বন্ধুত্ব
বন্ধুত্ব
নীপা আর দীপা দুই বন্ধু , বলতে গেলে এক আত্মা এক প্রাণ , একে অপরের পরিপূরক । নীপা পড়াশোনা করেছে ল নিয়ে আর দীপা পড়াশোনা করেছে মেডিক্যাল নিয়ে
আজ নীপার বিয়ে তাও আবার ডঃ অভ্রজিৎ সেন এর সাথে । অভ্রদের নিজেদের একটা হসপিটাল আছে , ওখানেই ট্রিটমেন্ট করে ও আর ওর ভাই শুভ্র । যাই হোক আজ নীপা ভীষণ রেগে আছে , নানা এই বিয়ে নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই , আসলে সকাল থেকে স্ত্রী আচার করে করে বেচারী নেতিয়ে পড়েছে .....
একে তো বেচারাকে খেতে দেওয়া হয় নি যেখানে ও একদম খিদে সহ্য করতে পারে না আর তার ওপর দধিমঙ্গল থেকে শুরু করে গায়ে হলুদ সব করানো হচ্ছে ।
তারপর আবার আত্মীয় স্বজন এলে মেকি হাসি দিয়ে তাদের কাছ থেকে উপহার নেওয়া কারণ মুখে বিরক্তি নিয়ে ওদের সামনে গেলেই তো এক কোটি প্রশ্ন । তাই মুখে নকল হাসি টানারই চেষ্টা করছে নীপা আর তাকে আপ্রাণ বুঝিয়ে যাচ্ছে দীপা ।
দীপা - দেখ নীপু , বিয়ে তো মানুষের একবারই হয় , তাই না ? এমন করিস না বাবু , আন্টি জানতে পারলে না খুব ক্ষেপে যাবে ? পুরো চিকেন তন্দুরি বানিয়ে খাবে
নেপথ্যে - কি করেছে নীপা , যাতে আমি রেগে যাবো , ওকে তন্দুরি চিকেন বানিয়ে খাবো?
দীপা - মনি তুমি !
অপর্ণা দেবী - তা কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো যে আমি জানলে রেগে যাবো ??
নীপা - তোমায় আবার নতুন করে ক্ষেপতে হয় নাকি ? তুমি তো অল টাইম হাই ভোল্টেজে থাকো
অপর্ণা দেবী - নীপা !!!
দীপা - আব মনি কি হয়েছে বলোতো , ইয়ে মানে না আসলে
অপর্ণা দেবী - কি হয়েছে দীপু ?? হ্যা না কি করছিস ?
দীপা - না মানে আমি বলছিলাম যে আসলে নীপা বলছিলো যে , যে.....
অপর্ণা দেবী - যে কি ?
দীপা - নীপা বলছিলো যে ও বিয়ে তে হালকা মেকআপ করবে
অপর্ণা দেবী - হালকা ভারী , মোটা পাতলা যা পারে করুক গে , ভালো লাগলেই হলো । আচ্ছা আমি নিচে গেলাম , আর দীপা অতসী দি অশোক দা কোথায় রে ?
দীপা - হ্যা মনি , মাম্মা পাপা আসছে , আসলে ভাইয়ের স্কুলে গেছিলো আজ
অপর্ণা দেবী - ওমা কেনো রে
দীপা - কেনো আবার স্কুলে মারপিট করেছে , স্কুলটাতো ওর ক্যারাটে প্রাকটিস এর জায়গা
অপর্ণা দেবী - আহা অমন বলিস না , বাচ্ছা ছেলে মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে
দীপা - হুঁ বাচ্ছা ছেলে !!
অপর্ণা দেবী - আচ্ছা আমি গেলাম , তোরা একটু শুয়ে নে । বিকেলে অনেক কাজ , সামলাতে পারবি না
একটু পরে ,
দীপা - নীপু , এই নীপু !!
নীপা - তুই আবার জ্বালাতে এসেছিস , ঘুমাতেও দিবি না নাকি ??
