বল
বল
অফিস আসা-যাওয়ার পথে রোজ বাচ্চাটাকে দেখি। মস্তবড় রাস্তার ধারের বাঁধানো ফুটপাতে একটা ফাটা বল নিয়ে, কখনো ভাঙা পুতুলের মুণ্ডু নিয়ে খেলে বেড়ায়। পাশেই নর্দমা, একদিন খেলতে খেলতে পড়েও গেল। ট্যাঁ করে কাঁদল, নিজেই উঠল, নিজেই নিজেকে ভোলালো, মায়ের কাছে ঠাসঠাস দুটো চড় খেল। উদোম গায়েই থাকে। ফুটপাতে পলিথিনের আড়ালে ওদের নিটোল সংসার। কি খায়, কে জানে!
আরো গোটাদুই বন্ধু আছে ওর। একইরকম হতচ্ছাড়া।
আমি আড়ে আড়ে দেখতে দেখতে যাই। কয়লাকালো ময়লামাখা গায়ে আশ্চর্য মায়াভরা ওর জ্বলজ্বলে চোখদুটো। দু একবার চোখাচোখি হয়েছে।
আমার খুব ইচ্ছে হল ওকে কিছু দিই। হাড় হাভাতে হাড়গিলে চেহারার ফুটপাতের বাচ্চা, দিলে কি আর এমন ক্ষতি?
আমার ছেলের বল আছে অনেকগুলো, তারই একটা নিয়ে গেলাম আজ।ওকে কাছে ডেকে হাতে দিলাম, নিবি? ও অবাক হয়ে চেয়ে রইল খানিকক্ষণ। হাত বাড়ালো না। বোধহয় ভাবছে এ কোন স্বপ্ন! বলটা এগিয়ে দিলাম। এবার ও হাতে নিল সেটা, আমি চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই,টান পড়ল হাতে। দেখি, একটা কচি হাতের মুঠো। ফিরে তাকাতেই মিষ্টি একটা হাসি, আর--
ওর একমাত্র খেলনা, সেই নোংরা ফাটা বলটা এগিয়ে দিল আমার দিকে! ওকে কত বোঝালাম, আমার কিছু চাই না। কিছুতেই শোনে না। আমায় ও দেবেই ওটা। আমি যখন কিছুতেই নিলাম না, শেষে ফিরিয়ে দিল আমার দেওয়া বল।
কি আর করি। নোংরা ফাটা বলটা নিয়েই বাড়ি ফিরেছি। তবু সারা রাস্তায় কোথাও ওটা ফেলে দিতে পারিনি।
কেন পারিনি?