Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

3  

Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব তেষট্টি

বৃত্তের বাইরে পর্ব তেষট্টি

6 mins
5


পর্ব তেষট্টি


কাকতালীয় হলেও কামদাকিঙ্কর দিব্যেন্দুদের বাড়ি থেকে বেরোনোর অব্যবহিত পরেই বিভূতিভূষণ সস্ত্রীক এসে দাঁড়ালেন রাজদীপ লাহাদের বাড়ির দরজায় । তখনই পাশের বাড়ি থেকে সপুত্র কামদাকিঙ্কর দিব্যেন্দুদের শুভকামনা জানিয়ে গাড়িতে উঠলেন । নীল অডি দেখে চিনেও না চেনার ভাণ করে সোঁ সোঁ করে বেরিয়ে গেলেন সেখান দিয়ে । তিনি বা কালীকিঙ্কর কেউই তো জানেন না ওই বাড়িটাই রাজদীপ লাহাদের বাড়ি ।

বিভূতিভূষণ বা শুভমিতা দেবী জ্বলছেন নিজেদের জ্বালায় । কার গাড়ি এল বা গেল সে নিয়ে দৃকপাত করলেন না । নেমে কলিং বেল বাজালেন । মহিমকে বলে দিয়েছিলেন ব্যানার্জী ভিলায় ফিরে যেতে এবং মানা করে দিয়েছিলেন তাঁরা কোথায় এসেছেন কাউকে না বলতে - এমনকি বামুন বউকেও না ।

মহিম ফিরে এলে সম্পাতি এবং ভাবনা দু'জনেই প্রশ্নে জেরবার করে দিল মহিমকে । মহিম বলল ওঁরা ট্রেন ধরে কোথাও গেলেন সে জানে না । 

সম্পাতি বলল - এই তো সামনেই স্টেশন, তবে তোমার ফিরতে এত দেরী হল কেন ?

- আমাকে বললেন ট্রেনে উঠিয়ে দিতে, তাই দেরী হল । 

- কোন ট্রেনে উঠিয়ে দিলে ? 

- তা' বলতে পারবনি দিদিমণি ! দুর্গাপুর স্টেশনের প্লাটফর্মে উঠে তিন নং এ গেলাম। এবার ওই ট্রেন কোথায় গেল আর কোথা থেকে এল সব গুলিয়ে ফেলেছি ।

সম্পাতি পড়ল মহা ভাবনায় । এমন সময় দরজায় করাঘাত এবং ঘন ঘন কলিং বেল বাজতে শুনে সম্পাতি দরজার দিকে এগিয়ে চলল । মহিম ওকে বাধা দিয়ে বলল - আমি থাকতে তুমি কেন দিদিমণি ! আমি দেখছি কে এসেছে ।

দরজা খুলতেই বিশাল পুলিশ বাহিনী দেখে মহিমও ভীষণ ঘাবড়ে গেল । কোনমতে বলল - পু-পু-পুলিশ ! কাকে চান?

শ্রীধর মাইতি বললেন - মিঃ এণ্ড মিসেস ব্যানার্জী বাড়িতে আছেন ?

- আজ্ঞে তাঁরা তো নেই !

- কোথায় গেছেন ?

- তা তো বলতে পারবনি স্যার ।

- তুমি কে ?

- আজ্ঞে আমার নাম মহিম ঘোষাল । বাবুদের বাড়ি পাহারা দি । ভাবনাকে দেখিয়ে বলল - এই আমার বউ । বাবুর বাড়ি রান্না করে ।

- আর উনি ? সম্পাতিকে দেখিয়ে শ্রীধর মাইতি বললেন - উনি কে ?

- আজ্ঞে বাবুর একমাত্র মেয়ে । কই গো দিদিমণি ? তোমার নামটা সায়েবকে বল না !

এবার সম্পাতি এগিয়ে এসে বলল - আমি সম্পাতি ব্যানার্জী , ডটার অফ....

- জানি জানি । আর বলতে হবে না । আপনার বাবা মা কোথায় ?

- কি করে জানব ? আমাকে কি বলে গেছে?

- হুমম । 

পুলিশ দলকে বললেন - খানা-তল্লাশি করে দেখুন, কোন ক্লু পান কি না । 

তারপর সম্পাতিকে বললেন - চলুন ওঁদের ঘরগুলো দেখিয়ে দেবেন । আমরা সার্চ করে দেখব । 

- সার্চ ? আপনাদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে ? দেখি !

- শ্রীধর মাইতি এত কাঁচা কাজ করে না মিস ব্যানার্জী । এই দেখুন।

বলে পুলিশ সুপারের ই-মেইলের কপি দেখালেন ।

পড়ে সম্পাতি বলল - এ তো এস পির অর্ডার । এতে কি হবে ? কোর্টের অর্ডার দেখান বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের ওয়ারেন্ট দেখান । না পারলে বিদেয় হোন । রাতে একলা মেয়েছেলে পেয়ে তল্লাশীর নামে বেইজ্জতির মামলা ঠুকে দেব তা নইলে ! 

ফাঁপরে পড়ে গেলেন মিঃ মাইতি । বললেন - আপনাদের কোন জিনিসপত্রে হাত লাগাব না । শুধু খুঁজে দেখব ওনারা সত্যিই আছেন কি নেই ।

- কেন ? আমি বলছি , তা' বিশ্বাস হচ্ছে না ?

- মুখের কথায় কি বিশ্বাস করা যায় মিস ব্যানার্জী ।

সম্পাতি এবার ফুঁসে উঠল - আউট ! গেট আউট অফ মাই হাউস । মুখের কথা বিশ্বাস না হলে বাড়ি ঘিরে রাতভর পাহারা দিন । এর বেশী কিছু করলে.....

- আপনি কিন্তু পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন মিস ব্যানার্জী । পথ করে দিন , তা না হলে বল প্রয়োগ করতে বাধ্য হব ।

- কোন নিয়মে ? আমি কি চোর না ডাকাত না খুনী ? কোন অপরাধে আপনারা তল্লাশী করতে এসেছেন ? দেশে কি আইনকানুন নেই ? বলেছি তো ওঁরা বাড়িতে নেই । বিশ্বাস করুন বা না করুন তা'তে আমার কিছু আসে যায় না ।

শ্রীধর মাইতি পিছু হটলেন । বললেন - ঘিরে রাখো গোটা বাড়িটা । যেন কেউ বাইরে বা ভেতরে যাতায়াত করতে না পারে ।

সম্পাতি বলল - যা করবেন বাড়ির সীমানার বাইরে গিয়ে করুন । এখানে দাপাদাপি করতে দেব না । বামুন মাসী !

বামুন মাসী তখন ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। কথা বলার সামর্থ্য নেই । তবু এগিয়ে এল ।

সম্পাতি বলল - উপরে গিয়ে বাবার পিস্তলটা এনে দাও । ভালো কথায় না বেরোলে ওটার উপযোগ করতে হবে তো !

পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসার শ্রীধর মাইতি । কত অপরাধীকে একলা হাতে দমন করেছেন । আজ তাঁর সামনে এক প্রগলভা অবিবাহিতা রমণীর রণ মূর্তি দেখে থমকে গেলেন । 

কোক ওভেন থানার বড় বাবু মিঃ সজল মিত্র বললেন - আপনাকে পইপই করে বলেছিলাম মিঃ মাইতি, এবার নিজের চোখে দেখলেন তো ! এ তো কেউটের বাচ্চা ! বিভূতিভূষণ কিন্তু ব্ল্যাক মাম্বা ।

মিঃ মাইতি বললেন - দেখছি তাই । ঠিক আছে স্যারকে রিপোর্ট দিচ্ছি, দেখি কি নির্দেশ দেন ।

পুলিশের দল ফিরে গেল । মিঃ মাইতির মনে হল কোক ওভেন থানা বিভূতিভূষণের পেটোয়া হয়ে আছে বোধ হয় । সেইজন্য যোগাযোগ করলেই বিভূতিভূষণকে নিয়ে ফলাও প্রচার শুরু করে দেন । সন্দেহের তালিকায় তাঁকেও রাখা হবে কি না এস পি সাহেবই ঠিক করুন । 

এদিকে বাড়িতে যে এত বড় নাটক অভিনীত হয়ে গেছে বিভূতিভূষণ বা শুভমিতা দেবী তা' টেরও পেলেন না । তার পূর্বে তাঁরা যখন রাজদীপের বাড়ির কলিং বেল বাজালেন ; রাজদীপ তখন দোকানে ।

রাজকুমার এসে দরজা খুলল। বিভূতিভূষণ ও শুভমিতা দেবীকে দেখে আশ্চর্য্য হয়ে গেল । দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সস্ত্রীক তাদের বাড়িতে এসেছেন দেখে ' আসুন আসুন ' বলে ভেতরে নিয়ে গেল । মঞ্জরী দেবী এই প্রথম প্রত্যক্ষ করলেন তাঁদের। চিনতে অসুবিধা হল না যখন শুনলেন মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান এসেছেন । 

বুঝতেও পারলেন আসার উদ্দেশ্য । নিজের অহমিকাকে ধন্যবাদ জানালেন আপন মনে । রাজশেখর লাহার ( তাঁর স্বামী ) কথাগুলো তাঁর কানে বাজতে লাগল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যদি নিজে এসে তাঁদের সামনে বিয়ের কথা বলেন , তবে আপত্তি করব না ' ।

সস্ত্রীক বিভূতিভূষণকে দেখে স্বামীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন । স্বগতোক্তি করলেন - শেষ পর্য্য্যন্ত তোমারই জয় হল ; তুমি দেখতে পাচ্ছ নিশ্চয় ! 

ঘোর কাটলে ছেলেদের বললেন - মিষ্টিমুখ করাতে হবে । নতুন অতিথি। কথা পাড়বার আগেই মিষ্টিমুখ করিয়ে দাও ।

রাজকিশোর দু'টো সুন্দর প্লেটে নানা রকম মিষ্টদ্রব্য, চা , কফি সব কিছু নিয়ে একা হাতে পরিবেশন করল ।

বিভূতিভূষণ বললেন - এ সবের কি প্রয়োজন ছিল ! আমরা তো আজ রাতটা আপনাদের বাড়িতে কাটাব বলে ঠিক করে এসেছি !

শুভমিতা দেবী বললেন - অবশ্য বলেন তো কয়েকটা দিন থেকেও যেতে পারি । তার আগে শুভ কাজটা সেরে নিই।

আপনার ছেলে রাজদীপ কোথায় ? তাকে যে দেখছি না!

উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছেন মঞ্জরী দেবী । দুই হাত জোড় করে বললেন - এই বাড়িকে নিজের বাড়িই ভেবে নিতে পারেন । দীপু এখনও দোকানেই আছে । আমি ডেকে পাঠাচ্ছি । 

বলে রাজদীপকে ফোন করে ডেকে নিলেন । শুভমিতা দেবীকে বললেন - আজ কি আনন্দের দিন ! আমার ছেলে আপনাদের জামাই হতে চলেছে....

বিভূতিভূষণ বিষম খেলেন । গলায় রাজভোগের টুকরো আটকে গেলে কাশতে কাশতে অস্ফূটে কিছু বলে উঠলেন । মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে শরীরটা এলিয়ে দিলেন সোফায় ।

শুভমিতা দেবী চেঁচিয়ে উঠলেন - মেডুলোব্লাস্টোমা । রিলাপ্স করেছে । হাসপাতাল ছাড়া কোন রাস্তা নেই । 

রাজকুমার বলল - কি হয়েছে ওনার ?

- মেডুলোব্লাস্টোমা । ব্রেণের না নিউরোনের ক্যান্সার ।

রাজকিশোর থতমত খেয়ে বলল - হাসপাতালে নিয়ে যাই ।

শুভমিতা দেবী বললেন - কলকাতা ছাড়া কোথাও এর চিকিৎসা নেই ।

রাজকুমার বলল - আপনি চিন্তা করবেন না মাসীমা । আমরা কলকাতা যাবার বন্দোবস্তই করে দিচ্ছি ।

রাজকিশোর বলল - আমি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে আসি ।

একটি বেসরকারি হাসপাতালে রাজকিশোরের বেশ নামডাক আছে । রাজকিশোর ওখানে ভালো পোস্টে কাজ করে । ফোনেই এম্বুলেন্স ঠিক করে নিজেও তৈরী হয়ে নিল ।

এম্বুলেন্সে উঠে বিভূতিভূষণ শুভমিতাকে চোখ টিপে জানাতে চাইলেন তিনি ঠিক আছেন; শুধু দুর্গাপুর থেকে পালানোর অছিলা করেছিলেন - যা কাজে এসেছে।

( চলবে )


 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance