বিষাদ মৃত্যু
বিষাদ মৃত্যু
আজ জানুয়ারির শেষ রবিবার , বেঙ্গালুরু এর একটি বাড়ি , জায়গার নাম মারুথিনাগার। সত্যনারায়ণ পূজা হচ্ছে বাড়িওয়ালা কোটি সাহেবের এর গ্রাউন্ড ফ্লোর ফ্লাট এর ডাইনিং হলএ । প্রায় চারতলা বাড়ির দুটো উইংস এর প্রত্যেক অংশে ২ বি এইচ-কে ফ্লাট তে ভাড়াটে রয়েছে, আর রয়েছে রুফ টপ গার্ডেনে নানা রকম ফল এবং ফুলের গাছ। মিস্টার কোটি নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা করেন এবং ফলস্বরূপ ছোট ছোট গাছগুলোতে বেদনা , টমেটো ও বেগুন সহ আরো নানা সবজির সমারোহো ,
কোটি দম্পতি পূজাতে বসেছেন , অনেক অতিথি অভ্যাগত এসেছেন। তাছাড়া বাড়ির ভাড়াটেরা ও উপস্থিত। স্বামী এবং স্ত্রী দুজনকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে মনে হচ্ছিলো তাদের আবার বিয়ে দেওয়া হবে। বর আর কনের সাজে বড়োই ভালো লাগছে। যদিও বয়স তাদের চল্লিশ এর কোটায়। আছে দুটি কন্যা আর পুত্র সন্তান।
পূজাতে দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে মংত্র উচ্চারণ চলছে। এরপর আরতি শুরু হল। কোবিদ ১৯ এর ফার্স্ট ওয়েভ এর শেষ দিক চলছে। মাস্ক পরে নেই বেশিরভাগ লোকে কারণ সংক্রমণ নাকি খানিকটা স্বস্তির আবহাওয়া। আরতির সময় উপস্থিত সকলে "জয় জগদীশ ও হরে "গানের সঙ্গে গলা মিলিয়েছ। পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ চলছে। প্রথমে সত্যনারায়ণ পূজার আসল প্রসাদ সিন্নি দেওয়া হল। এরপর সুজির মিষ্টি প্রসাদ। তাছাড়া চলছে চা ও কফির ব্যবস্থা। সবাই একতানে কলরব করছিলো। হাসি , গল্প এবং অনেকদিন পরে এই পূজানুস্টানের জন্য সকলে একত্রিত হয়ে চারিদিকে খুশির মেজাজ।
হঠাৎ "আরে আরে দেখো পরে যাচ্ছে , ধরো ধরো , কি হলো , শরীর খারাপ লাগছে নাকি , কি হলো , ওমা কিছুই যে বলছে না । মুখ কালো হয়ে যাচ্ছে । " চারিদিক থেকে হৈ হৈ করে উঠলো সবাই। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়লো দেহটা। বাড়িওয়ালা মিস্টার কোটির মামাতো বোন সুশীলা একটি নার্সিং হোম তে কাজ করেন। বয়স পঞ্চাশ বা পঞ্চান্নর মধ্যে। এমনিতেই তার আজকে শরীর ভালো যাচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো প্রেসার বেড়েছিল। তাও সত্যনারায়ণ এর পূজার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছিলেন , তারপর এই অবস্থা। এম্বুলেন্স চলে এসেছিলো। কাছের হাসপাতাল তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু শেষ রক্ষা হলো ন। হাসপাতাল তেই মারা গেলেন সুশীলা দেবী। ডাক্তার এখন কিছু বলছেন না তবে মৃত্যু সন্দেহজনক ভাবে হয়েছে। বয়স পঞ্চাশ এর উপরে এবং তার উপর মেয়েলি রোগ তো ছিলই। স্বামী মারা গিয়েছে প্রায় বছর পাঁচেক আগে। আছে দুই ছেলে , বড় ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার , একটা আইটি ফার্ম তে কাজ করে। ছোট ছেলে এখনো পড়াশুনা নিয়ে আছে।
এই অকস্মাৎ ঘটনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। এতে নানা মুনির নানা মত্ পোষণ করছে।
সোমবার , যেহেতু মৃত্যু টা অস্বাভাবিক ,হাসপাতাল কতৃপক্ষ পুলিশ কে ইনফর্ম করেছিল গতকালই । ডাক্তার এর মতে বিষক্রিয়াতে এই মৃত্যু। মৃতদেহটা পোস্টমর্টেম এর জন্য পাঠানো হয়েছিল।
যেহেতু ঘটনা টি কোটি দম্পতির বাড়িতে হয়েছে , পুলিশ তাদের বাড়িতে পৌছালো ,কিন্তু তখন অতিথিরা সবাই বিদায় নিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসা পর্ব শুরু হলো। পুজোর প্রাসাদ এবং দুপুরের খাবার সবাই খেয়েছেন এবং কোনো অসুস্থতার খবর পাওয়া যায়নি এখনও। সুতরাং এর থেকে বোঝা যায় যে ফুট পয়জন নয়। বাড়িওয়ালা পুলিশ কে প্রায় সকল অতিথির মোবাইল নম্বর শেয়ার করলেন।
সুশীলা দেবীর স্বামীর নিজস্ব বাড়িতে থাকতেন। বেঙ্গালুরু তে ফনিক্স মার্কেট সিটি এর কাছেই বাড়ি। পূজার দিন সকালে ব্রেকফাস্ট করেছিলেন। রান্নার লোক হেল্প করে দেয়। নরমাল পোহা বানিয়েছিলেন , তবে শোনা গেল যে সুশীলা দেবীর একটা অভ্যাস ছিল কিছু একটা মিষ্টি মুখে রাখা , যেমন ক্যাডবুরি , নিজের হ্যান্ড ব্যাগ রাখা থাকতো। পূজা বাড়িতে খাবার বলতে আগেই বলা হয়েছে যে সিন্নি মাখা আর সুজির প্রাসাদ দেওয়া হয়েছিল প্রাথমিক ভাবে। পরে লাঞ্চ তে চার পাঁচ রকম তরকারি , সাউথ ইন্ডিয়ান কারি , পুরান পুলির মতো মিষ্টি পুর ভরা রুটি , বেগুন ভর্তা , সালাদ , শাক দিয়ে ডাল , সবশেষে ছিল পায়েস। পিওর ভেজ খাবার। আর চলছিল চা ও কফির ঢালাও আয়োজন।
এটা অনুমান করা হচ্ছে যে সুশীলার মৃত্যু একটা মার্ডার , কিন্তু কেন ?? কি এমন হলো যে সুশীলা কে মরতে হল??
বাড়িওয়ালা কোটি সাহেব বলছেন ,"দেখো বড় ছেলে ই কিছু করেছে। বাড়িটা বিক্রির জন্য চাপ দিছিলো , বাড়ি ভেঙে ফ্লাট বানালে নিজের সেই পয়সায় বিসনেস করবে। হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে এর জন্য ভালো মতো চাপ ছিল ।
সুলোচনা , কোটি সাহেবের ওয়াইফ বললেন , "সুশীলা দি কিছুতেই রাজি ছিলেন না , তার কাছে স্বামীর স্মৃতি চিহ্ন টা অনেক দামি ছিল। তাছাড়া ছোট ছেলের কথা তো ভাবতে হত। “
মঙ্গলবার , সুশীলা দেবীর দেহ ছাড়া পাওয়া গেলো অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে , যেহেতু পুলিশের হস্তক্ষেপে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়ার পর। বড় ছেলে সাগর একটু অন্য মনস্ক। কি ভাবছে ?? ঘন ঘন মোবাইল ফোন আর সিগারেটে টান দিয়ে যাচ্ছে। গার্ল ফ্রেন্ড ও উপস্থিত , পুরো ব্যাপারটায় সে ভীষণ ঘাবড়ে গেছে। ছোট ছেলে কিষান আত্মীয় স্বজন দের সাথে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বিব্রত বিষন্ন। দাদার সাথে তার খুব একটা ভাব ভালবাসা ছিল না । সে খুব ভেঙ্গে পরেছে মানাসিকভাবে । মা চলে যাওয়ায় সে নিজেকে বড়োই একা মনে করছে
। দেহ দাহ করে বাড়ি ফিরে এলো দুই ভাই, সঙ্গে অনন্য আত্মীয় স্বজন রয়েছে। রাত্রিতে দুই ভাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে। কিষান বলে উঠে "দাদা কি হলো বলতো ? এইভাবে মা চলে গেলেন। শেষে কিনা বিষ দিয়ে মারা হলো ?? কে এমন অদৃশ্য শত্রূ ? তবে তোমার তো রাস্তা পরিষ্কার। সাগর বলে উঠলো "বোকার মতো কথা বলিস না , মা এর অনুমতি ছাড়া এ বাড়ি বিক্রি করতে পারবো না। মা এর মৃত্যু তে ব্যাপার আরো জটিল হয়েছে। সবাই জানে যে আমি বাড়ি বিক্রি করার জন্য মায়ের সাথে ঝগড়া করেছিলাম। জানি না পুলিশ কি ভাবে নেবে ব্যাপার টা। বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি।
আজ প্রায় পাঁচ দিন হয়েগেছে ঘটনাটির , ওদিকে পুলিশ থানায় ইনচার্জ পুলিশ ইন্সপেক্টর মিস অশ্বিনী , ইনভেস্টিগেশন অফিসার বলছেন - হোয়াট এ স্ট্রেঞ্জ ইনসিডেন্ট। একজন সাধারণ মহিলাকে কে বিষ দিয়ে হত্যা করলে ??
অ্যাসিস্ট্যান্ট চন্দ্রু বলছে "ঠিক ই বলেছেন ম্যাডাম। সে দিন উপস্তিত সকল অতিথিকে সবাই কে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু রহস্য জনক আভাস তো পেলাম না। সুশীলা দেবী তো সুস্থ শরীরেই পুজোর বাড়িতে এসেছিলেন। সবার সঙ্গে ঠিক ভাবে কথা বলছিলেন। এমনকি আরতির সময় সকালের সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানতে পারা গেলো যে জোরালো কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছিল। দুই দুই এ চার করলে মৃত্যু কোটি সাহেবের বাড়িতে হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট বিষ এর উৎস সেই বাড়িতেই পাওয়া যাবে। পুলিশের গাড়ি চললো মারুথিনগর এর কোটি সাহেবের বাড়ি , খানা তল্লাশ এর ওয়ারেন্ট নিয়ে অশ্বিনী বাড়িতে প্রবেশ করল। পুরো বাড়িতে তল্লাশি করা হল। বেশি খুঁজতে হয়নি , ছাদের ঘরে কীটনাশক পাওয়া গেলো। কোটি সাহেব রীতিমত ঘাবড়ে গেছে , কারণ সে এই কেমিকাল টি রেগুলার ব্যবহার করেন। বাগান পরিচর্যা করার জন্য , স্প্রে করেন পোকা তাড়াবার জন্য। মিস্টার কোটি তো কিছুতেই মুখ খুলতে চাই না। অনেক জিজ্ঞাসা বাদের পর কোনো স্ট্রং মোটিভে পাওয়া গেলো না তখন কার মত। সুশীলা র সঙ্গে কারোর কোন ঝগড়া বা মনো মালিন্য ছিল না। সবার সাথে হাসি মুখে ছিল, পূজার সময় মোবাইল ফোন তে ভিডিও করে ছিল। তার একটা কপি নিয়ে নেওয়া হল।
প্রায় পাঁচ ঘর ভাড়াটে এই বাড়িতে , তিন ঘর ভাড়াটে ফুল ফ্যামিলি সাথে মানে স্বামী স্ত্রী ছেলে মে একসাথে থাকে। বাকি এক দিকে থাকে ভাই বোন , মাঝে মাঝে ওদের মা , মাসি ও অন্য আত্মীয় স্বজন রা এসে থাকে। আর সব থেকে বড় কথা যে সুশীলার সাথে ভাড়াটে দের কারোর সেরকম পরিচয় নেই। শুধু মুখ চেনা।
ইন্সপেক্টর অশ্বিনী বললেন , "চন্দ্রু , সুশীলার ফোন নম্বর এবং ব্যাঙ্ক একাউন্ট স্টেটমেন্ট এর ডিটেলস বার করো। হয়তো কোনো খবর পাওয়া যেতে পারে।
সিটি হল নার্সিং হোম , মারুথিনগর , ডাক্তার বিজয়ান, নার্সিং হোমের হর্তা কর্তা, তার চেম্বার এ আজকে খুব অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন। রিসেপশন থেকে কল গেল চেম্বারে। ইন্সপেকর অশ্বিনী এসেছেন Dr বিজয়ান এর সাথে দেখা করতে। প্রাথমিক পরিচয় পর্ব শেষ হলে আসল কথা তে আসলো অশ্বিনী। "আপনার এই নার্সিং হোম এর প্রয়াত মহিলা কর্মী সুশীলা দেবীর সম্বন্ধে কিছু খবর দিতে পারেন। কিরকম ছিলেন এমপ্লয়ী এবং মানুষ হিসাবে ?? " ডাক্তার বললেন কাজের বাইরে তো আমার সাথে বিশেষ একটা পরিচয় ছিল না। প্রায় অনেক বছর ই তিনি কাজ করেছিলেন। অমায়িক এবং নিজের কাজে কোনো রকম ফাঁকি ছিল না। "
হঠাৎ ই এক অল্পবয়সী মহিলা ডাক্তার চেম্বার তে ঢুকতে গিয়ে ও থমকে দাঁড়ালো ইন্সপেক্টর অশ্বিনী কে দেখে। সে চোখে ছিল বিস্ময় আর ছিল ভয়ের ছায়া। ডাক্তার বিজয়ান বললেন "কিছু বললেন নাকি ডাক্তার মীনাক্ষী ?? "মীনাক্ষী বললেন "না ডাক্তার সেরকম কিছু জরুরি নয়। পরে আসছি। "বলে তিনি চলে গেলেন। কিন্তু অশ্বিনী র থার্ড আই তে অবগত হলেন যে মীনাক্ষী আড়ি পাতছে। এরপর বেশিক্ষন কথাবার্তা এগোয়নি। কারণ ইনফরমেশন গুলো নতুন নয়। ডাক্তার বিজয়ান অত্যন্ত সতর্ক ভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন।
অশ্বিনী এর মনে খটকা। ইনভেস্টিগেশন এর নতুন দিক। এটা এক্সপ্লোর করতে হচ্ছে। চন্দ্রু কে বললো "মনে হচ্ছে কিছু গন্ডগোল আছে। তোমার ইনফর্মার নেটওয়ার্ক এক্টিভেট কর। নার্সিং হোম এর ভিতরের সব খবর চাই । " যদিও এখন তো প্রত্যেক বড় প্রতিষ্টানে কিছু না কিছু ঘোটালা থাকেই। কিন্তু সেখানে যদি না কোনো খুনের ঘটনা ঘটে থাক।। তাই কোনো রিস্ক নেওয়া উচিত নয়। নেড়ে ঘেটে দেখতেই হচ্ছেই। হয়তো কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোতে পারে।
এদিকে , কোটি সাহেবের বাড়ি "জয় ভবানী কৃপা "তে ভাড়াটে দের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। সবথেকে ফার্স্ট ফ্লোর এর মিস্টার প্রকাশন, কর্ণাটকই রিটায়ার্ড , স্ত্রী এর সঙ্গে থাকেন একজন নিপাট ভদ্রলোক। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে , তারা কাছেই থাকে। নাতি নাতনি দের নিয়ে দিব্যি দিন কাটছে। এই ফ্লোরের অপর দিকে থাকে মঞ্জুলা এবং তার স্বামী ও কুড়ি বছরের ছেলে। মঞ্জুলা পেশায় মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার , হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড তে সার্ভিস করেন। ছেলে MBA পড়ছে। তিন তলায় বাঁ দিকের ফ্ল্যাট তে থাকে আকাশ এবং তার মা এবং বোন এর সাথে। মাঝে মাঝে ওড়িশা থেকে তাদের আত্মীয়রা আসেন এবং কয়েকদিনের জন্য থেকে যান। তিন তালার অপর দিকে থাকেন মিস্টার শঙ্কর তার ফুল ফ্যামিলি , দুই ছেলে ও স্ত্রী এর সাথে।
মিস্টার শঙ্কর এর নিজের ষ্টেশনারী দোকান আছে , বড় ছেলে একটা কল সেন্টার তে কাজ করে আর ছোট ছেলে কলেজ পাস আউট। এখনো সে রকম কিছু করে না । অন্য লোকের মাধ্যমে জানা যায় যে মাঝে মাঝে সে পাশের ফ্ল্যাট শিখার সঙ্গে কথা বলে। মনে হয়ে তার কিছু ইন্টারেস্ট আছে।
উল্লেখযোগ্য যে সেদিন রবিবার হওয়ায় ভাড়াটে দের সবাই পূজা তে উপস্থিত ছিল। অশ্বিনী সবার সঙ্গে কথা বলেছে , কিন্তু কিছু মোটিভ তো পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ খুন এই বাড়িতে হয়েছে , সুতরাং বাড়ির কেউই এই কাজ করেছে। অশ্বিনী চন্দ্রু কে সবার উপর অলক্ষে নজর রাখতে বললো।
সুশীলা দেবীর ব্যাঙ্ক একাউন্ট এবং ফোন নম্বর থেকে কোনো বিশেষ সূত্র পাওয়া গেল না। তার ছেলেরা ও থানা তে এসে জিজ্ঞাসা করেছিল তাদের মা কে মারলো। অশ্বিনী বলে যে ইনভেস্টিগেশন চলছে।
প্রায় পনেরো দিন অতিবাহিত হয়েছে সুশীলার মৃত্যু। অশ্বিনীর ফোন বেজে উঠলো। ইনফর্মার কল করেছে। খানিক্ষন ফোনে ব্যস্ত রইলো অশ্বিনী। তারপর চন্দ্রু কে বললো নার্সিং হোম তে ভালোই গড়বড় চলছে। আর কিছুদিন এর মধ্যে সঠিক খবর পাওয়া যাব।
এদিকে কোটি সাহেবের বাড়ির ছাদে শিখা তাদের ঘরের ডাস্টবিন এর ময়লা ফেলে ডাস্টবিন তে ধুতে গেছিলো , পিছনে পিছনে পাশের ফ্ল্যাটের মিস্টার শংকর এর ছোট ছেলে বিনয় পৌছেছে সেখানে। শিখাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে। বিনয় রা কার্নাকাটি এবং হিন্দি খুব ভালো বলতে পারে না । ও দিকে আকাশ তিন তলা থেকে ডাক পেরেছে "মিঠু (শিখা র ডাক নাম ) তুই কোথায় ?? "এবং ডাকতে ডাকতে ছাদের উপর উঠে এসেছে। দু জন কে একসঙ্গে দেখে তো রেগে অগ্নি শর্মা। সে অনেকদিন থেকে লক্ষ করেছে যে বিনয় শিখা কে ফলো করছে। আকাশ চিৎকার করে উঠলো ইংলিশ তে এবং শিখা কে নিয়ে নিচে চলে আসল। বিনয় কিছু বলতে চাইলো কিন্তু আকাশের সামনে ফিকা পরে গেল।
আজকে আকাশের জন্মদিন , শিখা কে বলেছিলো আজ বাইরে লাঞ্চ করবে। পাঁচ দিন আগে আকাশের মা ওড়িশা তে চলে গেছে। বাড়িতে কি একটা বিশেষ দরকার পড়েছে। না হলে আজকে সবাই মিলে আনন্দ করা যেত।
আকাশ একটা IT কোম্পানি তে অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার , ব্যাঙ্গালোরে প্রায় পাঁচ বছর আছে। শিখা আকাশের বোন , মানে নিজের মায়ের পেটের নয় , দূর সম্পর্কের কাকার মেয়ে।
ছোটবেলা থেকে আকাশদের বাড়িতে থেকে মানুষ হয়েছে। সে আকাশের থেকে ছয় বছরের ছোট। আকাশের নিজের কোনো বোন নেই। বিগত পাঁচ বছরে শিখা এবং তার মা , বোন , দাদা সবাই অনেকবার বেঙ্গালুরু এসেছে ছুটি কাটাতে। কিন্তু গত এক বছর ধরে শিখা ব্যাঙ্গালোরের একটি ইনস্টিটিউট থেকে ইন্টেরিয়র ডিসাইন এর উপর ডিপ্লোমা কোর্স করছে। বলা বাহুল্য সেই সূত্রে আকাশের সঙ্গে থাকছে।
সকালের ঘটনা তে আকাশের মুড খারাপ হয়ে গেছিলো। লাঞ্চ প্রোগ্রাম ক্যানসেল করে দেয়। সন্ধ্যাবেলা আকাশ বাইরে বেরিয়েছিল। এসে দেখে যে ঘরটা বেলুন আর ক্যান্ডল দিয়ে সাজান।
একটা চকলেট কেক রাখা আছে। শিখা এসে কান ধরে বলে , ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ প্লিজ মাফ কর।
সামনে ভ্যালেন্টাইন্স ডে আসছে। বিনয় চাইছিলো শিখা কে প্রপোজ করতে। কিন্তু কিছুতেই সুযোগ পাচ্ছিলো না । এর মধ্যে আকাশ কোটি সাহেবের কাছে এসে বলে যে সে কিছুদিন এর মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে কারণ তার নতুন জব এর লোকেশন অনেক দূর পড়ছে এখন থেকে। তাছাড়া নতুন জব তে পনেরো দিন এর মধ্যে জয়েন করতে হবে , আর এই রকম কোবিদ টাইম তে এতো ভালো জব অপর্চুনিটি ফেলা যাবে না। তাই সে কোটি সাহেব কে রিকোয়েস্ট করছে যে যেন তার সেক্যুইরিটি ডিপোজিট এর পয়সা ফেরত দেন। ওই পয়সা সে অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া র জন্য দিতে চায়।
কোটি সাহেব বললেন , আপনি তো জানেন বিসনেস কি রকম যাচ্ছে। আরেক জন ভাড়াটে পেলে তারপর তার কাছ থেকে পয়সা পেলে আপনাকে দিতে পারব। দেখছি কি করা যায়। ব্রোকার দের সঙ্গে দেখা করতে হবে। মিস্টার কোটি র ওয়াইফ সুলোচনা সামনেই ছিলেন। তিনি হঠাৎ বলে উঠে আপনার বোন কে দেখতে পাই না এখন বিশেষ। শরীর ঠিক আছে তো ?? খুব মিশুকে পুজোর দিন সবার সঙ্গে ভালো ই মিশে গেছিলো। পুজোর কাজে খুব হেল্প করেছিল। আকাশ বললো "সামনে এক্সাম আছে , তাই পড়াশুনা তে ব্যস্ত। ''
ইতিমধ্যে ইন্সপেক্টর অশ্বিনী রিপোর্ট পেয়েছে যে সিটি হল নার্সিং হোম তে কিছু সিরিয়াস ব্যাপার ঘটছে। সম্ভবত অবৈধ অপারেশন্স হয়ে থাকে। কিন্তু এই খবরের সাপোর্ট তে যথেষ্ট প্রমান দরকার। এর জন্য নার্সিং হোম তে সার্চ চালানো খুব দরকার। ইন্সপেক্টর অশ্বিনী আর কিছুতেই সময় নষ্ট করতে চাইছিলো না। খুব বড় সূত্র পাওয়া গেছে। নার্সিং হোম এ সাডেন চেক এর জন্য ওয়ারেন্ট ইসু করতে উপর মহল থেকে পারমিশন নেওয়ার ব্যবস্থা করতে সময় লাগলো খানিকটা।
আজ ফোরটিন্থ ফেব্রুয়ারী , ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সকালবেলা থেকে বিনয় ছটপট করছে। শিখা ডাস্টবিন পরিষ্কার করে ফিরে আসছিলো। বিনয় একটা গোলাপ ফুল এগিয়ে দিয়ে কিছু বলতেই , শিখা ইংলিশ তে বললো , সরি , আই এম এনগেজড। বিনয় আর কিছু বলতে পারে না। দাঁড়িয়ে থাকে। শিখা চলে যায় পাশ কাটিয়ে। নিচে পৌছানোর সঙ্গে সঙ্গে আকাশ চিৎকার করে উঠে আর বিনয় কে গালি দিয়ে ওঠে।
খানিক্ষন পরে শোনা যায় বিনয়ের মা ছুটছে বিনয়ের পিছনে। বিনয় একটা বড় ব্যাগ নিয়ে ছুটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
সিটি হল নার্সিং হোম তে আজ পুলিশের সার্চ চলছে। প্রায় দু ঘন্টা হয়ে গেছে। প্রাথমিক বাধা দেওয়া সত্ত্বেও ডাক্তার বিজয়ান কিছু করতে পারলেন না আস্ফালন করা ছাড়া। সমস্থ ডাক্তার এবং নার্স দের জেরা চলছে। কম্পিউটার সিস্টেম এবং ফাইলিং সিস্টেম কে তোলপাড় করা হচ্ছে।
প্রত্যেক রেকর্ডস কে আলাদা করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আবনর্মালিটি দেখলেই তা রেড মার্ক করা হচ্ছে যে তার উপর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ডাক্তার বিজয়ান কে তার চেম্বার তে নজরবন্দি করা হয়েছে। নার্সিং হোম এর অনেক রহস্য ফাঁস হওয়ার মুখে।
ইন্সপেক্টর অশ্বিনী খবর পেলো যে সুশীলা দেবীর বড় ছেলে মিউনিসিপালিটি থেকে ডেথ সার্টিফিকেট বের করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। ডেথ সার্টিফিকেট থেকে সে সুশীলা দেবীর সম্পত্তির অধিকারী হিসাবে সার্টিফিকেট ইসু করাবে।
তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা , অশ্বিনীর মোবাইল ফোনে বেজে উঠলো। তার মুখ গম্ভীর হয়ে উঠলো।
খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো। চন্দ্রু কে বললো কাল সকালে এস কোটির বাড়িতে যেতে হবে।
আজ সুশীলা দেবীর মৃত্যুর প্রায় একুশ দিন পর , তখন সকাল এগারোটা , পুলিশের গাড়ি পৌছে গেল কোটি সাহেবের বাড়িতে। সকাল সকাল পুলিশের কাছ থেকে ফোন পেয়ে কোটি সাহেব বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন। কি আবার হলো ? অশ্বীনির অ্যাসিস্ট্যান্ট চন্দ্রু কোটি সাহেব কে ফোন করে বাড়ির সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলেছিল।
সেইমতো পুলিশ এসে পৌছালে সবাই উপস্থিত হয়েছে। সুশীলা দেবীর দুই ছেলে কেও দেখা গেল সেখানে হাজির থাকতে।
ইন্সপেক্টর অশ্বিনী উপস্থিত সবার উপরে নজর বুলিয়ে বলতে শুরু করলেন,
সুশীলা দেবী বছর পঞ্চান্ন বয়স্ক এক সাধারণ মহিলা যিনি সিটি হল নার্সিং হোম তে কাজ করছিলেন প্রায় ১০ বছর। আমরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানতে পারি যে তাঁকে বিষ দেওয়া হয়েছে , যা কিনা তীব্র কীটনাশক , যা দিয়ে গাছের পোকা মারা হয়ে থাকে। কিন্তু এই কীটনাশক মানুষের উপর প্রয়োগ করলেও মানুষের মৃত্যু হয়।
যেহেতু মৃত্যু এবং বিষের উৎসস্থল এই বাড়ি , তাই সন্দেহ গিয়ে পড়ে সমস্ত বাইরের অতিথি এবং উপস্থিত বাড়ির লোকেদের উপর। মিস্টার কোটির মামাতো বোন সুশীলা দেবী খুবই মিশুকে এবং নির্বিরোধই ছিলেন। কারোর সাথে তার কোনো রকম ঝগড়া হয়নি। শুধু মাত্র সুশীলা দেবীর বড় ছেলে সাগর এর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়ে বাড়ি বিক্রি নিয়ে। এক্ষেত্রে আমরা ভাবতে পারি যে সে তার মা কে খুন করে পথের কাঁটা সারানোর জন্য।
সাগর বলে উঠে , না আমি কিছু করিনি , আমি কিছু জানিনা।
অশ্বিনী বলে উঠে , ঠিক আছে আপনার কথা আমরা পরে শুনবো।
এবার আসি সিটি হল নার্সিং হোম কথায় , সেই নার্সিং হোম তে অনেক কিছু রহস্য জনক রয়েছে। সেখানে অনেক অবৈধ কাজ করা হয়ে থাকে। ডাক্তার বিজয়ান তা নিজ মুখে স্বীকার করেছে। অনেক ইললিগাল ওয়ার্ক এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ প্রেগনেনসি এবরশন। যে সমস্ত মহিলারা বিবাহের আগে অসতর্কতার বশে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পয়সার বিনিময় এইসব এবরশন গুলো করতো। অনেক সময় পেসেন্ট দের জীবন বিপন্ন হয়েছে এবং মৃত্যু ও হয়েছে।
সুশীলা দেবী অনেক বছর এই নার্সিং হোম এ কাজ করেছেন। তাই প্রতক্ষ্য ভাবে না হলেও তিনি এই কাজ গুলো কে কিছুতেই মেনে নিতে পারতেন না। কিন্তু যেহেতু নির্বিরোধী প্রকৃতির ছিলেন তো কারোর সাথে কোনো ঝামেলা তে যাননি। কিন্তু তিনি যে চাকরি ছেড়ে দেবেন এইরকম পরিকল্পনা চলছিল মনে মনে। কিন্তু তার আগেই তাঁকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হল।
অশ্বিনী বলে চলে , সুশীলা দেবী বিনা অপরাধে মৃত্যু মুখে ঢোলে পরে ছিলেন শুধুমাত্র কারুর ইম্পালসিভ ডিসিশন এর জন্য। সুশীলা দেবী পূজার দিনে এমন কাউকে দেখতে পেয়েছিলেন এই বাড়িতে যাকে তিনি তার নার্সিং হোম তে দেখেছিলেন এবং এখানে সেই ব্যাক্তি কে এক্সপেক্ট করেননি। মার্ডারার যখনি সুশীলা দেবীর সামনে সামনি হয় তো তার মনে সন্দেহ জাগে এবং তিনি সেই ব্যাক্তি কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমার ধারণা সেই ব্যাক্তিটি প্রমাদ গোনেন এবং সমস্ত ঘটনা কে গোপন করতে গিয়ে এই কাজ করে বসে।
অশ্বিনী এবার আকাশের দিকে ফিরে বলে উঠে , আপনার বোন কে তো দেখতে পাচ্ছি না। তিনি কোথায় ?? আকাশ বলে , সে ঘরে আছে , শরীর অসুস্থ। অশ্বিনী বলে উঠে , কিন্তু শিখা কে এখানে চাই , তিনি তো সেদিন সবার সাথে পূজার সময় ছিলেন। আকাশ বলে উঠে , আপনি আমাকেই বলুন না কি জানতে চান।
এবার অশ্বিনী সোজ সুজি আকাশ কে প্রশ্ন করে , আচ্ছা আপনার বোন তো সিটি হল নার্সিং হোম তে ভর্তি হয়েছিল গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। কি হয়েছিল তার ??
আকাশের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে উঠে , কিছু না সেরকম। পেটের তলপেটে গ্যাস্ট্রিক পেন এর কারণে।
অশ্বিনী বলে , হুম বুঝলাম , কিন্তু চার মাসের প্রেগন্যান্সি টার্মিনেট করার ও প্রয়োজন হয়েছিল কি ??
আপনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন রেকর্ড কে চেঞ্জ করে দিতে। কিন্তু শুধু রোগের নাম চেঞ্জ করলেই কি সব হয়। ওষুধ এবং অন্যান্য রেকর্ডস গুলো তো চেঞ্জ করতে হত। এই সব ওসমাঞ্জস্য গুলো ইনভেস্টিগেট করতে গিয়ে ধরা পরে যায়।
এদিকে বাড়ির তিন তলায় শিখার মনে চলছিল ভীষণ তোলপাড়। নিচে কি হচ্ছে তা জানার অদম্য ইচ্ছা জাগে তার মনে। সে চুপি সাড়ে নেমে আসে এবং জানলার বাইরে আড়ি পেতে শুনতে থাকে অশ্বিনীর কথা। ইতিমধ্যে সে শুনতে পাচ্ছে যে আকাশ কে জেরা চলছে। আকাশ উত্তর দেয় "এতে অবাক হবার তো কিছু নেই। আমার বোন অসুস্থ হয়ে ছিল তো নার্সিং হোম তে ভর্তি হয়েছিল:। তাতে এর সঙ্গে মার্ডার এর কি সম্পর্ক??
অশ্বিনী বলে , হ্যা সাধারণ ভাবে দেখলে কিছুই নয়। যদি না এই কলঙ্ক সবার সামনে ফাঁস হয়ে যায়। তাছাড়া এই অবৈধ বাচ্চার বাবা কি আপনি ছিলেন। কারণ হাসব্যান্ড এর নাম এর জায়গায় তো আপনার নাম সই রয়েছে। আপনি তো ভাই হন। শিখা কি আপনার নিজের বোন??
আকাশ জোর গলায় বলে উঠে , না , সে আমার কাজিন সিস্টার। আর আমি যদি নাম সই করে ও থাকি তাতে কি ?
অশ্বিনী বলে , তাহলে রেকর্ড ডিলিট করার জন্য নার্সিং হোম এর রেকর্ড কিপিং ডিপার্টমেন্ট এর লোক কে কেন টাকা দিয়ে ছিলেন?? ইনভেস্টগেটে সব ফাঁস হয়ে গেছে। সে সব কিছু স্বীকার করেছে জেরার মুখে ।
আমার ধারণা সুশীলা দেবী সেদিন শিখা এবং আকাশ কে একসাথে দেখে মনে মনে ভাবে যে ওদের তিনি চেনেন। সেকারণে শিখার সাথে কথা বলে তা কন্ফার্ম করার চেষ্টা করছিলেন। সুশীলা দেবী মনে করেছিলেন যে তারা হাসব্যান্ড এবং ওয়াইফ। তাতে ফল উল্টো হলো। ইম্পালসিভ ডিসিশন নিয়ে ফেলেছিলো। লজ্জার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য শিখা ছাদের ঘর থেকে কীটনাশক নিয়ে এসে চা এর সাথে মিশিয়ে দেয় যাতে চির কালের জন্য তার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সুশীলার শরীর সেদিন এমনিতেও খারাপ ছিল। প্রেসার হাই ছিল। এই সময় চা এর মধ্যে বেশি মাত্রায় কীটনাশক থাকায় শরীরে বিষ ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বিনয় তাঁকে দেখে ফেলে ছাদের ঘর থেকে নামার সময়। কারণ বিনয় সব সময় শিখা কে ফলো করতো। এই কথা সে কাল আমাদের জানিয়েছে। হয়তো প্রেমে ব্যর্থ হবার প্রতিশোধ।
এদিকে সব কথা শুনে শিখা ভয়ে গুটিয়ে যায় , কি হবে এবার সবাই সব গোপন কথা জানতে পেরে যাবে। সে আর লুকিয়ে রাখতে পারবে না। আকাশের দূর সম্পর্কের বোন হলেও ছোট বেলা থেকে আকাশদের বাড়িতে থেকে মানুষ হয়েছে আর রয়েছে আকাশের উপর অসম্ভব টান। বয়স বাড়ার সাথে সম্পর্কে ভাই বোনের পরিচয় ছাড়াও তাদের অন্তরঙ্গতার কথা কেউ কোনদিন জানতে পারেনি। না তাদের মা বাবা , না অন্য আত্মীয় স্বজন। সবার সামনে দুই জনে এমন স্বাভাবিক ব্যবহার করে যে এই দুজনের সম্পর্কের গভীরতার তল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই ভাবেই বাইরের জগতের সামনে সবকিছু গোপন ছিল। ছোটবেলার সম্পর্ক কৈশোর এবং যৌবনের সন্ধিক্ষণে এসে মনে হয়েছিল যে তা সাধারণ ভাই বোন এর সম্পর্ক নয়। আকাশ এবং মিঠু ( শিখা) দুই জনই প্রবল আকর্ষণ অনুভব করে।
ভাই ফোঁটা ও রাখি পূর্ণিমার দিন গুলো খুব চালাকির সাথে নিয়ম পালা এড়িয়ে চলেছে।
ভালোই নিরুদ্বেগে কাটছিলো এই দিনগুলো বেঙ্গালুরু তে । দু জন দুই জন কে একান্ত ভাবে পেয়ে সুখের সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছিল তাদের প্রেম। কোবিদ ১৯ এর সংক্রমণ কালে গোটা দেশে লক ডাউন ঘোষণা হওয়াতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর কারণে বেশির ভাগ সময় সবাই বাড়িতে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করেছে।
আকাশ এবং শিখা ও এর ব্যতিক্রম নয়। দু জন দুই জন কে নিজের মতো করে নিতে পেরেছিলো। এই সময় বাড়ির লোকেদের নজরদারি নেই। ফলস্বরূপ অসতর্কতার বশে শিখা মাস দুইয়েকমধ্যে অসুস্থ হয়ে পরে বিশেষ কারণে। লক্ষণ গুলো আর কিছুই নয় , পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় , বমি অরে জ্বর , দুর্বল।
এবার আর রক্ষা নেই , দুই জনে আতঙ্কে নীল হয়ে যায়। হায় রে কি ভাবে লুকাবে এবার ?? এভাবে তিন মাস কাটলো। তখন কোবিদ এর লক ডাউন শেষের মুখে। কিছু তো ব্যবস্থা করতে হবে। একবার আকাশ বলেছিলো , চল আমরা বিয়ে করে নি। সবাই জানলে জানবে। কিন্তু শিখা ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিল। বাবা শুনলে আর রক্ষা থাকবে না । এমনিতে তার হার্ট দুর্বল। কারোর কাছে মুখ দেখাতে পারবে না। এর পর সিটি হল নার্সিং হোম তে আকাশএর চেনা লোক থাকায় তারা এখানে আসে এবং এবরশন এর পর শিখার হেলথ খুব উইক হয়ে যায়। ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন হয়েছিল। কোনো রকমে সেই সিচুয়েশন কে হ্যান্ডেল করেছিল নার্সিং হোম। সুশীলা দেবী এই সময় আকাশ এবং শিখার খুব কাছে এসে পড়েন। প্রায় তাদের কথা হতো নার্সিং হোম তে এবং সে সময় তিনি তাদের খেয়াল রেখেছিলো।
সেই সুশীলা দেবী ধূমকেতুর মতো পূজার দিনে এসে পড়ায় শিখা ভয়ে ত্রস্ত হয়ে গেছিলো। সে সময় আকাশের মা ও বেঙ্গালুরু এসেছিলেন ছুটি কাটাতে। বেগতিক দেখে শিখা ইম্পালসিভ ডিসিশন নেয় যা কিনা সে আকাশের অজান্তে কাজটা করে ফেলে।
শিখা বরাবর একটু নারভাস প্রকৃতির আর এর জন্য অনেক ভুল ও করেছে। সে জানতো বাড়িওয়ালা মিস্টার কোটি রোজ সকালে ছাদে গাছের পরিচর্যা করেন এবং তা খুব সিরিয়াস ভাবে। সব কিছু উপকরণ তার মজুত থাকে ছাদের ঘরে। শিখা কিছু চিন্তা করে না , সোজা উঠে যায় ছাদের ঘরে আর কীটনাশক এর বোতল থেকে কিছুতে সঙ্গের গ্লাস এ নিয়ে নিচে নেমে আসে দ্রুতপদে। ইতিমধ্যে পূজা হয়ে গিয়েছিলো আর চা , কফি দেওয়া চলছিল। শিখা চা দেবার দায়িত্ব নিয়ে খুব সাবধানে কীটনাশক মিশিয়ে দিয়ে ছিল আর নিদৃষ্ট কাপ টা সুশীলা দেবীর দিকে এগিয়ে দেয় কাঁপা হাতে। মনের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল ঠিক বেঠিক এর।
শিখা আর ভাবতে পারে না সোজা উপরে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
এই সময় মিস্টার কোটির ঘরে অশ্বিনী বলে চলে শিখা পরে আকাশ কে জানানোর পর ইমমেডিয়েটলি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার ডিসিশন নেয়। আমরা খবর নিয়ে দেখেছি যে আপনি কোনো নতুন জব পাননি। সব টা সাজানো , এই বাড়ি থেকে যত তাড়াতাড়ি আপনারা চলে যেতেন তাহলে আর এই ক্রাইম টা পুরো ধামা চাপা পরে যেত। তাছাড়া রেকর্ড ডিলিট করার চেষ্টা করেন তার সঙ্গে। এবার অশ্বিনী বললো চলুন শিখার সঙ্গে কথা বলতে হবে। আকাশ বলে উঠে , ওকে ছেড়ে দিন , আমাকে এররেস্ট করুন।
কিন্তু ততক্ষনে অশ্বিনী এগিয়ে গেছে তিন তালার দিকে। তার পিছনে পিছনে সবাই চলেছে। কারুর মুখে কোনো কথা নেই। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে এই ছোট মেয়েটা কিভাবে এই কাজ করলো।
তিন তলার বাঁ দিকের ফ্লাট টার দরজা বন্ধ। বেল বাজিয়ে ধাক্কা দিয়ে খোলার লক্ষণ দেখা গেল না। শেষ পর্যন্ত দরজা ভাঙতে হলো। শিখা বিছানার উপর উবুড় হয়ে আছে। পাশে হাতে জলের গ্লাস পরে আছে। আকাশ ছুটে গেল , জড়িয়ে ধরলো তার মিঠুকে। সন্দেহ রোই লো না যে সে আবার নিজের উপর বিষ প্রয়োগ করেছে।
তৎক্ষণাৎ এম্বুলেন্স কল করা হলো। আকাশ কে সঙ্গে নিয়ে অশ্বিনী বেরিয়ে এলো।
