Susmita Sau

Romance

2  

Susmita Sau

Romance

বৃষ্টি ভেজা শ্রাবণ

বৃষ্টি ভেজা শ্রাবণ

3 mins
1.2K


জারুল গাছের পাশটায় এসে দাঁড়ালে তমালিকা। সূর্য পিছনের আকাশটাকে কমলা করে অস্তাচলে যাচ্ছে। সেদিকে কিছুক্ষণ উদাসীন হয়ে তাকিয়ে রইল সে। ধ্রুব চলে যাওয়ার মুহূর্ত থেকে নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে তার। এই অবস্থায় সে কোথায় যাবে? কার কাছে মুখ দেখাবে? বাড়ির অমতে গিয়ে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল সে। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল রেললাইনের কাছে। দূর থেকে শোনা যাচ্ছে ট্রেনের আওয়াজ। নাহ আজ আর তমালিকার কোন পিছুটান নেই। শুধু পেটে হাত দিয়ে নবাগতকে একবার ছুঁয়ে দেখল সে, তারপর লাইনের ওপর উঠে দাঁড়াল। দূর থেকে কি সে শুনতে পেলে কারও মা ডাক? নাকি ওটা মৃত্যুর পদধ্বনি।

ঠিক সেই মুহূর্তে পিছন থেকে একটা টান অনুভব করল, আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরতে দেখল সে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাদা ধবধবে বিছানায়, সামনে গম্ভীর মুখে এক ডাক্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফাদারকে বললেন "বিপদ কেটে গেছে ফাদার, আপনার গড তাঁর সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তবে পেশেন্ট খুব দুর্বল, মানসিক ও শারীরিক দু-দিক থেকেই, যত্ন দরকার। "

সেই সৌম্য দর্শন ফাদার ডাক্তার কে জড়িয়ে ধরে বললেন, "আমি আবার কৃতজ্ঞ তোমার কাছে, ডাক্তার। তুমি আমার সন্তানদের এভাবেই সুস্থ রেখে দিও। "

"এটা আমার ডিউটি ফাদার। " এই বলে ঘরে উপস্থিত নার্সকে ডিউটি বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন তিনি।

এতক্ষণ তমালিকা শুয়ে শুয়ে সব দেখছিল, এবার উঠে বসার চেষ্টা করল। নার্সটি দৌড়ে এসে বাঁধা দিল। তারপর ফাদার বললেন, "এই জীবনটা ওনার দয়ায় পেয়েছ মাই সন্ , এটা নষ্ট করার অধিকার তোমার নেই। আর তুমি তো তোমার সাথে আর একটা জীবন ও শেষ করতে যাচ্ছিলে, সে অধিকার তোমায় কে দিয়েছে? তুমি তো কলকাতায় থাকো? এখানে কি ভাবে? "

এবার তমালিকা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল ফাদারকে, অনেক জিজ্ঞাসার দৃষ্টি নিয়ে। ফাদার বললেন, "ভাবছো আমি কি করে জানলাম? তোমায় একজনকে দেখাচ্ছি যে তোমায় আজ পূনরায় জীবন দান করল। " বলে তিনি একটু উঁচু গলায় কাকে যেন ঘরে আসার নির্দেশ দিলেন। ঘরের পর্দা সরিয়ে যে ঘরে প্রবেশ করল, তাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তমালিকা।

ও তো শ্রাবণ, তমালিকার মেদিনীপুরের মামার বাড়ির কাছে এক আশ্রমে থাকত। ছোটবেলা য় ও যখন দাদুর বাড়ি যেত, তখন শ্রাবণের সাথে বন্ধু হয়ে ছিল। তমালিকা শ্রাবণকে পছন্দ করত, কিন্তু বন্ধু হিসেবে। কিন্তু এই শ্রাবণ একদিন ভালবাসার প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়ে ছিল তমালিকার কাছে, তমালিকা তখন ধ্রুবর প্রেমে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। শ্রাবণের না ছিল ঘর বাড়ি, না ছিল কোন বংশ পরিচয়। তমালিকা সেদিন পারেনি, কোন জারজ সন্তানকে নিজের করে ভালবাসতে, পারেনি সমাজের ঊর্ধ্বে গিয়ে শ্রাবণকে ভালবাসার স্বীকৃতি দিতে।

শ্রাবণ তমালিকার সুখ নষ্ট করেনি, সে বাঁকুড়া র এই প্রত্যন্ত গ্রামে চলে এসেছিল। এই আশ্রমকে নিজের মতো করে ভালবেসে ছিল। তারপর আজ অনেক বছর পর তমালিকাকে এখানে এভাবে দেখতে পেল।

তমালিকা তাকে জানাল তারা একবছর হল বিয়ে করেছে, ধ্রুব বিয়ের তিন মাসের মাথায় কেমন বদলে গিয়েছিল। তার ও তিন মাস পরই তমালিকা বুঝতে পারে তার ভিতরে আর একটা প্রানের অস্তিত্ব। তারপর ধ্রুব কিছু না বলে কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। সেই থেকে তমালিকা ধ্রুবকে খুঁজে যাচ্ছে। সে শুনেছিল ধ্রুবর পৈতৃক বাড়ি নাকি বাঁকুড়ায়, তমালিকা কোথাও থেকে ঠিকানা যোগার করে এসেছিল, কিন্তু এখানে এসে সে দেখল সব মিথ্যে। আর তাই সে অসহায় হয়ে ও কাজ করতে গিয়েছিল। কারন তার কোথাও যাবার জায়গা ছিল না।

শ্রাবণ বিছানার কাছে এসে বলল, "পাগলী, জানিস না তোর জীবনটা প্রভুর দান, সেটা কেড়ে নেওয়ার অধিকার তোর নেই। আর তোর সৃষ্টিটা? সে কি দোষ করল যে তাকেও মেরে ফেলছিলিস? তুই ভীষণ বোকা তমালিকা। আমি না হয় তোর ভালবাসা পেলাম না, তা বলে কি বন্ধু হয়েও থাকতে নেই? দিবি তোকে একটু ভালবাসার সুযোগ? "

তমালিকা ঝাঁপিয়ে পড়ল শ্রাবণের বুকে, কান্নায় ভেঙে পড়ল, বলল, "তুই আমায় ক্ষমা করে দে শ্রাবণ, আমি মিথ্যে ভালবাসার পিছনে ছুটেছি সারা জীবন, তোর ওপর অবিচার করেছি। "

"পাগলী আমি আর একটা শ্রাবণ সৃষ্টি হতে দেব না। তোর সন্তানের বায়োলজিক্যাল বাবা হতে পারলামনা, কিন্তু দেখিস আমার সন্তান তোর থেকেও আমায় বেশি ভালবাসবে। "

তমালিকাকে বুকের গভীরে টেনে নিয়ে কথা কটা বলল শ্রাবণ।

তমালিকা নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে, গভীর ভালবাসায়, শ্রাবণের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance