Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

3  

Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব চুয়ান্ন

বৃত্তের বাইরে পর্ব চুয়ান্ন

5 mins
7


চুয়ান্ন পর্ব 


ফাঁকা ঘরে তিনটি প্রাণী - মহিম , বামুন বউ আর সম্পাতি ।

মহিমের উপর দায়িত্ব দেওয়া আছে সম্পাতিকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেওয়া ।

মহিম সম্পর্কে সম্পাতি কিছু কিছু অবগত আছে । বিশেষ করে হাজারীবাগ কাণ্ডে মহিম যে তাকে উদ্ধার করেছিল , সেজন্য সে শুধু কৃতজ্ঞ নয় ; চেয়েছিল ওকে কিছু ইনাম দিতে ।

এতদিন সে সুযোগ পায়নি । আজকের দিনটা ঈশ্বর যেন তারই জন্য আলোকিত করে রেখেছেন ।

মহিম একটা চেয়ার নিয়ে সদর গেটে বসে আছে । এখান থেকে সরাসরি কোন রুম বা রান্নাঘর দেখা যায় না । মহিমও ভাবল আজ এই সুযোগে যদি ভাবনা সম্পর্কে সন্দেহ মিটে যায় তো খুব ভালো হয় ।

সম্পাতিও দেখল মহিমকে হাত করে যদি দীপুর কাছে যাবার পথটা প্রশস্ত করতে পারে তার চেয়ে ভালো কিছু হয় না ।

নগদ বিশ হাজার টাকা আর একটা সোনার চেন হাতে নিয়ে সম্পাতি নীচে নেমে এল ।

মহিম সদর গেটে নেই । তাহলে সে গেল কোথায় ! বামুন বউকে দেখতে রান্নাঘরে যেতেই এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেল ।

মহিম এবং ভাবনা পরস্পর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে । ইতিমধ্যে কি কথা হয়েছে, কতক্ষণ ধরে এ সব চলছে সে জানে না। 

শুধু শুনতে পেল মহিমের গলা - আমায় ক্ষমা কথে দাও প্লীজ ! এখন জানতে যখন পেরেছি , তোমাকে আর কোথাও ফেলে চলে যাব না । প্রমিস ।

বামুন বউ শুধু কাঁদছে আর কাঁদছে । যেন সে কথা হারিয়ে ফেলেছে । সম্পাতি গলা খাঁকারি দিল । নিমেষে দুজন আলাদা হয়ে গেল ।

সম্পাতিকে হঠাৎ রান্নাঘরে দেখে দু'জনেই অবাক হয়ে গেল । বামুন বউ জানে দরকার না পড়লে সে কখনও এদিকে আসে না । তবু তাকে কিছু বলতে পারল না । লজ্জায় মাথা নীচু কথে দাঁড়িয়ে রইল ।

সম্পাতি মহিমকে উদ্দেশ্য করে বলল - কাকু তুমিও এমনই লোক ! 

মহিম এসে সম্পাতিকে বিনীত অনুরোধ করল এই ব্যাপারে যেন সে স্যার বা যা'মকে কিছু না বলে । বলে দিলে দু'জনেরই চাকরি চলে যাবে । তখন না খেতে পেয়ে মরতে হবে ।

সম্পাতি একটু মজা করে বলল - সবই তো বুঝলাম। তোমাদের এই লীলা যদি প্রচার না করি তবে তো বামুন মাসীর সর্বনাশ হয়ে যাবে ।

বামুন বউও একই অনুরোধ করল ।

সম্পাতি বলল - কবে থেকে চলছে এ সব ? বলি বামুন মাসী ! তুমি তো উইডো আই মিন বিধবা !

বামুন বউ সম্পাতির মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল - অমন বল না গো ! উনি আমার স্বামী !

হা হা করে হেসে উঠল সম্পাতি ।

- স্বামী ! তা এতদিন বিধবার বেশে ছিলে কেন ? আর মহিম কাকু ! বলিহারি যাই তোমাকেও । সুযোগ পেলে কেউ ছাড়ে না , বল !

মহিম তখন সব সত্যি কথা বলে দিল । ' দরকার হলে যে বিধবা বৃদ্ধার কাছে ভাবনাকে রেখে গেছলাম , চল তাকে জিজ্ঞেস করে নেবে ' !

সম্পাতি বলল - ভাবনা ? বামুন মাসী ? এটা কি তোমার নাম না মহিম কাকার দেওয়া প্রেমিকার নাম ?

বামুন বউ লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে বলল - হেই মামণি ! আর অপমান কর না গো ! বিশ্বাস কর, উনি আমার বর । বৌদিমণি দাদাবাবুও জানেন ।

- তাই যদি হয় , এতদিন কি করছিলে? আজই হঠাৎ এ ভাবে .....

মহিম বলল - মামণি ! এতদিন সন্দেহ করছিলাম , ঘোমটা ঢাকা মেয়েটি কে ! আজ তা ফাঁকা পেয়ে নিশ্চিত হয় গেলাম । তুমি দেখো স্যার এলে তোমার সামনেই কথা পাড়ব ।

সম্পাতি বুঝতে পারল দুজনই অকারণে মিথ্যে বলবে না । বলল - ঠিক আছে, আমি কাউকে কিছু বলব না , কিন্তু কাকু , তোমাকে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে ।

- কি কাজ, মামণি ?

- দু'তিন ঘন্টার জন্য আমাকে বাইরে যেতে দিতে হবে ।

মহিম বলল - বুঝেছি, তুমি রাজদীপের কাছে যাবে - এই তো ?

সম্পাতি বলল - ঠিক ধরেছ । কি রাজী ?

মহিম বলল - সরি । তোমাকে আমি বেরোতে দিতে পারব না । স্যারকে কি জবাব দেব ?

- কিছুই না ! স্যার আসার অনেক আগেই আমি ফিরে আসব ।

মহিম বলল - তার কি নিশ্চয়তা আছে মা মণি ? আমি জানি তুমি তিনঘন্টার মধ্যে ফিরতে পারবে না ।

সম্পাতি টাকা ও গয়না দেখিয়ে বলল - তবে এগুলো আমারই থাক । 

বামুন বউ বলল - সামান্য কাজের জন্য তুমি এত খরচ করবে মামণি ! জানি তোমাদের অঢেল আছে, তা' বলে নয়ছয় করে দিওনি !

মহিম বলল - সরি । স্যার যা দেন সেটাই আমার কাছে বিশাল । তোমার এ সব নিয়ে আমি বিশ্বাস ভাঙতে পারব না ।

সম্পাতি বলল - আমি কাউকে কিছু বলব না ।

- না, তোমার জিনিস নিতে পারব না । বিশ্বাসঘাত করা উচিৎ নয় । আমি স্যারের নুন খাই যে !

- তবে এটা তো করতে পার ! স্যার তোমাকে বলেছে আমি যেন বাড়ির বাইরে পা না রাখি । তাই তো ?

মহিম বলল - হ্যাঁ।

- ঠিক আছে আমি বইরে যাব না , কিন্তু স্যার তো এটা বলেনি যে বাইরের কেউ যেন বাড়িতে না আসে ?

মহিম চুপ করে রইল । বুঝতে পারল কথার প্যচে পড়ে গেছে । বোকার মত সম্পাতির মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে রইল। 

সম্পাতি বলল - রাজদীপ আসছে, তোমরা ওকে কিছু বলবে না । গেট খুলে দিবে । এটা আমার হুকুম । অবশ্য টাকাটা এনেছি নিয়ে নাও । আর চেনটা বামুন মাসীকে দিলাম ।

ওরা রাজদীপের আসাতে আপত্তি করল না কিন্তু টাকা বা গয়না নিতে অস্বীকার করল ।

বলল - এভাবে নেওয়া ঠিক হবে না । তুমি উপরে যাও , আমি গেট খুলে দেব ।

সম্পাতি রাজদীপকে ডেকে পাঠাল ।

কথামত মহিম বা ভাবনা কেউ আপত্তি করল না । বরং ভেবে দেখল আরও তিন ঘন্টা ওরা নিজেদের নিয়ে কথা বলতে পারবে ।

গোপালপুরের বাড়িতে তখন কান্নাকাটি শুরু হয়েছে । কালীকিঙ্কর ফোনে করালীকে জানিয়ে দিল দুর্ঘটনার খবর 

 করালী তৎক্ষণাৎ গাড়ি করে কলকাতা থেকে রওনা দিল । বিভূতিভূষণ কালীকিঙ্কর এবং শুভমিতা দেবী হৈমন্তী দেবীকে সামলাতে লাগলেন ।

ক্ষণপ্রভা দেবীকে খবর দেওয়া হয়নি । বিভূতিভূষণ বললেন - বেয়াইমশাই ! কাকিমাকেও জানিয়ে দেওয়া উচিৎ বলেই মনে করি । না হলে পরে বলবেন তোমরা আমাকে শেষ দেখাও দেখতে দিলে না ।

কালীকিঙ্কর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে রইলেন । বিভূতিভূষণ নিজে গিয়ে ক্ষণপ্রভা দেবীকে খবর দিয়ে দিলেন । শুভমিতা দেবী বললেন - চলুন সবাই মিলে হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসি ।

এ' ব্যাপারে বিভূতিভূষণের ইচ্ছে বড় প্রবল । তিনিও বললেন - আর দেরী করলে মহা মুস্কিল হয়ে যাবে বেয়াইমশাই ! আমাদের গাড়িতেই চলুন সবাই দেখি গে' ।

ক্ষণপ্রভা দেবী পাষাণ হয়ে গেছেন । তাঁকে কোনমতে পাঁজাকোলা করে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হল । কয়েক মিনিটের ভেতর ওঁরা হাসপাতালে পৌঁছে গেলেন ।

পারমিশন করিয়ে ওঁরা যখন চার তলায় কেবিনে গেলেন , সকলে এক যোগে দেখলেন কামদাকিঙ্কর শয্যায় শুয়ে আছেন । মাথায় ব্যাণ্ডেজ। পায়ে কিছু নেই ।

ডাক্তার বাবু এসে বললেন - মাইনর ইঞ্জিয়্যুরী । দু'একদিনের মধ্যে ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে ।

সকলে যেন স্বস্তি পেলেন । বিভূতিভূষণ ও শুভমিতা দেবীও স্বস্তির নাটক করে গেলেন ।

কামদাকিঙ্কর বললেন - সুবলের কোন দোষ ছিল না । উল্টোদিকের গাড়িটা মনে হল ইচ্ছে করেই ধাক্কা দিয়েছিল।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance