Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Debdutta Banerjee

Drama

2.5  

Debdutta Banerjee

Drama

চল বন্ধু হবি

চল বন্ধু হবি

4 mins
3.5K


ফাগুনের মনটা ভালো নেই। বাবা মায়ের সাথে নতুন বদলি হয়ে এই ছোট্ট টাউনে এসে ও কেমন গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। কারণ ওর একা একা ঘর থেকে বার হওয়া বারণ, বাবাই আর মামমাম সকালেই কলেজে বেরিয়ে যায়। বেলা দিদি রয়েছে ওর দেখা শোনার জন‍্য। বেলা দিদিকে ঠিক করে দিয়েছে মামমামের কলেজের একজন। কিন্তু দুপুর বেলায় সব কাজ সেরে বেলা দিদি ঘুমায়। এখানে ফাগুন যে স্কুলে ভর্তি হয়েছে সেই স্কুলে এখন গরমের ছুটি চলছে। পড়াশোনাও নেই তাই। ওর সময় কাটে না আর। বাড়িটা ওদের টাউনের শেষ প্রান্তে। বাড়ির পেছনেই সবুজ কার্পেটের মত চা বাগান। তার বুক চিরে ওদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটা ছোট্ট নদী। এখানে সবাই ডাকে পাগলা ঝোরা বলে। জল খুব বেশি নেই, নিচের বালি আর পাথর কুচি পরিস্কার দেখা যায়। দুদিন সকালে বাবাইএর সাথে ঐ ঝোরায় গেছিল ও। রুপালি রঙের এক ঝাঁক মাছ রয়েছে নদীতে। জল কনকনে ঠান্ডা, তবে এই বৈশাখের গরমে আরাম লাগে ঐ জলে পা দিতে। বাড়িটার সামনে ছোট্ট ঘাসের লন, আর ফলের গাছ রয়েছে কিছু। একটা জামরুল গাছে থোকা থোকা লালচে কচি জামরুল ধরেছে। বৈশাখের বৃষ্টিতে সেদিন ঝরে পড়েছিল কিছু। ফাগুন খেয়ে দেখেছে, বেশ মিষ্টি।


আজ দুপুরে বারান্দায় বসে একটা ছবি আঁকছিল ফাগুন।কলকাতার বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ছে এখানে এসে। ওখানে রোজ বিকেলে ও কারাটে শিখত, আঁকার স্কুলে যেত সপ্তাহে দুদিন। ফুটবল ক্লাস ছিল শনি রবি দুদিন সকালে। এখানে এখনো এসব শুরু হয়নি। ছবি আঁকতে আঁকতেই ফাগুন দেখেছিল ওর বয়সী বা একটু বড় ছেলে দুটোকে। ওদের বাড়ির পাশের সরু পথটা দিয়ে ঝোরায় নেমে গেছিল ওরা। তারপর জল ঘেঁটে কি খেলা, কখনো হাঁঁটু জলে ডুব দিচ্ছিল, কখনো আবার জলের নিচে কিছু খুঁজছিল। এর আগেও দু দিন দেখেছে ওদের ফাগুন। খুব ইচ্ছা করছিল ওদের সাথে জলে নেমে হুটোপুটি করতে। কিন্তু মামমাম বাবাই জানতে পারলেই বকবে তাই সাহস পায় না। কেয়ারি করা রঙ্গন ফুলের গাছ গুলোর কাছে এসে ও দেখে একটা কচি বাতাবি লেবুকে বল বানিয়ে জলের ম‍ধ‍্যেই লোফালুফি খেলছে ওরা। 

ঘরে এখন বেলা দিদি গভীর ঘুমে। ঠিক সাড়ে চারটায় ঘুম ভাঙে বেলাদিদির। মামমাম ফেরে পাঁচটায় আর বাবাই আরো পরে। ছেলে দুটোও ওকে দেখতে পেয়েছে। বাতাবিটা উড়ে এসে পড়েছিল ঢালু পারের ঘাসজমিতে। রঙ্গন ফুলের ঝারের মাঝে একটা ছোট্ট ফাঁক আছে , সুরঙ্গ মত। কুকুর বিড়ালের যাতায়াতের পথ বোধহয়। হামাগুড়ি দিয়ে ওই পথেই বেরিয়ে আসে ফাগুন। একটা ছোট শটে বলটা ওদের ফিরিয়ে দেয়। বন্ধুত্ব জমে উঠতে সময় লাগে না। দেবু আর মানু, ওরা ফাইবে পড়ে। তবে সরকারি স্কুলে। ওদের বাড়িও পাশেই। 


একটু পরে ভয়ে ভয়েই ঐ গাছের সুরঙ্গ দিয়ে ফিরে আসে ফাগুন। না, বেলা দিদি তখনো ঘুমের দেশে। কিছুই টের পায়নি। 

এভাবেই দুপুরের সময়টা কাটতে শুরু করেছিল ফাগুনের। তবে ও জলে নামত না, কারণ জামা ভিজলেই বেলা দিদি মামমাম কে বলে দেবে যে ও জল ঘেঁঁটেছে। ও কোনদিন নিজের ফুটবলটা নিয়ে ওদের সাথে খেলত পিছনের মাঠে অথবা ঝোরার জলে মাছের ঝাঁঁক খুঁজত। একটা জারুল গাছের ডাল ঝোরার উপর ঝুঁঁকে পড়েছিল। তাতে বসে ওরা গল্প করত কখনো। বেলা দিদির ঘুম কখনোই ভাঙ্গত না। 

ছেলে দুটো ভালোই ফুটবল খেলে। আপাতত ওদের স্কুলে দু মাস নাকি গরমের ছুটি। কিন্তু তাতে ওদের মনে আনন্দ নেই। আস্তে আস্তে ফাগুন জেনেছিল ওরা দুপুরের খাবারটা স্কুলেই খেত। ছুটি মানেই দুপুরের খাবারটুকু আর জুটছে না। ওদের বাবা মায়েরা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে। সকালে ভাত খেয়ে কাজে যায়। তখন মানু আর দেবুও খেয়ে নেয়। মায়েরা দুপুরে আসে না আর। ঘরে চিড়া মুড়ি যা থাকে তাই খায় ওরা। সন্ধ‍্যায় মা এসে রুটি করলে তারপর খায়। তাই স্কুল নেই মানেই পেটে খাবার নেই। তাছাড়া ক্লাসে পড়া না হলে ওরাও যে পিছিয়ে পরবে। কারন ওদের বাড়িতে দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। খুব দুঃখ হয়েছিল ফাগুনের। ও বলেছিল ও ইংরাজি আর অঙ্কটা দেখিয়ে দিতে পারবে। তারপর থেকে ও রোজ হয় কেক নয় ক্রিম বিস্কুট চকলেট এসব নিয়ে বের হয় ওদের জন‍্য। প্রথম কদিন লজ্জা পেলেও ওরাও এখন ওর জন‍্য কাচামিঠা আম, লিচু বা পেয়ারা নিয়ে আসে। লটকা বলে একটা টক ফল এনেছিল সেদিন। বেশ কাটছিল দুপুরগুলো। মামমাম বাবাই বা বেলা দিদি টের পায়নি কিছুই। পিছনের মাঠে বসেই ওদের পড়াও দেখিয়ে দিয়েছে ফাগুন।

কিন্তু দাদু হঠাৎ করে ওদের বাড়ি বেড়াতে আসবেন ফাগুন বোঝেই নি। ফাগুনের জন‍্যই দাদু এসেছিলেন। দুপুর বেলাটা দাদু বসার ঘরে বসে বই পড়েই কাটান। প্রথম দু দিন ফাগুনের বাইরে যাওয়াই হল না। তৃতীয় দিন মানু আর দেবু বই নিয়ে লনে ঢুকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছিল। ফাগুন ইশারা করার আগেই দাদু বেরিয়ে এলেন। বাধ‍্য হয়ে ফাগুনকে এসে ভয়ে ভয়ে সব খুলে বলতে হল দাদুকে। 

মানু আর দেবু তো পালাতে পারলে বাঁচে। কিন্তু দাদু যে সব শুনে নিজেই ওদের পড়া দেখিয়ে দেবে আবার বিকেলে ওদের সাথে ঝোরার ধারে আসবে ওরা বোঝেনি। দাদুর প্রশ্রয় পেয়ে ফাগুন ও জলে নেমে যায় সেদিন। দাদু পারে দাঁড়িয়ে ওদের জলকেলী দেখতে দেখতে ফিরে যাচ্ছিলেন নিজের ছোটবেলায়। বেশ মজা লাগছিল ওদের দেখে। 


ফেরার পথে ওরা বলল আর পনেরো দিন পর ওদের স্কুল খুলবে। তখন ওরা চারটের পর খেলতে আসবে। 

বাড়ি ফিরে ভেজা কাপড় ছাড়তে গিয়ে ফাগুন দাদুকে বলেছিল ওদের স্কুল বন্ধ বলে ওরা দুপুরে খেতে পায় না। দাদু একটু গম্ভীর হয়ে কিছু ভাবছিলেন। পরদিন ওরা আসতেই দাদু নিজে হাতে সবার জন‍্য ছাতুর সরবত করে নিয়ে হাজির। ফাগুন দাদুর বাড়িতে এটা খেয়েছে কয়েক বার। তবে এবাড়িতে হয় না। দাদু ওদের বোঝাচ্ছিল ছাতুর উপকারিতা। অল্প পড়াশোনার পর রোদ কমতেই ওরা নেমে গেছিল জলে। জল ছিটিয়ে লাফিয়ে ঝাপিয়ে ক্লান্ত ছেলে তিনটে যখন উঠে এলো দাদুর চোখে খুশির ঝিলিক। নিজে হাতে ফল কেটে খাওয়ালেন ওদের।নাতি যে বন্ধু খুঁজে পেয়েছে শুধু তাই নয় এমন সাধারণ দুটো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করেছে দেখেই উনি খুশি। সারাজীবন নিজের ছেলেকে মাটির কাছে থাকতে শিখিয়েছেন। তাই ছেলে শহরের বিলাসিতা ছেড়ে এই ছোট্ট টাউনে চাকরি নিয়ে চলে এসেছিল। বৌমাও আপত্তি করেনি কখনো। নাতিও যে নিজের বন্ধু খুঁজে নিয়েছে তাতেই উনি শান্তি পেয়েছেন।  


Rate this content
Log in

More bengali story from Debdutta Banerjee

Similar bengali story from Drama