বৃষ্টির কাব্য (পর্ব-৫)
বৃষ্টির কাব্য (পর্ব-৫)
৫.
ঘরে রেনু বেগম ছাড়া কেউ নেই। সামিরা তার বান্ধবীর বাসায়। সাজ্জাদ, হাসান, ইনু সাহেব দল বেঁধে কোথায় জানি গিয়েছেন। মোবারক সাহেব তার বসের জানাজায়।
রেনু বেগম বসার ঘরে টেলিভিশন দেখছেন। রান্না রেসিপির শো দেখাচ্ছে। নতুন নতুন রেসিপি শিখতে তার খুব ভালো লাগে। তিনি কয়েকবার টেলিভিশন থেকে শেখা রেসিপি দিয়ে রান্না করেছেন তবে কেউ প্রশংসা করেননি। সব ঠিকঠাক ছিল। লবণ মশলা সব ঠিকভাবেই দেয়া হয়েছিল। তারপরও কেউ প্রশংসা করেনি। ভালো রান্নার প্রশংসা না করলে রান্না করার আর ইচ্ছা থাকে না।
কলিং বেল বাজছে। রেনু বেগম টেলিভিশন খোলা রেখেই দরজা খুলতে গেলেন।
দরজার ওপাশে সাজ্জাদ, হাসান, ইনু সাহেব আর একটা অপরিচিত একটা মেয়ে। মেয়েটার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। চেহারা মায়ায় ভরা। তাকে দেখলেই গাল ধরে আদর করতে ইচ্ছা করে।
সাজ্জাদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। ইনু সাহেব মেয়েটার দিকে ইশারা করে হেসে বললেন," রেনু ওর দিকে কী তাকিয়ে আছিস? ভেতরে ঢুকতে তো দে!"
রেনু বেগম সরে গেলেন। তারা সবাই ভতরে ঢুকল।
ইনু সাহেব রেনু বেগমকে তার পাশে বসিয়ে হেসে বললেন, " মেয়েটাকে কেমন লেগেছে তোর?"
রেনু বেগম কিছু বললেন না। শুধু একটু মুচকি হাসলেন।
ইনু সাহেবের মুখে এখনো হাসি রেখে তিনি বললেন, " তুই ওকে তোর কাছেই রেখে দে। আজকে থেকে তোর মেয়ে ও।"
রেনু বেগমের মুখে এখন আর হাসি নেই। তিনি কিছু বুঝছেন না ইনু সাহেব কী বলছেন। শুষ্ক গলায় তিনি বললেন, " ভাইজান কিছু বুঝলাম না। "
" সব বুঝিয়ে বলছি। তুই মাথা ঠান্ডা রেখে বোঝার চেষ্টা কর। "
রেনু বেগম চুপ করে রইলেন।
" দেখ সাজ্জাদ মেয়েটাকে পছন্দ করে। তাই সে মেয়েটাকে বিয়ে করে এনেছে। তোদেরকে বলার সাহস পায় নি। কারণ তোরা সামিরাকে ওর সাথে বিয়ে দিবি বলে ঠিক করেছিলি।"
রেনু বেগম শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না করা শুরু করলেন। সেই কান্না যেন থামবার নয়।
ইনু সাহেব বোনের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, " আহা কান্না করিস না। দেখ জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সব আল্লাহ এর হাতে। আল্লাহ যার জন্য যাকে ঠিক করে রেখেছে তার সাথেই বিয়ে হবে। তুই চিন্তা করিস না। মেয়েটা অনেক ভালো। তোর সেবা করবে।"
মেয়েটির তাকিয়ে ইনু সাহেব বললেন, " কী মা করবে না সেবা?"
মেয়েটি হ্যা-সূচক মাথা নাড়ল।
ইনু সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, " ওমা তোকে তো মেয়েটির নামই বলিনি। ওর নাম হল ঐশী। "
নাম বলার পর ইনু সাহেব ঐশীকে ইশারা করলেন রেনু বেগমকে সালাম করার জন্য।
ঐশী সাথে সাথেই রেনু বেগমের পা ধরে সালাম করল। রেনু বেগমের কোনো ভাবান্তর হল না। তিনি এখনো কেঁদেই যাচ্ছেন।
সাজ্জাদ মাথা নিচু করে বসেই আছে। তার মাথা তুলে তাকনোর সাহস হচ্ছে না।
হাসান শুধু রেনু বেগমের কান্না দেখছে। সুর করে কান্না করছেন তিনি।
ইনু সাহেব রেনু বেগমকে শান্তনা দিচ্ছেন। আর মাঝেমধ্যে ঐশীর পরিচয় দিচ্ছেন।
" ঐশী মেয়েটা অনেক ভালো। তোর সাথে ভালো মত আড্ডা দিতে পারবে। "
ইনু সাহেব সাজ্জাদকে বললেন, " ঐশী কে ভেতরে নিয়ে যা। পুরো বাসাটা ঘুরিয়ে দেখা। "
সাজ্জাদ মাথা নিচু করেই উঠল। তার সাথে ঐশীও উঠে গেল। তারা দুজনে ভেতরেরর দিকে চলে গেল।
ইনু সাহেব গলার আওয়াজ নামিয়ে রেনু বেগমকে বললেন, " দেখ তুই কাঁদিস না। মেয়েটা আসলেই ভালো। আমার মন বলছে তোকে খুব সম্মান করবে। "
কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে তিনি বললেন, " মেয়েটার বাবা মা নেই। বাবা মারা যায় তার ১৪ বছর বয়সে আর মা মারা যায় তার ১৮ বছর বয়সে। একটা ভাই ছাড়া ওর আর কেউ নেই। ওর ভাই ও বিয়ের ব্যাপারটা জানে। এখানে আসতে চায়নি।"
রেনু বেগম কাঁদতে কাঁদতেই নিজ রুমে চলে গেলেন।
ইনু সাহেব হাসানের দিকে তাকিয়ে বললেন, " ঝামেলা শেষ। এখন ঘুমোতে পারব। "
তিনি আরাম করে সোফায় শুয়ে পড়লেন।
৬.
" ভাই সাহেব সাজ্জাদের আর কিছু করার ছিল না। "
ইনু সাহেব শান্ত গলায় কথাটা বললেন।
বেশ রাগী গলায় মোবারক সাহেব বললেন, " কেন কিছু করার ছিল না? আমাদেরকে কিছু বলেনি কেন?"
" দেখুন তার বিয়ে করাটা খুব জরুরী ছিল। সে বিয়ে না করলে আপনাদের সম্মানহানি হত। তাই সে আপনাদেরকে বিয়ের কথা বলার ঝুঁকি নেয়নি - যদি আপনি মানা করে দিতেন।"
" কী বলছেন এসব। কিসের অপমান? কিছু তো বুঝছি না। বুঝিয়ে বলুন।"
ইনু সাহেব চুপ করে আছেন। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে মোবারক সাহেব রেগে গিয়ে বললেন, " প্লিজ বলুন। "
" ঐশী অন্তঃসত্ত্বা। "
মোবারক সাহেবের মুখটা কেমন জানি ফ্যাঁকাশে হয়ে গিয়েছে। খাটে বসে মোবারক সাহেব একটা সিগারেট ধরালেন। মনের সুখেই খাচ্ছেন। মোবারক সাহেব সিগারেটের ধোয়ার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইলেন। তার কথা বলতে আর ইচ্ছা করছে না। সব কেমন জানি এলো মেলো লাগছে তার।
