চোরের উপদ্রব
চোরের উপদ্রব
রাতের অন্ধকারে চুপচাপ বিছানায় নিজের বরকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছে গীতি।আজ তার একদম ঘুম আসছে না।এই কদিন ধরে সোসাইটিতে একটা চোরের উপদ্রব হয়েছে।আগে এমনটা ছিলো না।এই লকডাউনের পর থেকেই এমনটা হচ্ছে ।প্রায় প্রতিদিন রাত দুটো- আড়াইটে নাগাদ এই ঘটনা ঘটছে।কিন্তু অদ্ভুত ভাবে চোর কিছুতেই ধরা পড়ছে না।প্রতিদিন গীতি নাক ডেকে ঘুমায় কিন্তু আজ কি হলো কে জানে একদম ঘুম আসছে না।এদিকে একবার বাথরুম যেতে হতো কিন্তু চোরের ভয়ে সেটাও যেতে পারছে না।তাই ওর বর সুরেশকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে,,,,
গীতি:- এই ওঠো না।কই গো ওঠো।
সুরেশ:- ধূর বাবা ভালো লাগে না,এই ঘুমের সময় যতো সব উটকো ঝামেলা।কি হয়েছে টা কি?
গীতি:- বাথরুম যাবো তো।
সুরেশ:- তো যাও এতে আমাকে ডাকার কি আছে?
গীতি:- ঐ চোরটা যদি চলে আসে,,,
সুরেশ:- না চোর আসবে না,,,এখনও সময় হয়নি।
গীতি:- কি ? সময় হয়নি মানে?
সুরেশ:- কিছু নয়। তুমি যাও তো মেলা ফ্যঁচফ্যঁচ কোরো না।
এই বলে সুরেশ পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।গীতি আর কি করে ভয়ে ভয়ে বাথরুমের দিকে গেলো।বাথরুমের কাজ কর্ম সেরে বেরিয়ে যেই লাইটটা অফ করেছে অমনি কোথা থেকে একটা বিড়াল গীতির সামনে দিয়ে লাফ দিয়ে চলে গেলো।তাতেই গীতি ভয় পেয়ে ওরে- বাবারে ,,,চোর এলো রে বলে লাফিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে সোজা সুরেশের বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।তাতে সুরেশও ধড়মড় করে উঠে পরে বলছে-- ওরে বাবারে আমার পাঁজরগুলো গেলো রে।এই মটকুটাকে বিয়ে করে এ আমার কি সর্বনাশ হলো রে।
নিজের অপমান শুনে অমনি গীতি সমস্ত ভয় ভুলে রনচন্ডী মূর্তি ধারণ করেছে।রেগে গিয়ে বলতে শুরু করলো-- ও আমি এখন মটকু তাই না? তা বিয়ের সময় যে অতো টাকা পণ নিলে তখন কি আমার এই বডিটা টাকার নিচে চাপা পরে গেছিলো যে দেখতে পাওনি?
সুরেশ:- এই চুপ করো তো এই রাত- বিরেতে ষাঁড়ের মতো চেঁচিও না।
গীতি:- কি বললে আমি ষাঁড়?
এই ভাবে কথায় কথা বাড়তে লাগলো।অবশেষে কথাকাটাকাটি থেকে ব্যাপারটা হাতাহাতিতে পৌঁছে গেলো।সুরেশের হাতে লাটি আর গীতির হাতে ঝাঁটা।এ ওকে মারবে বলে আর ও ওকে মারবে বলে কিন্তু একে অপরকে মারছে না দেখে মাঝখান থেকে কেউ একজন বলে ওঠে-- আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো এবার মারামারিটা শেষ করে নিয়ে ঘুমান।মশার কামড়ে আর ভালো লাগছে না।তাড়াতাড়ি চুরিটা করে নিয়ে বেড়োতে পারলে বাঁচি।নাহলে আবার আমার গিন্নিও আমাকে ঝাঁটা মারবে।
এতক্ষণ আধো অন্ধকারে গীতি- সুরেশের লড়াই চলছিলো তাই ওরা বুঝতে পারেনি ঝগড়া করতে করতে রাত দুটো বেজে গেছে।আর চোরটা সুযোগবুঝে কখন ঘরে এসে ঢুকেছে ।কিন্তু এখানে এসে ওদের লড়াই দেখে চুপ করে বসে আছে কখন লড়াই থামবে,ওরা ঘুমাবে,আর তারপর চুরি করবে সেই আশায়।ভাবুন একবার কেমন চোর।যাইহোক চোরের কথা শুনে গীতি ঝাঁটা ফেলে দিয়ে সুরেশের হাত থেকে লাটি নিয়ে চোরকে মারতে যায় কিন্তু চোর অন্ধকারে ছুটে অন্য দিকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য লাটিটা শেষমেস পরে সুরেশের মাথায়।তাতেই সুরেশ অজ্ঞান আর চোর পগার পার।
এরপর থেকে ঐ সোসাইটিতে আর চোরের উপদ্রব হয় নি।একদিন সোসাইটির সবাই মিলে বসে এই আলোচনাই করছিলো হঠাৎ করে সেদিনের পর থেকে আর চোরের উপদ্রব কেন হচ্ছেনা সেই নিয়ে।ওদের আলোচনা শুনে দারোয়ান আর থাকতে না পেরে বলে উঠলো-- নিজের বৌয়ের কাছে ঝাঁটা,মুখ ঝামটা খেয়ে খেয়ে পেট ভরে গেছে তাই আর লোকের বৌয়ের লাটির কোনো দরকার নেই।
কথাটা বলেই জিভ কাটলো সে আর সোসাইটির সবাই অবাক চোখে চেয়ে দেখলো দারোয়ানটি কিছু একটা ভেবে আকাশের দিকে তাকিয়ে সম্ভবত ভগবানকে উদ্দেশ্য করে প্রণাম করছে ।হয়তো এটাই প্রার্থনা করছে কেউ যেন তাকে তার মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কথার মাধ্যমে ধরতে না পারে।
