Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Classics

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Tragedy Classics

বিষণ্ণ পৃথিবী

বিষণ্ণ পৃথিবী

2 mins
435


একটা স্বপ্ন বোধহয় এভাবেই বাস্তবের কাছে হেরে হারিয়ে যায়। খোঁপায় গোঁজা জুঁই-এর মালা শুকিয়েছিল যে রাতে খবর এলো। ঠিকঠাক ধরা ছিল আগ্নেয়াস্ত্র হাতে। উপুড় হয়ে আধশোয়া, মাথা প্রায় বুকের মাঝে। ছোট্ট একটা ফুটো ছিল ঠিক কপালের ভাঁজে। দেখে যেন মনে হয় ফুটেছে ত্রিনয়ন। ঝরছে রক্ত, হয়ত ঝরবে আরও কিছুক্ষন। মহাপ্রলয়ের আগে যেমন ঝড়ে আগুনে লাল। এটাও বোধহয় ঠিক তেমনই সেই বিনাশকাল। ঐদিনই মেয়েটি জানতে পারে সে অন্তঃসত্ত্বা, ডাক্তার জানাল রিপোর্ট পড়ে। ভেবেছিল খবর দেবে তাকে যে এখন রয়েছে সীমান্তপারে। ফোনও করেছিল ঠিক ঠাক, নীল খামে চিঠিও লিখেছিল সলজ্জে। এখনও তা পড়ে আছে নতুন দেরাজে। মেয়েটি জানতে পারেনি কেন ফোনের ওপ্রান্তে স্বর ছিল ভারী । সে তো শুধু খুশির খবর দিতে চেয়েছিল সাত তাড়াতাড়ি।


সকাল থেকে বাড়ির বাইরে কি ভিড় কি ভিড়। হাতে পতাকা, মুখ গুলো থমথমে, মেয়েরা স্থবির। একটা কষ্ট কেমন যেন গুমড়ে উঠছে ভিড়ের থেকে। অন্তঃসত্ত্বা সেই মেয়েটি অবাক চোখে দেখে। সে বোঝে না আজ বাড়ির সামনে কিসের উৎসব। নিমেষে মিলিয়ে গেল শিহরণ সব। ধীর গতিতে এগিয়ে আসে শববাহী গাড়ি। মুহুর্মুহু শ্লোগান ওঠে, ওঠে ছবি, মালা আর স্যালুট এর ছড়াছড়ি। লাল বাতি গাড়ি, তাবড় মানুষদের প্রতিশ্রুতি, মুহুর্মুহু ফ্ল্যাশ ঝলসায় চারদিক। সব মিলিয়ে যায় শেষকৃত্য শেষ হতেই, মেয়েটিও জীবন যুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক।


তারপর অনেক জল গড়িয়ে যায় মোহনায়। সেই মেয়েটি আজও একা, উদাস, বড্ড অসহায়। তার সেদিনের 

গর্ভস্থ মেয়েটি আজ অনেক বড়, আকাশে ওড়ে, ককপিটে নামে। তার কাছে বাবা মানে সেই চিঠি যেটা আজও রাখা নীল খামে। বাবাকে সে দেখেনি জন্মের পরে। বাবা মানে উর্দি পরা একটা ছবি, কিন্তু খুব চেনা লাগে একনজরে। বাবাকে সে খুঁজে যায় রাতের তারায়। একই রক্ত বইছে যে তারও শিরায় শিরায়। সে ও আজ বাবার মত সীমান্তে আসে। ভাবে, কার কি লাভ হয় এই যুদ্ধ বা সন্ত্রাসে? আগুনে নেশায় সবাই যখন বেয়নেটওয়ালা আগ্নেয়াস্ত্র কাঁধে ছোটে। ঘরপোড়া পরিবারই আজীবন শুধু একা ডুকরে ওঠে। ওপারেও তো বাঁচে কেউ একই যন্ত্রনা নিয়ে। বসে বসে ভাবে মেয়েটি রাতের আকাশে তাকিয়ে। আকাশ বাতাসকে, বাতাস মাটিকে, মাটি জলকে, জল আগুনকে শুধোয় একই প্রশ্ন বারে বারে। উত্তর আসে না কোন দিন, শুধু হারিয়ে যায় কথারা সীমান্তের কাঁটাতারে।

একটা প্রশ্ন মেয়েটির মনে তাড়া করে বেড়ায় খুব - এত মৃত্যুর কিসের জন্যে এত প্রয়োজন ?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy