশ্বরী নিক নেম রাজ। রাজের বাবা পুরো বাড়িটাকে সোনালী আলোয় মুড়িয়ে দিয়েছে দেখে মনে হচ্ছে একেবারে স্বর্ণমন্দির। যেদিকে তাকাও শুধু আলো আর আলো। বাজি পোড়ানো হচ্ছে বাজি প্রদর্শনী হচ্ছে। একেবারে দেখবার মত
দারুন খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজ একটা শাড়ি পড়েছে পাথর খচিত শাড়ির রংটা অফ হোয়াইট তার সাথে ব্লাউজ টা টুকটুকে লাল পাথরঘোচিত সিল্কের ব্লাউজ একেবারে পুরো রানীর মত লাগছে। রাজেশ্বরী দেখতে অপরূপা সুন্দরী একেবারে বর্ণনা করা যায় না লং হেয়ার ব্রাউন ব্রাউন কালার টানা টানা দুটো চোখ মায়া মাখানো। রাজের দিকে একবার কেউ তাকালে চোখ ফেরাতে পারবে না সঙ্গে বান্ধবী আছে শুভ্রা সেও সুন্দরী কম নয়। তবে রাজের মতো না। ওরা দুজনই ইঞ্জিনিয়ারিং পরে ফার্স্ট ইয়ার।
কুনালের সঙ্গে রাজের পরিচয় প্রায় ১০ বছর ওদের সাথে খুব গভীর সম্পর্ক। ছোট থেকে ২ পরিবারের মধ্যে কথা হয়ে আছে এ ওর জন্মদিনে যায় ও এর জন্মদিনে যায়। একেবারে বলতে গেলে দুজনের মাখোমাখো প্রেম।
এইবার ঘটনায় আসি,
কুনাল তার মা বাবাকে নিয়ে রাজের বাড়ি আসছিল পার্টিতে যোগদান করতে কিন্তু প্লেন এক্সিডেন্ট হলো পুরো পরিবারটাই মারা গেল। এই খবরটা ঐ রাতেই এলো, সঙ্গে সঙ্গে রাজ কুনালের ফটো টেবিলের উপর বসিয়ে মালা পরিয়ে একটা টোপর পরালো ফটোর উপর কুনালের জন্য যে ধুতি পাঞ্জাবি কেনা ছিল কারুকার্য করা সেই ধুতু পাঞ্জাবি ফটো সামনে রেখে দিল। রাজ সুন্দর করে বেনারসি পড়ল নিজের হাতে সিঁদুর পরলো চন্দন পড়লো, প্রচুর গয়নাগাটি পড়ল একেবারে নব বধুর মতো সাজলো
ফটোর সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলো।
রাজির বাবা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, মেয়ের এই কান্ড কীর্তি দেখে চোখের জল ভেসে যাচ্ছে। রাজে র
মাও খুব কান্নাকাটি করছে।
রাজ সকাল থেকে উঠে বলতে লাগলো মা বাবা তোমরা কাঁদছো কেন? দেখো আমি কি সুন্দর চওড়া করে সিঁদুর করেছি আমাকে খুব সুন্দর লাগছে না?
জানো মা রাজ বলতে লাগলো কুনাল রাতের বেলা আমার কাছে এসেছিল যখন তোমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে? আমরা দুজনে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। আর আমাদের অনেক রান্না হয়েছিল সেগুলো দিলাম কুনাল খুব তৃপ্তি করে খেলো বলল দারুন হয়েছে রান্না। কুনাল বলেছে রোজ আসবে আমার কাছে, আরো বলেছে আমি একসিডেন্টে মারা গেছি তো কি হয়েছে?
তোমার কাছে প্রতিদিন আসতে তো আমার কোন বাধা নেই। আমাকে একদম কান্নাকাটি করতে বারণ করেছে।
চিৎকার করে রাজ কাজের লোক রাধা কে বলল এক কাপ চা তোদের জামাইবাবুর জন্য করবি?
সঙ্গে টোস্ট দিবি ডিম সেদ্ধ কলা মিষ্টি যা যা আছে ভালো-মন্দ সব দিবি।
রাধা চিৎকার করে রাজের মাকে বলল, দিদি যা বলছে তাই করবো।
রাজের মা বলল হ্যাঁ তাই কর। রাত যদি এতে শান্তি পায়, তাই কর।
রাধা চার সঙ্গে সমস্ত খাবার এনে টেবিল ভর্তি করে দিল।
রাজ টেবিলে বসে চা খাচ্ছে আর বলছে কি খাচ্ছ না কেন তোমার লজ্জা !করছে খাও !কুনাল খাও! আমরা ঘুরতে বেরোবো তাড়াতাড়ি করে।
রাজের দিনরাত এইভাবে কাটতে লাগলো কুনাল কুনাল আর কুনাল। রাজের মা আর বাবা শুধু কাঁদছে, কি করবে ওরা বুঝে উঠতে পারছে না।
রাজের প্রিয় বান্ধবী শুভ্রা এসে বোঝাচ্ছে পৃথিবী থেকে যে একবার যায় সে আর আসে না।
প্লিজ রাজ এরকম করিস না। তুই অসুস্থ হয়ে যাবি।
রাজ দুপুর বেলা ভাত আর মাংস খাচ্ছে আর বলছে মা তুমি আর দুটো মাংস দাও কুনালের জন্য। দেখতে পাচ্ছ না মাংস শেষ হয়ে গেছে জামাইকে খাওয়াবে না তো আর কাকে খাওয়াবে।
তারপর রাজের জ্বর এলো বড় ডাক্তার ওষুধ সব করল তিন দিনের দিন রাজ মারা গেল।
এখনো ওই বাড়িতে রাতের রাতের বেলায় ফিসফিস করে তারা কথা বলে সিঁড়িতে হাঁটাচলা করে, টেবিলে বসে অধিক রাত্রে খাওয়া দাওয়া করে থালা-বাসনের আওয়াজ, রাজের ঘরের থেকে খিল খিল করে হাওয়া হাসির আওয়াজ আসে, রাজার কুনাল বসে গল্প করে।
রাজের বাবা শ্রাদ্ধ শান্তি বড় করে সব কিছুই করেছে তাতেও কিছু হয়নি একই রকম গল্পের আওয়াজ, হাসির আওয়াজ ,কান্নার আওয়াজ।
এই জন্মে রাজ আর কুনালের মিল হলো না পরের জন্মে মিল হবে।