STORYMIRROR

Rima Goswami

Romance Tragedy Fantasy

2  

Rima Goswami

Romance Tragedy Fantasy

ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য ৫

ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য ৫

16 mins
105

ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য 

( অথ ভালোবাসার স্কোর )


কন্যা রেডি কিন্তু ও টেনশনে ঘেমে গেছে , এখনো পর্যন্ত আয়ুশ এর দেখা নেই ! একটু পড়েই ওকে নিয়ে যাওয়া হবে মন্ডপে । রোদ্দুর অপেক্ষায় আছে তার পরিনীতার । সমৃদ্ধ নিজে নিজেই ড্রেসিং করেছে ওর ক্ষত গুলোর । আয়ুশ দুপুরের হাতাহাতির পর আকন্ঠ মদ খেয়ে প্রায় বেহুঁশ হয়ে গেছে । ওর হুস নেই যে আজ নয় তো কোনদিনই নয় , আজ না পারলে কন্যাকে ও হারিয়ে ফেলবে । শক্তি সব চেষ্টা করে ফেলেছে আয়ুশ কে বোঝাতে পারেনি , শেষে উত্তরার কাছে গিয়ে সেও বসে আছে । উত্তরা ভাবছে  আয়ুশ তা হলে প্রথমেই রণে ভঙ্গ দিয়ে বসে আছে । হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে উত্তরা যায় সমৃদ্ধর কাছে । আচমকাই পিসীমাকে এখানেও দেখে ভিমরি খেয়ে যায় তার পর আবার সামলে নেয় । এই চ্যামরা তুই নিজের কুকীর্তি স্বীকার করবি কি না বল ? করলে ভালো আমি তোকে রাজা করে দেব আর না স্বীকার করবি তো বল এখনি তোর ঘাড় মটকে দেব আমি । সমৃদ্ধ ভীষণ শিওর যে পিসিমা ছোট থেকে তাকে মানুষ করেছে সেই পিসিমা আর যাই করুক তাকে মারবে না । সমৃদ্ধ খুব হাসতে লাগলো বললো ঠিক আছে মেরে ফেল আমাকে পিসিমা , তবু তোমার ঐ হারামখোর ছেলে বাঁচবে তো ? আমি মরলেও আয়ুশ বাঁচবে না । ও তো অলরেডি হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছে । শক্তি দেখছে উত্তরা রেগে যাচ্ছে খুব তার মুখে চোখে একটা পরিবর্তন হচ্ছে । আচমকাই একটা তীব্র বাতাস বইতে শুরু হয় ঘরের মধ্যে । শক্তি ছিটকে পড়লো বিছানায় আর উত্তরা মাটি থেকে অনেক উঁচুতে শূন্যে উঠে গেছে । কোথায় সেই মাতৃ সুলভ রূপ ? এ উত্তরা অন্য একজন । চুলগুলো খোলা বাতাসে ভাসমান অবস্থায় , চোখের মণি দুটো সম্পূর্ণ সাদা । উত্তরা এখন যেন মূর্তিমান বিভীষিকা । সমৃদ্ধর গলা শুকিয়ে গেছে , সে ছুটে পালাতে চেষ্টা করে আর উত্তরার হাত দ্বিগুণ লম্বা হয়ে তাকে ধরে আছড়ে ফেলে মাটিতে । সমৃদ্ধ ব্যাথায় কঁকিয়ে ওঠে । উত্তরার মাথাটা বনবন করে ঘুরতে শুরু করেছে আর একটা বিচ্ছিরি হারহিম করা হাসি সে হেসেই যাচ্ছে । উত্তরা সমৃদ্ধকে শূন্যে তুলে দেয় আর বলে ঠিক আছে বাছা তোকে কিছুই বলতে হবে না কন্যাকে । আমি তো যেদিন পাঞ্জাব আসার আগে  আয়ুশ এর কাছে তুই সব স্বীকার করেছিলি সেদিনই আমি ওসব কথা রেকর্ড করে রেখেছি । তোকে মেরে দি আগে তার পর শক্তিকে দিয়ে ওটা আমি কন্যার কাছে পাঠিয়ে দেব । কন্যা আয়ুশ কে সামলে নেবে ঠিকই মাঝখানে তোর প্রাণপাখিটা আজ খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবে । তুই আমাকে খুন করেছিস একরকম তাই না তাই আমার তো প্রতিশোধ নিতে কোন বাধা নেই । সমৃদ্ধ প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছে আর এই বিভীষিকাময় পিসীমাকে দেখে তার গলা থেকে কোন শব্দও বের হচ্ছে না । সমৃদ্ধ বিছানায় হকচকিয়ে বসে থাকা শক্তির দিকে অসহায় ভাবে তাকায় । শক্তি সমৃদ্ধকে বলে , তুমি পিসীমাকে বলো তুমি নিজের দোষ স্বীকার করবে । সমৃদ্ধ কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে পিসিমা আমায় এবারের মত ক্ষমা করে দাও আমি সব বলে দেব কন্যাকে । আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে আয়ুশ এর বিয়ে দেব পিসিমা । উত্তরা তবু শান্ত হয় না তবে সমৃদ্ধকে শূন্য থেকে নামিয়ে দেয় । আর বলে বাছা তুমি শুধুমাত্র আয়ুশ বা কন্যার অপরাধী তাই নয় তুমি শক্তির ও অপরাধী । তাই শক্তিকে তুমি যথাযথভাবে স্বীকার করো ওকে ওর সন্মান তুমি ফিরিয়ে দাও । সমৃদ্ধ বলে সে সব শর্তেই রাজি বিনিময়ে পিসিমা শুধু তাকে ক্ষমা করে । উত্তরা শান্ত হয়ে যায় আর আগের রূপে ফিরে আসে । শক্তি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর বলে , আমি সমৃদ্ধকে চাইনা পিসিমা ! যার কাছে ভালোবাসার স্কোর শূন্য তার সাথে জীবন কাটানো যায় না । ওকে ভালোবাসি সেটা আমার ভুল কি না জানি না তবে ওর সাথে দাম্পত্য জীবনের শুরু করা আমার জীবনের চরম ভুল হবে সেটা আমি নিশ্চিত । উত্তরা বলে , বাছা আমার ভাইপো কে আমি শিক্ষা দিয়েছি এবার ওকে তুমি ক্ষমা করবে কি না সেটা তো তোমার সিদ্ধান্ত তাই না । যাই হোক সেসব কাল না হয় ভাববো আমরা আপাতত বাছা আমার প্যান্টে মুতে ফেলেছে নিজের পিসীমাকে দেখে তুমি ওর একটা ব্যবস্থা করো । তার পর কন্যার কাছে ওকে নিয়ে যাও আমি দেখি বাবু কি করছে । 

এসবের মধ্যে আয়ুশ এক কান্ড করে বসে আছে , সে নিজে কন্যার কাছে চলে গেছে । আয়ুশ কন্যার পায়ে এক তোরা নুপুর পরিয়ে দেয় যেমনটা ওদের মধ্যে কথা হয়েছিল একদিন । কন্যা ভেবেছিল হয়ত ওকে আয়ুশ বোঝাতে এসেছে কিন্তু সেসব দিকে না গিয়ে আয়ুশ কন্যার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় । কন্যা নিজের হাত আয়ুশ এর হাতে তুলে দেয় । আয়ুশ ওকে নিয়ে মণ্ডপের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে । কন্যা বলে , এটা তুমি কি করছো আয়ুশ ! আর ইউ ম্যাড ! তুমি মদের নেশায় চুর হয়ে কি করছো বুঝতে পারছো না । তুমি নিজে আমাকে মন্ডপে নিয়ে যাচ্ছ আয়ুশ । কি হয়েছে তোমার এবাবে তোমার সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হলো কি করে ? 

আয়ুশ কোন উত্তর দিচ্ছে না ও কন্যাকে নিয়ে গিয়ে রোদ্দুরের পাশে বসিয়ে দিল । রোদ্দুর আয়ুশ কে থ্যাংকস জানালো আর আয়ুশ হেসে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে । কন্যা ভাবছে এটা কি হলো ! আয়ুশ আবার তাকে ঠকালো না ও নিজেই নিজের কাছে হেরে বসে আছে ? কি হবে এবার ? কন্যার জীবনে কি আয়ুশ নামটা এভাবেই মুছে যাবে ? 

