চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)
চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)
পর্ব,,৪
মায়ানের যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন শেষ বিকেল,,। আকাশ কমলা রং ধারন করেছে। ,,, এই সময়টা কেমন যেন থম থমে হয়ে থাকে পরিবেশটা,,। মায়ান কিছুক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রাংকির পাশে একটা ছোট ট্যাপ আছে সেখানে মুখ ধুয়ে তারপরে নিচে চলে যায়,, ওর বাবার খোজ নেওয়ার জন্য ওঘরে অনুমতি নিয়ে ঢুকলো,,। ওর মা জিজ্ঞাসা করলো ওর কাকু কি করছে,,! মায়ান দেখলো ওর বাবা আর মায়া ঘুমাচ্ছে,,আর মা একটা কাঁথা সিলাই করছে,,। ওর মাকে জবাব দিলো আমি তো ওই ঘরে যায়নি ছাদে ছিলাম,,। মহুয়া বেগম বললেন তুমি কাকুকে নিয়ে নামাজ পড়ে এসো। তোমার আব্বু ক্লান্ত তাই সন্ধার পরে হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করবো তখন তোমার আব্বু কাকুর সাথে কথা বলবে। মায়ান ওর ঘরে গিয়ে দেখলো পিচ্চিটা ওর পড়ার টেবিল চেয়ারের ওখানে বসে বিস্কুট খাচ্ছে।,,, ও আগেই এক গ্লাস পানি এনে দিলো পিচ্চিটাকে,,। নওশেদ আলীর ঘুমটা ভেঙ্গেছে নওশীর কান্নার আওয়াজ শুনে। মেয়েটার পেটে অনেকক্ষন থেকে খাবার পড়েনি তাই ক্ষিদেয় কান্না করে উঠেছিলো। উনিও বাইরে যেতে পারছেনা তার জন্য ওর হাত মুখটা ধুইয়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে বিস্কুট বের করে খেতে দিয়েছেন।,,, তিনি মায়ানকে দেখে বললেন,, বাবা তোমার আব্বু কি এখনও আসেনি?
না, এসছে উনি ধকল সারছেন,সন্ধ্যার নামাজের পর আপনার সাথে কথা বলবেন। চলেন কাকু আমরা নামাজ পড়ে আসি। নওশেদ আলী বললো বাবা, নওশী একা থাকবেনা ও ভীষণ ভয় পাইতো সবাইকে,,। তুমি চলে যাও আমি এখানেই পড়ে নিবো নামাজ। মায়ান ওর মাকে জানালো মা একটা পিচ্চি আছে ওর জন্যে খাবার দিও আর কাকু তোমার সাথেও নাকি কি কথা বলবে শুনিও,,।
,,,,
মায়ান মসজিদে নামায পড়ে এসে বাড়ির পাশে একটা পার্কে এসে কিছুক্ষণ বসলো তারপরে বাড়ি গেলো,,। আসফাক হায়দার সোফায় বসে আছে আর রান্নাঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ আসছে। আসফাক হায়দার মায়ানের সাথে কথা বলে বললো,, মায়ান যাও তোমার কাকুকে এখানে ডেকে নিয়ে এসো। মায়ান ঘরে গিয়ে কাকুকে সাথে নিয়ে আসলো,, আর তার কাকুর কোলে সেই ফুটফুটে মেয়েটা এখন একটা কালো ফ্রক পড়ে আছে।
,,,,,
আসফাক হায়দার লক্ষীপুর সরকারি কলেজের ইংরেজীর প্রফেসর,,। গম্ভীর আসফাক হায়দার সহজে কারো সাথে মিশতে পারেনা কিন্তু,, ৬ বছর আগে উনার কলেজের এক ছাত্রর সুইসাইড নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়,, তখন ওই সময় তিনি নওশেদ আলীর দ্বারা অনেক উপকৃত হন সমস্যা সমাধানে,,, তারপর থেকেই দেখা হলে টুকটাক কথা হতো ওদের,,। নওশেদ আলী সোফার ওখানে এসে সালাম দেয়,,। আসফাক হায়দার ও সালামের জবাব দেয়,,কিন্তু ছোট্ট নওশী আসফাক হায়দারকে দেখেই কান্না জুড়ে দেয়,,। সেকি কান্না কিছুতেই থামছেনা তার কান্না।
,,,,আসলে আসফাক হায়দার অনেক বেশী সাদা আর তার চোখ গুলো বড় বড় নওশী এসব দেখে ভয়,পেয়ে যায়,,। মহুয়া বেগমের চোখ ছাড়া কিছুই আর দেখা যাচ্ছেনা আর তাই এরকম অবস্থায় নওশেদ আলী কি করবেন বুঝতে পারছেন না। মায়ান এতক্ষণ চুপচাপ সব খেয়াল করে দেখছিলো কিন্তু এবার ও এগিয়ে এসে নওশীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে আসো পিচ্চি চলো আমরা খেলবো,,।
,,, নওশীর মায়ানকে দেখে ভয় লাগলোনা,, কারন,,মায়ান তার বাবার মতো অনেকটা দেখতে।,,, মায়ানের কোলে গিয়ে বলে চলো এখান থেকে আমার ভয় লাগছে বলেই কাধে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে নিলো। মহুয়া বেগম এক বাটি নুডলস দিয়ে বললো,, তুমি ওকে খাইয়ে দাও যাও,,। মায়ান নওশীকে নিয়ে ওর ঘরে চলে গেলো,,। আসফাক হায়দার এবার বললো,, বসেন ভাই,,টুকটাক কথা বাত্রা খোজ খবর নেওয়ার এক পর্যায়ে বললেন কাকীমা কোথায়,,? আমার সবার সাথেই দরকারী কথা আছে,,। আসফাক তার মাকে ঘর থেকে নিয়ে আসলো,,। ঘিয়ে রঙের শাড়ি আর উপরে বড় একটা সাদা ওরনা পড়া এগিয়ে আসছে বয়োস ষাটোর্ধ এক মহিলা,,। এটাই নওশেদ আলীর কাকী। নওশেদ আলী এদের চেহারা কোনো দিনও দেখেনি কারন বাইরে কোথাও বের হলেই শাশুড়ী, বউ বোরকা পড়ে বের হয়,,।
****
,,,,আনতারা বিবির বয়স অনেক হলেও এখনো মুখে একটা দাপুটে ভাব ধরা আছে,,।
আনতারা বিবি সিঙ্গেল সোফায় বসলেন। মহুয়া বেগম রান্না ঘর থেকে চা, নাস্তার ট্রে নিয়ে আসলে তাকেও বসতে বলে নওশেদ আলী।
,,মহুয়া বেগম ও আরেকটা সিঙ্গেল সোফাই বসেন। আনতারা বিবি প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন,,সীমা কেমন আছে? আর তোমার বাচ্চা,,!! নওশেদ আলী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন "শামীমা জাহান নওশী" ওর পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে আর সীমা সাড়ে তিন বছর আগে মারা গেছে কাকী। খবরটা শুনে আনতারা বিবি আর মহুয়া বেগম দুজনেই যেনো পাথর হয়ে যায়,,। এখানে থাকতে সীমা রোজ ওদের বাড়িতে আসতো মহুয়াকে বড় বোন মানতো ও আবার আনতারা বিবিকেও শেষ দিকে মা বলে ডাকতো। বলেছিলো আমিতো কোনো দিন আমার মাকে দেখিনি আপনি আমার মা হবেন? সীমার মৃত্যু সংবাদে সীমার কথাগুলো মনে করে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে,,নীরব অশ্রু,, আবার মহুয়া বেগমের হৃদয়ে মনে হচ্ছে কেউ ছুড়ি চালিয়েছে। এতোদিন সীমার উপর অভিমান ছিলো যোগাযোগ না করায়,,। সীমা যাওয়ার আগে তাকে বলেছিলো আপা তুমি রোজ আমার ফোন ধরবে,,। আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবোনা...........
চলবে,,,

