ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য ৬
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য ৬
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য
( অথ অপলার সিদ্ধান্তে বদল )
আয়ুশ এর পেটানো পেশিবহুল চেহারা দেখে রোদ্দুরের মনে লাড্ডু ফুটতেই শুরু হয়ে ছিল এমন সময় একটা প্রকান্ড ঘুষি এসে পড়লো ওর নাকে । ঘুরে রোদ্দুর পড়লো ডাস্টবিনটার পাশে । আয়ুশ ওকে তুলে দাঁড় করিয়ে আবার দিলো পেটের মধ্য দু তিনটে পাঞ্চ । রোদ্দুর তার পর কোন মতে আয়ুশ কে ঠিলে দিয়ে মার দৌড় বাইরে । আয়ুশও গজ গজ করতে করতে বাইরে এলো আর দেখলো রোদ্দুর আসে পাশে কোথাও নেই । অপলা দেখেছে রোদ্দুর কে দৌড়ে পালিয়ে যেতে , এবার আয়ুশ এভাবে শার্ট লেস হয়ে বেরিয়ে এসেছে দেখে অপলা এগিয়ে আসে ওর দিকে ।
ও কি দুর্দান্ত ফিজিক ! এই জন্যই মেয়ে আমার এই ছেলের পিছনে ছোক ছোক করে ? যাই হোক দেখি একবার বেশ করে করকে দিতে হবে । কি জানি আমার জামাইকে কি করলো যে বেচারা ও ভাবে ছুট দিলো ? এই আয়ুশমান হোয়াট দা ক্র্যাপ ম্যান ? তুমি কি করেছ রোদ্দুরের সাথে ? আর এভাবে হসপিটালে শার্ট লেস হয়ে ! মানে টা কি ? অপলা চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে । মানে টা হলো আমি কন্যাকে নিয়ে যাচ্ছি কলকাতা ... আয়ুশ বললো । আপনি হয়ত জানেন না যে যাকে আপনি আপনার মেয়ের জন্য নির্বাচন করেছেন সে একজন গে । অপলা অবাক হয়ে গেল হ্যাঁ রোদ্দুর !
সমৃদ্ধ জানে কন্যা যখন সুস্থ হয়ে যাবে আয়ুশ ঠিক ওকে নিয়ে যাবেই সাথে করে কলকাতা । আপাতত সমৃদ্ধ শক্তিকে কি ভাবে ফেরত নিয়ে আসবে নিজের জীবনে ? শক্তি খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে সমৃদ্ধর সাথে তবে সেই ব্যাপারটা নেই । সমৃদ্ধ বললো , এই শক্তি প্লিস আমাকে ক্ষমা করে দাও , মাইরি বলছি আমি কোনদিন কোনো অন্যায় করবো না । তুমি ফুল আমি মালী হয়ে থাকবো সোনা ! একবার এই অধমকে মাফ করে দাও , তুমি মাফ করলে পিসীমাও মাফ করে দেবে । শক্তির খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু সেটা ও প্রকাশ করছে না । একটু তো তরপানোর হক শক্তির ও আছে । আসলে ও অনেক ভেবেছে আর তার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে যতই খারাপ হোক সমৃদ্ধ তবুও শক্তি ওকেই ভালোবাসে । হয়ত মনে মনে অজান্তে সমৃদ্ধ ও শক্তিকেই ভালোবাসে তাই তো বার বার শক্তিকে ও বোঝাচ্ছে । অন্য কেউ হলে সমৃদ্ধ এটা করত না শিওর । আর যতই হোক ও তো একটা মানুষ যে নিজের ভুলটা স্বীকার করে ফিরতে চাইছে ? সুযোগ একটা দেওয়া তো দরকার । এমনিতেও সমাজ শক্তি আর সমৃদ্ধর ব্যাপারে জানে আর না না কুৎসা রটাতে থাকে । এর পর যদি ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ আবার শক্তিকে ডিচ করে কি আর হবে ? শক্তি সমৃদ্ধকে বললো ঠিক আছে আমি ভেবে দেখতে পারি ।
উত্তরা খুব খুশি যতই হোক দাদার ছেলে সমৃদ্ধ ! ওকে জড়িয়ে বাপের বাড়ির স্মৃতি । বিপথে যাওয়া ছেলেটা যদি শুধরে যায় বা শক্তির সাথে ঘর সংসার করে তা হলে তো ভালোই । আর বাবুও কন্যা কে জয় করে নিয়ে ফিরবে তাই উত্তরা নিশ্চিত যে এবার ওর মুক্তি আসন্ন ।
অপলা কনফিউজড কি হবে ? রোদ্দুর গে ! এবার কি হবে , কন্যা একটু সুস্থ হলেই আয়ুশ এর সাথে যেতে চাইবে ? তার থেকে ভালো অপলা নিজেই আয়ুশ কে বলবে ও যেন কন্যাকে বিয়ে করে কলকাতায় ফেরে । এতে অপলার প্রেস্টিজ ও বাঁচবে আর মেয়েটাও মা কে ভুল বুঝবে না ।
কন্যার ঘুম ভেঙ্গে যায় আর ও দেখে আয়ুশ বসে আছে ওর বেডের সামনে । যাক বাবা তা হলে আমি মরিনি ! যদি মরে যেতাম তা হলে ? আয়ুশ আমি বেঁচে আছি ?
আয়ুশ একটা প্রকান্ড চিমটি কেটে দেয় কন্যার হাতে । কন্যা উহু করে ওঠে । এই তোমার মা কে পটিয়ে ফেলেছি বুঝলে । ডক্টর বলেছেন কাল মানে মঙ্গলবার তোমাকে ছুটি দেবে আর বুধবার আমাদের বিয়ে হবে আর তার পর রিটার্ন টু কলকাতা । কন্যা অবাক , এমা তুমি এত শত কখন করলে গো ? মা রাজি হয়েছে স্ট্রেঞ্জ ! আর রোদ্দুর কে কি বললে তুমি ? ও কিছু বলেনি ?
আয়ুশ বলে শোনো কন্যা তুমি বেঁচে গেলে আয়ুশ কাঞ্জিলালের জন্য বুঝলে ? মালটা গে । তোমার মত ভুখা সেরনি কে রোদ্দুর সামলাতে পারবে না । আমি ঠিক আছি কি বলো ? কন্যা অবাক ও কিছুই বলতে পারে না ।
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য
( অথ পিয়া মোহে সাথ ছুটে না )
অপলা নিমরাজি এ বিয়েতে , কিছু তো আর করার নেই । কন্যা যখন ওই আয়ুশ ছাড়া বাঁচবে না তখন বিয়েটা দিয়ে দেওয়াই শ্রেয় । আয়ুশ রেডি হয়ে যাবে হসপিটালে কন্যা কে আনতে । কন্যা আর আয়ুশ এর কাল বিয়ে তাই হাতে কাজ অনেক কিন্তু সময় বড্ড কম । বিয়ে সেরে কলকাতা যেতে হবে ওদের , বিবাহ বিভ্রাট নিয়ে অনেক সময় পাঞ্জাবে আছে আয়ুশ এতে ওর ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে । ওদিকে সমৃদ্ধকে শক্তি জানিয়েছে তারা আপাতত একসাথেই থাকবে কিন্তু বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না । ওরা লিভ ইনে থাকবে বেশ কিছুদিন তার পর সমৃদ্ধ যখন শক্তিকে আস্বস্ত করতে পারবে তখনই ওদের সম্পর্কে সাত পাকের আয়োজন হবে । শক্তি আর নতুন করে ঠকতে চায় না তাই সে এবার সমৃদ্ধ কে বাজিয়ে দেখতে চায় । যদিও সমৃদ্ধর চোখে ও নিজের জন্য ভালোবাসা দেখেছে তবুও অগ্নিপরীক্ষা কি শুধুই মেয়েদের জন্য ! এবার এক পুরুষ কে দিতে হবে সেই পরীক্ষা । সমৃদ্ধর রাজি না হয়ে উপায় নেই , সে যা যা করেছে তার পর এটুকু পরীক্ষাতো তাকে দিতেই হবে । সে আজ কনফার্ম হয়ে গেছে যে ভালোবাসার স্কোর শুন্য হয় না , কোনদিনই হয় না ।
আয়ুশ হসপিটাল পৌঁছে গিয়ে দেখলো তার জন্য আর এক চমক অপেক্ষায় রয়েছে । হসপিটাল কর্তৃপক্ষ জানায় কন্যাকে বাড়ির লোকজন রিলিজ করে নিয়ে গেছে । ওরা আকাশ থেকে পড়লো ! বাড়ির লোকজন মানে অপলা , আয়ুশ এরা তো সবাই এখানে উপস্থিত , তা হলে কে কন্যাকে নিয়ে গেছে ? আয়ুশ রেগে চোটপাট শুরু করে হসপিটালে , তার পর সমৃদ্ধ ওকে বোঝায় যে এদের সাথে পরে বুঝে নেওয়ার অনেক সময় পাওয়া যাবে তাই এখন দরকার কন্যা কোথায় সেটা দেখা । আয়ুশ গাড়ি নিয়ে কন্যাদের বাড়ি যায় তাড়াতাড়ি কিন্তু সেখানেও কন্যা নেই ! মেয়েটা কোথায় গেল ? কে নিয়ে গেল ওকে ?
অপলার প্রেসার হাই হয়ে গেছে আর কেঁদে কেঁদে সে অস্থির হয়ে গেছে । শক্তি অপলাকে সামলাচ্ছে আর নিজেকেও আস্বস্ত করছে যে কন্যাকে খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে । আয়ুশ সমৃদ্ধর সাথে রোদ্দুরের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় কারণ একমাত্র রোদ্দুরের মোটিভ আছে কন্যার ক্ষতি করার । কিন্তু সেখানেও গিয়ে জানা যায় রোদ্দুর আর তার পরিবার গতকাল বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে । হয়ত ওরা আমেরিকা ফিরে গেছে । আয়ুশ সমৃদ্ধ ডিসাইড করে পুলিশের কাছে মিসিং ডাইরি করবে । সমৃদ্ধ জানায় আয়ুশ একবার হলেও যেন কন্যার বেডরুম টা সার্চ করে দেখে হয়ত কোন ক্লু পাওয়া যেতেই পারে । আর চব্বিশ ঘন্টা না পার হলে মিসিং ডাইরি নেবেও না পুলিশ । আয়ুশ কন্যার রুমে গিয়ে দেখতে থাকে , আর তেমন কিছুই পায় না । একমাত্র একটা জিনিস নোটিসেবল সেটা হল কন্যার সব ডকুমেন্ট এর মধ্যে পাসপোর্ট টা মিসিং । এখানেও হতাশা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না আয়ুশ আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ছে । কন্যাকে কে নিয়ে গেল ? এটা একটা অপহরণ সেটা তো বোঝা যাচ্ছে কিন্তু খুব চেনা কেউ না হলে হসপিটাল থেকে ও ভাবে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় । রোদ্দুর যদি পাঞ্জাব ছেড়ে চলে গেছে তা হলে আর কে এটা করতে পারে ? তবে কি আয়ুশ আর কন্যার মিল হবে না ? আয়ুশ বির বির করে বলে , পিয়া মোহে সাথ ছুটে না .....
না কন্যার মা অপলাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে কন্যার পাসপোর্ট টা কোথায় ? আয়ুশ বেরিয়ে আসতে যায় কন্যার রুম থেকে তখনই ক্যাঁচ করে দরজাটা বন্ধ হয়ে যায় । আয়ুশ হতবাক হয়ে গেছে , তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার মা উত্তরা .....
চলবে
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য
( অথ উত্তরার বিদায় বেলা )
আয়ুশ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার মৃত মা উত্তরা কাঞ্জিলাল। যাকে আয়ুশ নিজের হাতে মুখাগ্নি দিয়ে ছিল মাস কয়েক আগে । তার মনের ভ্রম নয় তো ! এই ভেবে আয়ুশ নিজের চোখটা একবার কচলে নিলো । না কোন ভুল হচ্ছে না তার , এটা তার মা উত্তরা ই । আয়ুশ এর মুখ থেকে বেরিয়ে এল একটাই শব্দ 'মা '!
উত্তরা আজ শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তার ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । পেত্নী হবার পর সে এক এক করে কাঞ্জিলাল , সমৃদ্ধ বা শক্তিকে দেখা দিয়েছে । তবে পুত্র যে তাকে শেষ বিদায় দিয়েছিল তার সামনে আসা মানে উত্তরার আকাঙ্খার পূর্তি । সেই মত আয়ুশ এর সামনে আসা মানেই উত্তরার অস্তিত্বের শেষ সময় এসে গেছে । এর পর উত্তরা পাড়ি দেবে অনন্ত লোকের উদ্দেশ্যে । ছেলের সংসার জীবনে প্রবেশ করা নিজের চোখে দেখে তার পরই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে এমনটাই ভেবে ছিল উত্তরা । তার পর কন্যাকে উদ্ধার করার জন্য এই পদক্ষেপ নিতে সে বাধ্য হলো । আয়ুশ তুই ঠিক দেখছিস বাবু , আমি তোর মা তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি । আমি মরেও তোর আসে পাশেই ছিলাম , আজও আছি । তুই কন্যাকে খুজছিস তাই না ? আয়ুশ অবাক ও বুঝতে পারছে না ওর সাথে কি ঘটছে ? ও বলে , মা তুমি কি করে জানলে ?
উত্তরা তাকে সবটা বলে একে একে , কি ভাবে সে কাঞ্জিলালের বিয়ে ভণ্ডুল করেছিল । কি ভাবে সমৃদ্ধকে ভয় দেখিয়ে ছিল । তার পর পাঞ্জাবে উপস্থিত হওয়া । আয়ুশ আফসোস করে মাকে অভিযোগ করে মা কেন তাকে এত দিন দেখা দিলো না ? কেন এভাবে অসময়ে তাকে একা রেখে এভাবে চলে গেল ?
উত্তরা বললো , বাছা আমার শান্ত হ বাবা । আমি জানি তোর অনেক অনেক রাগ আমার প্রতি তবু এসবের সময় এখন আর নেই । আগামি কয়েক ঘন্টার মধ্যে কন্যাকে উদ্ধার করতে না পারলে আয়ুশ ওকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে । আয়ুশ জানতে চায় উত্তরার কাছে কন্যা কোথায় ?
উত্তরা বলে অদৃশ্য হয়ে উত্তরা সবসময়ই হসপিটালে ছিল কন্যার কাছে । ছেলের ভালোবাসার উপর কোন আঘাত যদি ঘুরে আসে এটাই তার মনে বার বার ঘুরে আসছিল । তার পর আজ সকালে আয়ুশ যখন সবাইকে নিয়ে অপলার বাড়ি ফিরে আসে ফ্রেশ হতে । তখন রোদ্দুর হসপিটালের ওয়ার্ড বয়কে ঘুষ খাইয়ে কন্যাকে রিলিজ করিয়ে বের করে আনে হসপিটাল থেকে । পাছে কন্যা বাধা দেয় সেই জন্য ওকে ক্লোরোফোম দিয়ে অজ্ঞান করে হুইল চেয়ারে করে এনে গাড়িতে তোলে । তার পর ওকে আগে থেকেই যে হোটেলে ওরা উঠেছে সেখানে নিয়ে গিয়ে তুলেছে । ও জানত যে তোরা ওকেই সন্দেহ করবি তাই আগের দিনই ও ঘর ছেড়ে হোটেলে ওঠে সপরিবারে । এতে তোরা ভাববি যে রোদ্দুর পাঞ্জাবে নেই তাই ওকে কেউ খুঁজবে না আর এই তালে ওই খচ্চর পোলা তোর হবু বউরে নিয়া পগারপার । রোদ্দুর কে আমি ফলো করতে করতে ওই হোটেল পর্যন্ত গেছিলাম রে । জানতে পারলাম ওর কাছে আগে থেকেই কন্যার পাসপোর্ট আছে । যখন ওদের বিয়ে ঠিক হয় তখন হানিমুনে যাবার জন্য টিকিট করবে বলে ও পাসপোর্ট টা নিয়েছিল । তার পর যখন পরিস্থিতি বদলায় ওই পাসপোর্ট টাকেই তুরুপের তাস বানিয়ে ও প্ল্যান করে এই অপহরণের । কন্যাকে আজই ও দুবাই নিয়ে চলে যাবে আর তিন ঘন্টা পরে ওই উড়োজাহাজ উড়বে বাবু । তার আগে তুই উড়ে যা আর ওই মেনী মুখো শয়তান অপদটাকে পুলিশের হাতে তুলে আমার বৌমা কে নিয়ে আয় । আয়ুশ অবাক , তার মা মরে গিয়েও এভাবে তার উপকার করলো ? আজ মা না বললে কোনদিন হয়ত কন্যাকে ট্রেস করা যেত না । পুলিশের তদন্ত সময় সাপেক্ষ বিষয় তাই দেশ থেকে যদি রোদ্দুর একবার কন্যাকে বার করে নিতে পারত তা হলে ওকে পাওয়া হয়ত সম্ভব হত না । উত্তরা বললো , এত দিন বাছা আমার তোর সামনে আসিনি কারণ তোকে দেখা দেওয়া মানেই আমার মুক্তি । আর আমি তুই আজ সামনাসামনি এসে গেছি তাই আজ আমার মুক্তি হবে । আর আমি কাউকে দেখতে পাবো না , আমাকেও কেউ দেখতে পাবে না । ভেবেছিলুম তোর বিয়েটা দিয়েই মায়া ত্যাগ করব কিন্তু ওই রোদ্দুর নামক অপগন্ড টার জন্য সব বরবাদ । আয়ুশ এর চোখে জল , মা আছে কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত সে জানত না আর এখন জেনেও বা ও মাকে ধরে রাখতে পারল কই ? মা তুমি কি আজই ?
উত্তরা কষ্টটা গিলে নিয়ে বললো বাছা আমার আমি তো কবেই খরচের খাতায় নাম তুলেছি । ইচ্ছা গুলো অপূর্ন থেকে যাওয়ায় থেকে গেছিলাম এই পৃথিবীতে । তবে আমি আজ তোকে আশীর্বাদ দিয়ে যাচ্ছি । এবার তুই যা ওই ব্লু মুন হোটেলে আর ওই ছোড়া টার হাত থেকে মেয়েটাকে বাঁচা । আয়ুশ কিছু বলার আগেই হওয়ায় মিলিয়ে গেল উত্তরা । আয়ুশ মনের কষ্ট চেপে বেরিয়ে এল ওখান থেকে , মায়ের জন্য আবেগ কে এখন দাবিয়ে রেখে ওকে যেতে হবে কন্যাকে উদ্ধার করতে । রোদ্দুর তো শাস্তির দাবীদার ছিলই এর পর ওর জন্য মা আয়ুশ এর বিয়ে না দেখেই আপসোস নিয়ে চলে গেল তাই এবার রোদ্দুরের জন্য রইল উদোম কেলানি ।
চলবে
ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য
( অথ বধূ বরণ )
সমৃদ্ধকে নিয়ে আয়ুশ পাড়ি দিলো তার মায়ের বলা ঠিকানায় । গাড়ি নিয়ে বেরোনোর সময় সমৃদ্ধকে কিছুই জানায়নি সে । সমৃদ্ধ জানে ভাইয়ের মনের হাল তাই সাহস করে আর ঘটায় নি ওকে । ও যেতে বললো সাথে আর সমৃদ্ধ ও চললো । কিছুটা যাবার পর গাড়ি যখন ঝড়ের গতি কমিয়ে হোটেল ব্লু মুনের বাইরে দাঁড়ালো , সমৃদ্ধ বুঝে গেল কন্যার হদিস আয়ুশ পেয়ে গেছে নিশ্চিত । ব্লু মুন হোটেলে পৌঁছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল কিছু ক্ষণ আগেই রোদ্দুররা চেক আউট করে গেছে । আয়ুশ বেশ হতাশ হলো তার পর সমৃদ্ধকে বললো , চল এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে এগোতে হবে আমাদের । ওরা এয়ারপোর্ট এর দিকেই গেছে ডেফিনেটলি । শালা একবার আসুক আমার হাতে ওকে কি করি তুই দেখ ? আই উইল কিল দা বাস্টার্ড । সমৃদ্ধ বললো , ওর পিছনে কি বাঁশ দেব দেখ মারা , শালা শুয়োর কি আওলাদ কা .... থাক আর বলবো না তুই রেগে যাবি । আয়ুশ বললো আপাতত খিস্তি গুলো জড়ো করে রাখা উচিত কারণ রোদ্দুর কে পেলে তবেই ওগুলো কাজে আসবে । ওরা ছুটতে লাগে এয়ারপোর্ট এর দিকে । সন্ধ্যা নামার সময় হয়ে গেছে আর ওখানে গিয়ে দেখা গেল দুবাই এর ফ্লাইট লেট তাই এখনো পর্যন্ত কেউ ভিতরে প্রবেশ করেনি । আয়ুশ বললো চল খুঁজে বের করি ওই বোকাচোদা কে তুই ওদিকে খোঁজ আমি এদিকে , এখানেই কোথাও বসে আছে । সমৃদ্ধকে ইন্সট্রাকশন দিয়ে আয়ুশ এগিয়েই যাচ্ছিল তখন সমৃদ্ধ ওকে আটকালো । দেখ ভাই আমার যুক্তি দিয়ে ভাব একবার , ও যদি আমাদের দেখে নেয় না আমরা ওকে খোঁজার আগেই ও লুকিয়ে যাবে তাই । আয়ুশ বলে , তুই কি বলছিস পরিস্কার করে বল , মেলা ভাট বকিস না । সমৃদ্ধ আয়ুশকে বোঝালো যেহেতু ফ্লাইট অনেকটাই লেট তাই হাতে সময় আছে আর তাড়াহুড়ো করে ওকে সাবধান হবার সময় না দিয়ে লুকিয়ে থেকে ওকে ধরতে হবে কন্যা সহ । প্ল্যান অনুযায়ী ওরা এয়ারপোর্ট এলাকার একটা দোকানে গিয়ে দুটো বোরখা কিনে নেয় তার পর এয়ারপোর্ট এর চেঞ্জ রুমে সেগুলো পড়ে নেয় । বোরখা পরা অবস্থায় ওদের চেনা সম্ভব নয় তাই সহজেই ওরা এদিক ওদিক দেখতে থাকে ।অপেক্ষমান যাত্রীদের মধ্য থেকে রোদ্দুরকে আবিষ্কার করে ফেলে আয়ুশ । রোদ্দুর কন্যাকে মাদক দিয়ে অর্ধ অচেতন করে রেখেছে আর এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন কন্যা অসুস্থ হয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে । রাগে আয়ুশ জ্বলে ওঠে তবু নিজেকে সামলে নিয়ে সমৃদ্ধকে ডেকে নিয়ে আসে । তার পর সমৃদ্ধ ওই বোরখা পরা অবস্থায় মেয়েলি নাকি সুরে রোদ্দুর কে বলে , জনাব আপনার বিবি ? রোদ্দুর ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দেয় । সমৃদ্ধ বলে উনি কি অসুস্থ ? এভাবে প্রায় অজ্ঞান এর মত দেখছি অনেক ক্ষন ধরে । রোদ্দুর বলে হ্যাঁ একটু শরীর খারাপ লাগছে । আয়ুশ আর সমৃদ্ধ বোরখা তুলে বলে আমরা একটু হেল্প করে দেব নাকি ? রোদ্দুর অবাক হয়ে গেছে , এরা ইন দি মোমেন্ট কি করে এখানে পৌঁছে গেছে ? কেউ তো জানার কথা না যে রোদ্দুরের কি প্ল্যান ? তবে ওসব ভাবার সময় সে পেলই না । তার আগেই জব্বর কটা ঘুসি এসে পড়েছে নাকে মুখে । আয়ুশ আর সমৃদ্ধ শুরু করে দিয়েছে বেদম ক্যালানি । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাজির হয়ে গেছে পুলিস । আয়ুশ পুলিশের কাছে সব জানায় কি ভাবে কন্যাকে রোদ্দুর অপহরণ করে দুবাই নিয়ে যাচ্ছিল । পুলিশ রোদ্দুর কে নিয়ে যায় , আর সমৃদ্ধর আর ওকে খিস্তির বন্যায় ভাসানো হয় না । কন্যাকে আয়ুশ বাড়ি নিয়ে আসে আর প্রাথমিক চিকিৎসার পর কন্যা সুস্থ হয়ে যায় । ওকে এমন প্ল্যান করে নিয়ে যাওয়া হয় যে ও জানতেই পারে নি গোটা ঘটনাটা কি ঘটেছে । পুরো সময়টাই ও অচেতন ছিল । অপলা নিশ্চিন্ত আর সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞ । আয়ুশ আর সমৃদ্ধ না এলে তার মেয়েকে নিজের হাতে এক শয়তানের হাতে তুলে দিত অপলা । তবে আয়ুশ জানলো কি ভাবে রোদ্দুরের প্ল্যান ? উত্তরটা আয়ুশ সেই মুহূর্তে কাউকে জানালো না , বললো সোর্স লাগিয়েছিলাম । পরে সমৃদ্ধর কাছে আয়ুশ সবটা বলে , পিসীমাকে আর কোনদিনই দেখা যাবে না এটা সমৃদ্ধর মনে একটা হতাশার সৃষ্টি করলেও খানিকটা নিশ্চিন্ত হয় বৈকি ! তবে সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না । শক্তির চোখে ও জল , আজ সে বেঁচে আছে উত্তরার জন্য ।
সকাল থেকেই আয়োজন শুরু হয় তার পর আসে সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্র ক্ষণ । কনের সাজে সজ্জিত কন্যাকে সাত পাকে বেঁধে ফেলে আয়ুশমান কাঞ্জিলাল । সমৃদ্ধর ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই , শক্তি যতক্ষণ না পর্যন্ত রাজি হচ্ছে ততক্ষণ কিছু তো করার নেই । তবে বিয়ের সব সুযোগ সুবিধা তো সে পাবেই । পরের দিন সকাল সকাল ওরা বেরিয়ে পড়ে কলকাতার দিকে । সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছে আয়ুশ এর বাবা , যাকে আগের দিন ফোন করে সব বলে রেখেছিল সমৃদ্ধ ।
প্লেনের জার্নি করার সময় শক্তিকে টুক করে স্বীকারোক্তি টা করেই ফেলে সমৃদ্ধ .... আর সেটা হলো I love you ...
হয়ত অনেক দেরী হয়ে গেল এই তিন ম্যাজিক ওয়ার্ড গুলো বলতে তবু শেষ পর্যন্ত বলতে পারল সমৃদ্ধ ।
কাঞ্জিলাল বাবু শক্তিকেই বধূ বরণ করতে বললো কারণ এক তো এই সকল স্ত্রী আচার করার জন্য এ বাড়িতে কোন মহিলা নেই , আর দুই সমৃদ্ধর হবু স্ত্রী হলেও কাঞ্জিলাল শক্তিকে এ বাড়ির বৌমা বলেই মানেন । শক্তি বরণ ডালা এনে বরণ করলো আর কুনকে করে ধান কেটে , দুধে আলতাতে পা রেখে কন্যা প্রবেশ করে কাঞ্জিলাল হাউসে । ভুল তো মানুষ মাত্রই হয় , সেটা শুধরে নিয়ে নতুন শুরু তো এক জায়গা থেকে করতেই হয় তাই না ?
ফুলশয্যার দিন একটা টুইস্ট ছিল কাঞ্জিলালের তরফ থেকে , সে আয়ুশ আর সমৃদ্ধ দুজনের জন্যই খাট সাজানোর ব্যবস্থা করেছে । তাকে এহেন করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলে , আরে বাছা আয়ুশ বিয়ে করে ফুলশয্যা করছে আর সমৃদ্ধ বিয়ের আগে ফুলশয্যা করবে । এরটা পোস্টপেড ওরটা প্রিপেড এই আর কি । শক্তির লজ্জা লাগলেও সে মানা করে না । কন্যাকে বাড়ির চাবির গোছা খানা দিয়ে কাঞ্জিলাল বলে , মা এখন থেকে সবই তোমার কাছে গচ্ছিত রাখলাম ।
আয়ুশ এর একটাই আপসোস রয়ে গেল রোদ্দুরের জন্য মা তার বিয়েটা দেখে যেতে আর পারলো না । কন্যার কাছে উত্তরার বিষয়টা লুকানোই আছে আসলে যতই হোক শাশুড়ি আর বৌমার সম্পর্ক একটু অম্ল গোছের হয় এর পর সে যদি জানতে পারে তার শাশুড়ি পেত্নী হয়ে ছিল , কি ভাববে কে জানে ?
সমাপ্ত

