ব্রহ্মপুত্র যায় বয়ে-51-মাধবীর বলাৎকার
ব্রহ্মপুত্র যায় বয়ে-51-মাধবীর বলাৎকার
আবারও এক নতুন বিপত্তি হাজির হয়ে গেল আমার জীবনে। এক অজ পাড়াগাঁয়ের দারিদ্র পীড়িত নিরক্ষর মাধবী নামের কিশোরী মেয়েটিকে নিয়ে এসে আমাদের পাড়ার যে বাড়িতে ঝিয়ের কাজে ঢুকিয়েছিলাম, সেখানে সে আর থাকতে চাইছে না। নবাঙ্কুর অ্যাংকেলের সেই বাড়ির ছেলেকেই আমি টিউশন পড়াই। আমি যখনই ওই বাড়িতে টিউশন পড়াতে যাই মাধবী এসে আমার কাছ ঘেঁসে গম্ভীর মুখে একটা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। আমাকে যেন কিছু বলতে চায় সে।
গোলগাল, ফরসা, মাথায় এক ঝাঁক কোঁকড়া চুল, মিষ্টি মুখের মেয়েটা যত দিন যাচ্ছে তার বাড়ন্ত তনু যেন আরও লাবণ্যবতী হয়ে উঠছে। হঠাৎ কেউ তাকে দেখে গৃহস্থ বাড়ির কাজের মেয়ে বলে ভাবতেই পারবে না। একদিন সে বেপরোয়া হয়ে গম্ভীর মুখে চোখমুখ কালো করে আমায় বলেই ফেলল, খোকনদা আমি আর এখানে থাকব না! আমাকে বাড়ি দিয়ে আসো!
‘কেন রে?’ আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
মাধবী আবারও একই কথা বলে উঠল, না আমি থাকব না। আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসো।
আমি কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকার পর আবার বলে উঠলাম, এখানে ভালো খাচ্ছিস দাচ্ছিস, মাস শেষে কিছু টাকাও তো হাতে পাচ্ছিস। চেহারাও তো কত সুন্দর হয়েছে তোর আগের চেয়ে! যদি চলে যাস, সেই তো গিয়ে আবার অভাবের মধ্যে পড়বি! খাবারদাবার পাবি না, পোশাক কেনার টাকা জুটবে না! সেটা ভালো, না এখানে ভালো খেতে পাচ্ছিস, সুন্দর সুন্দর ফ্রক গায়ে পরছিস, কোনটা?
নাছোড় মাধবী, না আমাকে নিয়ে চলো। আমি আর থাকবই না এখানে।
‘জেদ করিস না। আর কয়েকটা মাস এখানে থাক, পরে গিয়ে আমি দিয়ে আসবখন।’
‘তাহলে তোমাদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে চলো।’
‘আমি বুঝতে পারছি না, এখানে তোর অসুবিধেটা কী? কষ্ট দিচ্ছে কাকিমা? মারধর করে কেউ তোকে?
‘না।’
‘তাহলে কেন চলে যেতে চাইছিস?
বাড়ির পড়ুয়ার সামনেই জামা টেনে ধরল সে আমার, আমাকে বাড়ি দিয়ে আসবে কিনা বলো? না হলে আমি বিষ খাব!
‘হায়রে! কি সর্বনাশের কথা! কি হয়েছে কী তোর? কেন এমন জেদ করছিস? পাগল হয়ে গেলি নাকি তুই?’
‘হাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি!’ বলে কেমন যেন একটু ইতস্তত ভাব করার পর আবার বলল, কেমন করে তোমায় বলি? তুমি ছোট!
‘আমি ছোট?’ হাসিও পচ্ছিল আবার ভীষণ রাগও হছিল আমার। হা ঈশ্বর! এই বাড়ন্ত বয়সের মেয়েটার মনেও আমার সম্বন্ধে কি ধারণা!
আমি বললাম, আমি যখন ছোট, থাক কিছু আর বলতে হবে না আমায়। আর দুইএকটা দিন অপেক্ষা কর, দেখি কি করতে পারি?
বলে আমি উঠে চলে আসছিলাম। মাধবী পেছন থেকে জামা টেনে ধরল আমার। টেনে নিয়ে গেল আড়ালে।
‘জানো, এই বাড়ির লোকটা খুব পাজি, অসভ্য!’
‘কে? কোন লোকটা?’ অজান্তেই যেন বুক দুরু দুরু করে উঠল আমার।
‘ওই যে তুমি যাকে অ্যাংকল বলে ডাকো! কালো মোটা লোকটা!’
ধড়ফড় বুকে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম, কেন, কী করেছে?
মাথা নিচু করে লজ্জায় জড়সড় হয়ে সে আবার বলল, রাতে আমার বিছানায় এসে শোয়, বুক চেপে ধরে, জামা ওপরে তুলে আমার বুকে মুখ দেয়, আমার ইজারপ্যান্ট টেনে খুলে ওর ওটা দিয়ে জোরে জোরে চাপ দেয়! আমি চিৎকার করতে চাইলে আমাকে ভয় দেখায়! কাকিমাকেও ভয়ে কিছু বলতে পারি না! আর কাল রাতে তো… জানো, আমার ওখানে ব্যথা হয়ে গিয়েছে, এখনও রক্ত বেরোচ্ছে! এই দেখো।
বলেই সে গায়ের ফ্রক ওপরে তুলে আমাকে দেখাল। হতভম্ব আমি তাকিয়ে দেখি ওর ইজার প্যান্টের জায়গায় জায়গায় রক্তের লাল দাগ।
আবার মাধবী বলে উঠল, পিচ্ছিল আঠা আঠার মতো কি যেন আমার জামার উপরে ফেলল..
‘থাক আর কিছু বলতে হবে না, বুঝেছি!’ বুক কেঁপে উঠল আমার। মাধবীকে আরও কিছু জিজ্ঞেস করতেও তখন ভয় হচ্ছিল। জবাবে কি শুনব কে জানে? মাধবীকে কি তাহলে ধর্ষণ করা হয়েছে? বলাৎকার করা হয়েছে মাধবীর ওপরে? মাধবী তো নবাঙ্কুর অ্যাংকেলের মেয়ের বয়সিই! নিজের মেয়ের বয়সি এক তরুণীর সঙ্গে বিকৃত কাম চরিতার্থ করতে নবাঙ্কুর অ্যাংকেলের বিবেকেও একটু বাঁধল না? কাম প্রবৃত্তির নাগপাশে কি মানুষ এরকমই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে?
বুঝলাম সমূহ বিপদ আমার শিয়রে। আর এই বিপদ তো আমি এক অজ পাড়াগাঁ থেকে নিজেই যেচে নিয়ে এসেছি। মা জানতে পারলে আর রক্ষে রাখবেন না আমার।
সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম সে মুহূর্তে। মাধবীকে আমি বললাম, তুই আর দুইএকটা দিন অপেক্ষা কর। আমি টাকা জোগাড় হলেই তোকে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসব।
মাধবী ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, ভাড়ার টাকা বলছ তো? আছে তো আমার কাছে!
মাধবীর ওই কথা শুনে যেন খানখান হয়ে টুকরো হয়ে গেল আমার হৃদয়টা। এতই অপদার্থ আমি! শেষে ওরই রক্ত জল করা কষ্টার্জিত টাকায় গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে ওকেই ওদের বাড়িতে আমাকে পৌঁছিয়ে দিয়ে আসতে হবে? না না! কিছুতেই তা সম্ভব না!
আমি বললাম, ঠিক আছে, হবেখন। আর দুইএকটা দিন তো? আজ তো আমায় যেতে দে।
বাড়ি ফিরে এলাম গভীর চিন্তিত মুখ।
next episode-মাধবীর প্রস্থান