চলবে


ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য

( অথ হার না মানা হার )


বুকের মধ্যে একটা চীন চিনে ব্যাথা কেন হচ্ছে কন্যা ? তুমি ভালো থাকো এটাই তো আমার ফাস্ট প্রায়োরিটি । আমি না হয় নিজের ভালোবাসার স্কোর শূন্যই রাখলাম । সব চাওয়া তো আর সফল হয় না কন্যা ! তোমার আয়ুশমান না হয় হেরেই গেল । সমৃদ্ধকে অনেক জোর করলাম , হয়ত ভগবান ও চান না যে আমি তুমি এক হই । তুমি ভালো করে বুঝে গেছ আমি ইনসেন্ট তবু এত পরীক্ষা ? আমায় তুমি বিশ্বাস করতে পারলে না আর সমৃদ্ধর কনফেশন তোমার বিশ্বাস হত ? তোমার গায়ে হলুদ আমার , তোমার হাতের মেহেন্দি তে নাম আমার , তোমার সাজের প্রত্যেক ভঙ্গিতে আমার আকাঙ্ক্ষার ছোঁয়া আর তোমার সিঁথি রাঙাতে আমাকে তুমি এভাবে হয়রান করবে কন্যা ? থাক তবে ওই সিঁথি না হয় রোদ্দুরের রঙেই রঙিন হয়ে উঠুক । আমি শাস্তি পাবো ঠিক কিন্তু তুমিও তো বাদ যাবে না কন্যা । আমি আয়ুশমান কাঞ্জিলাল একজন বাস্তববাদী ব্যবসায়ী । বার বার তুমি আমায় ফিরিয়ে দিলে ঘুরিয়ে আঘাত আমার থেকেও তুমি পাবে ডেফিনেটলি । জানি না কিছুই ভালো লাগছে না আমার । একটু বিশ্রাম চাই এবার আমি । মায়ের কোল ঘেঁষে বসে থাকবো সে উপায়ও তো আর নেই ! মা তুমি কোথায় ? আয়ুশ নিজের ব্যাগ প্যাক করে ফেলেছে তার আর এই হার জিতের খেলা খেলতে ভালো লাগছে না । নিজের জীবনটা যেন নিজের আর বয়ে বেড়াতে আর এতটুকু ইচ্ছা তার নেই । আয়ুশ আজ রাতেই ফিরে যাবে কলকাতা । 

উত্তরা সব মিটিয়ে মণ্ডপের কাছে গিয়ে দেখে কন্যা মুখ গুজে বসে আছে রোদ্দুরের সাথে । এটা কি হলো ! উত্তরা ছুটলো আয়ুশ এর কাছে , ওকি কান্ড ? বাবু আমার সব গুছিয়ে কোথায় চললো ? উত্তরা এবার কি করে ? শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা ! এদিকে আয়ুশ ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছে আর ওদিকে কন্যা বিয়ের মন্ডপে । না আর না এবার উত্তরাকে ময়দানে নামতে হবে । উত্তরা টুক করে বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো যাতে আয়ুশ বেরোতে না পারে । সবাই বিয়েতে ব্যস্ত তাই আপতত হাজার দরজা ধাক্কা দিলেও কেউ আসবে না ওকে দরজা খুলে দিতে । আয়ুশ এখানেই বন্ধ থাক আর উত্তরা এবার কন্যার বিয়ে আটকাবে । বিয়ে পন্ড করাই মনে হয় আমার পেশায় দাঁড়িয়েছে বাপু । মরে পেত্নী হয়ে আমি লোকের বিয়ে পন্ড করে বেড়াচ্ছি । এই নিয়ে দুবার হলো । উত্তরা পৌঁছে গেছে শক্তির কাছে , সমৃদ্ধ আয়ুশ এর একটা বারমুন্ডা আর গেঞ্জি চুরি করে পড়েছে । আসলে ও ঘরে ঢুকে ট্রলি থেকে জামা নিতেই যাচ্ছিল এমন সময় আয়ুশ ঢুকে পড়ে ঘরে তাই তাড়াহুড়ো করে সমৃদ্ধ যা হাতের কাছে পায় তাই নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বেরিয়ে আসে ওখান থেকে । আর মার খাবার ইচ্ছা বা শক্তি কোনটাই ওর নেই । সমৃদ্ধ আর শক্তিকে উত্তরা মণ্ডপের দিকে যেতে বলে । আর সমৃদ্ধকে বলে নিজের দোষ স্বীকার করে কন্যাকে অনুরোধ করতে সে যেন এ বিয়ে না করে । কন্যা কে থামাতে হবে আগে তার পর আয়ুশ এর কাছে ওকে নিয়ে যেতে হবে । যদিও ওর পরিবারের তরফ থেকে বাধা আসাটা স্বাভাবিক । তবু হার মানলে চলবে না আজ । শক্তি আর সমৃদ্ধ ছুটে যায় মণ্ডপের দিকে । কন্যা আর রোদ্দুরের জয়মালা ততক্ষণে হয়ে গেছে । ওদের ফেরা শুরু হয়েছে , রোদ্দুরের পিছনে পিছনে কন্যা ফেরা নিতে শুরু করেছে । সমৃদ্ধ গিয়ে দাঁড়ায় মণ্ডপের উপর , দাঁড়াও কন্যা এ বিয়ে তুমি করো না প্লিস । কন্যা রোদ্দুর সমৃদ্ধর কথায় দাঁড়িয়ে যায় ওখানেই । অপলা এগিয়ে এসে সমৃদ্ধকে বলে , হাউ কুড ইউ ডু ডিস সমৃদ্ধ ! মাঝখানে এভাবে এসে বিয়ে আটকানোর মানে টা কি ? আর তোমার এভাবে এই পোশাকে এখানে আসতে লজ্জা পেল না ?  সমৃদ্ধ হাপাচ্ছে , ও বলে জাস্ট আ মিনিট আন্টি । আমি সব বলছি , বলতেই তো এসেছি । কন্যা সেদিনের জন্য আয়ুশ দোষী না , ও কোন এম এম এস বানায় নি । আমি এসব করেছি কন্যা আর এর জন্য যা শাস্তি তুমি আমাকে দেবে আমি মাথা পেতে নেব কিন্তু তুমি আয়ুশ কে ছেড়ে চলে যেও না কন্যা । ও সারাদিন চেস্টা করেছে আমাকে দিয়ে স্বীকার করানোর কিন্তু আমি রাজি হইনি । কন্যা এত দিন পর তুমি আয়ুশ এর জীবনে ফিরে এসে এভাবে ওকে ফিরিয়ে দিও না । শক্তি বলে কন্যা তুমি মণ্ডপ থেকে নেমে এস প্লিস । আয়ুশমান চলে যাচ্ছে কলকাতা ওকে তুমি এ ভাবে হেরে যেতে দিও না এখান থেকে । কন্যা সমৃদ্ধ আর শক্তির দিকে তাকিয়ে থাকে ওর হাতের মুঠি খুলে যায় আর একটা কাঁচের শিশি পরে মাটিতে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যায় । কন্যার ঠোঁট আর নাক বেয়ে নেমে আসছে রক্তের ধারা । সমৃদ্ধ বোঝে কন্যা কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলেছে অলরেডী । ও ছুটে গিয়ে রোদ্দুরের আর কন্যার গটবন্ধন খুলে দেয় । কন্যা সমৃদ্ধর কোলে ঢলে পড়ে , ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে । শক্তি বুঝে উঠতে পারে না কি হলো ব্যাপারটা তবে ও ছুট দেয় আয়ুশ এর ঘরের দিকে , যেখানে আয়ুশ কে বন্ধ করে রেখেছে উত্তরা । 

চলবে


ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য 

( অথ বিরহ লগ্নে )


শক্তি আয়ুশ এর ঘরের দরজার কাছে পৌঁছে দেখলো দরজা ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে আয়ুশ জোরে জোরে । শক্তি দরজা খুলে দিল আর আয়ুশ রাগে ফেটে পড়লো ওর ওপর । কি শক্তি এই মজাটা আমার সাথে কে করেছে জানতে পারি ? আমাকে কে বন্ধ করে রেখেছিল এভাবে হ্যাঁ ! শক্তি বলে , ওসব পরে হবে আগে কন্যার কাছে যেতে হবে আয়ুশ । কন্যা হয়ত সুসাইড এটেম্পট করেছে ! আয়ুশ হতবাক হয়ে গেছে , কন্যা সুসাইড ! ও ছুটতে লাগলো মণ্ডপের দিকে । শক্তিও আয়ুশ কে ফলো করতে লাগলো । এদিকে কন্যার হাত থেকে পড়ে যাওয়া ওই শিশি দেখে বোঝা গেল কন্যা বিষ খেয়েছে । কন্যার সেন্স প্রায় নেই , সমৃদ্ধকে কন্যার বাড়ির লোকজন বারবার বলছে ও যেন কন্যা কে ওদের হাতে তুলে দেয় । কন্যাকে অপলা হসপিটালাইসড করবে বলে তাড়াহুড়ো করছে । রোদ্দুরের মুখ শুকিয়ে গেছে এসব দেখে । সমৃদ্ধর এক জেদ যতক্ষণ না আয়ুশ আসছে কন্যাকে ও কারো হাতে তুলে দেবে না । আয়ুশ পৌঁছে যায় মণ্ডপে , কন্যা অর্ধ মৃত অবস্থায় পড়ে আছে সমৃদ্ধর কোলে । ওর মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে । আয়ুশ সমৃদ্ধর কাছ থেকে কন্যাকে তুলে নেয় নিজের কাঁধে আর এগিয়ে যেতে থাকে মেন গেটের দিকে । অপলা চিৎকার করতে থাকে , আয়ুশ আমার মেয়ের কিছু হলে তোমাদের আমি ছাড়বো না । আয়ুশ এর কানে আপাতত কিছূই ঢুকছে না , ও শুধু জানে কন্যাকে বাঁচাতে হবে । আয়ুশ এর কাঁধে কন্যা , একটা গেস্টের গাড়ির চাবি চেয়ে নেয় সে । আয়ুশ এর রক্ত বর্ণ চোখের সামনে সে সাহস পায় না নিজের বক্তব্য পেশ করার । গাড়ি ড্রাইভ করে আয়ুশ গুগল ম্যাপ এর সাহায্যে পৌঁছে যায় নিকটবর্তী হাসপাতালে । ডক্টর কন্যাকে নিয়ে যান ওটিতে বিষ পাম্প করে বের করতে হবে ইমিডিটেলি । আয়ুশ দাঁড়িয়ে আছে হতভম্বর মত , শাস্তি ! এটা কি শাস্তি দিলো ওকে কন্যা ! এভাবে ? না কন্যার কিছু হতে পারে না আয়ুশ এর যখন নিঃশ্বাস চলছে কন্যার ও চলবে । আয়ুশ আছে তো কন্যাও থাকবে , কন্যা মরতে পারে না এভাবে । আয়ুশ নিজেই বুঝতে পারছে না ওর কি হচ্ছে ? এত কষ্ট , এত কষ্ট ! বুকের ভেতর দলা পাকা কান্না গুলো সাগরের ঢেউয়ের মত ফুঁসছে । চোখের নোনা জলে ভিজে একাকার হয়ে গেছে আয়ুশ । কেন কেন আমি এই সিদ্ধান্তটা নিলাম ? যদি ওকে তুলে নিয়ে যেতাম জোর করে ? কি হতো ! রাগ করতো কন্যা তবু এভাবে মরে যাবার চেষ্টা তো করত না ! আয়ুশ কে বাধা দেবার সামর্থ্য কারো ছিল না তখন , সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল যেন দেবাধিদেব স্বয়ং তার সতী কে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তাকে বাধা দেওয়া মানে তান্ডবের সামনে পড়া । আয়ুশ চলে যাবার পর সবাই ওর গাড়ির পিছনে ধাওয়া করে । সমৃদ্ধ আর শক্তিকে কেউ হেল্প করার নেই তাই ওরা বুদ্ধি করে একটা ক্যাব ভাড়া করে নেয় আর ড্রাইভার কে বলে নিকটবর্তী কোন হসপিটালে নিয়ে যেতে । সমৃদ্ধ বুঝে যায় এখন সামনা সামনি কোন হসপিটালেই আয়ুশ কন্যাকে নিয়ে গেছে । রোদ্দুর , অপলা , শক্তি , সমৃদ্ধ সবাই পৌঁছে যায় হসপিটালে । ওরা পৌঁছে দেখে বিধ্বস্ত হয়ে আয়ুশ বসে আছে আর ডক্টর কন্যাকে নিয়ে গেছে । উত্তরাও আয়ুশ এর সাথেই এসেছে যদিও ওকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না । উত্তরা ব্যাকুল হয়ে আছে , নিজের ছেলেকে এভাবে কষ্টের আগুনে দগ্ধ হতে দেখে উত্তরা সহ্য করতে পারছে না । যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায় তা হলে আয়ুশ যে শেষ করে দেবে নিজেকে সেটা কেউ না বুঝলেও মা হয়ে উত্তরা খুব বুঝতে পারছে । আজ যদি মোহন কাঞ্জিলাল এখানে থাকত ! সে কিছুটা হলেও ছেলেকে সামলাতে পারত । 

কন্যা শিওর ছিল যদি সমৃদ্ধ নিজে থেকে সব স্বীকার না করেও তবু তার আয়ুশ তাকে রোদ্দুরের হতে দেবেনা । সকাল থেকেই বিয়ের সব রিচুয়াল আয়ুশ রোদ্দুরের বদলে চালাকি করে নিজে করেছে । তাই আয়ুশ তাকে তুলে নিয়ে যাবে জবরদস্তি তবু আজ আয়ুশ জিতবে । আর আয়ুশ জেতা মানেই তো কন্যার জিত ! ইঁদুর মারার একটা বিষের শিশি কন্যা নিজের হাতের মুঠোয় রেখে দিয়েছিল ইচ্ছা করেই । ও ভেবেছিল সব নাটকের শেষে যদি মা বাধা দেয় শেষপর্যন্ত তবে এই বিষের শিশি দেখিয়ে মা কে কন্যা ব্ল্যাকমেইল করে রাজি করিয়ে নেবে আয়ুশ এর সাথে বিয়ের জন্য । তার পর যখন আয়ুশ একাই এল , কন্যা বুঝে গেছিলো সমৃদ্ধ নিজের দোষ স্বীকার করতে লাস্ট মোমেন্ট এ এসে রাজি হয়নি । তাই আয়ুশ এসেছে কন্যাকে জোর করতে , যাতে কন্যা আয়ুশ কেই বিয়ে করে । আয়ুশ একদিন যেমন কথা দিয়েছিল সে কন্যার বিয়ের সাজ নিজের হাতে পূর্ণ করবে তার পায়ে নুপুর পরিয়ে দিয়ে , সেই কথাও সে রাখে । কন্যার পা দুটো নিজের হাতে সাজিয়ে দেয় সোনার নূপুরে , যে নুপুর একদিন শোভা পেত তার মা উত্তরার পায়ে । তার পর আচমকাই এভাবে কন্যা কে নিজের হাতে রোদ্দুরের পাশে যখন আয়ুশ বসিয়ে দিল কন্যা অবাকই হয়নি ও মরমে মরে গেছিলো । বিয়ের পিঁড়িতে বসেই সে একতালে ওই বিষের শিশি ঢেলে দেয় নিজের গলায় । তার পর চুপচাপ রোদ্দুরের সাথে সে বিয়ের রিচুয়াল গুলো করতে থাকে । কন্যা জানত বিয়ে শেষ হবার আগেই সে নিজে শেষ হয়ে যাবে । আয়ুশ তাকে যখন রোদ্দুরের হয়ে যেতে দিতে পারে তো মরে যেতেও দিতে পারে । তার পর যখন সমৃদ্ধ এসে ওভাবে বললো সব কিছু তখন কন্যার আর হাতে আর সময় ছিল না আয়ুশ কে বলার যে হাউ মাচ শি লাভ আয়ুশ ! তাই বিষের শিশিটা হাত থেকে ফেলে দেয় কন্যা ইচ্ছা করেই যাতে সে অন্তত শেষ সুযোগ টুকু পায় বাঁচার , আয়ুশ এর সাথে বাঁচার । 

চলবে 


ভালোবাসার স্কোর যেখানে শুন্য

( অথ কেমন বোকা মনটা রে )


কাগজ কে দো পঙ্খ লিয়ে উড়া চলা জায়ে রে 

যাহা নেহি জানা থা বহ ওহহি চলা জায়ে রে .......

আয়ুশ এর কানে বাজছে কন্যার প্রিয় গানটা , ওর চোখ দুটো মানসিক ক্লান্তিতে বুজে আসছে । ওর কানে আসছে কন্যার গলা .......

আমি ভীষণ কষ্টের সাগরে ডুবে যাচ্ছি আয়ুশ , আমি বিষের তীব্র দহনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছি । আমি মরে যাচ্ছি আয়ুশ ! তোমার কন্যা শেষ হয়ে যাচ্ছে । 

না না কন্যা তুমি যেতে পারো না ! আমি আছি তো তোমাকেও থাকতে হবে । আমি তোমাকে ভালোবাসি । আয়ুশমান কাঞ্জিলালের স্কোর কখনো জিরো হয় না ! আমার ভালোবাসার স্কোর শুন্য হতে আমি দেবো না কিছুতেই । 

এই আয়ুশ কি হয়েছে ভাই তোর ? ওঠ ভাই , তুই ঘেমে নেয়ে গেছিস একেবারে । সমৃদ্ধ আয়ুশ কে ওঠানোর চেষ্টা করে । আয়ুশ ধড়মড় করে ওঠে , সমৃদ্ধ এনি থিংস রং ! 

সমৃদ্ধ আর শক্তি দাঁড়িয়ে আছে আয়ুশ এর সামনে । সমৃদ্ধ বলে , এ মারা তোর তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে রে ! তুই কন্যা কন্যা করছিস বে ! আর ও তোর কথা ভাবলো ? কন্যা আউট অফ ডেঞ্জার নাও । আর ওকে বেডে দিয়েছে এখন । আমি শক্তি দেখা করতে গেলাম ওর সাথে আর ওর মা অপলা আমাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো বে ! 

শক্তি বলে আয়ুশ সমৃদ্ধ ঠিক বলছে , ওরা আমাদের কন্যার সাথে দেখা করতেও দিচ্ছে না । আর ওই রোদ্দুর তো আমাকে হুমকি দিলো আমরা যদি আজকে আজ পাঞ্জাব ছেড়ে চলে না যাই তো ও দেখে নেবে । তুমি কিছু একটা করো , কন্যাকে তুমি দরকার হলে তুলে নাও । আর হ্যাঁ আপাতত ওষুধ খাও তুমি চলো । তোমার শরীরটা বেশ খারাপ মনে হচ্ছে । 

উত্তরা এখন অনেকটা নিশ্চিন্তে আছে , কন্যা যখন বেঁচে গেছে আয়ুশ ঠিক ওকে নিজের করে নেবে । তবে ছেলেটার ও তো শরীর খারাপ । 

রোদ্দুর এদিকে আজ অন্য মূর্তি । শান্ত হয়ে থাকা ভিজে বিড়াল ছেলে আজ বাঘ সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে । শক্তি আর সমৃদ্ধকে বেশ করে কথা শুনিয়ে দিয়েছে । আয়ুশ কে ভোর রাত থেকে আর দেখতে পায়নি ও , না হলে ওই পালের গোদাকে আগে টাইট দিত । কন্যা বাড়ি ফিরলেই বিয়েটা সেরে নেবে রোদ্দুর । তার পর প্রথম রাতেই বিড়াল মেরে দেবে ও , মানে কন্যাকে এমন জব্দ করতে হবে যাতে ও আয়ুশ নামের বানানটাই ভুলে যায় । এত টাকার সম্পত্তির মালিক কন্যা কে এভাবে ছেড়ে তো দেওয়া যায় না । পরের এঠো করা মাল কে বিয়েও করতে হবে আবার তার দেমাক ও সইতে হবে ! একি মগের মুলুক নাকি ? ব্যাচেলর পার্টির দিন আয়ুশ আর কন্যার রাসলীলা রোদ্দুর নিজের চোখে দেখেছে । এখন কিছু গুন্ডা ভাড়া করে ওই দুটো ছেলে আর মেয়েটাকে ফেরত পাঠানো হবে কলকাতা এটাই ফাস্ট প্র্যাওরিটি । কে জানত তখন ওই মিনমিনে অসুস্ত শক্তি কালসাপ হয়ে দাঁড়াবে না হলে রোদ্দুর কখনোই ওকে যেচে কন্যার কথায় বাড়ি নিয়ে আসত না । আয়ুশ দা ফাকিং বাস্টার্ড । 

আয়ুশ প্রথমে কিছুতেই ডাক্তার দেখাতে বা ওষুধ খেতে চাইছিল না তার পর সমৃদ্ধর স্ল্যাগ ল্যাঙ্গুয়েজের ঠেলায় ও বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে যায় । ওষুধ খেয়ে আয়ুশ সমৃদ্ধ আর শক্তিকে বলে হসপিটাল ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে কিছু খেয়ে আসতে । কাল থেকে কারোর পেটেই কিছুই পড়েনি । শক্তি আয়ুশ কেও জোর করে নিয়ে যায় ওদের সাথে । ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে ওরা তিনজনই স্ট্রং ব্ল্যাক কফি আর চিকেন স্যান্ডউইচ নেয় , এর থেকে বেশি কিছু খাবার সময় বা রুচি কারোরই নেই । শক্তি অবাক হয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধর এই পরিবর্তন দেখে ! এ কি সেই অমানুষটা যাকে শক্তি চিনত ? এই কি সেই সমৃদ্ধ যার কাছে ভালোবাসার স্কোর সম্পূর্ণ শুন্য ? যাই হোক শক্তির আর কি , ওদের তো ব্রেক আপ হয়েই গেছে । খেয়ে দেয়ে ওরা তিনজনই গেল কন্যার সাথে দেখা করতে গেল । অপলা মেন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল ওদের দেখে এলসিসিয়ান এর মত ঘেউ ঘেউ করে এল । আয়ুশ বললো , আন্টি আপনার সন্মান করি তাই বলছি প্লিস সরে যান । আমাকে কন্যার কাছে যেতে দিন । 

অপলা খেঁকিয়ে ওঠে , তুমি কে ওর সাথে দেখা করার ? হু আর ইউ ? আমার মেয়ে বিষ খেলো তোমার জন্য ! তার পর যদিও ও বেঁচে গেল তো ওকে মেরে ফেলতে চলে এলে ! 

আয়ুশ কথা না বাড়িয়ে অপলা কে ঘেঁষে ঢুকে গেল কন্যার কাছে । কন্যা ঘুমাচ্ছে , ওর সাড়া শরীরে আগেরদিনের যুদ্ধের ছাপ । আয়ুশ ওর হাত দুটো ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল । কন্যা আমি ভালোবাসি তোমাকে , এত দিন তোমাকে ভুলে থাকার জন্য কি না করেছি ? তার পর একদিন তুমি ইচ্ছা করে আমার সামনে চলে এলে । চরিত্রহীন হবার জন্য আমি এত কান্ড করে সেই তোমাকে দেখে আবার তোমার হয়ে যেতে চাইলাম । প্লিস তুমি সুস্থ হয়ে যাও , আমি তোমাকে সসম্মানে কাঞ্জিলাল হাউসে নিয়ে যাবো । আয়ুশ ফিসফিস করে কন্যার প্রিয় গানটার কলি গুলো গেয়ে ওঠে ...

উমর কা ওহ তানা বানা সমঝ না আয়ে রে , জুবা পে জো মোহ মায়া নমক লাগায়েরে ....

দিশেহারা কেমন বোকা মনটা রে ....

এসবের মধ্যে রোদ্দুর এসে হাজির হয়েছে , ও চিৎকার করে আয়ুশ কে বলে , আবে রান্ড কি আওলাদ , হারামখোর সালা তুই এখানে কি করছিস ? 

আয়ুশ সব সহ্য করে নেবে কিন্তু ওর মরা মায়ের প্রতি রোদ্দুরের এই ল্যাঙ্গুয়েজ ও সহ্য করতে পারবে না .... 

আয়ুশ পট পট করে নিজের জামার বোতাম গুলো খুলে ফেলে । রোদ্দুর মুখে চুক চুক করে একটা বিশ্রী আওয়াজ করে বলে , আবে শালা তুইও আমার মত গে নাকি রে মারা ? আজা আয়ুশ মেরে হিরো কন্যার অবর্তমানে এখন একটু মজ করে নি দুজনে .....


চলবে



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance