Soumi Goswami

Inspirational

2  

Soumi Goswami

Inspirational

রূপ না রূপ

রূপ না রূপ

6 mins
632


রাজীব বর্ষাকে ওর অমতে বিয়েটা করেই ফেলে। রাজীব বর্ষাকে বিয়ে করে এনে বাড়িতে তুললে বর্ষা বাড়ি ছাড়তে চায়। রাজীব ওকে বাধা দেয়। রাজীব বর্ষাকে নিজের দুহাত দিয়ে ঘিরে ওকে ভালোবাসার চুম্বনে ভরিয়ে তোলে। বর্ষা নিজেকে রাজীবের বাহুপাশ থেকে মুক্ত করতে চায় কিন্তু পারে না।

ঈশ্বর বর্ষাকে বানিয়েছিলেন সযত্নে। তার রূপের সামনে চাঁদও যেন হার মানে। বর্ষাকে তাই পাবার ইচ্ছা ছিল বহু ছেলের মনেই। বর্ষা তাদের স্বপনের নায়িকা হলেও ও অনেক মেয়ের ঈর্ষার কারণ ছিল।

রাজীবের কলেজেই বর্ষা পড়ে। একদিন রাজীব বন্ধুদের কাছে বাজি হেরে সামনে থেকে আসা বর্ষাকে কিস করতে বাধ্য হয়। ব্যাপারটা এত চকিতে ঘটে গেল বর্ষা প্রথমে কিছু বুঝতে পারে না। ওর ঘোর কাটতেই ও রাজীবের গায়ে হাত তুলতে যায়। তখন দূরে থাকা রাজীবের সব বন্ধুরা এসে বর্ষাকে আসল ঘটনাটা খুলে বলে।রাজীব ওর কাছে ক্ষমা চাইতে গেলে বর্ষা চলে যায় কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে। সেইদিনের সেই ঘটনার পর থেকেই রাজীব চেষ্টা করেছে বর্ষাকে সরি বলার। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা হয়ে উঠতে পারেনি। এভাবে কিছু দিন চলতে চলতে হঠাৎই রাজীব একদিন বর্ষার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যায়। কলেজ ফেস্টের জন্য বর্ষা যখন গ্রিনরুমে তৈরি হচ্ছিল রাজীব ভুল করে ওই ঘরে ঢুকে পড়ে। সাথে সাথেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে ও চোখ বন্ধ করে কোনো মতে ওই ঘর থেকে বেরোতে গেলে বর্ষা ওকে দুকথা শোনাতে ছাড়ে না। রাজীব নিজের এই বোকামির জন্য লজ্জিত হয়। এদিকে আগের ঘটনায় রাজীবকে নিয়ে যে ভুল ধারণাটা জন্মে ছিল আজকের ঘটনায় সেটাই আরও দৃঢ় হয়।

সেদিনের অনুষ্ঠান ভালোভাবে মিটে গেলে রাজীব বর্ষার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। রাজীব খবর নিয়ে জানতে পারে যে সে বেশ কিছুক্ষণ আগেই কলেজ ছেড়েছে। শেষে রাজীব বর্ষার এক বন্ধুর কাছ থেকে এক বন্ধুর কাছে থেকে থেকে অনেক অনুরোধের পর বর্ষার ফোন নাম্বারটা জোগাড় করে। রাতে রাজীব ফোন করলে বর্ষা অচেনা নাম্বার দেখে ফোন ধরে না। কিন্তু শেষে বারবার ফোন আসাতে বর্ষা ফোন ধরতে বাধ্য হয়। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মানুষটার গলা শুনেই ফোনটা কেটে দিতে যায় বর্ষা। কিন্তু রাজীবের বারবার অনুরোধে ও ফোনটা কাটে না। রাজীব গত দুবারের হওয়া অনিচ্ছাকৃত ভুলের কথা বর্ষাকে খুলে বলে আর ওর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়। রাজীব এরপর থেকে প্রায়ই বর্ষাকে ফোন করে। বর্ষা রাজীবের ফোন রিসিভ করলেও খুব বেশি কথা বলে না। সব কথার উত্তর হ্যাঁ না তাই শেষ হয়। এরপর সময় আরো কিছুটা এগিয়েছে এখন বর্ষা আর রাজীব দুজনে দুজনের ভালো বন্ধু। অবশ্য রাজীব প্রথম থেকেই ছিল বর্ষার রূপে মুগ্ধ। ও অন্য অনেকের মত বর্ষাকে ওর জীবনসাথী রূপে কল্পনা করেছে।

বর্ষার কলেজে ফাইনাল ইয়ারে রাজীব একটা ভালো চাকরি পায়। রাজীব বর্ষার থেকে এক বছরের সিনিয়র ছিল। রাজীব চাকরিতে জয়েন করার পর ও বাড়িতে বর্ষার কথা জানায়। রাজীবের মা বাবা দুজনেই তাতে খুশি হন। ওনারা ঠিক করেন একদিন তাঁরা গিয়ে বর্ষা আর রাজীবের বিয়েটা ঠিক করে আসবেন।

দিনগুলো যখন খুব সাধারণভাবে কাটছে ঠিক তখনই ঘটে ঘটনাটা।

একদিন প্রাইভেট শেষ করে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয় বর্ষার। বর্ষা খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে চলেছে বাড়ির দিকে। হঠাৎই বর্ষার মনে হয় ঠিক ওর পেছনেই রয়েছে জোড়া পা। কটা চোখ যেন ওকে অনুসরণ করে বেড়াচ্ছে। থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে পিছনে ফিরে তাকালে বর্ষা কাউকে দেখতে পায় না। মনের ভুল ভেবে আবার হাঁটা শুরু করে ও। কিন্তু হঠাৎই কতগুলো ছেলে ওর পথ আগলে দাঁড়ায়। বর্ষা পাশ কাটিয়ে এগোতে গেলে ওদের মধ্যে একজন বর্ষার ওড়না টেনে ধরে। বর্ষা ওদের কাছে অনুরোধ জানায় ওকে ছেড়ে দেবার জন্য।কিন্তু ছেলেগুলো ওকে টেনে নিয়ে যায় রাস্তার পাশে ঝোপের দিকে। বর্ষার কান্না অনুরোধ কিছুই ওদের  মনে দাগ কাটে না।ওরা দলের প্রত্যেকে নিজের মত করে বর্ষাকে ভোগ করে। নিজেদের কামনা চরিতার্থ হলে ওদেরই একজন নিয়ে আসে সেই জিনিসটা যার নাম এসিড(acid)। যা বিধ্বস্ত বর্ষার মুখে ঢেলে দেবার আগে ছেলেটা বলে– তোর রূপের জন্যই সবাই তোকে ভালবাসত। আজকের পর তা আর থাকবে না। এরপর থেকে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেবে তোর দিক থেকে। তুই না রইলি পবিত্র আর আজকের পর থেকে না থাকবি সুন্দর। তোকে আমি ভালোবেসে নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়ে ছিলাম আর তুই তার কোন দাম না দিয়ে আমার চিঠিখানা প্রত্যাখ্যান করেছিলি। এরপর তুই আর কারুরই জীবনে ভালোবাসা হতে পারবি না। এরপর থেকে সবাই তোকে শুধু ঘেন্নাই করবে। কথাগুলো শেষ করে ছেলেটা হাতের শিশির সবটুকু জিনিস বর্ষার মুখে ঢেলে দেয়। বর্ষা এতটাই বিধ্বস্ত ছিল যে সে ওই মুহূর্তে ওখান থেকে উঠে পালাতে পারে না। ব্যাথায় যন্ত্রণায় বর্ষা জ্ঞান হারায়।

প্রতিদিনের মত আজও রাজীব বর্ষাকে ফোন করে ওদের বিয়ের কথাটা জানবার জন্য। কখন বর্ষা রাজীবের ফোন ধরতে না পারলে পরে সময় মতো ও রাজীবকে ফোন করে নেয়। এদিকে সেদিন অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও যখন বর্ষার ফোন আসেনা তখন রাজীবের মন এক অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে। বর্ষার ফোনে বারবার চেষ্টা করতে করতে হঠাৎই ও প্রান্ত থেকে যে গলাটা ভেসে আসে সেটা রাজীবের চেনা নয়। রাজীব কিছু জিজ্ঞাসা করবে  তার আগে অপর প্রান্ত থেকে উনিই যা বলেন তা শুনে রাজীবের পায়ের তলার মাটি সরে যায়। রাজীব বিশ্বাস করতে পারেনা লোকটার কথাগুলো।

