বিকর্ন
বিকর্ন
এই নামটা খুব একটা পরিচিত নাম নয় । খুবই কম লোক এই নামের সাথে পরিচিত।আসলে কি জানেন চোখে আঙুল দিয়ে উচিত অনুচিত বলে যাওয়া লোকজনেরা চিরকালই রয়ে যায় প্রদীপের নীচে। উচিত কথার প্রদীপ এরাই তুলে ধরে কিনা উঁচুতে, তাই তাঁরা চিরকাল থেকে যান পিছনের সারিতে।
যাইহোক ইনি ছিলেন কৌরব ভাইদের মধ্যে অন্যতম। তৃতীয় ভাই তিনি। তৃতীয় হলেও তিনি কিন্তু বড় দুইভাইদের ছেড়ে কথা বলেননি কোনদিনই...।ধর্মপথে চলা তার লক্ষ্য ছিল ঠিকই
কিন্তু তাবলে ভাইদের ছেড়ে যান নি,বরঞ্চ ভাইদের সাথে থেকে ভাইদের ধর্মপথের রাস্তা দেখিয়ে গিয়েছেন বরাবর।কেউ শোনেনি তার কথা তবুও দমে যাননি উচিত কথা তিনি বলে গিয়েছেন
শুধু ভাইরা নয়,তিনি ছেড়ে কথা বলেননি গুরুজনদের।তার উচিত কথার প্রশ্নবান থেকে রেহাই পাননি কৃপাচার্য্য, দ্রোনাচার্য্যদের মত গুরুরা , পিতামহ ভীষ্মকে, নিজের পিতা ধৃতরাষ্ট্রকেও না
এরকম একজনকে পছন্দ করা তো সত্যি খুব দুরূহ ব্যাপার।আসলে আমরা সবাই উচিত কথা বড্ড বেশি পছন্দ করি,কিন্তু যতক্ষন না আমাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছেততক্ষণ অবধি।
স্ত্রী- ইন্দুমতি
আজ থেকে আনুমানিক 7500 বছর আগে,হস্তিনাপুরে জন্মগ্রহণ করেন বিকর্ণ। পিতা ধৃতরাষ্ট্র এবং মাতা গান্ধারীর তৃতীয় পুত্র ছিলেন তিনি।তিনি ছিলেন কৌরবদের তৃতীয় ভাই।
সেই হিসেবে দুর্যোধন দুঃশাসনের পরেই ওনার জন্ম। বড় হওয়া তার সমস্ত ভাইদের সাথেই।
সমস্ত ভাই বলতে কৌরব-পান্ডবদের কথা বলা হচ্ছে। সব ভাইরা একসাথেই বড় হয়েছেন।
দ্রোনাচার্য্য-দ্রূপদ কথা
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
চরম দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন দ্রোনাচার্য্য।
শ্যালক #কৃপাচার্য্য ডাক দিয়েছেন হস্তিনাপুরে আসার জন্য। হস্তিনাপুরের প্রধান ভীষ্ম চাইছেন এক সুযোগ্য অস্ত্রগুরু, হস্তিনাপুরের বংশের অস্ত্রশিক্ষার জন্য।
দ্রোনাচার্য্যকে আসতে হবে #ভীষ্ম'র সামনে,
পরীক্ষা দিতে হবে কঠোর, তারপর যদি কিশোর কৌরব আর পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু হওয়া যায়...
অস্ত্রগুরু হতে পারলে বদলে যাবে ভাগ্য।
দারিদ্রতা ঘুচে যাবে চিরতরে। সংসারে ফিরবে স্বাচ্ছন্দ্য। নিঃসন্দেহে দারুন কাজের খবর দিয়েছেন কৃপাচার্য্য।
কিন্তু
এই হত দরিদ্র বেশে কি যাওয়া যায় রাজ পরিবারের সামনে। কিছু ভালো জামা কাপড় দরকার এখন, দরকার কিছু অর্থও।
হয়ত কৃপাচার্য্য ব্যবস্থা করে দেবেন কিন্তু বারবার পরমুখাপেক্ষী হওয়া উচিৎও নয়। কি করা যায় এখন..., হঠাৎই মনে পড়ল রাজা দ্রূপদের কথা।
রাজা_দ্রূপদ আর তিনি ছিলেন সতীর্থ গুরুর আশ্রমে। দুজনে ছিলেন খুব ভালো বন্ধু।
দ্রূপদ কথা দিয়েছিলেন তিনি রাজা হলে দ্রোনকে দেবেন অর্ধেক রাজত্ব। রাজত্ব নিয়ে আর কি হবে... তিনি আশ্রমিক মানুষ। যদি কিছু অর্থ আর নিস্কর জমি পাওয়া যায় তবে দারিদ্রতা ঘোচে।
এই আশা নিয়ে গেলেন তিনি দ্রূপদের কাছে।
দ্রূপদ তখন রাজা। কিন্তুরাজা হয়ে বদলে গেছেন দ্রূপদ। হতদরিদ্র বন্ধুকে এতটুকু পছন্দ হলনা ওনার। তার উপর পুরোন কথা যেই তুললেন দ্রোনাচার্য্য, ভরা রাজসভা থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন। হতাশা আর একবুক অপমানের বোঝা নিয়ে ফিরে এলেন তিনি তার কুটিরে।
অস্ত্রগুরু দ্রোনাচার্য্য
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
অবশেষে কৃপাচার্য্যর সহায়তায় তিনি পৌঁছলেন হস্তিনাপুর। ভীষ্মর সামনে দিলেন অস্ত্র পরীক্ষা।
সফল হয়ে গ্রহণ করলেন হস্তিনাপুরের ভাবি বংশধরদের অস্ত্র শিক্ষার গুরু দায়িত্ব। নিয়ে এলেন সন্তান অশ্বত্থামাকেও। রাজকুমারদের সাথে অস্ত্র শিখতে লাগলেন পুত্র অশ্বত্থামাও...
দ্রোনাচার্য্য অস্ত্রগুরুর হয়ে তার কাজে লেগে পড়েন। সব ভাইদের যথোপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে উপযুক্ত করে তোলেন। বিকর্ন উপযুক্ত ধনুর্বিদ হিসেবে নিজেকে সুযোগ্য ছাত্র হিসেবে গড়ে তোলেন।তার ধনুর্বান চালনার ক্ষমতা ছিল অর্জুনের কাছাকাছি।এছাড়া তিনি শেখেন গদাযুদ্ধ, বর্শাযুদ্ধ,অসি যুদ্ধ, দ্বন্দ্বযুদ্ধ।
শকুনির বিষ
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
শিক্ষা মোটামুটি শেষের দিকে এগিয়ে এলে পরে
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পান্ডবভাইয়ের দল নিজেদের ক্ষমতায় পারদর্শীতায় জিততে শুরু করলে শকুনি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কাজে লেগে পড়েন।
সবার প্রথমে ভীমের বিরুদ্ধে দুর্যোধনকে ক্ষেপিয়ে তোলেন। ভীম আর দুর্যোধন দুজনেই ছিলেন গদাযুদ্ধে পারদর্শী। দুজনের মধ্যে রেসারেসির মনোভাব জাগিয়ে তুলে দুর্যোধনকে তাতিয়ে রাখেন।
ধীরে ধীরে দুর্যোধনের পাশাপাশি অশ্বত্থামাকেও পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
অশ্বত্থামা যে অর্জুনের চেয়েও পারদর্শী ধনুর্বিদ এই কথা তার মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন, পাশাপাশি এটাও বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হন যে দ্রোনাচার্য্য অযথাই অর্জুনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।
স্বাভাবিকভাবেই #অশ্বত্থামা অর্জুনের প্রতি বিরূপ হলে শকুনির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন।
একই প্রচেষ্টা শকুনি চালিয়ে যান বিকর্নকে অর্জুনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য
কিন্তু কিছু লাভ হয়না। বিকর্ন খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছিলেন কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল।
মামা শকুনির প্রচেষ্টায় পান্ডব-কৌরব ভাইয়ের মধ্যে বিভেদ শুরু হলেও বিকর্ন চুপচাপ থাকেন,
নিরপেক্ষ থাকেন।
পাশাপাশি তিনি কিন্তু বারবার দুর্যোধন দুঃশাসনকে সতর্ক করে যান যা তারা করছেন, ঠিক করছেন না...।কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়না। শকুনি মামার প্রচেষ্টা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী। তিনি কৌরবদের মূল দুই মাথা দুর্যোধন দুঃশাসনদের এমনভাবে কব্জা করে রেখেছেন যাতে তাদের কাজের বিরুদ্ধে কেউ গেলে তারা কৌরবদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে ধরে নেয়...।
দ্রোনাচার্য্য'র গুরুদক্ষিণা
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
অস্ত্রশিক্ষা শেষ হলে পরে কৌরব এবং পান্ডবভাইরা যখন সমবেতভাবে জানতে চান গুরুদক্ষিণার কথা।তখন গুরু দ্রোনাচার্য্য তাদের বলেন রাজা দ্রূপদকে পরাজিত করে বেঁধে আনতে। তার রাজ্য জিতে নিয়ে নতুন রাজা যেন করা হয় দ্রোনাচার্য্যকে।
সেইমত প্রথমে যান কৌরব ভাইয়েরা রাজা দ্রূপদকে বন্দী করতে। কৌরব ভাইরা সবাই মিলে আক্রমন করেন রাজা দ্রূপদের রাজ্য।
এই দলে ছিলেন বিকর্ন।
বিকর্নর নেতৃত্বে ধনুর্বিদ্যার ক্ষমতায় প্রথমদিকে তারা সফলতা পেলেও পরেরদিকে কিন্তু পরাজিত হন।
যুদ্ধের শুরুর দিকে পরিস্থিতি কৌরবদের অনুগামী হতে শুরু করলে একটু পরে দুর্যোধন নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন তার নির্দেশে বিকর্নকে চলে যেতে হয় পেছনে। কিন্তু দুর্যোধন সেরকম কিছু সুবিধা করে উঠতে পারেন না,অচিরেই তাদের সফলতা বিফলতার চাদরে ঢাকা পড়ে যায়। রাজা দ্রূপদের বাহিনী এসে ঘিরে ফেলে তাদের। পরাজিত হন তারা।দুর্যোধন দুঃশাসন সমেত সমস্ত কৌরব ভাইরা বন্দী হয়ে থাকেন দ্রূপদ রাজার কারাগারে।
বিকর্ন রথ অস্ত্র সবকিছু হারিয়ে কোনরকমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন...।
এরপরে দ্রোনাচার্য্য পাঠান পঞ্চপাণ্ডবদের।
তারা দ্রূপদ রাজাকে করেন পরাজিত।
বন্দী করেন তাকে। মুক্ত করেন কৌরবভাইদের।
বেঁধে নিয়ে আসেন রাজা দ্রূপদকে গুরু দ্রোনাচার্য্যর সামনে।
গুরু দ্রোনাচার্য্য অর্ধেক রাজত্ব নিয়ে বাকি অর্ধেক দিয়ে দেন রাজা দ্রূপদকে।
রাজা দ্রূপদ এরপরে ফিরে গিয়ে করেন অপমানের জ্বালা বুকে নিয়ে এক পুত্রেষ্টি যজ্ঞ।
যার ফলাফলে বদলে গিয়েছিল হস্তিনাপুরের ভাগ্য...
সর্বনাশা পাশা
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
শকুনির প্ররোচনায় অন্যায় পাশা খেলায় পরাজিত হয় পান্ডবভাইরা সবাই।
নিজের রাজত্ব নিজের সবকিছু এমনকি নিজের ভাইদের হারানোর পরে নিজেকে হারান। হারাতে থাকেন পর পর সবকিছুই। একে একে সম্পদ রাজত্ব সব হারিয়ে ফেলেন।
এরপরে আবার হেরে পাণ্ডবদল পরিণত হয় কৌরবদের দাসে। সেই দাসদের মুকুট অস্ত্র সমর্পণ করে রাজসভায় মাথা নত করে বসে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। হেরে যাওয়া পাণ্ডবদল তাই করে।
সব হেরে যুধিষ্ঠির বাজি রাখেন দ্রৌপদীকে।
আবার হারেন।এরপরে ডাক পাঠানো হয় দ্রৌপদীকে।দ্রৌপদী তখন নিজের ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি তখন ছিলেন রজঃস্বলা।
তিনি পাশা খেলায় হেরে এখন দুর্যোধনের দাসীতে পরিণত হয়েছেন শুনে খবর পাঠান- তিনি রানী,
তাকে কি করে যুধিষ্ঠির বাজী ধরতে পারেন যখন তিনি নিজে হেরে আগেই দাসে পরিণত হয়েছেন...।
দুতের মুখে এই কথা শুনে দুর্যোধন আবার ডেকে পাঠান দ্রৌপদীকে। আসতে অরাজি হলেন দ্রৌপদী, এবারে দুর্যোধন পাঠান দুঃশাসনকে।
দুঃশাসন গিয়ে বিশ্রামরত দ্রৌপদীকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসেন রাজসভায়।
সেই দৃশ্য দেখে ভীম আর স্থির থাকতে পারেন না বলেন- দুঃশাসনের দুই হাত তিনি উপড়ে ফেলবেন। শুনে অবজ্ঞা করেন দুর্যোধন। বলেন দাসের মুখে এসব কথা পায় না শোভা।
দ্রৌপদী চীরহরণ
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
এরপরে আদেশ দেন দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ করার। দুঃশাসন দ্রৌপদীর দিকে এগুলে দ্রৌপদী ছুটে যান ভীষ্মর কাছে। তিনি পিতামহ। তাকে বলেন-
এটা অন্যায় কখনো কোন মহিলাকে বাজী রাখতে পারেন না কেউ। শাস্ত্র অসম্মত এটা।
কিন্তু ভীষ্ম বলেন- তিনি পিতামহ হলেও দুর্যোধনের সেবক মাত্র। তাই তিনি দুর্যোধনকে আদেশ দিতে পারেন না।
এরপরে #দ্রোনাচার্য্য ধৃতরাষ্ট্র ইত্যাদি সবার কাছে ছুটে যান দ্রৌপদী, কিন্তু সবাই চুপ থাকেন।
তাদের চুপ থাকা মানে তাদের সম্মতি মনে করেন দুর্যোধন।
তিনি নিজের জানুর কাপড় সরিয়ে দ্রৌপদীকে বলেন- বাঁচতে হলে দ্রৌপদীর এখন তার কোলে বসা ছাড়া অন্য কোন গতি নাই...
শুনে ভীম আবার প্রতিজ্ঞা করেন- দুর্যোধনের এই জানু ভাঙবেন তিনি...
এইসময়ে #কর্ণ তার পুরোন অপমানের খোঁচা দিতে ভুলেন না। বলেন- যখন যুধিষ্ঠির সব হেরেছেন আর নিজেকেও হেরেছেন তখন তিনি সব কিছুর সাথে তখনই হেরেছেন দ্রৌপদীকেও।
বিকর্নর প্রতিবাদ
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
বিকর্ণ আর চুপ থাকতে পারেন না।
ভরা সভায় প্রশ্ন তোলেন দ্রৌপদীর পক্ষ নিয়ে।
আরেক বৈমাত্রেয় ভাই #যুযুৎসু তার পক্ষে থাকেন। প্রশ্ন তোলেন তিনিও।
বিরোধিতা করেন হস্তিনাপুরের এই অন্যায়ের...।
দুই কৌরব ভাই বারবার প্রশ্ন তোলেন রাজসভার ভারপ্রাপ্তদের কাছে, সিদ্ধান্ত জানান জোর গলায় রাজ্যের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে- যে দ্রৌপদীর কথায় যুক্তি রয়েছে। দ্রৌপদী নন দাসী।
আর তাছাড়া দ্রৌপদী তাদের ভাইয়ের স্ত্রী।
এইভাবে ভ্রাতৃবধূর অপমান কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।কিন্তু তাদের কথা কেউ কানে তোলে না।
কর্ণ তখন বিকর্নকে বলেন- যে তিনি কৌরবদের অহিতাকাঙ্খী। যেভাবে রোগ শরীরে থেকে শরীরের বিনাশ করে ঠিক সেভাবেই বিকর্ন করছে কৌরবদের বিনাশ।
প্রতুত্তরে বিকর্ন বলেন- কূলবধূ দ্রৌপদীর প্রতিটি প্রশ্ন ন্যায়সঙ্গত। উত্তর দেওয়া উচিত কুরুকূল তথা হস্তিনাপুরের রক্ষকদের। আর যদি দ্রৌপদী তার সম্মানহানির যথোপযুক্ত উত্তর না পান তবে এই অসম্মান সমস্ত কুরুকূলের সমূল বিনাশ ডেকে আনবে...
এরপরেও বিকর্ন আটকাতে পারেন না দ্রৌপদীর চীরহরণ। দুর্যোধনের নির্দেশে ভরা সভায় দুঃশাসন তার বস্ত্র ধরে দেন টান।
শেষে শ্রীকৃষ্ণর সহায়তায় দ্রৌপদীর লজ্জ্বা রক্ষা হয়।
এদিকে রাজমাতা গান্ধারী প্রবেশ করেন ভরা সভায়। এসে তিনি সরাসরি কৌরবপিতা ধৃতরাষ্ট্রকে দায়ী করেন- তিনি উপস্থিত থাকতে তার সম্মুখে এরম অনাচার হয় কিকরে...
সাথে দুর্যোধন দুঃশাসনদেরও খুব ভৎসর্না করেন
এও মনে করিয়ে দেন- যে কূল তার কূলবধূর সম্মান করতে পারে না। কূল বধূর সম্মানহানি করে যে কূল সেই কূলের ধংস অনিবার্য...
গান্ধারী মাতার কথায় সম্বিৎ ফেরে ধৃতরাষ্ট্রের।
তিনি দ্রৌপদীকে বলেন দ্রৌপদীর কথায় যুক্তি রয়েছে সেই অনুযায়ী তিনি মুক্ত।
এরপরে বর প্রার্থনা করতে বলেন দ্রৌপদীকে।
দ্রৌপদী রাজত্ব সমেত পঞ্চ পান্ডবের মুক্তি চেয়ে নেন।
মোট কথা সেদিন বিকর্নর কথার অনুরণন করেন গান্ধারী। বিকর্নর সেই বিরোধিতা তথা ধর্মপথের বক্তব্য সেদিন থেকে অমর হয়ে রয়ে যায় হস্তিনাপুরের বিচারসভায়।
এইসব ঘটনার মাঝে আপাতভাবে শেষ হয় হস্তিনাপুরের বিতর্কিত এক লজ্জার অধ্যায়। তবে বীজ প্রোথিত হয়ে যায় ধ্বংসের। এক মহাযুদ্ধের...
কুরুক্ষেত্রে
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শুরুতে যুধিষ্ঠির একটি ঘোষণা করেন এই ধর্মযুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে এখনও যদি কারুর কোন মত বদলায় মনে কোন দ্বিধা থাকে সে পক্ষ বদলাতে পারে।
তখন যুযুৎসু চলে আসেন পাণ্ডবদের দিকে।
বিকর্ন রয়ে যান কৌরবদের সাথে।
লড়াই করেন তাদের পক্ষ নিয়ে।
তিনি ছিলেন কৌরবদের এগারজন মহারথীর মধ্যে অন্যতম এক মহারথী।যদিও এই যুদ্ধ যাতে নাহয় সেইজন্য তিনি প্রানপন চেষ্টা করেছিলেন। #বিদুর ভীষ্মর সাথে থেকে এই যুদ্ধ এড়াবার জন্য শেষদিন অব্দি চেষ্টা করে গিয়েছেন। কিন্তু সমস্ত চেষ্টা বিফলে গিয়ে এই যুদ্ধ শেষ অব্দি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
যুদ্ধে তিনি তার সর্ব ক্ষমতা দিয়ে লড়াই করেন
★চতুর্থ দিন তিনি অভিমন্যুকে থামাবার চেষ্টা করেন। বারংবার তিনি #অভিমন্যু'র রথকে পিছিয়ে নিয়ে যান ঘোরতর আক্রমনের মধ্যে দিয়ে কিন্তু শেষ অব্দি পারেন না অভিমন্যুকে প্রতিহত করতে।
★পঞ্চম দিনে তিনি মহিষ্মতির রাজার তৈরি সুরক্ষা বাহিনী ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন।
★সপ্তম দিনে তিনি তার বহু ভাইদের বাঁচিয়ে নিতে সমর্থ হন, নাহলে সেদিন ভীমের হাতে বেশ কয়েকজন কৌরব ভাইয়ের মৃত্যু ঘটত।
★দশম দিনে তিনি অর্জুন আর #শিখন্ডী দুইজনের রথ তিনি আটকে দেন। কিন্তু মহারাজ দ্রূপদ এসে বিকর্নকে আক্রমন করলে সেইসময় অর্জুন আর শিখন্ডী সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যান।
★তেরতম দিনে যেদিন অভিমন্যু বধ হন সেদিন তিনি চক্রব্যূহ থেকে দূরে থাকেন।
★চৌদ্দতম দিনে অর্জুন শপথ করেন অভিমন্যু হত্যার অন্যতম মাথা জয়দ্রথকে বধ করবেন সন্ধ্যা নামার আগেই। সেই অনুযায়ী দুর্যোধন জয়দ্রথকে আলাদা ঘেরাটোপের মধ্যে লুকিয়ে রাখেন।
পান্ডবভাইরা সবাই খোঁজ করতে থাকেন জয়দ্রথর। কিন্তু খুঁজে পান না। ভীম সেদিন সন্ধানে বেরিয়ে #জয়দ্রথ'র কাছাকাছি পৌঁছলে দুর্যোধন তখন বিকর্নকে ভার দেন ভীমকে আটকানোর।
মৃত্যু
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
এরপরে বিকর্ন আর ভীম হন মুখোমুখি।
ভীম একদমই লড়াই করতে চান না বিকর্নর সাথে।
কিন্তু বিকর্ন পথ আটকিয়ে দাঁড়ান।
ভীম বলেন- বিকর্ন তুমি ধর্মের পথে লড়াই করেছ।
তাই দ্রৌপদীর চীর হরনের দিন আর কেউ না দাঁড়ালেও তুমি তার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলে। তোমার সাথে লড়তে চাইনা। তুমি সরে যাও।
বিকর্ন বলেন- সেদিন ছিল ধর্মের পক্ষে দাঁড়ানোর দিন। আর সেটা উচিৎ কাজ ছিল তাই সেদিন আমি দ্রৌপদীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম। আজ আমি লড়াই করছি দুর্যোধনের পক্ষে। লড়াই করা আমার ধর্ম।
ভাইদের পক্ষে লড়াই করা আরেক ভাই এর ধর্ম।
তাই আমি লড়াই করব। তুমি এস তোমার ধর্ম পালন কর। লড়াই কর আমার সাথে।
অতঃপর ভীম আর বিকর্নর মধ্যে হয় তুমুল গদাযুদ্ধ।
বিকর্ন জানতেন তিনি কোনভাবেই জিতে উঠতে পারবেন না ভীমের মত মহা বলশালী যোদ্ধার সাথে। তবুও তিনি শেষ মুহুর্ত অব্দি প্রানপন লড়াই দিয়ে যান।ভীমের গদার আঘাতে এক সময়ে বিকর্ন মারা যান।
অত্যন্ত দুঃখিত হন ভীম শোকার্ত হয়ে বলে উঠেন- তোমার মত ধার্মিক ভাইয়ের সাথে লড়াই করে বধ করতে হচ্ছে এ আমার অত্যন্ত দুর্ভাগ্য। সত্যিই এই যুদ্ধ আসলে অভিশাপ, নাহলে তোমার মত ভাইকে বধ করার কোন দরকার ছিল না...
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
সেইদিন সন্ধ্যায় বিকর্নর মৃত্যুতে কৌরব শিবিরে যেমন শোকের ছায়া ছিল ঠিক তেমনটাই শোকের ছায়া ছিল পান্ডব শিবিরে।
বিশেষ করে দ্রৌপদী সেদিন অত্যন্ত শোকে ছিলেন মুহ্যমান। একমাত্র কৌরব বিকর্ন যিনি তার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তার লজ্জার দিনে, অপমানের দিনে। তার পক্ষে দাঁড়িয়ে একলাই বলে গিয়েছেন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
কেউ ছিলনা যেদিন, এমনকি তার নিজের পতিরাও সেদিন চুপ থেকে দেখে গিয়েছিল সেই অসম্মান। সেদিন ছিলেন বিকর্ন।
সেই বিকর্ন আজ আর নেই...
■◆●■◆●■◆●■◆●■◆●■●◆■◆●■◆●■◆●■◆●
শেষ হল এক মহাবীরের কাহিনী।
যদিও তিনি ছিলেন মহাবীর তবুও যেন তার বিক্রম সেভাবে প্রকাশ পায়না পুরো কাহিনীতে
সারাজীবন ধর্মপথে থেকেও তিনি যেন অনেক নিষ্প্রভ হয়ে রয়ে গিয়েছেন সমগ্র মহাভারত জুড়ে।