দীপা - আরে না , দেখ কি এনেছি
নীপা - কি দেখি
দীপা হাত সামনে আনতেই ,
নীপা - ও মাই গড !! ভাত , ডাল , আলুভাজা , এচোর চিংড়ি , ভেটকি পাতুরি , কাতলা মাছ , মাংস , চাটনি , পাপর , পায়েস , মিষ্টি !!!! এই এতো কিছু আমি খাবো !!
দীপা - আরো একটা জিনিস আছে babes , দি দেখো ??
নীপা - আইসক্রিম !
দীপা - নে খাওয়া শুরু কর , আমি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আসি ।
খাওয়ার পর ,
নীপা - আঃ মনে হচ্ছে , কতদিন পর খেলাম
দীপা - নে এবার ঘুমিয়ে পর ।
বিকেলে , দীপা নীপাকে সাজাতে বসেছে ।
নীপা - এই দীপা !!
দীপা - হ্যা বল ?
নীপা - আমাদের তো আর এখনের মত কথা হবে না রে ?
দীপা - কাদিস না নীপা , আমরা তো রোজ ফোনে , ভিডিও কলে কথা বলবোই
নীপা - তাও
দীপা - আচ্ছা এখন কাদিস না , চুপ কর
এই বলে ও নীপাকে সাজিয়ে দিলো
পরের দিন , কনকাঞ্জলি পর্ব মিটিয়ে নীপা চললো নতুন গন্তব্যে , যেখানে প্রতি কটা মানুষ তার অচেনা , এক্কেবারে নতুন পরিবেশে ।
************
এরপর কেটে গেছে এক বছর , নীপার কোল আলো করে এসেছে একটি কন্যা সন্তান । দীপাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে নীপারই দেওর শুভ্রর সাথে । দীপা এখন মাসি থেকে কাকিয়া হয়ে গেছে । অভ্র , শুভ্র বা তাদের বাড়ির লোকেরা তারা ওদের বন্ধুত্ব দেখে মুগ্ধ হয়।
একটা রবিবারের দুপুর বেলা , ছোট্ট ৭দিনের মেয়ে তানভীকে ঘুম পাড়িয়ে নীপা বাথরুমে যাচ্ছিলো । হঠাৎ কেমন যেন মাথাটা ঘুরে গেলো। কোনরকমে খাটটা ধরে দাড়িয়ে পড়লো ।
আবার বাথরুমের সামনে মাথাটা ঘুরে উঠলো , এবার তো পড়েই যাচ্ছিলো যদি না ননদ আরোহী এসে ধরতো ওকে।
আরোহী - বড়ো বৌদি , কি হয়েছে তোমার ? পড়ে যাচ্ছিলে তো ?
নীপা - আসলে মাথাটা একটু ঘুরে গেছিলো রে রুহি ( আরোহীর ডাক নাম )
আরোহী - ও , তুমি একবার ডক্টর দেখিয়ে নাও । দা কে ডাকি একবার , তুমি এখানে বসো ।
নীপা - কি দরকার রুহি ?
আরোহী - তুমি চুপ করো তো !! দা , এই দা , একবার শোন !!
অভ্র - কেয়া হূয়া সিসো ? কোই প্রবলেম ??
রুহি - তুই কি রে ?
অভ্র - কেনো , একটা মানুষ
রুহি - ইয়ার্কি মারিস না , জানিস একটু আগে বড়ো বৌদি মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলো ?
অভ্র - হোয়াট !!!!!!
নীপা - হ্যা , আর কদিন ধরে মাথাটাও খুব ব্যাথা করে মাঝে মাঝে
রুহি - দা আমি বলি কি , তুই বড়ো বৌদি কে নিয়ে একবার ডক্টরের কাছে যা । মাথা ঘোরা , মাথা ব্যাথা কিন্তু অনেক কিছুর সিম্পটম হতে পারে , যদি কোনো বড়ো রোগ হয়ে থাকে
হ্যা আরোহীর কথাই সত্যি হয়েছিলো ; সেদিন বিকেলে ডক্টরের কাছে গেলে ডক্টর কটা টেস্ট দেয় । টেস্টের রিপোর্ট স্বরূপ জানা যায় যে নীপার ব্রেন টিউমার হয়েছে
বাড়ি ফিরে ,
নীপা - দীপা !
দীপা - কাদিস না নীপু , দেখ কতো মানুষের তো ব্রেন টিউমার হয় বল , আবার অপারেশন করলে সেরেও যায়
নীপা - আর আমি যদি অপারেশন টেবিলেই মরে যাই
দীপা - একটা চর খাবে তুমি । আমি শুভ্র , অভ্রদা তিনজনে একসাথে তোর অপারেশন করবো , ভয় কিসের
৭দিন পর , নীপার অপারেশন করা হবে ঠিক করা হলো ।
৭দিন পর অপারেশন টেবিলে নীপা শুয়ে আছে , এতো দুরন্ত , চঞ্চল মেয়েটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে আজ। আর অভ্র , শুভ্র এবং দীপা নিজেরা তৈরী হচ্ছে। ওরা তিনজনেই অসম্ভব ভেঙে পড়েছে কারণ নীপা অভ্রর স্ত্রী , শুভ্রর বৌদিদি আর দীপার ? দীপার ওয়ান অ্যান্ড ওনলি বেস্ট ফ্রেন্ড । কিন্তু ওই যে কথায় আছে , ডক্টরদের ভেঙে পড়লে চলে না। ওদের কাছে এটা যুদ্ধের থেকে কোনো অংশে কম না , এই যুদ্ধের ফলাফল , পরিণতি যে কি হবে সেটা ওরা কেউই বুঝতে পারছে না ।
অপারেশন টেবিলে অপারেশন চলছে । বাইরে অপর্ণা দেবী , অখিলেশ বাবু ( নীপার বাবা ) , অতসী দেবী , অজিতেশ বাবু ( দীপার বাবা ) , সোমলতা দেবী ( নীপা ও দীপার শাশুড়ি মা ) , অপরেশ বাবু ( নীপা ও দীপার শশুর মশাই ) এবং আরোহী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ।
প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর অপারেশন শেষ হলো । দীপা বেরিয়ে এলো । চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ।
সবাই - কেমন আছে নীপা ???
দীপা - অপারেশন সাকসেসফুল কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না । ওকে কেবিনে শিফ্ট করা হচ্ছে ।
প্রায় দেড় ঘণ্টা পর নীপার জ্ঞান ফেরে । বাড়ির সবাই কে ভেতরে ডাকা হয় ।
দীপা - নীপা...
নীপার মুখে অক্সিজেন মাস্ক , তাই কথা বলতে অসুবিধা হবে । তাই নীপা নিজের অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে ফেলে ।
দীপা - নীপা কি করছিস ? করিস না এমনটা
নীপার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ।
নীপা - দীপা , আ..মার স..ময় শেষ হ..য়ে এ..সেছে। আ..মি তো..কে ক..টা কথা বল...তে চাই....
দীপা - না নীপা , তুই আবার সুস্থ হয়ে উঠবি , এমন কথা বলিস না প্লিজ
নীপা - না রে , আ..মি আ..র সু..স্থ হ..বো না... ,
তা..নু কে রে..খে গেলা...ম , তো..র ওপ..র ভার দি..য়ে গেলা..ম , তুই ও..কে দেখি..স । ও..কে মায়ে...র ছত্র...ছায়ায় বড়ো করি..স , আর ও বড়ো... হ..য়ে জান..বে তুই...ই ও...র মা..... । ক..থা দে তুই... ও...কে নিজে...র মেয়ে..র মতো... পাল..ন কর....বি ??
দীপা - কথা দিলাম নীপা , কথা দিলাম
নীপা - আর... হ্যা শো..ন , এবা....র থে...কে নিজে...র খাওয়া...র মনে ক..রে খা...বি । আ..মি কিন্তু থাক...বো না ম..নে করা...নোর জন্য...
কেবিনে , সবার চোখে জল। সবাই কাদঁছে ওদের বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন দেখে যে নীপার এতো কষ্ট হচ্ছে তার মধ্যেও প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর খাওয়ার খোঁজ নিচ্ছে
নীপার খুব কষ্ট হয় কথা বলতে , তবু সে অভ্রকে ডাকে ।
নীপা - অভ্র !!!!!
অভ্র - হ্যা নীপা বলো
নীপা - অভ্র.... আমা...র এক...টা শেষ... ইচ্ছা.... আ...ছে
অভ্র - কি বলো নীপা ?
নীপা - দে..খো তু...মি যে এর...পর বি...য়ে কর...বে না... সে..টা আ...মিও জা...নি , তুমি...ও জা.....নো । তাই তানু...র দায়ি....ত্ব আ....মি চা..ই দীপা...র হা..তে তুলে দি.....তে ।
অভ্র - বেশ তাই হবে
নীপা এবার উঠে বসার একটু চেষ্টা করে।
নীপা - কি...চ্ছু হ..বে না , মা তানু কে একটু আমার কোলে দাওতো
দীপা - নীপা , নিস না । তোর শরীর ভালো না কিন্তু
নীপা - আ..রে কি..ছু হ..বে না...
তানভীকে কোলে দিলে ,
নীপা - তা..নু রে আ...মি তো আ...র বাঁচ..বো না , তোর.. মনি...ই আ...জ থে...কে তো..র মা...
বাচ্চাটা কি বুঝলো কে জানে ? হঠাৎ মাকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো । হয়তো এটাই মা আর সন্তানের মধ্যে আত্মার সংযোগ ।
নীপা - দেখে...ছিস দীপা.... , আমা...দের ছোট্ট তানু... ঠিক বুঝে....ছে যে ও....র মা আ...র মাত্র অ....ল্প কি......ছু সময়ে....র অতি....থি
নীপা - নে দে....খি , নে তো....র ছোট্ট.... মেয়ে...কে । আ...জ থে..কে ও...ই তো..র মে..য়ে
দীপা - নীপা ছোট্ট থেকে যা কিছু তোর সব আমায় শেয়ার করেছিস তুই , বিয়ের পর শুভ্রর সাথে আমার বিয়েটা পর্যন্ত ঠিক করেছিলি তুই , আর আজ নিজের মেয়েটা পর্যন্ত দিয়ে দিলি ??
নীপা - ধুর বো...কা মেয়ে , আ...মি কি তো..কে শুধু মেয়ে..টা দি...চ্ছি ? তা...র স...ঙ্গে কত....বড় এক.....টা দায়ি.....ত্ব দিলা....ম বল...তো
দীপা - তোর সাথে আমি কথায় পারবো না
নীপা - আ..জ থে.....কে এটা....ই তো...র মে..য়ে। তান....ভী সেন..... , ডটার অফ মিস্টার শুভ্র...জিৎ সেন অ্যান্ড মিসেস দী...পা সেন................
ব্যাস সব শেষ !!!!!!!! চারিদিক নিস্তব্ধ !!!!!!!!!
দীপা চিৎকার করে - না !!!!!!!!!!! বলে অজ্ঞান হয়ে যায় ।
নীপা চলে গেছে ১০দিন হয়ে গেল । নীপার মৃত্যুর পর অভ্রও কেমন একটা মুষড়ে পড়লো । ওর এই হাবভাব দেখে বাড়ির সবাই সিদ্ধান্ত নেয় যে ওর আবার বিয়ে দেবে । কিন্তু অভ্র রাজি হয় না , ও বলে যে ও আর বিয়ে করবে না ।
ওদিকে , দীপা নীপার মৃত্যুটা এখনো মেনে নিতে পারেনি , রোজ সন্ধেবেলা যে সময়ে আগে ওরা একসাথে গল্প করতো সেই সময়ে এখন ও নীপার ছবিটা বুকে আগলে কাদে । আগের মতো আর চঞ্চল নেই বরং ধীর স্থির হয়ে গেছে , কারোর সাথে বেশি কথা বলে না শুধু নীপার ছবি নিয়ে কাঁদে , খায়দায়ও না ঠিক করে , চোখের তলায় কালি পড়ে গেছে , মোট কথা দীপার এখন একদম বিধ্বস্ত অবস্থা । শুভ্র আপ্রাণ চেষ্টা করছে ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর কারণ ও যদি স্বাভাবিক জীবনে না ফেরে তাহলে তানভীকে কে দেখবে ?
একদিন সন্ধেবেলা দীপা নীপার ছবিটা বুকে আগলে কাদঁছে । এমন সময়ে শুভ্র তানভীকে কোলে নিয়ে ঘরে আসে ।
শুভ্র - তুমি আবার কাদঁছো ?? আচ্ছা দীপা , তোমার মনে আছে বৌদিদি আমাদের কি বলে গেছে ?
দীপা - কি ?
এতদিনে দীপার মুখ দিয়ে কথা ফুটলো
শুভ্র - বৌদিদি তানুর দায়িত্ব তোমার আর আমার ওপর দিয়ে গেছে
দীপা - হম
শুভ্র - তো তুমি সারাদিনে তানু কে একবারও কোলে নাও ?
দীপা -
শুভ্র - দেখো যে চলে গেছে সে তো হাজার মাথা কুটলেও ফিরবে না , কিন্তু যে আছে ? যে আছে তাকে তো আমাদের বড়ো করতে হবে , মানুষের মতো মানুষ করতে হবে
দীপা - হ্যা
শুভ্র - তাহলে এবার থেকে নো কান্নাকাটি??
দীপা - না
শুভ্র - এখন আমাদের একটাই দায়িত্ব , তানুকে বড়ো করে তোলা
দীপা - হ্যা
এরপর কেটে গেছে ২৩বছর । এই ২৩বছরে অনেক কিছু পাল্টেছে । অভ্র এখন আর এখানে থাকে না , ইউকে তে সেটেল করে গেছে । দীপার শশুর মশাই এবং শাশুড়ি মা ও এতদিনে গত হয়েছেন । আরোহীরও বিয়ে হয়ে গেছে দীপার ভাইয়ের সাথে ।
নীপার মৃত্যুর ৩বছরের মাথায় দীপার কোলে আসে ওর ছোটো মেয়ে সানভী । দীপার বিশ্বাস নীপাই সানভী হয়ে দীপার কোলে এসেছে । তানভী এখন ২৩বছরের যুবতী । তানভী আর সানভী দুজনেই নীপার ব্যাপারে জানে কিন্তু তা ওদের সম্পর্কে কোনো দাগ পড়েনি ; দুই বোনে খুব ভাব ।
আজ তানভী অনেক বড় ডাক্তার । একটা বড়ো অপারেশন করে অ্যাওয়ার্ড পাবে আজ ।
অ্যাওয়ার্ড শো তে যাওয়ার সময় , দীপা নীপার ছবিটার সামনে দাড়িয়ে পড়ে ।
দীপা - দেখ নীপু , আমি আমার কথা রেখেছি । তোর আর আমার মেয়ে তানভীকে মানুষের মতো মানুষ করেছি , দশজনের একজন করে দেখিয়েছি । আজ তানু অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে নীপু , তুই ওকে দেখছিস তো ? তুই যেখানেই থাকিস না কেন তোর আশীর্বাদের হাত সবসময় তানভী আর সানভীর মাথার ওপর রাখিস , ওরা যে তোকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। জানিস নীপা আমি সানভীর গা থেকে তোর গন্ধ পাই , আমার বিশ্বাস তুই আবার আমার কাছে ফিরে এসেছিস ।
পাশের ঘর থেকে তানভী ডাক দেয় - মা... কোথায় তুমি , যাবে না ??
দীপা - হ্যা যাই !!!
দীপা চলে গেলো কিন্তু লক্ষ্য করলো না যে ছবিতে নীপার মুখে একটা তৃপ্তির হাসি । সত্যি আজ নীপা বড় শান্তি পেয়েছে এটা দেখে যে ও তানভীকে কোনো ভুল মানুষের কোলে দিয়ে যায়নি বরং তানভীর আরেক মায়ের কাছে দিয়ে চোখ বুজেছিলো , আজ সত্যি নীপার আত্মা মুক্তি পেয়েছে । বিপদের দিনে একে অপরের পাশে থাকায় তো বন্ধুত্ব । সত্যিকারের বন্ধুরা শুধু সুখের না দুঃখের দিনেও পাশে থাকে , একেই তো বলে বন্ধুত্ব ।
সমাপ্ত