ফোনের ওপারে থাকা লোকটার কথামতো রাজীব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছে যায় সেই জায়গায়। রাজীব এসে বর্ষাকে অমন অবস্থায় দেখে নিজের গায়ের জামা ওকে জড়িয়ে দিয়ে আর অন্য সবার সাহায্য নিয়ে কাছাকাছি একটা নার্সিংহোমে পৌঁছায়। পনেরো দিন চিকিৎসা চলার পরে বর্ষা কিছুটা সুস্থ হলে ওকে বাডি আনা হয়। বর্ষার বাবা মা ওকে ঘরে নিয়ে আসার পর থেকেই ও নিজেকে বাইরের জগৎ থেকে পুরোপুরি ভাবে আলাদা করে নেয়। চোখের সামনে ওর মা বাবা মেয়েটাকে তিলে তিলে শেষ হতে দেখেন। ঠিক এমনই সময়ে রাজীব ওর বাবা মাকে নিয়ে আসে বর্ষাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। বর্ষার বাবা মায়ের চোখে জল রাজীবের কথাতে। কুমারীত্ব নষ্ট হবার পর তার এই বীভৎস রূপের মেয়েকে কেউ কোনোদিন গ্রহণ করবে তা তারা ভাবতেই পারেনা। রাজীবদের বিয়ের মাস ছয়েক দেরি।আসলে ওরা বর্ষাকে একটু সময় দিতে চেয়েছিল। বর্ষা যাতে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবনা ফিরতে পারে তার জন্যই এত কিছু। ঠিক সেই সময়েই আসে আরো একটা দুঃসংবাদ যা দুটদুটো পরিবারকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বর্ষা হঠাৎই একদিন ঘরে মাথা ঘুরে পড়ে গেলে ওর বাবা ডাক্তারকে ঘরে ডেকে আনেন। উনি বর্ষাকে পরীক্ষা করে বলেন যে ও মা হতে চলেছে।

এই ঘটনার পর বর্ষা একটু সুস্থ হলে প্রথমেই এই বিয়ে ভেঙে ফেলতে বলে ওর বাবাকে। উনারা নিজেদের মুখ চাওয়াচায়ি করেন। ওদের কারুর মুখেই কোন কথা নেই। শেষে বর্ষা রাজীবকে ফোন করে ডেকে আনে ওদের বাড়িতে। বর্ষা রাজীবকে সব কথা খুলে বলে রাজীবকে। সঙ্গে এই বিয়েটা করতেও মানা করে। বর্ষার কাছে ওর মা হতে চলার কথা শুনে রাজীব চুপ করে থাকে। বর্ষা যখন রাজীবকে বিয়ে বন্ধ করার কথা বলে সে মুতুর্তে রাজীব কিছু না বলে ওদের ঘর থেকে চলে যায়।

হঠাৎ একদিন সকালে রাজীব কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বর্ষাদের বাড়ি আসে। বর্ষার বাবা প্রথমটায় কিছু বুঝতে পারেন না। রাজীবই ওনার সাথে সকলের পরিচয় করিয়ে দেয়। সেদিন বর্ষার মা হতে চলার খবর জানার পরই রাজীব ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে যোগাযোগ করে। ও বর্ষার শরীরের কথা বলে উনাদের সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে আসে।

বর্ষা রাজীবকে বলে বিয়ে বন্ধ করতে না পেরে ও ছাদে ছুটে যায় আত্মহত্যা করবে বলে। রাজীব গিয়ে ওকে পিছন থেকে ধরে ফেলে। বর্ষা অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে রাজীবকে বন্ধ করতে বলে এই বিয়ে। ওর সাথে রাজীবের জীবন সে নষ্ট হতে দিতে চায় না।

বর্ষার কথা শুনে ভেজা চোখে রাজীব ওকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বলে বর্ষাই ইর জীবনের প্রথম প্রেম। বর্ষাকে সাথী করে পাবার আশায় কেটে গেছে কত বিনিদ্র রজনী। বর্ষাকে নিজের এত কাছে পেয়ে ও এর হারাতে পারবে না আর বর্ষার শরীরে যে বড় হচ্ছে সে শুধু বর্ষারই সন্তান। রাজীব ওকে পিতৃপরিচয় দেবে। বর্ষাকে আর ওদের সন্তানকে রাজীব সারাটা জীবন ভরিয়ে রাখবে ভালোবাসায়।

বর্ষার মন থেকে অপরাধবোধ দূর হয় না। তাই এক রকম জোর করেই বিয়েটা করে ফেলে রাজীব। বর্ষাকে নিয়ে আসে তার ভালোবাসার ছোট্ট নীড়ে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational