ভারতবর্ষের মানচিত্র
ভারতবর্ষের মানচিত্র


সেদিন অফিস যাওয়ার সময় আমার ছেলে আমাকে একটা ভারতবর্ষের বড় মানচিত্র আনতে বলেছিল।
ওদের স্কুলে স্বাধীনতার দিন খুব সুন্দর নক্সা করে মানচিত্রটাকে সাজাতে বলেছিল।
অফিস থেকে সন্ধ্যায় ফেরার পথে বাড়ির কাছে বাজারে দু তিনটে দোকানে গিয়ে বড় মানচিত্র আছে নাকি খোঁজ করলাম। কারো কাছে না পেয়ে, বিরক্ত হয়ে পাশেই একটা ফাস্টফুডের দোকানে চাউমিন কিনতে গেলাম। অফিস থেকে ফিরে খুব খিদে পেয়েছিল। দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি, বার কি তের বছরের এক ছেলেকে দোকানদার খুব উদ্ধত হয়ে বকছে “ এই তো চারটেই ভাত খেলি। ছটা বাজতে না বাজতে আবার খাই খাই। এতো খিদে আসে কোত্থেকে? বেশি খাই খাই করলে এই মাসে তোর মাইনে কমিয়ে দেব, এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি চুপচাপ একটাও কাস্টমার যেন ফিরে না যায়”।
এক অদ্ভুত কাঁচু মাচু করুণ মুখ করে ছেলেটি দাঁড়িয়ে রইলো। ওর কালো তেলে তেলে ঘেমো মুখটা, দোকানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাজানো আলোয় চকচক করছে। ছোট ছোট গভীর চোখ দুটো ছলছল করছে। দেখে বেশ মায়া হল। কিন্তু অসহায় আমি। ওর দিকে তাকাতেই ও কেমন একটা সংকোচ বোধে মুখটা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। ওর সেই শিশুসুলভ কাঁদোকাঁদো মুখটার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে আমার চোখে যেন ভেসে উঠলো আমার মহান ভারতবর্ষের আসল মানচিত্র। ওর মুখে যেন খুঁজে পেলাম সেই মানচিত্রের খাঁজের অনেক মিল।
খুব ধুমধাম করে স্বাধীনতা দিবস পালন হবে, কুচকাওয়াজ হবে। তেরঙ্গা পতাকা উড়বে পতপত করে আকাশে দিকে তাকিয়ে! আর তার নীচে ছেঁড়া নোংরা কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকবে আমার যন্ত্রণাক্লিষ্ট, আমার দরিদ্র, আমার অভুক্ত এক অন্য ভারতবর্ষ । আমি বাড়ি ফিরে এসে ছেলেকে বললাম “ বাবু, তোর মানচিত্রটা পেলাম না রে কোথাও। ভারতবর্ষের সব মানচিত্র আজ বিকিয়ে গেছে”!!