STORYMIRROR

pallab kumar dey

Drama Action

4  

pallab kumar dey

Drama Action

ব্রহ্মপুত্র যায় বয়ে-44-ইন্টারভিউ

ব্রহ্মপুত্র যায় বয়ে-44-ইন্টারভিউ

6 mins
4


 এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম লিখিয়েছিলাম আমি অনেক কষ্টে ও দৌড়াঝাঁপের শেষে। তবুও কি সেটা হয়েছিল পিতৃদেবের সুপারিশে। অ্যাডভোকেট পিতৃদেবের নাম ভাঙিয়ে অনেক সুযোগ-সুবিধে অনায়াসে পেয়ে যাই অনেক সময়। নইলে এদেশে আমাদের মতো উদ্বাস্তু এই বঙাল সম্প্রদায়ের অযথা হয়রানির অন্ত থাকে না। যে কোনও সরকারি কাজেই প্রচুর পয়সা ঢালতে হয়। 

  কিছুদিনের মধ্যেই আমার নামে একটা ইন্টারভিউয়ের চিঠি এল এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে। জিয়াজুড়ি টি এস্টেটে কেরানি গিরির চাকরি। সালনা চা বাগানের মতো জিয়াজুড়ি চা বাগানেরও বড়ো নামডাক আছে অসমে। জিয়াজুড়ি খুব একটা দূরে নয়। এই জেলার মধ্যেই মিকিরগাঁওয়ের ওদিকে চাপানলা থেকে দক্ষিণে গেলে পরেই জিয়াজুড়ি চা বাগান। কাছেই হাতিখুলি নামের এক গাঁয়ে আমাদের কিছু আত্মীয়ও থাকেন।

 মা’র একেবারেই ইচ্ছে নেই ওই ইন্টারভিউ দিতে যাই আমি। তাচ্ছিল্যে বলে বসলেন, হাতিখুলির কোন জঙ্গলের ভিতরে চা বাগানের চাকরি, যাইতে লাগব না তর। পড়াশুনা করস না মন দিয়া, খালি ভাস্বতীর পিছনে দৌড়াস, অহন ভূত চাপছে চাকরি করনের? না না যাইতে লাগব না।

 বাবা বললেন, আরে যাইতে চাইতাছে যাওক। অভিজ্ঞতা কইরা আসুক কিছু।

  আমার এক মেসতুতো দিদি আর তার জ্ঞাতীরা থাকেন হাতিখুলি নামের সেই গাঁয়ে। ওই সুবিধে আছে বলেই যাওয়া। ওই দিদির এক দেওর ভাড়া থাকেন এই শহরের ইটাচালি নামের এক জায়গায়। আমাদের বড়দির ভাড়া বাড়ির পাশেই। বড়দিরা কিছুদিন হয় আগের বাড়ি ছেড়ে নতুন ভাড়া নিয়েছে ভট্টাচার্যদের বাড়িতে।

 মেসতুতো দিদির দেওর মিলনদার সঙ্গে আলাপ হল আমার। তিনিও হাতিখুলি যাবেন দুএকদিনের মধ্যে। এর আগে আমি ওদিকে কখনও যায়নি। সঙ্গী পেয়ে আরও সুবিধে হয়ে গেল আমার।

 অগস্ট মাস, তবুও যেন সেরকম বৃষ্টির দেখা নেই এবার অসমে। বাস ধরলাম আমরা নগাঁও সিভিল হাসপাতালের সামনে থেকে। রাস্তা খুব একটা খারাপ নয়। নইলে অন্যান্য বছর এই সময়ে রাস্তাঘাটের হাল যা হয়ে যায়, ধানের রোয়াখেতকেও হার মানায়।

 কিছুটা যেতে হয় বনের ভেতর দিয়ে। অনেকটা ভেতরে হাতিখুলি। পৌঁছে গেলাম আমরা দুপুরের দিকে। উদ্বাস্তু বাঙালিরা কোথায় না এসে বসত গড়েছে। জনজাতিদের মধ্যে নিজেদের বুদ্ধি আর কৌশলে বিস্তার করছে প্রভাব। স্থানীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি এই উদ্বাস্তুরা মিলেমিশে যায় ততই মঙ্গল। নইলে এই বসত আবারও তাদের ছাড়তে হবে।

 বসতির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পাহাড়ি ঝোরা। বিদ্যুতের আলো এখনও এসে পৌঁছোয়নি এসব প্রত্যন্ত পাহাড়ি গাঁয়ে। রাত নামলেই যেন প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার। কেরোসিনের বাতিই ভরসা। আর ছোট-বড়ো সবার হাতেই হামেশা টর্চ থাকে একটা করে। সবথেকে বড়ো ভয় সাপের। প্রতিবছর কিছু না কিছু লোক মারা যায় সাপের কামড়ে। 

 পরদিন সাইকেলে পাহাড়ি জঙ্গল ডিঙিয়ে মিলনদা আমাকে নিয়ে গেলেন জিয়াজুড়ি চা বাগানে। সাত-আট কিলোমিটার তো হবেই। সুন্দর নয়নাভিরাম সবুজ বন-গুল্ম ঘেরা চা বাগান। ফ্যাক্টরি, অফিসঘর, বাবুদের কোয়ার্টার আর আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন যেন ইউরোপের কান্ট্রিসাইডের কোনও বসতি।

 বাগানের বড়োবাবুর সঙ্গে হল পরিচয়। আমার ছোটখাটো চেহারা ছবি দেখে বোধহয় পছন্দ হল না আমাকে ওনার। মুখ বাঁকিয়ে বললেন, বয়খ তু ইমান হোয়া নাই। জঙ্গলর ভিতরত আহিছা চাকরি খুঁজিবলই?...বয়স তো বেশি হয়নি। জঙ্গলের ভেতরে চলে এসেছ চাকরি খুঁজতে?

 মিলনদা খুব চটপটে যুবক। বলল, চাকরি কার না লাগে কওক? পালে বেয়াটু কি?...চাকরি কার না দরকার বলেন? পেলে খারাপটা কি?

 কোনও পরীক্ষাটরীক্ষা নয়। যে যখন আসবে ম্যানেজারের ঘরে ইন্টারভিউ। পাঠিয়ে দিলেন তিনি আমাকে ম্যানেজারের ঘরে।

 ঢুকে আমি হতবাক। হাফপ্যান্ট পরা যেন ইংরেজ সাহেব বসে আছেন চেয়ারে। ইনি সত্যি সত্যিই সাহেব নাকি কোনও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বুঝতে পারলাম না আমি। তবে ভাষা ইংরেজদের মতোই। এমন ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন আমাকে, বুঝতেই সময় চলে গেল কিছুটা, যদিও বা পরে বুঝলাম তাও আধা আধা। উত্তরও তাই কখনও হাঁ কখনও না।

 ম্যানেজারের ব্যবহার অমায়িক। ইংরেজিতে আরও যা বললেন তার মানে এই, মন খারাপ করো না। অল্প বয়স, আগে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করো, তারপর চাকরি। এক্সচেঞ্জ তোমাদের নাম কেন যে পাঠাল?

 চোস্ত ইংরেজি জানা গ্র্যাজুয়েট ছেলে চাই তাদের। ওনার আক্ষেপ ভালো ইংরেজি জানা ছেলের বড়ো অভাব আছে এই অসমে।

 চা খাওয়ালেন আমাকে আর মিলনকে তার চাবাগানের। ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম আমি। চাকরি হল না বলে মনে আমার একটুও আক্ষেপ হচ্ছিল না। কেননা এরকম এক সাহেবের বাগানে চাকরি পেতে গেলে যে যোগ্যতার প্রয়োজন তার কোনওকিছুই নেই আমার মধ্যে।

 দুপুরে নগাঁও ফিরে যাওয়ার কোনও বাস নেই। অগত্যা হাতিখুলিতে আবারও একটা রাত কাটাতে হবে আমাকে। 

 গরমের দুপুর। খেয়েদেয়ে আমি আর মিলনদা কাঁচা রাস্তার পাশে মস্ত এক নিম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। হঠৎ হইহই রইরই চিৎকার আর মার মার আওয়াজ। ঘরপোড়া গোরু আমরা, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরাই। মনে হচ্ছিল যেন ভেসে আসছে হঠাৎ শুরু হয়ে যাওয়া কোনও রক্তাক্ত জাতিদাঙ্গার মরণ আর্তনাদের আওয়াজ! কিন্তু এই মার মার চিৎকারটা একটু অন্য ধরণের। আওয়াজটা কাছেই কোনও একটা বাড়ির ভেতর থেকে আসছে।

 আশপাশ থেকে সেই বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছিল সবাই। আমি আর মিলনদাও দৌড়ে গেলাম।

 বাড়ির ভেতরে মস্ত এক উঠোন। সেই উঠোনের ওপরে ভয়ংকর এক সাপ ফণা তুলে দাঁড়িয়ে। আর তার সঙ্গে চলছে বাঁশ আর লাঠি হাতে একদল মানুষের মরণপণ লড়াই। তাকে কাবু করতে পারছে না এতগুলো মানুষ মিলেও। ফণা তুলে পাঁচ-ছয় ফুট ওপরে উঠে পড়ছে। শেষে জিত হল মানুষের। মেরে চিড়ে চিঁড়ে চ্যাপটা বানিয়ে ফেলল বিশাল কালো কুচকুচে সাপটাকে।

 মিলনদা আঁতকে উঠে বললেন, বাপরে এ তো কিং কোবরা!

 ওই বাড়ির এক যুবক ছেলে পেছনের ঝোপঝাড় জঙ্গল দেখিয়ে বলল, যেরকম করে বেরিয়ে এসেছে জঙ্গল থেকে সামনে যাকে পেত, জায়গায় শেষ!

 ‘হিস হিস শব্দ আমি একটা পাইতাছিলাম! জগনরে আমি কইলাম, ওই যে আইছে বোধহয়, বিশ্বাস করল না। এত বছরের কান আমার, কোনটা রাজা গোখরা আর কোনটা জঙ্গইলা সেটা বুঝি না?’ বললেন লাঠি হাতে বারান্দায় বসা অশীতিপর এক বৃদ্ধা।

 সাপ-মানুষের লড়াইয়ের এরকম বিরল দৃশ্য জীবনে আমি কোনওদিন দেখেনি। শৈশবে ময়মনসিংহ শহরে জুবলিঘাটে দেখেছিলাম একবার, সাপে কাটা তিন মড়া মানুষের চারপাশে মাথায় ফেট্টি বাঁধা ওঝাদের পাগলা নাচন। ফুলে ঢাঁই তিন মৃত শরীর। তবুও বাঁচিয়ে তোলার আশায় আপনজনরা তাকিয়ে ওঝার ভণ্ড কীর্তির দিকে।

 সাপে মানুষের এমন ভয়ংকর মরণপণ মুখোমুখি লড়াই আমার চোখের সামনে আজ এই প্রথম।

 দুপুর গড়িয়ে নামল রাত। যেন আবারও এক বিভীষিকা! সরু কাঁচা মেঠো রাস্তার দুধারে টিন বাঁশের তৈরি ছোট ছোট আস্তানা। শৌচালয় যাদের আছে, সেগুলো সব জঙ্গলের দিকে নীরব নিরিবিলি জায়গায়। বাঁশ তক্তা দিয়ে বানানো বিদঘুটে ব্যবস্থা। সামনে ঝুলানো চটের পরদা।

 যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই যেন রাত হয়। এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে হঠাৎ আমার পেয়ে গেল প্রকৃতিগত নিন্মচাপ। চাপ সমাধা করতে সেখানে যেতে হবে আমাকে কুপি নিয়ে। আমার সাধ্য নেই জঙ্গল ডিঙিয়ে সেখানে যাওয়ার। আজ দুপুরে সর্প-মনুষ্যের মল্লযুদ্ধের দৃশ্য যা দেখেছি মনে পড়লে এখনও গা শিউরে ওঠে। এখন এই রাতে সেই জঙ্গল ডিঙিয়ে ওরকম এক শৌচাগারে যেতে হলে মরেই যাব আমি ভয়ে। নিম্নচাপের কথাটা বলতেই হল মিলনদাকে। আর ওই ঘোর জঙ্গল ডিঙিয়ে যে আমার যাওয়া সম্ভব নয়ে সেটাও জানালাম। 

 মিলনদা হেসে বললেন, ও এই কথা? তার জন্যে এত চিন্তা তোমার? চলো।

 টর্চ হাতে মিলনদা আমাকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন রাস্তায়। দুইশো মিটার খানেক দক্ষিণে এগোলেই একটা ঝোরা। আমাকে নিয়ে এলেন ঝোরার কাছে। ঝোরার পাড়ে ঢালুর মতো একটা সমতল জায়গা দেখিয়ে বললেন, এখানেই বসে পড়ো। এখানে ঝোপঝাড় জঙ্গল কিচ্ছু নেই।

 অদূরেই স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পবিত্র জল। আধারে মায়াবী ছায়া গায়ে মেখে কুলকুল রবে বয়ে চলেছে। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল না তার কোলে বসে এরকম একটা অপকর্ম করতে। চলে গেলাম আমি পাশেই একটা ছোট ঢিবির ওপরে। আরামে সেখানে চাপ সেরে এসে এক হাতে পরনের ট্রাউজারটাকে ধরে নামলাম ঝোরায়। সপাৎ সপাৎ করে পেছনটা ধুয়ে ট্রাউজার কোমরে তুলে মিলনের সঙ্গে ফিরলাম তাদের আস্তানায়।

 মিনিট দশ পরে আমার সামনের গোপনাঙ্গে কেমন যেন চুলকোনির মতো মনে হচ্ছিল! ট্রাউজারের ভেতর হাত ঢুকাতেই জায়গাটা কিরকম যেন নরম তুলতুলে ফোলা ফোলা মতো লাগল। হাত বের করে নিয়ে আসতেই দেখি আঙুলে তাজা টকটকে লাল রক্ত। সঙ্গে সঙ্গে আমি আর্তনাদ করে উঠলাম, মিলনদা রক্ত!

 ব্যাপারটা যে কি বুঝে গেলেন মিলনদা। হাসতে হাসতে আমাকে বললেন, আরে ভয় নেই...ভয় নেই। প্যান্ট খোলো।

 ‘মানে?’ আমি হতভম্ব।

 ‘খোলো প্যান্ট! তাড়াতাড়ি!’

 সবাই সামনে দাঁড়িয়ে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আমি খুলে ফেলল ট্রাউজার।

 ‘জাঙিয়াও খুলতে হবে, লজ্জা পেলে চলবে না। খোলো! দেরি করো না!’ হুকুম দিলেন মিলনদা।

 বলতে বলতেই মিলনদা নিজেই টেনে নামিয়ে দিলেন ট্রাউজার আর জাঙিয়াও। হাতে থুক থুক করে নিলেন নিজের মুখ থেকে একগাদা থুতু। তারপর আস্তে করে কেচে নেওয়ার মতো ক্ষুদ্র কদাকার ক্রিমির মতো জীবটাকে আমার অণ্ডকোষ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আছাড় দিয়ে ফেললেন মাটির ওপরে।

 হাসতে হাসতে বললেন, ঝোরার জলে পাছা ধোয়ার সময় ধরে নিয়েছে, মোষাজোঁক!

 মাধবী নামের একটি সুন্দর ফুটফুটে কিশোরী মেয়ে নুন নিয়ে এসে ঢেলে দিল ওটার ওপরে। ছটফট করতে করতে কাদাকার জীবটা মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রক্তে লাল হয়ে গেল মাটির ওই জায়গাটা।

 মাধবীকে দূর্বাঘাস নিয়ে আসতে বললেন মিলনদা। দৌড়ে গিয়ে মাধবী নিয়ে এল লম্বা লম্বা সবল গুচ্ছ দূর্বা। থেতো করে সেগুলোকে লাগিয়ে দিলেন মিলনদা আমার রক্ত ক্ষরণের জায়গায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেল। রাতে আর কোনও অসুবিধেয় হল না আমভিউ

  

  next episode- দয়ার সাগর


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama