যোগ্য জবাব
যোগ্য জবাব
- মাম্মা , স্কুলে গিয়ে কিন্তু একদম কাদবে না । ওখানে কিন্তু আমি থাকব না
ছোট্ট ৪বছরের মেয়ে অনামিকাকে স্কুলের জন্য রেডি করিয়ে দিতে দিতে বললো আদৃতা
- তেনো দো মাম্মা , আন্টিলা তি থুব লাদি হয় ??
- না অ্যানা , ম্যামরা একদম রাগী হয় না
- তাহলে আমি তাদবো তেনো
- উফ্ বাবা কি প্রশ্ন !! হ্যা রে তুই কি কোয়েশ্চন ব্যাংক??
- তশ্চেন বান্ত মানে তি ?
- জানি না বাবা , নে তুই একদম রেডি ; এক্ষুনি বাস কাকু চলে আসবে । নে এই দুধটা খেয়ে নে
- থিতাছে দাও
- অ্যানা , রত্না মাসির কথা শুনিস কিন্তু
- না লতনা মাছি ভালো না , খালি লিভস খাওয়ায়
- কিন্তু অ্যানা , শাক সবজি না খেলে তো তুমি বড়ো হবে না
পিপ পিপ পিপ পিপ
- মাম্মা , বাত তাতু মনে হয় এতে গেতে
- হ্যা এই নাও ব্যাগ আর ওয়াটার বটল আর পুরো টিফিন টা ফিনিশ করবে । ও আর একটা কথা , বাইরে কেউ কিচ্ছু দিলে নেবেও না আর খাবেও না । ওরা কিন্তু ভালো ভালো জিনিস খাইয়ে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয় , ওখানে মাও থাকেনা আর রত্না মাসিও থাকে না
- ওলে বাবা লে , নানা আমি তিত্তু তালোল থেতে নেবো না
- আচ্ছা বাই , মন দিয়ে পড়া শুনো
- বাই মাম্মা
মেয়েকে স্কুলের জন্য বের করে দিয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে বসলো আদৃতা । না রত্নার আসতে আসতে সকাল ১০টা আর এখন সবে সকাল ৭টা । চা টা খেতে খেতে ৩বছর আগের পুরোনো স্মৃতি গুলো মনের মনিকোঠায় ভেসে উঠছিল ।
ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে যখন শশুর বাড়ির সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই বুঝে গেছিলো যে ওকে বা ওর মেয়েকে এবাড়ির কেউই মেনে নেবে না ।
ফ্ল্যাশব্যাকে ,
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
- উফ্ আবার কে এলো ( দরজা খুলতেই আদৃতা কে মেয়ে কোলে দেখে বেশ অসন্তুষ্ট হলেন তার শাশুড়ি , সুজাতা ) । কি চাই বাছা তোমার এখানে ?
- মা , দেখুন আপনার নাতনি
- ও আমার নাতনি না , ও একটা অপয়া । ও হওয়ার পরই আমি নিজের স্বামীকে হারালাম
- কিন্তু মা এতে ওর কি দোষ
- চুপ করো তুমি , একে তো এমন মেয়ের জন্ম দিয়েছো যে আমার বাবাকে খেয়ে নিলো তারপর আবার মায়ের মুখের ওপর কথা বলছো ?? তোমার সাহস তো কম নয় !!! ( আদৃতার স্বামী , অর্কদীপ )
- কি সব বলছো তুমি ?? ও আমার একার মেয়ে , তোমার নয় ??
- না ও আমার মেয়ে নয় , বেরিয়ে যাও এখান থেকে
- মা দাদাভাই , বৌদিদিকে কি সব যা তা বলছিস তোরা
- তুই চুপ কর , আর্যা !! যা বুঝিস না তাই নিয়ে কথা বলিস না
- কি হলো কি ? তুমি নিজে থেকে যাবে নাকি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো ??
- না তার আর প্রয়োজন নেই , আমি নিজেই চলে যাচ্ছি । তুমি ডিভোর্সের নোটিসটা পাঠিয়ে দিও আমি সাইন করে দেবো । আমার যা শিক্ষাগত যোগ্যতা তাতে আমি একটা না একটা চাকরি ঠিক জোগাড় করে নেবো । আর মা , অর্ক আমি তোমাদের দুজনকে কথা দিচ্ছি , আমি আমার মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে দেখিয়ে দেবো যে করেই হোক । একদিন আমার মেয়েকে দেখেই গর্ব হবে তোমাদের , কিন্তু তোমরা কেউ ওর ধারে কাছেও ঘেষতে পারবে না
-
- বৌদিদি , তুমি যেও না বৌদিদি । আমি কার সাথে গল্প করবো বলো ? যেও না তুমি
- না আর্যা , আমায় যেতেই হবে । তুমি ভালো থেকো
ওখান থেকে বেরিয়ে আদৃতা ঠিক করলো যে বাপের বাড়ি ও যাবে না কারণ ওখানে গেলে আবার ওর বাবা মা ওকে মানিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আবার শশুর বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেবে । তাই ও সোজা চলে যায় ওরই বন্ধু অনুষ্কার বাড়ি । সেখানে কয়েকদিন থেকে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে চাকরি জোগাড় করে একটা তিন তলা বাড়ি কিনে মেয়েকে নিয়ে চলে আসে । না এরপর অর্কর আর ওকে নোটিস পাঠাতে হয়নি বরং নতুন বাড়িতে আসার পর ওই অর্ককে ডিভোর্সের নোটিস পাঠিয়ে দেয় এবং ওদের ডিভোর্স টা হয়ে যায় । আর এখন ওর নিজেরই একটা বিজনেস ও আছে যদিও এতে ওকে নব্বই শতাংশ সাহায্য করেছে অনুষ্কা ।
বর্তমানে ,
- দিদি , ও দিদি
- হ্যা কি ? ও রত্না দি তুমি এসে গেছো ??
- হ্যা আপনি স্নান করতে যাবেন না ?
- ৯টা বেজে গেছে না ? যাই স্নান টা সেরে আসি
সন্ধেবেলা ,
- লতনা মাসি , মাম্মা তথন আব্বে ??
- এই তো বাবু , এক্ষুনি চলে আসবে তোমার মা
- তুমি লোজ লোজ আমায় তেনো এথব থাওয়াও ? আমাল ভালো লাদে না
- কি ভালো লাগে না আমার অ্যানা ডার্লিং এর
- মাম্মা !! তুমি এতে দেথো
- হ্যা সোনা , তা তোমার কি ভালো লাগে না
- দেখো না দিদি অনুকে কখন থেকে বলছি এটা খেয়ে নিতে কিছুতেই খাচ্ছে না
- দেথো না মাম্মা , লতনা মাছি লোজ লোজ আমায় হল্লিত ( হরলিক্স ) তলে দেয় , আমাল থেতে এদ্দম ভালো লাদে না
- আচ্ছা মাম্মা তুমি যদি হরলিক্স না খাও তাহলে তুমি গায়ে জোর পাবে কি করে ?
- হ্যা দায়ে দোর না পেলে তুলে মাল্পিত তব্ব টি তলে ?
- অ্যানা , স্কুল টাকি মারপিট করার জায়গা ?
- মাম্মা , অন্তুষ আমায় থুব দালায় , তনদিন আমি আমি অতে পিতিয়ে দেবো
- আচ্ছা আচ্ছা বেশ বেশ , স্কুলের গল্প পরে শুনবো । এখন তো অ্যানার জন্য অ্যানার তার প্রিয় খাবার এনেছে
- তি থাবার মাম্মা ?
- মোমো !!!!
- আমাল পিয় থাবার
- হ্যা তো , রত্না দি এই নাও এটা তোমার জন্য
- ওমা দিদি আবার আমি কেনো
- তুমি কেনো মানে ? রত্না দি , অ্যানা আর তুতুল একদম এক বয়সী । আমি আমার মেয়ের জন্য আনবো আর তোমার মেয়ের জন্য আনবো না ? যাও এটা নিয়ে বাড়ি চলে যাও । গরম গরম খাইয়ে দাও
রত্না মাসি চলে যাওয়ার পর , আদৃতা অ্যানা কে পড়াতে বসায় ।
রাত্রিবেলা ডিনার করতে বসে ,
- মাম্মা , আমাল এত্তা পশ্ন আতে ?
- কি বলো
- আত্তা মা আমাল পাপা তথায় ?
- হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো আমার অ্যানা রাণীর মুখে ?
- দানো মা আদ অন্তুশ বলেথে আমাল নাতি পাপা নেই
- তা তুমি কি বললে ?
- আমি পত্ব দবাব দিয়ে দিয়েথি যে আমার মাই আমাল মা আল মাই আমাল পাপা
- বাঃ তুমি স্পষ্ট জবাব দিয়ে দিয়েছো , ভেরি গুড , ভেরি গুড
- মাম্মা এবাল আমাল বার্থডে তেলেবেতান ( সেলিব্রেশন ) হবে না ?
- ওমা হবে না কেনো এবার আমার অ্যানার পাঁচ বছর পূর্ণ হবে , আর তার জন্মদিন পালন হবে না ?? হবে তো , নিশ্চই হবে
- মাম্মা দানো আমাল না থুব তত্ত্ব হয় দথন আমাল ফেন্ডস দেল বাবালা তাদের দিতে ইত্তুলে আতে
- মন খারাপ করে না অ্যানা । তোমার পাপা আমাকে বা তোমাকে কাউকেই পছন্দ করে না । সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে নিজের ইচ্ছায়
- কেনো তলে দেথে ?
- বড়ো হও বুঝতে পারবে , কেমন ?
- আত্তা
আসতে আসতে অ্যানা বড়ো হয় তার সঙ্গে হয়ে ওঠে খুবই মেধাবী ছাত্রী । স্কুলে প্রত্যেক বছর প্রথম হয় । মা অন্ত প্রাণ । এরপর কেটে যায় অনেক অনেক গুলো বছর । আর এই এতো বছরে অনামিকার বাড়িতেও অনেক কিছু পাল্টেছে । আদৃতার অনুরোধে অনুষ্কা তার মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে সেন বাড়িতেই থাকে । বর্তমানে , অভ্রও আদৃতার কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর । আজ অ্যানা পঁচিশবছরে পদার্পণ করতে চলেছে । এখন সে একজন সফল ডাক্তার , বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পাঁচজন হার্ট সার্জন দের মধ্যে অন্যতম , এখন সে আর শুধু অনামিকা সেন নয় , ডঃ অনামিকা সেন ।
আজ সকাল থেকে আদৃতা ভীষণ ব্যস্ত কারণ আজ ওর মেয়ের জন্মদিন আর আজই ওর মেয়ে ইন্ডিয়ায় ফিরছে পাঁচবছর পর । যদিও এই ৫ বছরে মায়ের সাথে তার নিয়মিত কথা হয়েছে । জন্মদিনটা অবশ্য ওদের ওই তিনতলা বাড়িটাতেই হবে।
- কি গো তোমাদের হলো সাজানো , ঠিক করে সাজাবে কিন্তু । আজ আমার অ্যানা ডার্লিং ফিরছে তারপর অনেক গেস্ট আসবে
- এই তো হয়ে গেছে ম্যাডাম
- অনুষ্কা ক্যাটেরের দের ফোন করেছিলি ?? ওদের বলবি সবথেকে বেস্টটা যেনো আনা হয়
- আচ্ছা দিতি ( অনুষ্কা আদৃতাকে এই নামেই ডাকে ) , তুই আমায় কোনো কাজ দিয়েছিস আর আমি সেটা করিনি , এমন কখনো হয়েছে ?
- ওরে বাবা , তোর সঙ্গে আমি কথায় পারবো না । আচ্ছা বলছি অভ্র ( অনুষ্কার স্বামী ) কোথায় ?
- সে তো সেই সাত সকালে স্নান করে বেরিয়ে গেছে তার স্ট্রবেরি কে আনতে
- সত্যি , অভ্র পারেও বটে
- মনি!!
- ওমা আয়ু তোর হয়ে গেছে ??
- মানী দেখো , আমায় কেমন লাগছে ?
- বাঃ অপূর্ব !! আমার আয়ু সোনাকে তো খুব সুন্দর লাগছে !!
- তুই আর ওকে মাথায় তুলিস না দিতি
- এই তুই ওকে সব সময় এমন করিস কেনো রে ?
- আরে মনি , তুমি জানো না ?
- ওমা কি ?
- আরে তুমি জানো না , আমার মা রাক্ষস লগ্নে জন্মেছিলো ?
- মার খাবি চিনি ( আয়ুসি র ডাকনাম )
- আচ্ছা বাবা তোরা ঝগড়াটা থামা
ওইদিকে এয়ারপোর্টে, একটা মেয়ে চোখে সানগ্লাস , ঠোঁটে নিউড লিপস্টিক , মুখে একদম হালকা মেকআপ , পরনে একটা ডেনিম জিন্স আর একটা স্টাইলিস টপ
- স্ট্রবেরি!!! কত্ত বড় হয়ে গেছিস মা !!
- মেসো মনি !!! একি তুমি এরকম দাদু মার্কা হয়ে গেছো কেনো ?? কালকেই তোমায় হেয়ার কালার করে দিতে হবে
এরপর ওরা প্রেসের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে বাড়ি ফিরলো
বাড়িতে পৌঁছতেই অ্যানা দেখে সারা বাড়ি অন্ধকার ।
- মাম্মা!! মনি!! চিনি!!
পিছন ফিরে দেখে অভ্রও নেই
- একি রে বাবা , সবাই গেলো কোথায় ?
যতই বড় ডাক্তার হোক না কেনো অ্যানা এখনো ভূতে প্রচন্ড ভয় পায় ।
- ও মাম্মা , তোমরা সবাই কোথায় গেলে ?
হঠাৎ সব লাইট জ্বলে ওঠে আর সবাই একসাথে গান করে - হ্যাপি বার্থডে টু ইউ , হ্যাপি বার্থডে টু ইউ , হ্যাপি বার্থডে টু ডিয়ার অ্যানা , হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
অ্যানার চোখের কোন টা চিকচিক করে ওঠে
- মাম্মা !!!
- অ্যানা ডার্লিং !! কেমন আছো সোনা ??
- দারুন !! তোমরা ??
- আমরাও ভালো আছি রে দিদিয়া , তুই চল ওপরে । আজ সব তোর প্রিয় রান্না হয়েছে । তারপর আবার রাতে পার্টি আছে
- হ্যা চল
ঘরে গিয়ে অ্যানা চমকে যায় , এই পাঁচবছরে এই ঘরটার একটা জিনিসও এদিক থেকে ওদিক করা হয়নি ; যেমনটি রেখে গেছিলো তেমনি আছে । ও সারা ঘরটা একবার ঘুরে , টেডি গুলোকে আদর করে স্নান করতে চলে গেলো ।
সন্ধ্যেবেলা , অ্যানা খুব সুন্দর করে সাজে । পরনে একটা কালো রঙের স্টাইলিশ গাউন , এক হাতে হীরের এর একটা ব্রেসলেট, রিং আঙুলে একটা হীরের আংটি , গলায় একটা সরু হীরের চেন , মাথায় একটা ডিজাইনার হীরের মুকুট , কানে একটা হীরের কানের দুল , পায়ে একটা স্টিলেটো আর মুখে সামান্য মেকআপ ।
আয়ুসিও কম যায় না । ও পড়েছে একটা ব্ল্যাক ওয়ান পিস , তার সঙ্গে একটা হীরের চেইন , একটা হীরের কানের দুল , একটা হীরের আংটি আর তার সাথে একটা স্টিলেটো আর ওরও মুখে হালকা মেকআপ ।
ওদিকে আদৃতা আর অনুষ্কা ব্ল্যাক নেটের শাড়ি আর তার সঙ্গে সামান্য কিছু গয়না আর পায়ে মিডিয়াম ব্যালে শু আর অভ্র পড়েছে একটা একটা সাদা শার্ট, কালো স্যুট আর পায়ে একটা স্নিকার্স ।
কিছুক্ষণ পর , সব গেস্ট, প্রেস মিডিয়ার সমস্ত লোকজন চলে আসে এবং কেক কাটা হয়ে যায়।
বেশ অনেক্ষণ পর ,
- শুভ জন্মদিন অ্যানা !!
- মাম্মা , এই লোকটা কেনো এসেছে এখানে
- আঃ অ্যানা , উনি তোমার বাবা হন আর ওনাকে আমি নিমন্ত্রণ করেছি
- কি তুমি করেছো !!! কেনো মা ? তুমি কি সব ভুলে গেছো ?
- না অ্যানা , আমি ভুলিনি । আজ আমি ওনাকে শুধু মাত্র এটা দেখাতে নিমন্ত্রণ করেছি যে আমি আমার করা প্রতিজ্ঞা রাখতে পেরেছি । কি অর্ক , দেখো আমি কিন্তু আমার প্রতিজ্ঞা রেখেছি , আমার মেয়েকে আমি মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে পেরেছি । আজ সে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ জন হার্ট সার্জন দের মধ্যে অন্যতম , জগৎ শ্রেষ্ঠ !!
- অ্যানা আমারও মেয়ে আদৃতা
- না !!! ও তোমার মেয়ে নয় , ও শুধু আমার । ওর পাঁচদিন বয়সে যখন হসপিটাল থেকে ফিরে আমি তোমাদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন নির্দ্বিধায় আমায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলে , একবারও ভেবেছিলে যে এই দুধের শিশু টাকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো ? এই ২৫বছরে একবারও খোঁজ নিয়েছিলে আমার বা আমার মেয়ের ? আর এখন এসেছো পিতৃত্ব ফলাতে ??
- আমায় ক্ষমা করে দাও আদৃতা , আমি মানছি আমি ভুল করেছি
- সব অন্যায়ের ক্ষমা হয়না , যে মেয়েকে তুমি আর তোমার মা অপয়া বলেছিলে সেই মেয়ে আজকে ডাক্তার
- মারে তুইও আমায় ক্ষমা করবি না ??
- কেনো আমি তো অপয়া ? আজ আপনাকে আমার বাবা বলতে লজ্জা করছে
- অ্যানা !!!
- চুপ করুন মিস্টার সেন!!! ওই নামে ডাকার অধিকার শুধু আমার আপনজন দের আপনার নয় । স্কুলে যখন সবার বাবা মা আনতে যেতো তখন আমার কষ্ট হতো , কিন্তু তখন আমি অনেক টাই ছোটো তাই বুঝতে পারিনি যে আপনার মতো মানুষও বাবা হয় !! কিন্তু বড়ো হওয়ার সাথে সাথে আপনার পরিচয় টা আমার কাছে জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে গেছে । আসুন আমার সাথে
- অ্যানা মা , কোথায় যাচ্ছো ?
- আসছি মাম্মা
বলে অনামিকা অর্ক কে স্টেজে নিয়ে ওঠায় ।
- নমস্কার বন্ধুরা !! আজ আমার জন্মদিন, আপনারা সকলেই জানেন। তবে এটির উপর অন্য একটি ইভেন্টও রয়েছে। আজ আমি আপনাকে আমার জীবনের গল্পটি বলতে যাচ্ছি যা অন্যদের মতো খুব স্বাভাবিক নয়। এই যে মানুষটা আমার পাশে দাড়িয়ে , ইনি হচ্ছেন আমার বাবা । আমার যখন পাঁচদিন বয়স তখন আমাকে আর আমার মাকে ইনিই বাড়ি থেকে বের করে দেন । সেই আমার মায়ের স্ট্রাগল শুরু । আমায় একা হাতে বড়ো করে তোলা , নিজের বিজনেস সামলানো , এতো বড়ো একটা সাম্রাজ্য গড়ে তোলা সবই আমার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল , হ্যা এখানে আর দুজনের নাম না উল্লেখ করলেই নয় । তারা হলেন আমার মনি আর মেসো মনি , মিসেস অনুষ্কা চ্যাটার্জী আর মিস্টার অভ্রদীপ চ্যাটার্জী যারা আমাদের দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন । আর এখন যখন আমি আমার মা দুজনেই সুপ্রতিষ্ঠিত তখন আমার তথাকথিত বাবা এসে আমাদের কাছে ক্ষমা চাইছেন । এরপর আপনারাই বলুন আমার কি করা উচিৎ না ক্ষমা না করা উচিত ?
- ক্ষমা না করা !!!
- দেখলেন তো মিস্টার সেন , সবাই এক কথাই বলছেন
- আদৃতা আমাকে এভাবে অপমান না করলেই পারতে বলে অর্ক স্টেজ থেকে নেমে যেতে যায়
- এটা আপনার প্রাপ্য মিস্টার সেন , আর আমি বা আমার মা কারোর প্রাপ্য বাকি রাখি না । আপনিও আমার মাকে একদিন আপনাদের বাড়ির চৌকাঠে এভাবেই অপমান করেছিলেন , মনে পড়ে ? আর আমরা তো তাও আপনাকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছি , নাও গেট লস্ট !!
এরপর অর্ক বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় । আর অ্যানা আর আদৃতার মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির হাসি , কথা রাখতে পারার হাসি আর অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার হাসি ; হ্যা আজ পঁচিশবছর পর ওরা পেরেছে ওদের সেদিনের অপমানের যোগ্য জবাব দিতে ।
কিছু কিছু সম্পর্ক একবার ভেঙে গেলে আর জোড়া লাগে না । ওদের সম্পর্কটাও ঠিক এরকম ।
