ভালোবাসার স্কোর যেখানে শূন্য ১
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শূন্য ১
আমার পোড়ারমুখো মিনসেটা আবার বিয়ে করতে চলেছে গো ! কি শয়তান কি শয়তান ! পেটে পেটে এত চাল মিনসের!জোয়ান ছেলে ঘরে রেখে উনি চললেন বিয়ে করতে । আরে আমি তো তখন থেকে নিজেই বকে যাচ্ছি আমার পরিচয়টাই তো দেওয়া হয়নি ? আমি উত্তরা কাঞ্জিলাল , বর্তমানে এক পেত্নী । কি ভাবে পেত্নী হলাম সেটাও একটা প্রশ্ন । যাই হোক চন্দননগরের মেয়ে আমি বিয়ে হয়ে এসেছিলাম মোহন কাঞ্জিলালের সঙ্গে । তার পর ঘর সংসার চালাতে চালাতে কুড়িটা বছর পার করে দিলাম । একটি পুত্র আয়ুশমান যাকে সবাই আয়ুশ বলেই ডাকে এখন জোয়ান হয়েছে । দুবছর আগে অসাবধানতাবশত সিঁড়ি থেকে পড়ে গেলাম আচমকাই আর কি সব ব্রেইনডেথ না কি যেন আমার হয়ে গেল । যা তা একেবারে ! সব ডাক্তারদের কারসাজি ! আমার শরীরটা থেকে আমার হৃদয় , কিডনি সব খুলে নিলো গো ! আমি মরে গেলুম , তবে শান্তি পেলাম না । পেত্নী হয়ে বাড়িতেই এসে বাস করতে লাগলুম । আহা আমার স্বামী , আমার ছেলে , আমার সংসার ছেড়ে কোথায় যাবো ? আমার দেহ থেকে ওই হৃদয় খান আমাদের কাপড়ের দোকানের ওই কর্মচারী মেয়েটিকে দেওয়া হয়েচে । ওকে দেখলেই আমার গা পিত্তি জ্বলে যায় । আমার স্বামীর বড় কাপড়ের ব্যবসা , শান্তিপুর ফুলিয়া , ধনেখালী থেকে তাঁত , কাঞ্চিপুরম থেকে কাঞ্জিভরম , পচমপল্লী থেকে ইক্কত , উড়িষ্যা থেকে ব্যমকাই ঢাকা থেকে ঢাকাই কি না সে আনে । তার চার চারটে দোকান আছে ! বর্ধমানে , কলকাতাতে , শিলিগুড়িতে আর আসানসোলে চারটে দোকান , এখন আয়ুশ সেগুলি মল না কি করেছে আমার জানা নেই । তবে শুনেছি ব্যবসা নদী থেকে সাগরে পরিণত হয়েছে । সে তো ভালো ঘরে ব্যবসার জন্য লক্ষী আসছে , তবে আমার ওই মিনসে স্বামীর কি দরকার ছিল এই বুড়ো বয়সে ঘরে অলক্ষী আনার ! কোথায় জোয়ান মদ্দ পোলাটার বিয়ে দেবে তা না ! উনি নিজে বিয়ে করবেন । আমি করাচ্ছি বিয়ে ওকে । দরকার হলে ঘাড় মটকেই দেবো আমি ঐ হতচ্ছারি কর্মচারী মেয়েটার । আমার হৃদয় নেবে আবার আমার স্বামীকে বিয়ে করবে ! ঘোর কলি ঘোর কলি ! আচ্ছা লাখ টাকার প্রশ্ন , ওর ঘাড় মটকে দিলে আমি আবার মরে যাবো না তো ? আসলে ওর মধ্যে তো আমারই হৃদয়টা চলছে তাই আর কি ? যাই হোক আমি মানছি না , এ বিয়ে আমি মানছি না ।
বেঁচে থাকতে ভাবতাম বাবুটা আমার এখনো খোকা আছে , সারাদিন বেচারা ব্যবসার জন্য খাটে । আমার ছেলে দুধেভাতে ছেলে গো ! নেশা টেসা করেনা , মেয়েদের পিছনে ছোট না । আর এখন মরে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি ছেলের আসল গুন ! এ কি ছেলে রে বাবা ? যার সাথে পাচ্ছে তার সাথেই শুয়ে পড়ছে ? আর আমার বাবু তো জল খায় না , জলের বদলে মদ খায় । বেঁচে থাকতে যা যা জেনেছি সবটাই ভুল জেনেছি মনে হয় । কাঞ্জিলাল আমার সোয়ামী ! ওই কর্মচারী মেয়েটা কি নাম যেন হ্যাঁ শক্তি , ওকে দেখে স্বামীর নাকি আমাকে মনে পড়ে যায় । যতসব আদিখ্যেতা দেখলে আর বাঁচিনা বাপু । চল্লিশ বছর বয়সেই মরে গেলাম পট করে , আর এই সুযোগে কাঞ্জিলালের শুরু হয়ে গেল রাসলীলা । আমার ভাগ্নে সমৃদ্ধ , ওকে ছোট থেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করলাম আর আমার মরার পর ও কি সুন্দর আমার গয়না গুলো এক এক করে সরিয়ে দিচ্ছে ! ভাবছি ওকে একটু ভয় দেখাতে হবে না হলে আমার অত সাধের গয়না গুলো সব লুট করে দেবে । আর হতচ্ছাড়া আয়ুশ আমার একমাত্র শিবরাত্রির সলতে ওকেও বোঝাতে হবে যে বাবু এটা তোর বিয়ে করার বয়স , টস করে আর বুড়ো বাপ টার বিয়ে দিতে হবে না ।
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য
(অথ কাঞ্জিলাল বিবাহ বিভ্রাট )
আজ কাঞ্জিলালের গায়ে হলুদ হবে , বিকালে শক্তিকে বিয়ে করতে যাবে সে । গত সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন যোগা, ব্যায়াম , ড্রাই ফ্রুটস , শীলাজিৎ কিছু বাকি রাখেনি সে , কারণ বিছানায় যে কি ভাবে সে নিজের ইমেজ রক্ষা করবে তা সে নিজেই জানেনা । গিন্নি গত হয়েছে বছর ঘোরেনি আর এর মধ্যেই কি করে যে সব ঘটে গেল কাঞ্জিলাল নিজেই বুঝতে পারছে না । শক্তির মতো একটা সুন্দরী অল্প বয়সের মেয়ে তাকে বিয়ে করতে চাইছে এটাই ভেবে কেমন একটা লাগছে চিমসানো বুড়ো কাঞ্জিলালের । এদিকে গিন্নির হার্ট খানা যখন থেকে শক্তিকে দেওয়া হয়েছে ওর প্রতি কেমন একটা মায়া পরে গেছে তার পর আবার যখন সে যেচে বিয়ে করতে চাইছে তখন আপত্তি করার কিছুই নেই । পুরুষের আবার বয়স ! বয়সটা তো একটা সংখ্যা মাত্র । আর কথায় আছে সোনার আংটি ব্যাকা ! তো হোক কাঞ্জি বুড়ো , চিমসে তবু সে তো সোনার আংটি ?
এসব সাত পাঁচ ভাবছিল কাঞ্জি নিজের ঘরে বসে আর এক দল মেয়ে বউ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেল গায়ে হলুদ দেবার জন্য । ওদিকে পেত্নী উত্তরা বসে আছে বাগানের জাম গাছে কর্তার হাড়ে হলুদ দেবার জন্য । মন দিয়ে পা দোলাচ্ছে জাম গাছে উত্তরা , খিক খিক করে হাসছে আর ভাবছে , আসুক পোড়ার মুখো মিনসে তার পর দেখবে খেলটা কি হয় ! আগে আগে দেখো হোতা হে ক্যা ! আর আমার হাবাচরণ বাঁদরটাই বা কোথায় ! নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে গা ! আমার সুপুত্র বুঝলো না ? ওই শক্তি বলে রাক্ষুসী তো এবাড়ির সম্পত্তি দখল করতে আসছে তা কি আমার জানা নেই ? হতচ্ছাড়া মেয়েমানুষ আমি দেখছি কি করে বিয়েটা হয় ?
সমৃদ্ধ আজ খুব খুশি পিসেমসাই কে বুদ্ধু বানিয়ে এবার সব দখল করে নেবে খুব শিগগিরই । শক্তি তো তার প্রেমিকা , আর পিসি মরার পর তো সমৃদ্ধর উদ্যাগেই তো শক্তির হার্ট ট্রান্সফার হয় । শক্তির জন্ম থেকেই হার্ট দুর্বল আর তার একটা ডোনার দরকার ছিল । এবার শক্তিকে এবাড়িতে পিসের বউ করে এনে পিসেকেও উপরের টিকিট কাটিয়ে দিতে হবে । তার পর ওই মেয়েবাজ আয়ুশকে হটিয়ে কাঞ্জিলালের স্ত্রী হিসেবে সব কিছুই শক্তির !
শক্তির মন ভালো নেই , যতই হোক কদিনের জন্য তবু ওই বুড়োর বউ হতে হবে । আত্মীয় স্বজনরা এসেছে বিয়ে উপলক্ষে কিন্তু সবাই মুখ টিপে হাসাহাসি করছে । সমৃদ্ধর সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ও বাধ্য হয়েই এ বিয়ে করেছে । ঘাটের মড়া কাঞ্জিলাল ! যতই টাকা থাক তবু যদি ঐ বুড়ো শক্তির সাথে একসাথে শুতে চায় ? যদি ওর সাথে স্বামীর সোহাগ চায় তা হলে ? ছি , লাল লাল পান খাওয়া দাঁত , শুকনো জড়িয়ে যাওয়া চামড়া , মাথাতে টাক ... অক অক করে বমি করে ফেললো শক্তি । সেদিনই বুড়ো ওকে বলছিলো চলো শক্তি নিউমার্কেট যাই তোমার যদি ব্যক্তিগত কিছু নেবার আছে ! কটমট করে শক্তি তাকিয়ে ছিল , বুড়ো ভয়ে পালিয়েছে । একটু পরেই সমৃদ্ধ আসবে গায়ে হলুদ নিয়ে , পাকা ধ্যামনা ছেলে একটা । খুব ধীরে শক্তি বললো, বোকাচোদা .....
গায়ে হলুদ দিচ্ছে সাতজন এও স্ত্রী , উলু দিচ্ছে সবাই । কাঞ্জিলাল জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে , আচমকাই সারা গা কুটকুট করতে লাগলো কাঞ্জির । সেটা আস্তে আস্তে জ্বলনে পরিণত হলো । আ আ করে চিৎকার করে গা ধুতে পালালো কাঞ্জি । ওর ওই ধুতির কাছা তুলে পালানোর ধুম দেখে মেয়েরা হেসেই অস্থির । কারোর গা জ্বলেনি হলুদে তো বুড়োর কি করে জ্বলছে ! সবাই বললো ভীমরতি বুড়োর । জাম গাছে বসে উত্তরা বললো দাঁড়াও দাঁড়াও এমন সার্কাস ঢের দেখবে তোমরা , গা শুধু মিনসের জ্বলবে আর কারো না । আমি মিনসের বন্দোবস্ত করছি ।
বেলা দশটা বাজে আয়ুশ এর ঘুম এখনো ভাঙেনি , ভাঙবে কি করে ? সারারাত ওর পিএ লিজার সাথে খাট ভেঙেছে বাবু । বাপের বিয়ে তো ওর কি ? বাপ ফুলশয্যা করবে ওর জোগাড় ওকেই করে নিতে হবে । আজ লিজা কাল সিজা কেউ না কেউ জোগাড় হয়েই যায় । পেত্নী উত্তরা ভাসতে ভাসতে চলে এলো ছেলের ঘরে । এসি টা টুক করে বন্ধ করে দিলো , আর দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো ছেলের বিছানা অবিন্যস্ত হয়ে গেছে , চাদর মাটিতে লুটিয়ে গেছে । একটা নীল রঙের নেংটির মত মেয়েদের প্যান্ট পরে আছে বিছানায় । উদোম হয়ে ঘুমাচ্ছে তার সাধের শিবরাত্রির সলতে ।
ক্রমশঃ
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য
(অথ কাঞ্জিলাল বিবাহ পন্ড )
আমি আয়ুশমান কাঞ্জিলাল । কাঞ্জিলাল এন্ড সনস এর সিইও । লাগামহীন ভাবে মানুষ হয়েছি ছোট থেকেই , মামার ছেলে সমৃদ্ধ আমার এককালে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো তবে সে সব অতীত । আপাতদৃষ্টিতে আমি খুব গম্ভীর আর সিরিয়াস ব্যবসায়ী কিন্তু আদতে আমার মধ্যে রয়েছে একটা অন্য চরিত্র । আমার ফ্যান্টাসি বিছানায় রোজ রোজ নতুন নতুন মেয়ে । এটার শুরু হয় যখন আমি আর সমৃদ্ধ সেন্ট লোরেট তে পড়তাম । ওখানে সব ছেলেদের তুলনায় আমাকে মেয়েরা একটু বেশিই ভাউ দিত তার কারণ আমি কোটিপতির ছেলে । স্কুলের বাথরুম , ক্যান্টিনের ওয়াশ রুম বা ফাঁকা লাইব্রেরি কোন জায়গাই বাকি ছিল না যেখানে আমি সেক্স করিনি । তখন অবশ্য আমার একজনই পার্টনার ছিল কন্যা । কন্যাকে আমি ফাকিং পার্টনার না সোল মেট ভাবতাম । শি ইস বিউটিফুল এন্ড সুইট । কন্যা ও কন্যা আজও তোমায় ভুলতে পারিনা ! আমি তোমাকে হারিয়ে শেষমেশ চরিত্রহীন হলাম । তুমি কোথায় কন্যা ? সমৃদ্ধ দা ফাকিং হারামখোর ওই আমাদের ব্রেক আপ করিয়ে ছিল । এখন ওর ওই রুগ্ন গার্লফ্রেন্ড শক্তির সাথে আমার বাপটা কে বাঁধতে চাইছে । আমি জানি ও কি চাইছে বাট আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার । উঠি বিছানা থেকে এসহোল সমৃদ্ধ কতদূর এগোলো দেখি বেলা একটা বাজে আবার আজ বাপের বিয়ে বলে কথা ।
উত্তরা : ওমা গো মরেও শান্তি নেই বাপু , আমি আর কতদিক সামলাব হ্যাঁ ! বেঁচে থাকতেও এত খাটনি হয়নি আমার , কোনদিকে জাই আমি ? এদিকে আমার আলালের দুলাল ছেলে হা ভাতে মেয়েদের সাথে যে কি কি করে বেড়াচ্ছে ! আর এদিকে বুড়ো মিনসে আবার কচি সাজছে । গায়ে হলুদ তো নিজের কেরামতি দিয়ে হাড়ে হলুদ করে দিয়েছি আর বাকিটা ও তাই করবো । দেখি আমার কাঞ্জি বাবু কতদূর ?
কন্যা : আমার মনে মেঘ জমে তবু বৃষ্টি আসেনা , আমার মনের ঘরের অভিমানের বেড়া যে আর ভাঙ্গেনা ।
আমি কন্যা বিশ্বাস , পাঞ্জাবের মেয়ে । পাঞ্জাব থেকে কলকাতা আসি মায়ের ট্রান্সফার সূত্রে তার পর সেন্ট লোরেট স্কুলে ভর্তি হওয়া আর চিরজীবনের জন্য ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া । আয়ুশ আমার জীবনে মেঘ হয়ে থেকে যাবে চিরতরে । একটা এম এম এস সব বদলে দিলো । হাউ কুড আয়ুশ ডু দিস উইথ মি ! থ্যাংকস টু সমৃদ্ধ আমাকে আয়ুশ এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য । নাউ ইটস টাইম টু ব্যাক আপ । আমি ফিরে আসছি আয়ুশ তোমার জীবনে ঝড় হয়ে ।
কাঞ্জিলালের বিয়ের সব জোগাড় হয়ে গেছে কিন্তু হলুদ লাগানোর সময় কি যে হলো ! সাড়া গায়ে চুলকানি আর বড় বড় ফোস্কা পরে যা তা অবস্থা । দধি মঙ্গল এর সময় তো দই চিরে গলায় লেগে একেবারে পটল ডাঙ্গার টিকিট কাটার জোগাড় হয়েছিল । সব সামলে সুমলে বিয়েটা ভালোয় ভালোয় মিটে গেলেই বাঁচে সমৃদ্ধ । একান্ন কোটি টাকার সম্পত্তি এত সহজে তো ছেড়ে দেওয়া যায় না । আয়ুশ বেলা দুপুরে উঠেই অফিসে চলে গেছে তার কোন ইন্টারেস্ট নেই বাবার বুড়ো বয়সের এই বিয়ের নাটকে । সন্ধ্যায় এক বড় পার্টির সাথে ডিল হবে আর কোইনসিডেন্টলি পার্টির নাম কন্যা । শক্তি মন মরা হয়ে বসে আছে পরনে লাল বেনারসী , কপালে চন্দন , সারা গায়ে গয়না তবু ওর একবারও মনে হচ্ছে না আয়নায় নিজেকে দেখি । যার জন্য সাজবে এ সাজ সে তো আজ পর হয়ে যাচ্ছে আর কি রইল ? চোখ ভিজে যাচ্ছে শক্তির কাজল ধেবরে গেছে , না দরকার নেই সম্পত্তি দরকার নেই সমৃদ্ধর শক্তি ব্যাক আউট করবে । এ বিয়ে হচ্ছে না ।
ক্রমশ
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য
(অথ আয়ুশমান কন্যা কান্ড )
একরাশ বিরক্তি নিয়ে অফিস পৌঁছে আয়ুশ জানতে পারলো নতুন শোরুম এর জন্য ডিল করতে যে আসছে তার লেট হবে পৌঁছাতে। বাড়ি ফিরে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না কারণ ফিরলেই ওই বিয়ের নাটক দেখতে হবে যেটা ওর হজম হবে না । লাঞ্চ করার ও ইচ্ছা নেই তাই দুটো পেগ ভদকা নিয়ে কেবিনে বসে ছিল আয়ুশ । পার্টির নাম কন্যা থাকে পাঞ্জাবের অমৃত্সর এ । একই নাম , একই রাজ্য কি কোইনসিডেন্ট ! আয়ুশ ভাবে আজ সে চরিত্রহীন , মাতাল আর স্বার্থপর ব্যবসায়ী কিন্তু সেদিন তো এমন ছিল না যখন সে সেন্ট লোরেট তে পড়তো ? ক্লাস , পার্টি , আড্ডা সব নিয়ে জমজমাট ব্যাপার । ও আর সমৃদ্ধ থাকত স্কুলের পাশের এক ফ্ল্যাটে , যাতায়াত সহজ হবে বলে । বাবা ওই ফ্ল্যাট কিনেইছিলো ওর পড়াশোনার জন্য । কিন্তু ফ্ল্যাটটা অচিরেই হয়ে ওঠে নরক গুলজার । স্কুল টাইম টুকু বাদ দিয়ে গোটা সময়টায় সমৃদ্ধ আয়ুশ আর বাকি ছেলেমেয়েদের আসর বসত সেখানে । বয়স মাত্র সতেরো আঠের হলেই বা পকেটে কন্ডোম আর হাতে মদের বোতল ছিল ওদের কোম্পালসারি । সামিয়া আর সমৃদ্ধ ডেট করছিল তখন আয়ুশ অলরেডি কমিটেড টু কন্যা । এসব নিয়ে কাটাতে কাটাতে পড়াশোনা আস ইউসুয়াল হচ্ছিল না । মুখে রাম নামের বদলে সহস্র বার উচ্চারিত হত ফাক অফ । বাড়ি ছিল কাছেই কিন্তু ওরা দুজন সচরাচর ফিরত না । সেদিন সমৃদ্ধ গিয়েছিল বাড়ি কারণ উত্তরা মানে ওর পিসি ডেকেছিল । আয়ুশ মা কে পাশ কাটিয়েছিল এই বলে যে ওর টিউশন আছে । তার পর ফাঁকা ফ্ল্যাট এ কিচেন টু বাথরুম কোন জায়গা বাকি ছিল না কন্যাকে নিয়ে ভেসে বেড়াতে । শখ করে আয়ুশ বলেছিল বেব হোয়াই নট আ সুট ফর দিস ? কন্যা রাজি হয়েছিল । নিকনের সাইবার শট দিয়ে পুরো প্রাইভেট মোমেন্ট সুট করে ওরা । আয়ুশ উত্তেজনাতে কন্যাকে বিচ বলায় কন্যা অফেন্ডেড হয় আর সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় । আয়ুশ রাগ করে পেগের পর পেগ ঢালতে থাকে আর রাতের দিকে সামিয়া আসে ফ্ল্যাটে । ও জানত না সমৃদ্ধ নেই আজ । আয়ুশ দরজা খুলে দিলে সামিয়া ঢুকে আসে ফ্ল্যাটে আর জানতে চায় সমৃদ্ধ কোথায় ? আয়ুশ ততক্ষণে মাতাল হয়ে গেছে আর কন্যার সাথে বাদানুবাদের ফলে রাগও হয়ে আছে ওর । সামিয়াকে কোন জবাব না দিয়ে ওর দিকে এগিয়ে যায় আয়ুশ । সামিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় জোর করে । আয়ুশ এর হাতগুলো ঘুরে বেড়ায় সামিয়ার সারা শরীরে । সামিয়া এক সময় আর বাধা দেয় না নিজেকে আয়ুশ এর হাতে ছেড়ে দেয় । সাইবার শট তখনো ওপেন ছিল তাই ওদের অজান্তেই সবটা রেকর্ড হয়ে যায় । পরে সামিয়া চলে গেলে আয়ুশ ঘুমিয়ে পড়ে । সকালে সমৃদ্ধ দেরি করায় আয়ুশ স্কুল চলে যায় । আর সমৃদ্ধ বেলার দিকে ফিরে আসে আর ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢোকে । এসেই ওর চোখ পড়ে সাইবার শট এর দিকে । কি আছে দেখতে গিয়ে ও ওটা হাতে তুলে নেয় । তার পর আয়ুশ আর কন্যার প্রাইভেট মোমেন্ট গুলো দেখতে পায় । ওটা রেখে দেওয়া উচিত জেনেও কৌতূহলী হয়ে ও দেখতে থাকে সবটা । এর মধ্যেই ও দেখে ফেলে কি ভাবে কন্যা রাগে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায় আর সামিয়া আসে তার খোঁজে । কি ভাবে আয়ুশ সামিয়ার সাথে ইন্টিমেট হয় । সব দেখে ওর ভীষণ রাগ হয় আর রাগের মাথায় কন্যার আর আয়ুশ এর এম এম এস বানিয়ে ইন্টারনেট এ লিক করে দেয় । আয়ুশ ফিরে এসে দেখে সমৃদ্ধ ফ্ল্যাটে বসে আছে । আয়ুশ কিছু বলার আগেই সমৃদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপর । দুজনের মারপিট হাতাহাতির মধ্যেই কন্যা চলে আসে । কন্যা তখন বিধস্ত কারণ এম এম এস টা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে । ওদের মারপিট করতে দেখে কন্যা ওদের শান্ত করে । আর আয়ুশ এর কাছে জানতে চায় কেন সে ওদের প্রাইভেট মোমেন্ট গুলোর এভাবে তামাশা বানালো । আয়ুশ তখনো কিছুই জানে না , এ সুযোগে সমৃদ্ধ কন্যাকে বলে এই নিয়েই আয়ুশ এর সাথে তার মারপিট হচ্ছিল । কন্যা সুযোগ দেয়না আয়ুশ কে কিছু বলার ও বেরিয়ে আসে ওখান থেকে । আয়ুশ সবটা জানতে পারে আর বুঝতেও পারে এটা কার কাজ । সেই থেকে সমৃদ্ধ আর আয়ুশ শত্রু হয়ে যায় একে অপরের । সামিয়া কে ইচ্ছা করে আয়ুশ নিজের গার্লফ্রেন্ড বানায় আর কন্যাতো এসবের পর স্কুলে কারোর সাথেই সে ভাবে মেলামেসা করত না । সমৃদ্ধ কে জব্দ করতে সামিয়ার সাথে রিলেশন বানিয়ে আয়ুশ কন্যার চোখে আরো খারাপ হয়ে যায় । তার পর স্কুল শেষ হয় সামিয়ার সাথে রিলেশন ও শেষ হয় । কন্যা ফিরে যায় পাঞ্জাব , সমৃদ্ধ আর আয়ুশ একই কক্ষপথে চালিত দুই বিপরীত মেরুর বাসিন্দা হয়ে যায় । আজ দশ বছর পর কন্যা নামের একজন আয়ুশ এর সাথে ডিল সাইন করবে কেন জানেনা আয়ুশ খুব ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে । এদিকে শক্তি পালিয়েছে তাকে কেউ খুঁজে পাচ্ছে না , কাঞ্জিলাল আর বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারেনি মুখ চুন করে ফিরতে হলো তাকে । সমৃদ্ধর দশ বছর আগের বদলা পুরো হতে হতে হলো না । আবার নতুন করে কিছু ভাবতে হবে সমৃদ্ধ কে । শক্তি পালাতে গিয়ে একটা ট্রেনে উঠে বসেছে জানেও না কোথায় যাবে ট্রেন কিন্তু এখন সেটা ইম্পরট্যান্ট না । ইম্পরট্যান্ট হলো সমৃদ্ধর থেকে দূরে পালানো ।
চলবে
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য
(অথ পুনর্মিলন পর্ব )
আয়ুশমান আর তার সামনে দাঁড়িয়ে তার এক কালের সোল মেট কন্যা । লম্বা , হিলহিলে শরীর , কোমর ছাপানো বার্গেন্ডি কালার চুল , পরনে জিন্স আর শার্ট । হতবাক আয়ুশ বিড়বিড় করে বললো ড্যাম সেক্সসি ইউ আর কন্যা । ব্যবসায়িক গম্ভীরতা ঝেড়ে ফেলে যখন আয়ুশ এগিয়েই যাচ্ছে কন্যাকে হাগ করতে সামনে এসে দাঁড়ালো এক অচেনা পুরুষ । হাই মিস্টার কাঞ্জিলাল আমি রোদ্দুর চক্রবর্তী কন্যার ফিঅনসে । আয়ুশ এর মুড টাই তিতকুটে হয়ে গেল , হোয়াট আ ক্র্যাপ ? কন্যা ইস আ রিয়েলি বিচ ! এই চার চোখ আলা বুদ্ধু টা শেষমেষ ? কন্যা এখনো পর্যন্ত কিছুই বলেনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আয়ুশ এর দিকে । ওর ওই শার্টের বোতাম এর ফাঁক দিয়ে দেখা যাওয়া বুকের লোম আজও যেন কন্যাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । কন্যা আর আয়ুশ এর চোখাচোখি হয়ে যায় , কন্যা মুখ ফিরিয়ে নেয় আর রোদ্দুরের হাতটা ধরে । কন্যা বলে ,'তো মিস্টার আয়ুশমান আমি পরশু পর্যন্ত আছি শহরে তার পর ফ্রাইডে আমার ফ্লাইট পাঞ্জাবের । সানডে আমার ওয়েডিং সারিমনি সো যা করার এই দুই দিনে শেষ করতে হবে । আজ ডিল টা যদি ডিসকাস করেনিতাম তা হলে ভালোই হত । '
আয়ুশ এর মাথা আর নিতে পারছে না , হি নিড রেস্ট । কন্যা বিয়ে করেছে এই রবিবার তাও এই রোদ্দুর কে ! তবু মিটিং শেষ করে আয়ুশ আর তার পর কন্যাকে ইচ্ছা করে ইগনোর করে ওর পিএ তারা কে নিয়ে বেরিয়ে যায় । কন্যার বুকে তো সেই সতেরো বছর বয়স থেকেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে যার কোন বিরাম নেই । রোদ্দুর ইউএস থেকে ফিরেছে গত বছর , ও ফ্যাশন ডিজাইনার । কন্যার আর রোদ্দুরের ফ্যামিলি থেকে সম্বন্ধ করা হয়েছিল আর তা পূর্ন হবে এই আপকামিং সানডে । রোদ্দুর খুব খুশি , ও কন্যাকে খুব ভালোবাসে । কন্যা খুবই পছন্দ করে রোদ্দুরকে , সহজ সরল ,পরিশ্রমী ছেলে কিন্তু কন্যা জানে সে তার সোল মেট তো একজনকেই জেনে এসেছে হারামি আয়ুশ ! কন্যা নিজেও জানে না কেন ওর কামিনা পুরুষই পছন্দ ! সেদিন সমৃদ্ধর হেল্পে কন্যার এম এম এস টা ডিলিট করা সম্ভব হয় না হলে কন্যা কি করত সেটা ভেবে আজও ও কেঁপে ওঠে । রোদ্দুরের সাথে কন্যা হোটেলে চেক ইন করে । আর আয়ুশ তার নিজের বাড়িতে হাজির হয় পি এ তারাকে নিয়ে । বাড়ি গিয়ে দেখে বিয়ে ভণ্ডুল হয়েছে , বাবা বসে আছে মাথায় আইস ব্যাগ আর সমৃদ্ধ বসে বসে শক্তির মা বহেন এক করছে । অফিসের কাণ্ডটা ভুলে হেসে ফেলে এই ব্ল্যান্ডার দেখে । ওকে হাসতে দেখে ফটো থেকে উত্তরাও হাসতে থাকে । আয়ুশ বাবা কে বলে ড্যাড কুল ওই শক্তি এই বহেনচোত সমৃদ্ধর মাল ও তোমাকে বোকা বানিয়ে তোমাকে লুটে নিতে চাইছিল । তুমি এক্সাইটেড হয়ো না ইফ ইউ নিড দেন আমি তারাকে বলছি আজ তোমাকে একটু সার্ভিস দিক । কাঞ্জিলাল জানে ছেলে রোজ রোজ বাড়িতে ভিন্ন ভিন্ন মেয়ে এনে রাত কাটায় কিন্তু তবু কিছু বলে না । ভাবে গিন্নি নেই তাই এই বদ মেজাজি ছেলে যদি ফুর্তি করে শান্ত থাকে তাই থাক তবে আজ বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছে আয়ুশ । কাঞ্জিলাল খেঁকিয়ে ওঠে , বলে তোমার মা কি কিছুই শিক্ষা দেয়নি তোমায় আয়ুশ ! তুমি পাগল হয়ে গেছ । উত্তরা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে , মরণদশা বুড়োর কথা শোনো ! আমি নাকি আমার বাবু কে শিক্ষা দিনি ! ও বিয়ে ভেঙে গেছে বলে ওর জ্বলন ধরে গেছে গা ! দাঁড়া আজ একটা ঝামেলা পাকিয়েই ছাড়বো ।
শক্তি সমৃদ্ধ কে জানাতে পারেনি ও প্রেগনেন্ট । কাঞ্জিলালের সাথে বিয়ে দিতে উৎসুক সমৃদ্ধ হয়ত শক্তিকে বাধ্য করত এবোর্ট করতে । শক্তি যদি নিজের সন্তানকে সমৃদ্ধর নাম না দিতে পারে দেবে না কিন্তু ওই কাঞ্জিলালের নামও দেবে না । ট্রেনটা পাঞ্জাবের দিকে যাচ্চে ও না হয় পাঞ্জাবেই নেমে যাবে ।
চলবে

