STORYMIRROR

Soma Dutta

Tragedy Others

3  

Soma Dutta

Tragedy Others

অভিমাণী সোমা

অভিমাণী সোমা

3 mins
211

স্ত্রীর মৃতদেহের সামনে বসে একদম চুপ করে গেছে রঞ্জু।আজ তার হাতে ফোন নেই।কারণ হয়তো আজ সে বুঝেছে এই ফোন নয় তার স্ত্রী সোমা ছিলো তার জীবনের আসল সঙ্গী।কিন্তু অভিমানী মেয়েটা আজও তার স্বামীর পাশেই বসে আছে সেটা রঞ্জু বুঝতে পারে না।কারণ কায়াহীন ছায়াকে কি সবাই বুঝতে পারে?

ধীরে ধীরে মৃতদেহটা বাড়ির বাইরে চলে গেলো।যারা যারা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলো সবাই শ্মশানে চলে গেলো।রঞ্জুও গেলো সাথে গেলো সাত বছরের ছেলেটা।শুধু গেলোনা সোমার ছায়া।মানে তার আত্মা।সে তার দেহটাকে আগুনে পোড়ার মতো ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে পারবে না।আসলে সোমা বরাবরই সরল প্রকৃতির খুব ভালো মনের মেয়ে ছিলো।কখনও কাউকে কষ্ট পেতে দেখলে তার মনও কেঁদে উঠতো।তবে সময় মানুষকে পরিবর্তিত করে দেয়।সোমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো।বিয়ের প্রথম প্রথম স্বামী তাকে চোখে হারাতো কিন্তু বছর দুয়েক পর থেকেই সোমা লক্ষ্য করলো তার প্রতি তার স্বামীর অবহেলা। তার প্রতি তার স্বামীর অবহেলা তাকে ধীরে ধীরে এক অন্য মানুষে পরিনত করলো।সে অনেকবার অনেক রকম ভাবে তার স্বামীকে বুঝিয়েছে যে তার করা অবহেলার কারণে সে ধীরে ধীরে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলছে কিন্তু রঞ্জু সে কথাকে পাত্তা না দিয়ে উপেক্ষা করে গেছে।সোমা তার জীবন সংক্রান্ত অতি ছোট ছোট কথাও রঞ্জুকে বলতো কিন্তু রঞ্জু কোনো কিছুই শেয়ার করতো না সোমার সাথে।তাতে সোমার অভিমাণ হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে মেনে নিতে হতো সবটা।কারণ সে একটা মেয়ে তার উপর বাড়ির বৌ,তাই তার নিজস্ব স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই।কত রাত পেরিয়ে গেছে সোমার চোখের জল ফেলে কিন্তু সেই দিকে রঞ্জুর কোনো খেয়াল নেই।সে তখন তার জীবন সঙ্গীকে বাদ দিয়ে ভার্চুয়াল সঙ্গী নিয়ে ব্যস্ত।দিনের পর দিন এইরকম চলতে চলতে ক্লান্ত সোমা ঈশ্বরের কাছে এই জীবন থেকে মুক্তি চাইতো।ইচ্ছা করতো মরে যাই কিন্তু দুধের শিশুটাকে একা রেখে যেতে পারতো না।ঐ যে মায়া,,তার জন্যই এই সমস্যা।

অবশেষে একদিন সোমা জানতে পারলো তার ব্ল্যাড ক্যান্সার হয়েছে।তবে এখনও সারলে সারতে পারে।কিন্তু আগের দিনে স্বামীর মুখ থেকে একটা কথা শুনেছিলো সে। একটা কথা দুবার জিজ্ঞাসা করায় স্বামী বলেছিল--- কেন ফালতু বকছো? তোমার সাথে এখন কথা বলতে পারবো না।দেখছোনা what 's app - এ বন্ধুদের সাথে কথা বলছি।তখন সোমা বলেছিলো- তুমি শুধু ওদের সাথেই কথা বলো আর আমি শুধু তোমার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করি কখন তুমি আমার সাথে কথা বলবে সেই আশায়।দেখবে আমি যদি মরে যাই তখন বুঝবে আমার গুরুত্বটা।

সেই কথা শুনে রঞ্জু বলেছিলো-- তবে মরেই যাও না।তাতে আমার কিছু যাবে- আসবে না।


গতকালের এই কথাটা মনে করেই সোমার মন আরো একবার অভিমানে ভরে গেলো।সে ঠিক করলো তার অসুখের কথা বাড়িতে কাউকে জানাবে না।তারপর আর তার জানানো হয়নি।সোমা যখন বুঝতে পারলো তার শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে সে মনে মনে চিরবিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নেয়।ছেলেটা এখন কিছুটা হলেও বড়ো হয়ে গেছে তাছাড়া ওর জন্য তো ওর ঠাম্মি,দাদান,পাপা এরা রইলোই।আর কোনো চিন্তা নেই এবার ও শান্তিতে মরতে পারবে।প্রতিদিনের শারীরিক যন্ত্রনা সহ্য করে সামনে ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে সে ক্লান্ত।একজন ব্লাড ক্যান্সারের রুগীর শারীরিক কষ্ট অনেক।কিন্তু রঞ্জু তাকে প্রতিনিয়ত যে মানসিক যন্ত্রনা দিয়েছে তার কাছে এটা অনেক কম বলে মনে হয়েছে সোমার।দিন পেরিয়ে গেলো,পেরিয়ে গেলো একটা মাস।ধীরে ধীরে বিছানার অপর প্রান্তে শুয়ে ছটফট করতে করতে শেষ হয়ে গেলো সোমা,রঞ্জু সেটা জানতেও পারলো না,কারণ সে তার ভার্চুয়াল সঙ্গী নিয়ে ব্যস্ত।এতো অত্যাচারের ফল স্বরূপ আজকের দিনটা দেখতে হলো রঞ্জুকে।

ছেলে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের মুখাগ্নি করলো।চোখের জল ফেলে রঞ্জুও তাকে সাহায্য করলো।ধীরে ধীরে সোমার দেহটা একমুঠো ছাইতে পরিণত হলো।বাড়ি ফেরার আগে চোখের জল শুকিয়ে যাওয়া শূন্য দৃষ্টি নিয়ে একবার নিভে যাওয়া চিতার দিকে তাকলো রঞ্জু ।তার মনে হলো ঐ ধোঁয়ার কুণ্ডলী যেন একটা অবয়বের সৃষ্টি করেছে।আর সেই অবয়বরুপী ধোঁয়ার কুণ্ডলী যেন তাকে তাচ্ছিল্য ভরে বলছে-- এতোদিন তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করে এসেছি।আজ থেকে শুরু হলো তোমার অপেক্ষা।বিদায় চির সঙ্গী


ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে আরেকবার চীৎকার করে কেঁদে উঠলো রঞ্জু।।

কেউ নিজের জীবন সাথীকে উপেক্ষা করবেন না।সময় থাকতেই তার গুরুত্বটা বুঝে নেবেন।নয়তো আপনাদের অবস্থাও আমার গল্পটির মতো হবে।সকলে ভালো থাকবেন,আনন্দে থাকবেন।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy