Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy

ছাদের সন্ধানে

ছাদের সন্ধানে

2 mins
381


মানবজীবনের হাজার সংগ্রাম ও কষ্টের ভিতরেও বেঁচে থাকার রসদ জোটায় তার স্বপ্ন - হোক না তা অলীক, তবু তো কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে যাওয়া যায় বাস্তবের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে। আবার নতুন শক্তি নিয়ে বাস্তবে ফিরে আসা।


—আচ্ছা, আপনারা পজেশন কবে দেবেন?


—ম্যাম, উইদিন এইটিন মানথস। জাস্ট হ্যাভ আ লুক অ্যাট দি প্রজেক্ট। সেলফ কনটেইনড। ২৪ আওয়ার্স জেনারেটর ব্যাক আপ, মডার্ন ক্লাবহাউস, রিভার প্রমেনেড।


রেখা পুরোটা না বুঝলেও, স্বপ্নের ফেরিওয়ালার এক একটা শব্দ তার মনে স্বপ্ন রচনা করে। প্রদীপ মনে মনে বিরক্ত হচ্ছিল। ছেলেটা আবার টাই পরে ইংরাজি মারাচ্ছে!


বহুদিনের অভিজ্ঞ টাই-পরা স্বপ্নের ফেরিওয়ালা কিন্তু ধরে ফেলেছে কিসসু হবে না। বকবক করে ওর খিদেও পাচ্ছে জোর।ওরা উঠলে সে এক ফাঁকে সেই দত্তপুকুর থেকে সাথে নিয়ে আসা দুটো রুটি আর ঢেঁড়সভাজা খেয়ে নিত এতক্ষণে। কিন্তু সেই রুটি-ঢেঁড়সের নিরন্তর স্রোতের স্বপ্নেই তো বসে থাকা, প্রাণপণে ভুল উচ্চারণে ইমপ্রেস করার আপ্রাণ চেষ্টা । আরেকটা স্বপ্ন তো তার পার্সের ফ্ল্যাপে কাগজের ভাঁজে ভাঁজেই ক্রমবিলীয়মান। তাকে আলটিমেটামই বলো আর টিকিং টাইমবম্ব —একই ব্যাপার। তুমি তো সেই যাবেই চলে।


সব কথা শুনে নেবার পর প্রজেক্ট অফিস থেকে বেরিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটছিল প্রদীপ । রেখা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ওর গতির সাথে তাল রাখতে পারছিল না। বুঝেছে —প্রদীপ রেগে আছে। কিন্তু কেন? তারা তো এভাবেই প্রতি রবিবারে বেরিয়ে পড়ে, কখনো বাসে, কখনো শেয়ারের অটোতে গোপালপুর, কালিকাপুর আবার ওদিকে মহেশতলা, জোকা ছাড়িয়ে চলে যায়, এভাবেই তন্ন তন্ন করে এক টুকরো নিজস্ব ছাদ খুঁজে যায়, সে তবে কিসের জন্য?


—শুনছো? একটু আস্তে পা ফেল না!


প্রদীপ তার চোখের দিকে তাকায় না, বলে — দেরি হয়ে যাচ্ছে।


রেখা অবাক হয়ে ভাবে রবিবারেও কিসের দেরি, সবে তো দুটো। বাড়িতে থাকলে তো এতক্ষণে পাড়ার রোয়াক থেকে ...। কাছাকাছি আসতে প্রদীপ প্রায় হিসহিস করে বলে ওঠে--একটু কম কিছুতে, সস্তা কিছুতে সুখী হবার চেষ্টা করো। আমাকে খোলা হাটে বেচলেও যা ফ্ল্যাটের দাম...


রেখা চোখ বন্ধ করে। মনে মনে বলে আমাকে একটু সূর্যালোক দাও, তোমাদের উত্তর কলকাতার খুপরি ভাড়াবাড়ির যৌথ সংসারে আমি আর পেরে উঠছি না। মুখে বললো, চলো না একটিবার ওই সিটি বাজারটায় ঢুকি।


সিটি বাজার দোকানটার সামনে হকার, চা ওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা এসব পাঁচ রকমের লোকের ভিড়। তারমধ্যেই রেখার বাচ্চাটা দেখে ফেলেছে। বেলুন। গ্যাস বেলুন, কোনোটা মুরগী তো কোনোটা মাছ, বাঘ, আরো কত কি, বর্ণাঢ্য।


প্রদীপ দাম জিজ্ঞেস করে। কিন্ত এগুলো বেশ দামী, যেমন তেমন নয়, বুঝে পিছিয়ে এলো। বাচ্চা তারস্বরে কাঁদে। তখনই রেখা দেখে বেলুনওয়ালার হাঁটু ধরে দাঁড়িয়ে আরেকটা বাচ্চা। নাকে সিকনি, হাতে একটা গ্লাস।


রেখা দাঁড়িয়ে পড়ে। নিজের পার্স থেকে পয়সা বের করে একটা বড়সড় উজ্জ্বল কমলা রঙের মুরগী নেয়। মুহূর্তের মধ্যে বেলুনওয়ালার বৌ এসে হাজির হয়, স্বামীর থেকে পয়সা নিয়ে, ছেলেটাকে কাঁকালে নিয়ে দৌড় দেয়। ছেলেটার মুখের হাসিটা প্রায় অপার্থিব লাগে রেখার ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy