বন্ধু ভুতুড়ে ভোটার ও দেবুদা
বন্ধু ভুতুড়ে ভোটার ও দেবুদা
ঝড় বৃষ্টির বিকেলে চায়ের আসরে মায়াপুরীর সবাই বসে আছে,মন্দার,মেহেদী,টেনি,অমর্ত্য,প্রিয়ব্রত,ভুবনেশ,সায়ন্তন,শিবা, অংশু আর আমি মানে দেবুদা।কালুদাদুর চা চপ আর চানাচুর।
সায়ন্তন বলে উঠল - নজরুল মঞ্চে নাটকটা মিস হয়ে গেল!
টেনি-হ্যাঁ যা কালবৈশাখী উঠেছে,এখন বেরোলে পুরো ছবি হয়ে যাব।
মন্দার- আরে দেবুদা থাকতে চিন্তা কিসের!দেবুদা চাইলে কালবৈশাখী আটকে দিতে পারে।
আমি চুপচাপ শুনছিলাম আর একমনে নিজের চপটা শেষ করে প্রিয়র চপটা দু আঙুলের মধ্যে নিয়ে কামড় দিলাম।প্রিয় বুঝতেও পারল না।
এইসময় আমাদের বাড়িওয়ালা ব্যানার্জিদা দরজার বাইরে নক করল।আমি আধখাওয়া চপটা প্রিয় র সামনে নামিয়ে
বললাম কে?
-বন্ধু(সবাইকে ব্যানার্জীদা বন্ধু বলতেন),আমি ব্যানার্জীদা।
-আসুন আসুন বলে দরজাটা খুলে দিলাম।
-ও তোমরা টিফিন করছ!সরি বন্ধু।
-আরে না না তেমন কিছু না এই ঝড় জল শুরু হবে বলে আমরা এগুলো অনিয়েছি।অমর্ত্য বলল।
-হ্যাঁ বন্ধু এই সময়ে এইসব জমে যায়। আর রাত্রে যদি গরম গরম খিচুড়ি আর ডিমের অমলেট হলে তো আর কথায় নেই!
আমাদের জগন্নাথ ট্রাস্টি বোর্ডের তরফ থেকে বাবামশায় বেঁচে থাকতে মাঝে মাঝে অনাথ ভান্ডারের শিশুদেরকে এরকম খাওয়ানো হত।
প্রিয়-ব্যানার্জীদা চপ খাবেন!বলে চপটা বাড়াতে গিয়ে দেখে আধখাওয়া!
-যাহ এটা কে খেল? নিশ্চয় সায়নের কাজ!
-হ্যাঁ যত দোষ নন্দ ঘোষ! সায়ন্তন প্রতিবাদ করল।
শিবা-প্রিয় আর পাল্টালো না। ব্যানার্জীদাকে আধখাওয়া চপ দিচ্ছে!
মেহেদী- অংশুর থেকে দাও না প্রিয়দা। বলে প্রিয় অংশুর দিকে চাইতেই অংশু কটমট করে দুজনের দিকে চাইলো।
-না বন্ধু!আমি খাবো না,তোমরা খাও।আমি বলছিলাম যে..
-আচ্ছা ব্যানার্জীদা আপনার জগন্নাথ ট্রাস্টি বোর্ডে কে কে আছেন!আমি জিজ্ঞেস করব করব ভাবি,আর করা হয় না।
আমার প্রশ্ন শুনে ব্যানার্জীদা থতমত খেয়ে গেল।
-আচ্ছা বন্ধু আমি উঠি! তোমরা গল্প ক
রো।
-কি বলতে যাচ্ছিলেন যেন?টেনি বলে
-না বন্ধু পরে বলব।আমার কাজ পড়ে আছে!
এই বলে বেরিয়ে গেলেন।
-কাজ না হাতি। ঐ ভুতুড়ে ট্রাস্টি বোর্ডের নামে যা খুশি গল্প দিতে দিতে দেবুদার কাছে ধরা পরে যাবে বলে পালালেন। টেনি বলে ওঠে।
-হুম ভুতুড়ে ট্রাস্টি,ভুতুড়ে চপ খাওয়া,ভুতুড়ে বিল,ভুতুড়ে বাড়ি ভুতুড়ে সিনেমাহল,ভুতুড়ে ভোটার ভূতের চারদিকে ছড়াছড়ি।
কলকাতা শহরটা শহর হওয়ার আগে বন-জঙ্গল ছিল।এখন কংক্রিটের জঙ্গল হয়েছে।
টেনি-ভুতুড়ে ভোটার কি?ভুত কি লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়?
-হ্যাঁ।
সবাই গল্পের গন্ধে নড়ে চড়ে বসল।
ভুবনেশ-সেটা কি রকম?
-শোন তাহলে।তোদের তো খগেনদাদুর কথা বলেছি!সেই হারকেপ্পন দাদুটি একবার গেছে ভোট দিতে। আমি দাদুর পরেই লাইনে দাঁড়িয়ে।
ভোট দেওয়া হয়ে বেরোলাম দেখি দাদু আগে বেরিয়েই পোলিং এজেন্টের সাথে কথা বলছে-
-বাবা একটু লিস্টটা দেখে বলবে তোমার দিদিমা ভোট দিয়ে গেছে কিনা?
-কি নাম?
-আজ্ঞে, বাবা! মানদা দাস।
-হুমমম!হ্যাঁ এইতো মানদা দাস। ভোট দিয়ে গেচেন তো। কি দাদু !দিদা ভোট দিয়ে যাচ্ছে আর তোমার কাছে খবর নেই?
-কি করে জানবো বাবা। কুড়ি বছর হল তিনি গত হয়েছেন। প্রতি ভোটে শুনি ভোট দিয়ে যায় কিন্তু দেখতে পাই না। দেখা হলে জানতে হবে গয়নার বাক্স আর হাজার দশেক টাকা দিয়েছিলাম সেটা কোথায় রেখেছে?
এই শুনে পোলিং এজেন্ট ভুত দেখার মত চমকে উঠল দিয়ে ঐ লিস্ট নিয়ে কোনদিকে গেল বুঝলাম না।
এই বলে আমি থামলাম।
ভুবনেশ- কিন্তু ভুত ভোট দিল!একবার না বারবার, কেউ দেখল না!
-তাহলেই বোঝ।
অংশু-সব জালি। অন্য কেউ ভোট দিয়ে গেল আর তুমি বলছ ভুতে ভোট দিচ্ছে। কিন্তু প্রিয়দার চপটা খেল কে? সেটা বোঝা গেল না।
বাইরে ঝড় তখন থেমেছে। গোধূলির আলোতে আকাশ লালে লাল। আমি আর কিছু না বলে বেরোলাম সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দিকে। গরম রসগোল্লা তৈরি হচ্ছে ভূপতি চরণ সুইটসে।।