//আরাম কেদারা//ভূতের গল্প/
//আরাম কেদারা//ভূতের গল্প/
আরাম কেদারায় সারাক্ষণ বসে থাকতো বাড়ির বুড়োকর্তা সুদর্শন রায়। তিনি ছিলেন রেলের উচ্চপদস্থ কর্মচারী। এখন রিটেয়ার হয়েছেন বছর নয়। শ্রী অনুপমা মারা গেছে প্রায় কুড়ি বছর হল। বুড়োকর্তার দুই ছেলে বড় ছেলে বৌমা তিন বছরের নাতি রনি। আর ছোট ছেলে অনুপম সে বিয়ে করেনি কারণ কলেজ লাইফে রিমির সাথে তার প্রেম ছিল। রিমি অন্য ছেলেকে বিয়ে করে নিয়েছে সে আবার ডাক্তার বাইরে থাকে। বড় ছেলে অনুপ্রা রায় বড় একটা কোম্পানিতে কাজ করে অনেক টাকা মাইনে পায়। বুড়কর্তার বাড়ি তিন তলা। বুড়োকর্তা সুদর্শন বাবু থাকে টপ ফ্লোরে। তার সারাক্ষণের সঙ্গী আরাম কেদারা। এই আরাম কেদারা উনার কাছে খুব প্রিয়। গিন্নিমা শখ করে এই আরাম কেদারা সুদর্শন বাবুকে কিনে দিয়ে ছিল। আর অনেক গল্পের বইছিল উনার সঙ্গের সাথী। বলতে গেলেই ছোটখাটো একটা লাইব্রেরী। আর সব সময় পেপারে মুখ গুজে বসে থাকতেন আর তার প্রিয় পোষ্যলালু। আর ওই তিন বছরের নাতি রনি। লালু রনি আর বুড়োকর্তা তিনজনে মিলে বল খেলতো। সারাক্ষণই সঙ্গের সাথী। আর ছিল ওদের বাড়ি অনেক পুরনো একটা কাজের মেয়ে বাল্য বিধবা নাম পারুল। ওর আবার কেউ ছিলনা অনেক ছোট অবস্থায় যখন গিন্নিমা ছিল তখন এই বাড়িতে কাজে ঢুকেছিল। পারুল মাঝে মাঝেই গিন্নিমার কথা বলে আর চোখের জল ফেল যাইহোক ওদের আনন্দের দিন কাটছিল। হঠাৎই বাড়ির বুড়োকর্তা সুদর্শন বাবু হার্ট অ্যাটাকে মারা গেল ঘুমের মধ্যে। এইবার ঘটনায় আসি। ওই বাড়ির বুড়োকর্তা সুদর্শন বাবুর বড় বউ অহনা সব সময় তার শশুর মশাই কে দেখতে পেত। বাড়ির কাজের মেয়ে পারুল সে
ও সব সময় দেখতো। যাইহোক এই ভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। এর মধ্যে অহনা বাজারের ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠে তার শশুর মশাইকে দিতে যাচ্ছে আর বলছে বাবা তাড়াতাড়ি বাজার নিয়ে আসুন। তখন ওই বাড়ির ছোট ছেলে ঘুম চোখে সকাল বেলা বাথরুমের দিকে যাচ্ছিল। চিৎকার করে বলল বৌদি তুমি কি করছ? কোথায় বাবা ? আবার একদিন অহনা সকাল সাতটায় চা বিস্কুট নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে বুড়োকর্তা টেবিলে চা বিস্কুট রেখে বলো বাবা তাড়াতাড়ি চাটা খেয়ে নিন ঠান্ডা হয়ে যাবে। তখন ওদের বাড়ির কাজের মেয়ে পারুল বলল বৌদি দাদু কোথায়? অহনা বলল কেন আমাকে দিয়ে যা চাইলো। এইরকম দিনের পর দিন হতেই চলেছে। আরেকদিন সন্ধ্যেবেলায় বাড়ির বড় ছেলে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে এলো শুনতে পাচ্ছে উপর তলায় কে যেন বল খেলছে। বাড়ির বড় ছেলে আর অহনা ছুটে গেলে উপর তলায়। দেখতে পেল রনি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে আমাকে দাও দাদু আমাকে দাও। আর চেয়ারটা দুলছে আর প্রিয় পোষ্য লালু লাফাচ্ছে। এইরকম দৃশ্য দেখে অহনা আর তার স্বামী তার ছেলেকে নিয়ে ঘরে চলে এলো। রনি চিৎকার করে বলতে লাগলো দাদু ? তোমার কাছে আমাকে যেতে দিচ্ছে না। তুমি ওদের বকে দাও। তারপর ওদের বাড়ি বড় ছেলে ছোট ছেলে সবাই মিলে গয়ায় পিন্ডদানকরল। অহনা এখন আর অতটা বুড়োকর্তাকে দেখতে পায় না। বুড়োকর্তার প্রিয় আরাম কেদারা এখন অতটা দোলে না। আসলে মানুষ প্রিয়জনের কাছে বারবার ফিরে আসে। এতদিনের সংসার সহজেই ছেড়ে যেতে চায়না। তাড়াতাড়ি সূক্ষ্ম দেহে বারবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসতে চায়। এবার বল তোমাদের এই গল্পটা কেমন লাগলো?