Soumi Goswami

Tragedy

2  

Soumi Goswami

Tragedy

ভালোবাসার জটিলতা

ভালোবাসার জটিলতা

5 mins
718


অরুন্ধতী আর দেবদত্তর প্রেমের দিনগুলো পাহাড়ি নদীর মত উশৃঙ্খল বেপরোয়া ছিলনা। ওদের ভালবাসা ছিল গুরুগম্ভীর। ফল্গুধারার মত প্রেম বয়ে যেত ওদের অন্তরে যা বাইরে সবার চোখের সামনে প্রকাশ পায়নি কোনদিন। অরুন্ধতী ওর দেবের সাথে হাতে হাত দিয়ে পার্কে বসে প্রেমের দুটো ভাল মুহূর্ত কাটানোয় বিশ্বাসী ছিলনা। দেবও ওর অরুন্ধতীকে ভালবেসেছিল মন দিয়ে তাতে শরীরের কোন স্থান নেই। দেব যদি চাইত বিয়ের আগেই ও ওর ভালোবাসাকে নিজের করে পেতে পারত কিন্তু দেবের কাছে ভালবাসার শুরু আর শেষ মন আর মন। সে প্রেম শরীরী ভালবাসা নিশ্চয়ই বোঝে কিন্তু ভালোবাসাতে প্রতীক্ষাও আছে তা দেব জানে।

আজও চাকরিটা হলো না দেবের। 'কম্প্রোমাইজ' শব্দটা দেবের অভিধানে নেই। তাতে চাকরি না হলেও ক্ষতি নেই। অরুন্ধতী দেবকে বুঝিয়ে উঠতে পারেনা যে চাকরিটা দেবের কতটা প্রয়োজনের। চাকরিটা এবারেও না হলে অরুন্ধতীর বাড়ির লোক ওর বিয়েটা অন্য কোথাও ঠিক করেই ফেলবে। অরুন্ধতী দেবকে অনুনয় বিনয় করতে থাকে নিজের ভুল শুধরে নেবার জন্য। কিন্তু নিজের মনের খেয়ালে চলা দেব চাকরিটা ফিরিয়ে নেবার কোন চেষ্টাই করল না। ও জানে ও একদিন ঠিক মনের মত একটা চাকরি পাবে আর ওর বিশ্বাস ওর ভালবাসা ওর অরুন্ধতী ওর কাছেই থাকবে ওর অপেক্ষাতে।

অরুন্ধতীর আজ বৌভাত। আজ অরুন্ধতীর শরীরের গন্ধ নিজের গায়ে মাখবে যে সে দেবদত্ত নয়। দেবের জন্য অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পর ও দেবদত্ত যখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলো না তখন অরুন্ধতীর অপেক্ষার দাম ওর বাড়ির মানুষগুলো আর দিতে পারেনি। দেবও অরুন্ধতীর সেই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল।

  এরপর অনেকটা সময় কেটে গেছে। অরুন্ধতীর বাড়ির লোকজন খুশি যে তাদের মেয়ে ভাল আছে নিজের সংসারে। অরুন্ধতীর খুব ছোটবেলার বন্ধু মৌলির বিয়েতে আজ আবারও সময় একটা চাল চালে। অরুন্ধতী দেবদত্ত আবারও সামনা সামনি এসে দাঁড়িয়েছে।

বিয়ে করেছে দেবদত্ত। বিউটি ওর বউ দেবদত্তকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে একবারও চোখের আড়াল হতে দিতে চায়না। দেবদত্তকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিউটকে নিয়ে খুব ভালো আছে। দেবের এই ভাল থাকাটা দেখে কি কষ্ট হচ্ছে অরুন্ধতীর। অজান্তেই অরুন্ধতীর মনে হাজার প্রশ্ন ভিড় করে। ও কষ্ট পায় মনে মনে। কিন্তু এই কষ্টের কারণ কি। নিজে ও ওর জীবনে সুখী নয় তাই কি দেবকে সুখী দেখে কষ্ট হচ্ছে। না আজ যেখানে বিউটি সেটা ওর হতে পারত সেটাই ওকে কষ্ট দিচ্ছে।

    অরুন্ধতী সুযোগ খোঁজে দেবের সাথে একান্তে একটু কথা বলার জন্য। দেবের কাছে একটু যেতে গেলেই বিউটি ওদের মাঝে ঠিকই ঢুকে পড়ে। অরুন্ধতী দেবের কাছে নিজের প্রশ্ন রাখতে পারেনা। কেন দেব সেদিন ওই চাকরিটা নিল না সেটা অরুন্ধতী একবার দেবের মুখ থেকে শুনতে চায়। তাহলে দেবের ভালোবাসা কি সবটাই অভিনয় ছিল।

মৌলির বাবার সাথে অরুন্ধতীর কথা হতে হতে কাকা ওর বাবাকে পুজোয় বসার জন্য ডেকে নিয়ে যায়। হঠাৎ পিছন থেকে অরুন্ধতীর পিঠ ছুঁয়ে স্পর্শ করে কেউ।চমকে ওঠে ও। এ স্পর্শ তার অচেনা নয়। এ ছোঁয়ার উষ্ণতা সে আগেও পেয়েছে। মুখ ফিরিয়ে যাকে অরুন্ধতী সামনে দেখে সে আর কেউ নয় সে দেবদত্ত।অরুন্ধতী টেরই পায়নি কখন দেবদত্ত এ ঘরে ঢুকে পড়েছে। দেবদত্ত ঘরের দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে অরুন্ধতীকে জড়িয়ে ধরে। অরুন্ধতী ওর দেবকে কাছে পেয়ে নিজের খারাপ লাগাটাকে সামলে রাখতে পারে না। অরুন্ধতীর দুঃখ চোখের জল হয়ে বয়ে গেলে দেব জানতে পারে ওর ভালবাসা সুখে নেই। দেব মনে করেছিল ওর ভালবাসা ওর যোগ্য মানুষটাকে পেয়ে খুব সুখে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু দেব জানতেই পারেনি যে অরুন্ধতীর স্বামী নিজের স্ত্রীকে নয় ভালবাসে টাকাকে। সেই টাকা নিয়ে ফুর্তি করার জন্য আছে সব সুন্দর সুন্দর রমণী। সেখানে অরুন্ধতীকে ঠিক মানায় না।

আমিও ভালো নেই–দেবের কাছ থেকে এই কথাটা শুনে অরুন্ধতী ও শুধু অবাক নয় স্তব্ধ হয়।কি বলছে দেব। এটা কি করে সম্ভব। ও তো বিউটির সাথে খুব ভালো আছে মনে হয়। কিন্তু এটা কি বলছে দেব। ও সুখী নয়। ওদের দাম্পত্য জীবনেও সমস্যা বাসা বেঁধেছে। ও কারণ জানতে চাইলে দেব বলে বিউটি নিজের রূপের জালে বহু পুরুষকে বেঁধেছে। এত পুরুষ সংসর্গে ওর শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ। বিয়ের আগে দেব আর ওর পরিবার কিছু জানত ও না। ব্যাপারটা জানা গেল বিয়ের পরেই। কদিন ধরেই বিউটির জ্বর না সারলে ও বিউটিকে নিয়ে যায় ডাক্তাররের কাছে। নানা পরীক্ষার পর জানা যায় ওর মারনরোগটার কথা।

অরুন্ধতী দেবের কষ্টে ব্যাথ্যা পায়। দেবই ওকে বলে চল আমরা দুজনেই সুখী নয় আমাদের সংসার জীবনে। চল আজ আমরা বেড়িয়ে যাই সব কিছু ছেড়ে। নতুন করে দুজনের চলে যাবে। অরুন্ধতী ও কাদঁতে কাঁদতে ওর ভালবাসা ওর দেবকে জড়িয়ে ধরল আরও একবার। দুজনে মিলে স্থির করল ওরা সব কিছু ছেড়ে চলে যাবে নিজেদের সুখের ছোট্ট নীড় বাঁধতে।

আজ সেই দিন যেদিন দুটো মনের স্বপ্ন সত্যি হবে। অরুন্ধতী বিশেষ কিছু সঙ্গে নেয়নি যাতে ওর স্বামীর সন্দেহ হয়। আর কি বা হবে এসব কিছুর। নতুন সংসারে ওর দেবই ওকে এনে দেবে সবটুকু। এখানের কোন জিনিসের ওপর ওর কোন আকর্ষণ নেই। এসব থেকে ও শুধু মুক্তি চায়।

অরুন্ধতীর সাথে দেবের যেখানে দেখা করার কথা যে জায়গায় অরুন্ধতী সময় মত এসে পৌঁছলে দেখে দেবের সাথে বিউটি ও এসেছে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়া বিউটি অরুন্ধতীকে বলে আমি জানি আজ তুমি আমার ওকে নিয়ে চলে যাবে চিরদিনের জন্য।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ওকে খুব ভালবাসি।আমার আগের কিছু ভুলে আমার জীবন শেষ হতে বসেছে। আমি জীবনের শেষ দিনগুলো দেবের সাথে কাটাতে চেয়েছিলাম। দেবকে দেখে বুঝেছিলাম ভালবাসা কাকে বলে। বিয়ের পরেই জানতে পারি দেব অরুন্ধতীরই। ও বিয়ে তো করেছিল আমাকে কিন্তু ওর মনে শুধুই অরুন্ধতী। ও আমার আগের জীবনের সব ভুল ক্ষমা করে দিয়েছিল। আমার বাড়ির মানুষেরা যখন আমায় ছেড়ে চলে গেল একমাত্র দেবই ছিল আমার একমাত্র ভরসা। আজ ও তোমার সাথে চলে গেলে আমি বড় একা হয়ে পড়ব। আমরা স্বামী স্ত্রী হবার পরও আমার কোন অধিকার নেই যে আমি দেবকে আটকে রাখতে পারবো।

এতক্ষন বিউটির বলা কথাগুলো শুনে অরুন্ধতী দেবকে বিউটির হাতে তুলে দেয়। অবাক চোখে বিউটি ওর দিকে চেয়ে থাকলে অরুন্ধতী দেবকে বলে আমি দেবকে ভালবেসেছিলাম ঠিক কিন্তু আজ ও তোমার প্রয়োজন। আমার দেব আমার মনে আছে তুমি তোমার দেবকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও।।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy