সোহাগের আল্পনা
সোহাগের আল্পনা
কি রে মিতু তুই অমন রেগে আছিস কেন?- বললো রিতা,মিতুর বন্ধু।
মিতু:- কি করবো বল আমাদের বাড়ির কাজের লোকের মেয়েটার বড্ড বার বেড়েছে।
রিতা- তুই কি ফার্স্ট ইয়ারের সোহাগের কথা বলছিস?
মিতু:- হ্যাঁ রে ওর কথাই বলছি।বাড়িতে তো বাবার কাছে সারাক্ষণ শুনতেই হয় -"সোহাগ এই,সোহাগ ঐ সোহাগ কত কষ্ট করে পড়াশোনা করে ।ওর মা পাঁচ বাড়ির ঝিয়ের কাজ করেও মেয়ের পড়াশোনা ঠিক চালিয়ে যাচ্ছে,আর মেয়েও তেমনি সবেতেই পারদর্শী।
কিন্তু আমাদের মিতু সবেতেই গোল্লা।কি যে করবে জানি না"-- এরপর তুই বল আমার রাগ হবে না? আর ঐ মেয়ে নেকু সেজে দিনরাত মিতু দিদি মিতু দিদি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেন কত ভালোবাসে আমায়,,,,হুঁ সব দেখানো।শুধু আমাকে সবার কাছে আরও ছোটো করার প্ল্যান।
রিতা- কিন্তু মেয়েটাকে দেখলে আমার বড্ড মায়া হয় রে মিতু।মেয়েটাকে তুই শুধু ভুল বুঝছিস।তাছাড়া সত্যিই তো কতো কষ্ট করে মেয়েটা পড়াশোনা করে ।এসব কথা তো মিথ্যা নয় ।ও তোর টিফিনটা পর্যন্ত বাড়ি থেকে তোকে এনে দেয়।আমার মনে হয় সত্যিই ও তোকে নিজের দিদির মতোই ভালোবাসে।
মিতু- শাট আপ রিতা।তোকে ওর হয়ে বেশি কথা বলতে হবে না।আমি ওর মতো লো ক্লাস মেয়ের দিদি হতে চাই না।দেখ না আজ আবার কলেজ সোশালে যে আল্পনা প্রতিযোগীতা হবে তাতে আমাকে হারাবে বলে নিজেও অংশগ্রহণ করেছে,এতোটাই হিংসুটে মেয়ে ও।
রিতা- এভাবে বলিস না। প্রতিযোগীতাতে তো অনেকেই থাকবে।শুধু তুই আর সোহাগ তো নোস।তছাড়া এতে তো যেকেউ অংশগ্রহণ করতে পারে,তাই সোহাগও অংশগ্রহণ করেছে।এতে তুই প্লিজ রাগ করিস না।
মিতু- ( রেগে গিয়ে)মাঝে মাঝে মনে হয় তুই আমার নয় সোহাগের বন্ধু।
****************************
আল্পনা প্রতিযোগীতা যথাসময় শুরু হয়েছে ।মোট দশজন প্রতিযোগী আছে।পাঁচটি ঘরের মেঝের মধ্যে প্রত্যেক ঘরের মেঝেতে দুজন কোরে প্রতিযোগী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজেদের নিজেদের আল্পনা এঁকে শেষ করবে,এই হলো নিয়ম।এইখানে হলো সমস্যা।মিতুর সঙ্গে একই ঘরে আল্পনা দেবে সোহাগ ,চিরকুটে এমনটাই উঠেছে।নিয়ম তো নিয়মই হয় ।তাই শত অনিচ্ছ্বা সত্ত্বেও মিতুকে রাজি হতে হলো।সবাইকে কয়েকটা করে চক আর ডাস্টার দিয়ে দেওয়ার পর একা ছেড়ে দেওয়া হলো।ছেড়ে দেওয়ার আগে সবাইকে একবার ভালো করে সার্চ করে নেওয়া হলো কেউ কোনো আল্পনার ছবি বাড়ি থেকে লুকিয়ে নিয়ে এসেছে কি না সেটা দেখার জন্য।তারপর যে যার আল্পনা দিতে শুরু করলো।এদিকে সোহাগ মন দিয়ে বড়ো করে খুব সুন্দর একটা আল্পনা দিয়েছে কিন্তু মিতু একটা এমনি সাধারণ আল্পনা দিয়েছে।এর থেকে ভালো তার মাথায় তো কিছুই এলোনা,তাই সোহাগের আল্পনাটা দেখে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে মিতুর,তাই সোহাগ তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও মিতু অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,সে চায় না ঐ সোহাগ আর ওর আল্পনার দিকে তাকাতে।সময় শেষ তাই ঘণ্টা পরে গেছে।ম্যাডামরা এসে ঘুরে ঘুরে সবার আল্পনা দেখলেন।সব দেখার শেষে মিতুর পিঠ চাপড়ে একজন ম্যাডাম বললেন-- সাবাস মৃত্তিকা তোমার আল্পনাটা খুব খুব খুব ভালো হয়েছে।
এই বলে উনি চলে গেলেন।আর অবাক হয়ে মিতু ম্যাডামের যাওয়ার দিকে লক্ষ্য করে দাঁড়িয়ে রইলো।এমন সময় রিতা এসে মিতুকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
রিতা-- মিতু তুই কি সুন্দর আল্পনা দিয়েছিস রে।আমি এইমাত্র দেখে এলাম।কি রে আমার কথা শুনে অবাক হচ্ছিস কেন?
মিতু কিছু না বলে রিতাকে সঙ্গে নিয়ে সেই ঘরে গেলো যেখানে সে আল্পনা দিয়েছিল।গিয়ে যা দেখলো তাতে অমন অহংকারী মেয়েরও চোখে জল এসে গেলো।সে দেখলো সোহাগের আঁকা আল্পনার নীচে লেখা আছে ওর নাম- মৃত্তিকা রায় আর ওর আঁকা আল্পনার নীচে লেখা আছে- সোহাগ দাস।
এই এতক্ষনে মিতু বুঝতে পারলো সত্যি সত্যি সে হেরে গেছে।যে মেয়েটাকে সে সহ্য করতে পারে না সেই মেয়েটা তার নিজের নিপুন হাতের শিল্পকলা তার নামে করে দিয়েছে।সত্যি কতো বড়ো মন হলে তবেই মানুষ এমন কিছু করতে পারে।
সেইদিন সেরার পুরস্কারটা সোহাগই পেয়েছিলো ,মিতুই ম্যাডামদের সব সত্যিটা জানিয়ে দিয়েছিলো।সাথে সাথে সোহাগ আরও একটা পুরষ্কার পেয়েছিলো যেটা তার কাছে আর সমস্ত পুরস্কারের থেকে দামী ছিলো সেটা হলো-- সেদিন প্রথম সবার সামনে মিতু সোহাগকে বোন বলে জড়িয়ে ধরেছিলো।
